![]() |
৩০ এপ্রিল ২০২২, রাঙ্গামাটি[1]: রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন এলাকায় এক নিরীহ জুম্ম প্রথমে মগ পার্টির সন্ত্রাসীদের কর্তৃক অমানুষিক নির্যাতন এবং পরে সেনাবাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার ও মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী ব্যক্তির নাম চিনুমং মারমা (৩০), পিতা-মৃত মংহ্লাচিং মারমা। চিনুমং মারমার মূল বাড়ি রাজস্থলী উপজেলার ১নং ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামে। তার স্ত্রীর বাড়ি বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের হেডম্যান পাড়া গ্রামে। বিয়ের পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে তিনি বাঙ্গালহালিয়ার হেডম্যান পাড়া গ্রামে তার শশুর বাড়িতেই বসবাস করছেন।
চিনুমং মারমা একজন নিরীহ গ্রামবাসী এবং পেশায় রিকশা চালক ও দিনমজুর বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ এপ্রিল ২০২২ বিকালের দিকে চিনুমং মারমা কাজ শেষে বাজার থেকে তরিতরকারি নিয়ে শশুর বাড়িতে আসেন। সন্ধ্যা নেমে আসলে বাড়ির উঠোনে বের হওয়ার পরপরই মগ পার্টির দুই সন্ত্রাসী চিনুমং মারমাকে চেপে ধরে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে দেয় এবং অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে মগ পার্টির সন্ত্রাসীরা সারারাত ধরে চিনুমং মারমাকে মারধর করে এবং ইলেকট্রিক শক দিয়ে নির্যাতন করে। নির্যাতন করতে করতে এক পর্যায়ে মগ পার্টির সন্ত্রাসীরা চিনুমং মারমাকে জোরপূর্বক সে একজন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’র (পিসিজেএসএস) তথাকথিত সশস্ত্র সদস্য বলে স্বীকার করতে বাধ্য করে।
সূত্রটি আরও জানায়, এর পরদিন ২৯ এপ্রিল ২০২২ সকালে চিনুমং মারমার বাঁধা চোখ খুলে দেওয়া হয়। এসময় চিনুমং মারমা দেখতে পায় যে, সে বাঙ্গালহালিয়া সেনা ক্যাম্পে রয়েছে এবং তার সামনে একটি অস্ত্র রাখা হয়েছে। এরপর বাঙ্গালহালিয়া সেনা ক্যাম্পের সেনা সদস্যরা চিনুমং মারমাকে জেএসএস’এর সশস্ত্র সদস্য, তবে রান্নাবান্না কাজে নিয়োজিত বলে স্বীকার করতে বাধ্য করে।
পরে সেনাবাহিনী তাদের একটি টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে একটি একনলা বন্দুক ও গুলিসহ চিনুমং মারমাকে আটক করেছে বলে বিভিন্ন অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে মিথ্যা দাবি করে। তবে জেএসএস এর স্থানীয় সূত্র সেনাবাহিনীর এই দাবিকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করে।
এরপর সেনাবাহিনী মিথ্যা মামলায় জড়িত করে নিরীহ চিনুমং মারমাকে কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনা থানা পুলিশের নিকট সোপর্দ করেছে বলে জানা গেছে।
৩০ এপ্রিল ২০২২, ঢাকা[2]: গতকাল শুক্রবার ২৮ জন বিশিষ্ট নাগরিকের পক্ষে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, বান্দরবানের লামা উপজেলার লাংকম ম্রো পাড়ায় রাবার কোম্পানীটি আদিবাসীদের প্রায় একশ একর জুমের বাগান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। এতে ধান, আম, কলা, আনারসসহ পুরো বাগান পুড়ে গেছে।
এর আগে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লি: স্থানীয় ভূমিদস্যূদের সহায়তায় বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের লাংকম ম্রো কার্বারি পাড়া, জয়চন্দ্র ত্রিপুরা কার্বারি পাড়া এবং রেংয়েন ম্রো কার্বারি পাড়ার আদিবাসীদের প্রায় ৩০০ একর জুম ভূমি দখল করেছে। প্রতিবাদ করলে বিভিন্ন সময় আদিবাসীদের বিরুদ্ধে এই কোম্পানি মিথ্যা মামলা করেছে।
