বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪

"পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন-১৯০০": নিকোলাস চাকমা

 


"পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন-১৯০০"

চিটাগং হিল ট্র্যাক্ট (পার্বত্য চট্টগ্রাম) রেগুলেশন ১৯০০ এখনো কার্যকর একটি আইন। এ রেগুলেশনটির কার্যকারিতা ও প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে ২০১৪ সালে ও ২০১৬ সালে পৃথক দুই মামলার রায় দেয় সুপ্রীম কোর্টের পুর্ণ বেঞ্চ। কিন্তু এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে সুপ্রীম কোর্টে রিভিউ করেছেন মোহাম্মদ আব্দুর মালেক ও আব্দুল আব্দিল আজিজ আখন্দ নামে খাগড়াছড়ির দুই বাসিন্দা।
আইনজ্ঞরা বলছেন, এ রিভিউ সরকারের পক্ষের রায়ের বিরুদ্ধে করা হয়েছে। সে হিসেবে সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা এটর্নী জেনারেল রিভিউকারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান থাকার কথা। কিন্তু এটর্নী জেনারেল তা না করে বরং রিভিউকে সমর্থন করে রায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন শব্দ, বাক্য, অনুচ্ছেদ বাদ দিয়ে হলফনামা আকারে সুপ্রীম কোর্টে দাখিল করেছেন। যা এক প্রকার রাষ্ট্রের রায়ের বিরোধীতার সামিল।
এটর্নী জেনারেলের এমন ভূমিকায় উদ্বিগ্ন পাহাড়ের জনগণ। এ রিভিউ পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠী ও স্থায়ী বাসীন্দাদের নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন তারা। এ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখার জন্য তিন পার্বত্য (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান) জেলার পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বিশিষ্টজনেরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে গত ১৬ জুলাই স্মারকলিপিও দিয়েছেন।
জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত স্থায়ী ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের সুরক্ষার জন্য বৃটিশ সরকার ১৯০০ সালে একটি আইন প্রনয়ন করে। যে আইনটি চিটাগং হিল ট্র্যাক্ট রেগুলেশন বা পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০ নামে পরিচিত। এ রেগুলেশনটি পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সকল অধিকারের সুরক্ষা দিয়ে আসছে। এ রেগুলেশনের সাথে সঙ্গতি রেখে ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদিত হয়।
চুক্তির আলোকে তিন পার্বত্য (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান) জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয় সৃষ্টি হয়।
রেগুলেশন মতে, তিন পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসক পদাধিকার বলে সিভিল জজ হিসেবে দেওয়ানী বিচারিক কার্যক্রম এবং বিভাগীয় কমিশনার পদাধিকার বলে জেলা ও দায়রা জজ এবং দেওয়ানী মামলার আপীল কর্তৃপক্ষ ও ফৌজদারী বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।
২০০৩ সালে এ রেগুলেশনে শুধুমাত্র এ দুটি সংশোধনী এনে দেওয়ানী ও ফৌজদারী বিচার কার্যক্রম বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ এবং জেলা ও দায়রা জজের আদালতের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সংশোধনীতে কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি পাহাড়ের মানুষ বরং ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছিল।
সূত্র জানায়, ২০০৩ সালে রাঙামাটি ফুডস প্রোডাক্ট লি. এক মামলায় হাইকোর্ট বেঞ্চ সিএইচটি রেগুলেশনকে ডেট ল বা অকার্যকর আইন বলে রায় দেয়। এ রায়ের ফলে ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তি, পার্বত্য জেলা পরিষদ, আঞ্চলিক পরিষদসহ এবং সিএইচটি রেগুলেশনের সৃষ্ট প্রথাগত প্রতিষ্ঠানসমূহ সংকটের মুখে পড়ে।
এ রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করা হলে সুপ্রীমকোর্ট ২০১৬ সালে ২২ নভেম্বর সিএইচটি রেগুলেশনকে একটি কার্যকর ও বৈধ আইন বলে রায় দেয়।
অন্যদিকে সুপ্রীম কোর্ট বিচারধীন ওয়াগ্গা ছড়া টি স্টেট অপর এক মামলার ২০১৪ সালে ২ ডিসেম্বর রায় দেয়।
দুটি রায়ই সিএইচটি রেগুলেশনকে কার্যকর বলে রায় দেয়।
উক্ত দুটি রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে সুপ্রীম কোর্টে রিভিউ আবেদন করেন খাগড়াছড়ির বাসিন্দা আব্দুর মালেক ও আব্দুল আজিজ আখন্দ।
এটর্নী জেনারেল উল্লেখিত দুজনের রিভিউ আবেদন গ্রহণ করে রিভিউর পক্ষে অবস্থান নিয়ে সুপ্রীম কোর্টের দুটি রায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন শব্দ, বাক্য, অনুচ্ছেদ বাদ দিয়ে হলফনামা আকারে সুপ্রীম কোর্টে দাখিল করেন। এ রিভিউ বেঞ্চ গ্রহণ করবে কিনা তার উপর শুনানী হবে আগামী ১৯ অক্টোবর।
চাকমা সার্কেল চীফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেন, সিএইচটি রেগুলেশনকে যখন মৃত আইন বলে রায় দেয়া হয় এ রায়ের বিরুদ্ধে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার আপীল করেছিল। এ আপীলে রেগুলেশনটি কার্যকরী আইন হিসেবে রায় পায়।
যেহেতু এটর্নী জেনারেল সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা সেহেতু এ রায়ের বিরুদ্ধে যারা রিভিউ চাচ্ছেন তাদের বিপক্ষে তাঁর অবস্থান থাকার কথা। কিন্তু তিনি তা না করে বরং রিভিউকে সমর্থন করে রায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন শব্দ, বাক্য, অনুচ্ছেদ বাদ দিয়ে হলফনামা আকারে সুপ্রীম কোর্টে দাখিল করেছেন। এটা এক প্রকার সরকারের পক্ষের রায়ের বিরোধীতা করার মত।
তাছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ তো সরকারী প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান যেহেতু সিএইচটি রেগুলেশন অনুসরণ করে সেহেতু এটর্নী জেনারেলের উচিত এদের সাথে আলোচনা করা। কিন্তু তিনি কোন আলোচনা না করে রেগুলেশনের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন শব্দ, বাক্য, অনুচ্ছেদ বাদ দিতে সুপ্রীম কোর্টে প্রার্থনা করেছেন।
লেখা এ্যাডঃ নিকোলাস চাকমা

কেন আঞ্চলিক স্বায়ত্ব শাসন?

বাংলাদেশ খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির নিকট পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের শাসনতান্ত্রিক অধিকার দাবীর- আবেদন পত্র গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ভাবী ...