রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৩

ভারত অনেক কিছুতে সফল হলে আমরা পারি না কেন? অনুরাগ চাঙমা

 

১৯৪৭ সালের আগে ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক আইডেন্টিটি একই ছিল। আমাদের এই তিনটি দেশের কালচারও একই। ইতিহাস একই। জিওগ্রাফি এবং ক্লাইমেট একই। এসব অনেক কিছুতে মিল থাকার পরও প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত অনেক কিছুতে (যেমন, সম্প্রতি চন্দ্রযান উৎক্ষেপণ) সফল হচ্ছে। কিন্ত, আমরা পারছি না কেন? Multivariate Perspective থেকে এই একটি প্রশ্নের অনেক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ আছে। অনেক Variable নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা করা যেতে পারে, যদিও আমি Institutionalist Perspective থেকে আলোচনাটা সীমাবদ্ধ রাখতে চায়।

এক
পড়ে নিতে পারেন Why Nations Fail: The Origin of Power, Prosperity and Poverty বইটি। এই বইয়ের মূল আর্গুমেন্ট হল একটি দেশের উন্নতি নির্ভর করে শক্তিশালী Political Institutions এবং Economic Institutions গড়ে তোলার উপর। এজন্য একটি দেশকে এগিয়ে নিতে হলে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন “Institution, Institution, Institution”। Daron Acemoglu এবং James A. Robinson-দের এই আর্গুমেন্টের উপর ভিত্তি করে বলা যেতে পারে, ভারত উপমহাদেশের এই তিনটি দেশ সমানভাবে Institution Building করতে পারেনি। যার ফলে এই তিন দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অগ্রগতির ক্ষেত্রে তারতম্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। অর্থাৎ, ভারত অনেক ক্ষেত্রে Institution Building করতে পেরেছে। যেটা বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে সম্ভব হয়নি। যেমন ধরুন, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে বারবার সেনাশাসন ফিরে এসেছে। আর ভারতে কি জেনারেলরা ক্ষমতা দখল করেছে? এই একটি উদাহরণ কি প্রমাণ করে না আমাদের Political Institution Building কেন ব্যর্থ হয়েছে?
দুই
একটি সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসে ভারতে একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী এ পি জে আব্দুল কালাম হয়েছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। একজন আদিবাসী নারী দ্রুপুদী মুরমু শক্তিশালী ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি। ভাদনগর রেল স্টেশনের একজন চা দোকানের মালিকের ছেলে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এটা কি প্রমাণ করে না সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসে যে কেউ মেধা থাকলে সরকার প্রধান হয়ে ভারতকে নেতৃত্বে দেওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারে? আর বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নির্ধারণ করে কে? Political Dynasty, তাই না? একজন চা দোকানের মালিকের সন্তান, একজন রিকশাওয়ালার সন্তান, একজন সাধারণ কৃষকের সন্তান এবং একজন আদিবাসী পরিবারের সন্তান কি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারে? কিন্ত এটা ভারতে সম্ভব হয়। অস্ট্রেলিয়াতে সম্ভব হয়। বিশ্বের পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রে সম্ভব হয়। কেন হয়? এসব দেশে পলিটিক্যাল লিডারশীপ নির্ধারণ হয় কোয়ালিটি দেখে। আর আমরা ফোকাস করি Political Dynasty উপর। বুঝতে পারছেন, বাংলাদেশে Political Institution Building হচ্ছে না কেন? তাই, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত অনেক কিছুতে সফল হলেও আমরা কেন পারছি না তার মূলে আছে আমাদের Institution Building-এর ব্যর্থতা।
তিন