বিবৃতিতে অভিযোগ করে বলা হয়, সমতলের আদিবাসীদের ভূমির মালিকানা দেশের প্রচলিত আইনে নির্ধারণ করা হলেও তিন পার্বত্য জেলায় আদিবাসীদের ভূমি মালিকানা সামাজিক। ‘সার্বজনীন সম্পদ-সম্পত্তি মালিকানা অধিকার’ নীতিই হলো তাদের ভূমি মালিকানার ভিত্তি। ফলে এই মালিকানা বংশ পরম্পরায় মৌখিক। তিনটি সার্কেলের আওতায় পার্বত্য পাড়ার হেডম্যান এবং কারবারিরা এর ব্যবস্থাপনা করে থাকেন। কিন্তু গত ৩০ বছরে এই পার্বত্য পাড়ার নিয়ন্ত্রণাধীন ভূমির পরিমাণ শতকরা ৫১ ভাগ কমে গেছে। আরেক কথায় বলা যায়, পাহাড়িদের সামাজিক মালিকানার অর্ধেকেরও বেশি ভূমি ও ভূসম্পদ হাতছাড়া হয়ে গেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বান্দরবানের লামা উপজেলার লাংকম ম্রো পাড়ায় জুমের বাগান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় প্রশাসনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ না থাকার বিষয়টি আমাদের গভীরভাবে হতাশ করেছে; আমরা উদ্বিগ্ন। বাগান পুড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত আদিবাসী পরিবারগুলোর শিগগিরই খাদ্য সংকটে পরার আশংকা রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ন্যায় বিচারের লক্ষ্যে কোনো প্রকার ব্যবস্থা কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে থেকে তাদের আশ্বস্থও করা হয়নি, যা আমাদের বিক্ষুব্ধ করেছে।
বিবৃতিদাতারা অনতিবিলম্বে বান্দরবানের লামা উপজেলার লাংকম ম্রো পাড়ায় রাবার কোম্পানী কর্তৃক আদিবাসীদের প্রায় একশ একর জুমের বাগান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় আইনানুগ প্রতিকারের লক্ষ্যে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত সম্পন্ন করা, দায়ীদের অবিলম্বে গ্রেফতার, ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপত্তা ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং পাড়াগুলোতে ম্রো জনগোষ্ঠীর মানুষের দখলসত্ব নিশ্চিত করার দাবি জানান।
বিবৃতিদাতারা হলেন- ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি-লীর সদস্য রামেন্দু মজুমদার, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী, মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চের সদস্য সচিব ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সভাপতি এস এম এ সবুর, উন্নয়নকর্মী খুশী কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহিদুল বারী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পারভেজ হাসেম, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, জাতীয় শ্রমিক জোটের কার্যকরী সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, সংস্কৃতিকর্মী ড. সেলু বাসিত, সমাজকর্মী রাজিয়া সামাদ ডালিয়া, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী, সংস্কৃতিকর্মী এ কে আজাদ, অলক দাস গুপ্ত, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক অ্যাডভোকেট জীবনানন্দ জয়ন্ত, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিভূতী ভূষণ মাহাতো, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি কাজী আব্দুল মোতালেব জুয়েল, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বিসিএলের সভাপতি গৌতম শীল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দনওয়াই ম্রো।
২৭ এপ্রিল ২০২২, বান্দরবান[3]: বান্দরবান পার্বত্য জেলাধীন লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে আদিবাসী জুম্মদের জুমভূমি ও বাগানভূমি দখলে নিতে বহিরাগত রাবার কোম্পানির ভূমিদস্যুরা অবশেষে পাহাড়ে আগুন দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও বিভিন্ন ব্যক্তি ভূমিদস্যুদের কর্তৃক পাহাড়ে আগুন দেয়ার লাইভ ভিডিও ও স্থিরচিত্র শেয়ার করতে দেখা গেছে।
এই অবস্থায় ম্রো ও ত্রিপুরা জাতিগোষ্ঠী অধ্যুষিত স্থানীয় তিন আদিবাসী গ্রামের ৩৯টি পরিবার এখন উচ্ছেদ আতঙ্কে রয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের এক রাবার কোম্পানির মালিক ও উপ-পরিচালক ভূমিদস্যু মোঃ কামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে বহিরাগত শ্রমিকরা ইতোমধ্যে কয়েক দফায় ওই আদিবাসীদের প্রায় ২৫০-৩০০ একর পরিমাণ জুমভূমির জঙ্গল ও বিভিন্ন প্রজাতির বনজ ও ফলদ গাছ কেটে দেয়। অবশেষে গতকাল ২৬ এপ্রিল ২০২২ সকালের দিকে ভূমিদস্যু মোঃ কামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে ৬০-৭০ জনের একদল বহিরাগত শ্রমিক আদিবাসীদের ওই পাহাড় এলাকায় আগুন দিয়েছে।
স্থানীয় জনগণের অভিযোগ, গতকালও সকালে প্রথমে ভূমিদস্যু মোঃ কামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে বহিরাগত শ্রমিকরা দা ও লাঠিসোটা নিয়ে ঐ এলাকায় আসে এবং জঙ্গল পরিষ্কার করে ও বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে দেয়। এক পর্যায়ে তারা সেগুলোতে এবং অন্যান্য এলাকায় আগুন ধরিয়ে দেয়। আদিবাসীদের ওই ভূমি বেদখল সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যেই এই অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে অভিযোগ করেন আদিবাসীরা।
উক্ত ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মেনসিং ম্রো ও মেনরাও ম্রোসহ অনেকে অভিযোগ করেন, ভূমি বেদখলকারী লোকজন তাদের ভয়ভীতি ও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এ কাজ করছে। অথচ উপজেলা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আদিবাসীদেরকে ১৫০ একর জায়গা ছেড়ে দেবে রাবার কোম্পানি। কিন্তু সেসব স্থান থেকে কাঠ, বাঁশ, লাকড়ি সংগ্রহ করতেও বাধা দিচ্ছে রাবার কোম্পানির লোকজন। সব গাছ ও জঙ্গল কেটে আজ মঙ্গলবার আগুন লাগিয়ে পুড়ে দিচ্ছে। জঙ্গল কাটার সময় রোহিঙ্গা শ্রমিকসহ লাঠিয়াল বাহিনী পাহারা দিয়ে থাকার পাশাপাশি মদ জুয়ার আড্ডা বসায় সেখানে।
তারা আরো জানান, কোম্পানি কর্তৃক স্থানীয় আদিবাসীদের ভূমি জবরদখলের কারণে এখন আদিবাসীদের আছে শুধুমাত্র পাড়ার জায়গাগুলো। আদিবাসীরা পাড়ার বাইরে গরু-ছাগল চড়াতে গেলে কোম্পানির লোকজন বাধা দেয়। তারা প্রশ্ন করেন, জুমচাষ করতে না পারলে, চলাচল করতে না পারলে, গরু-ছাগল পালতে না পারলে খাব কী? নিরুপায় হয়ে কি পাড়া ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যেতে হবে ?
স্থানীয় আরেক গ্রামবাসী অনারাম ত্রিপুরা বলেন, ৪৫ বছর ধরে ৩০৩নং ডলুছড়ি মৌজাস্থ নিজেদের জায়গায় জুমচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। সেখানে ফলের বাগান চাষ করে আসছি। অথচ এত বছর পরে কোম্পানি এসে বলছে, এসব জায়গা তাদের।
তিনি আরও বলেন, জুমচাষ ছাড়া আমাদের চলার কোন বিকল্প ব্যবস্থা নেই। যে কোন মুহূর্তে কোম্পানির লোকজন আমাদের উপর হামলা করতে পারে। দখলকৃত জায়গা-জমির মধ্যে রোপিত বাঁশ-গাছ কাটা ও চাষাবাদের কাজে কোম্পানির লোকজন বাধা দিচ্ছেন।
লাংকম পাড়ার কার্বারি লাংকম ম্রো বলেন, যুগ যুগ ধরে পাড়াগুলোর আশপাশের জায়গাতে জুমচাষ করে আসছেন আমাদের পরিবারগুলো। এখন লামা রাবার কোম্পানি সেই জায়গাগুলো দখল করার চেষ্টা করছে। গত বছরও তারা ১০০ একরের মত দখল করেছে। এ বছরও প্রায় দখলের উদ্দেশ্যে ২৫০ থেকে ৩০০ একর জায়গার জঙ্গল ও গাছ কেটে পরিস্কার করেছে।
উল্লেখ্য যে, সরই ইউনিয়নে রাবার কোম্পানির নামে বহিরাগত মুসলিম বাঙালি ভূমিদস্যুদের কর্তৃক আদিবাসী জুম্মদের তিনটি গ্রামের প্রায় ৪০০ একর পরিমাণ ভূমি ও বাগান বেদখলের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত ৯ এপ্রিল ২০২২ সকাল ৯:০০ টার দিকে শতাধিক বহিরাগত বাঙালি লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঐ এলাকায় এসে জুম্মদের লাগানো শত শত গাছ কেটে দেয় ও জঙ্গল পরিষ্কার করে। আদিবাসীরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাদেরকে হামলার চেষ্টা করে, মেরে ফেলার হুমকি দেয় এবং একজন আদিবাসী জুম্মকে মারতে পারলে তারা দশ লাখ টাকা পাবে বলেও উল্লেখ করে।