আরেকটু পিছনে ফিরে যায়। নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতা গ্রহণের আগে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন একজন শিখ পরিবারের সন্তান ডঃ মনমোহন সিং। বাংলাদেশে কি এটা সম্ভব হতে পারে? ডঃ মনমোহন সিং পড়ালেখা করেছেন পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি এবং ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে। ভারতের অর্থনীতি বিষয়ে পিএইচডি করেছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পিএইচডি শেষ করে তার কর্মস্থল পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগে সিনিয়র লেকচারার হিসিবে যোগদান করেন। কাজ করেছেন জাতিসংঘেও। অধ্যাপক হিসিবে পড়িয়েছেন দিল্লি ইউনিভার্সিটির দিল্লি স্কুল অব ইকোনোমিকস-এ। এরকম একজন প্রথিতযশা এবং প্রজ্ঞাবান একাডেমিশিয়ান ভারত সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদেও অধিষ্ঠিত ছিলেন। যেমন, সরকারের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা, ভারতের রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর, পরিকল্পনা কমিশনের প্রধান, Ministry of Finance-এর সচিব এবং ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান। আর বাংলাদেশে কি এটা ২০২৩ সালে সম্ভব হবে? সর্বশেষ নবম পে-স্কেলটা দেখুন। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে কিভাবে নিচে নামিয়েছে? এসব করে কি দেশের কোন লাভ হচ্ছে? Institution Building করতে হলে তো আপনাকে Right person in right place-এ নিয়োগ দিতে হবে। এই Institution Building-এ সফল হতে হলে ভারতের মত নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে দেশ-বিদেশের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিশিয়ানদের থেকে আসতে পারে। আমাদের ক্যাডার সার্ভিস থেকে আসতে পারে। স্কুল এবং কলেজ শিক্ষকদের থেকে আসতে পারে। চিকিৎসকদের থেকে আসতে পারে। প্রকৌশলীদের থেকে আসতে পারে। It should be open, merit-based, and competitive।
মনে রাখতে হবে, সবায় তো আর ক্যাডার সার্ভিসের পরীক্ষা দেয় না। ধরুন, বাংলাদেশের যে ছেলেটি অথবা মেয়েটি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে। সে তো আর বিসিএস দেবে না। কিন্ত দেশের উন্নয়নে তো তার মেধা এবং স্কিল ব্যবহার করার প্রয়োজন আছে। তাকে সেই সুযোগ দেশকে দিতে হবে। যেটা ভারত করেছে। যেমন, ডঃ মনমোহন সিং তো আর ভারতের সিভিল সার্ভিসের ক্যাডার থেকে আসেনি। কিন্ত তিনি ভারতের Ministry of Finance-এর সচিব ছিলেন। আরকটি উদাহরণ যোগ করি। Gideon Rachman- এর লেখা “The Age of the Strongman: How the Cult of Leader Threatens Democracy around the World” বইটি পড়তে গিয়ে দেখলাম সেখানে Modi – Strongman Politics in the World’s Largest Democracy (2014) শিরোনামে একটি চ্যাপ্টার আছে। এই চ্যাপ্টারের ৭৯ পৃষ্টায় গিয়ে আমার চোখ আটকে যায়। ২০১৩-২০১৬ সময়ে ভারতের রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর হিসিবে দায়িত্ব পালন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক Raghuram Rajan। আরও দেখতে পারেন ভারতের Asoka University ওয়েবসাইটটি। কি মানের শিক্ষক এখানে গবেষণা এবং পাঠদান করে? কিভাবে ভারত Institution Building করেছে তা বুঝানোর জন্য এসব উদাহরণ টানলাম। তাই, তাদের চন্দ্রযান চাঁদের মাটি স্পর্শ করবে তাতে অবাক হওয়ার কি আছে?
চার
বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে হলে দরকার “Institution, Institution, Institution”। এই যে দেশের শেয়ার বাজার, ডিমের বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আমলাতন্ত্র, নির্বাচন এবং পার্লামেন্ট কোন কিছুই Effectively কাজ করছে না। কোন জায়গাতে জবাবদিহিতা নেই। স্বচ্ছতা নেই। সব কিছুই Politicised হয়ে গেছে। এসবে ফোকাস না করে ভারতের চন্দ্রযান-৩ নিয়ে আলোচনা করার দরকার আছে কি?

কেন আঞ্চলিক স্বায়ত্ব শাসন?

বাংলাদেশ খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির নিকট পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের শাসনতান্ত্রিক অধিকার দাবীর- আবেদন পত্র গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ভাবী ...