জানা গেছে, ঐ দিন লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ এর উপ-পরিচালক মোঃ কামাল উদ্দিন জুম্মদের ভূমি দখলের জন্য নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারি ও কক্সবাজার এলাকা থেকে ১০০ জনের অধিক সশস্ত্র রোহিঙ্গা ও বাঙালি মুসলিম নিয়ে আসেন। স্থানীয় জুম্মরা বাধা দেয়া সত্তেও ওই বহিরাগত ভূমিদস্যুরা জুম্মদের গাছ কেটে দেয় ও জঙ্গল পরিষ্কার করে। জানা গেছে, এই ভূমি বেদখলের চেষ্টায় নেতৃত্ব দেয় লিডার নুরু নামের এক সন্ত্রাসী ও মস্তান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সরই ইউনিয়নের দুলুছড়ি মৌজার ৪নং ওয়ার্ডের লাংখুম ম্রো কার্বারি পাড়া, রেংয়েন ম্রো কার্বারি পাড়া ও জয়চন্দ্র ত্রিপুরা কার্বারি পাড়ায় ৩৯ পরিবারের প্রায় ২০০ নারী-পুরুষ বসবাস করে আসছেন। তাদের গ্রামের প্রায় ৪০০ একর ভূমিতে তারা বংশপরম্পরায় জুমচাষ ও বাগান-বাগিচা করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। কিন্তু ২০১৯ সালে হঠাৎ লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজ নামের একটি কোম্পানী রাবার প্লটের নামে জুম্মদের ঐসব ভূমি দখলে নেয়ার অপচেষ্টা শুরু করে। এসময় গ্রামবাসীরা বাঁধা দিলে, কোম্পানির লোকেরা জুম্মদের মামলা, হামলা, খুন ও পুলিশের ভয় দেখায়। তখন থেকে কোম্পানির লোকেরা একাধিকবার শ্রমিক এনে জুম্মদের ঐ ভূমি বেদখলের চেষ্টা করে।
সরই মৌজা হেডম্যান দূর্যধন ত্রিপুরা ও মৌজা হেডম্যানের সাবেক মুহুরী হাজিরাম ত্রিপুরার মদদে রাবার কোম্পানি এসব জায়গা জবর দখলের সাহস পাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন গ্রামবাসী। তবে অভিযুক্ত দূর্যধন ত্রিপুরা বলেন, আমি একজন হেডম্যান হয়ে কোম্পানিকে মদদ দেওয়ার প্রশ্নই উঠে না। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।
এ বিষয়ে ডলুছড়ি মৌজা হেডম্যান যোহন ত্রিপুরা জানান, লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজের লোকজন যে জায়গাগুলো পরিষ্কার করছে, মূলত সে জায়গাগুলো লাংকম কার্বারি পাড়া, জয়চন্দ্র ত্রিপুরা কার্বারি পাড়া ও রেংয়েন ম্রো কার্বারি পাড়াবাসীর। তারা বংশ পরম্পরায় ওই জায়গায় জুম চাষের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। মাঝখানে যখন আমার হেডম্যানশিপ ছিল না, তখন এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কোম্পানি ওইসব জায়গা জবরদখল শুরু করেন।
২৪ এপ্রিল ২০২২, রাঙ্গামাটি: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন কাউখালি উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নে এক নিরীহ জুম্ম আটক ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সেনাবাহিনীর আটক ও নির্যাতনের শিকার ব্যক্তির পরিচয় জয়ন্ত তঞ্চঙ্গ্যা (৩৮), পীং-সুরেশ চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা, গ্রাম-কলাবাগান এলাকা, ঘাগড়া ইউনিয়ন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ২৩ এপ্রিল ২০২২ সকাল আনুমানিক ১০:০০ টার দিকে ঘাগড়া সেনা ক্যাম্প হতে ২০/২৫ জনের একটি সেনাদল এবং তাদের সাথে গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এর সদস্য মোঃ পাবেল ঘাগড়া ইউনিয়নের কলাবাগান এলাকায় টহল অভিযানে যায়। এসময় সেনা সদস্যরা কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা জয়ন্ত তঞ্চঙ্গ্যার বাড়ি ঘেরাও করে এবং জয়ন্ত তঞ্চঙ্গ্যাকে আটক করে ঘাগড়া সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যায়।
সেনা সদস্যরা ঘাগড়া সেনা ক্যাম্পে জয়ন্ত তঞ্চঙ্গ্যাকে প্রায় ৫-৬ ঘন্টা আটক করে রাখে। আটকের সময় সেনাবাহিনী ‘জয়ন্ত তঞ্চঙ্গ্যা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস)-কে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে’ বলে অভিযোগ তুলে জয়ন্ত তঞ্চঙ্গ্যার উপর অমানুষিকভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়।
পরে বিকাল ৪:০০ টার দিকে ঘাগড়া ক্যাম্পের সেনা সদস্যরা জয়ন্ত তঞ্চঙ্গ্যার কাছ থেকে সাদা কাগজে দস্তখত নিয়ে জয়ন্ত তঞ্চঙ্গ্যাকে তার পিতা সুরেশ তঞ্চঙ্গ্যার হাতে ছেড়ে দেয়।
২৩ এপ্রিল ২০২২, বান্দরবান[4]: গতকাল পার্বত্য জেলা বান্দরবানে সেনাবাহিনী ও ইসলামী জঙ্গীদের মদদপুষ্ট বমপার্টি নামে খ্যাত কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের প্রতিনিধিদের সাথে পৃথকভাবে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের ষড়যন্ত্রমূলক গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। বৈঠকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) কর্মীদের নির্মূল করা, বমপার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করা, সেনা ক্যাম্প সম্প্রসারণে সহায়তা করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা যায়।
সূত্রটি জানায়, গতকাল ২২ এপ্রিল ২০২২ সকাল আনুমানিক ১০:০০ টার দিকে অত্যন্ত গোপনে প্রথম বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় বমপার্টির প্রতিনিধিদের সাথে সেনাবাহিনীর মধ্যে বান্দরবান সেনা ব্রিগেডে। এই বৈঠকে সেনাবাহিনীর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন বান্দরবান ব্রিগেডের জি টু আই ক্যাপ্টেন মোঃ নাইম, এফআইইউ’র বান্দরবানের প্রতিনিধি মোঃ এমদাদ হোসেনসহ কয়েকজন সেনা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তা। অপরদিকে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের বান্দরবান জেলার সমন্বয়ক চেওসিম বম, আদুম বম, লাল থান সাং বমসহ সাত জন প্রতিনিধি। তারা সবাই বম সম্প্রদায়ের। চেওসিম বম এর বাড়ি বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের সাইরন বম পাড়া গ্রামে। আদুম বম ও লাল থান সাং বম উভয়ের বাড়ি জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলার রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নে।
অপরদিকে, একই দিন (২২ এপ্রিল ২০২২) সন্ধ্যা ৬:০০ টা হতে রাত ৮:০০ টার মধ্যে দ্বিতীয় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় বমপার্টির প্রতিনিধিদের সাথে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের মধ্যে বান্দরবানের মেঘলার পর্যটন মোটেলের ৩১০ নং কক্ষে। জানা গেছে, এই বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা ছিল স্বয়ং আওয়ামীলীগের বান্দরবান জেলা কমিটির সভাপতি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমা। কিন্তু সেই সময় তিনি ঢাকায় অবস্থান করায় তার প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামীলীগের জেলা কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক, রোয়াংছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বেতছড়া মৌজার হেডম্যান হ্লাথোয়াইহ্রী মারমা এবং বান্দরবান সদর উপজেলার জামছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যসিংশৈ মারমা। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন আওয়ামীলীগের নেতা ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য জুয়েল বম। অপরদিকে এই বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের প্রতিনিধি চেওসিম বম, আদুম বম, লাল থান সাং বমসহ সাত জন। এছাড়াও এই বৈঠকে বান্দরবান সেনা জোনের প্রতিনিধি ক্যাপ্টেন মোঃ মিসবাহুল ইসলাম ফুয়াদ এবং ডিজিএফআই, এএসইউসহ চারটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়।
জানা গেছে, উভয় বৈঠকে মূলত বান্দরবান জেলা থেকে পিসিজেএসএস এর কর্মীদের নির্মূল করা, বান্দরবান জেলা ও রাঙ্গামাটি জেলার সাতটি উপজেলায় বমপার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করা, ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক), মগ পার্টি ইত্যাদি সংগঠনের সাথে যোগাযোগ না রাখা এবং সরকার কর্তৃক বিভিন্ন এলাকায় সেনাক্যাম্প সম্প্রসারণের পাশাপাশি আর্মড পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনে সহায়তা প্রদানের বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া বৈঠকে প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে বম পার্টির সশস্ত্র ক্যাম্প স্থাপন করার পরিকল্পনাও করা হয়।
বৈঠকে সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা প্রতিনিধিদের কর্তৃক বান্দরবানে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও মগ পার্টির কার্যক্রমের উপর অসন্তোষ প্রকাশ করা হয় বলে জানা যায়। সেনাবাহিনী, গোয়েন্দাবাহিনী ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ দীর্ঘদিন ধরে পিসিজেএসএস এর নেতাকর্মী ও পার্বত্য চুক্তির সমর্থকদের খুন, অপহরণসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও মগ পার্টির সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে আসছিল। কিন্তু সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দাবাহিনী ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও মগ পার্টির সন্ত্রাসীদের পিসিজেএসএস বিরোধী সাম্প্রতিক কর্মকান্ডে সন্তুষ্ট নয় বলে জানা যায়। এই কারণে সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দাবাহিনী ভবিষ্যতে বমপার্টির সশস্ত্র গোষ্ঠীকে কাজে লাগাতে চায় বলে জানা যায়।
জানা গেছে, সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দাবাহিনী আগামীতে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সশস্ত্র গ্রুপকে খাগড়াছড়ি পাঠাতে চায় এবং মগ পার্টিকে রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলায় সীমাবদ্ধ রাখতে চায়।
একই দিন বিকেলের দিকে বমপার্টির প্রতিনিধিরা বান্দরবান সরকারি কলেজের প্রাক্তন শিক্ষক অধ্যাপক থানজামা লুসাইয়ের সাথে দেখা করেন বলে জানা যায়। তবে বমপার্টির প্রতিনিধিরা বমপার্টির বিষয়ে আলোচনা করলেও অধ্যাপক থানজামা কোনো মতামত দেননি বলে জানা গেছে।
একটি সূত্র জানায়, উক্ত বৈঠকে অংশগ্রহণকারী আদুম বম আজ ২৩ এপ্রিল ২০২২ বান্দরবান শহরে অন্তত ১ লক্ষ টাকার প্যান্ট, গেঞ্জি, ব্যাগ ও বিভিন্ন ঔষধপত্র ক্রয় করেন। ধারণা করা হচ্ছে, বমপার্টির সশস্ত্র কর্মীদের জন্যই আদুম বম এসব জিনিসপত্র ক্রয় করেন।
· ১৯ এপ্রিল ২০২২ সন্ধ্যা ৬টায় নাইক্যাপাড়া সেনা ক্যাম্প হতে একদল সেনা সদস্য টহলের নাম করে গুইমারা উপজেলার হাফছড়ি ইউনিয়নের কুকিছড়া গ্রামে আসে। এ সময় সেনা সদস্যরা চাইসা মারমা, নাগাচাই মারমা, মংসাথোয়াই মারমাসহ ৬ জন স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া ছাত্রকে লাইনে দাঁড় করিয়ে সবার মোবাইল ফোন জমা নেয়। এরপর সেনারা তাদের ছবি তোলে। তাদেরকে ছবি তোলার সময় সেনা সদস্য ইচ্ছে করে গুইমারা কলেজের ছাত্র নাগাচাই মারমার স্মার্ট ফোন ভেঙে দিয়ে হয়রানি করা হয়। এতে আশে-পাশের থাকা নারীরা এগিয়ে এসে ছাত্রদের হয়রানি ও মোবাইল ফোন ভেঙে দেয়ার কারণ জানতে চাইলে সেনারা নারীদের সাথে বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এতে এক পর্যায়ে যুক্তিতে পেরে না ওঠে সেনা সদস্যরা ২,৫০০ টাকা দিয়ে চলে যায়”।
১৮ এপ্রিল ২০২২ খ্রি[5]. খুলনার কয়রা উপজেলার নলপাড়া গ্রামের এক আদিবাসী নারী (২২) সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ধর্ষণের শিকার নারীকে কয়রা থানা পুলিশ উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।কয়রা থানার ওসি রবিউল হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে জানান, রোববার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে উপজেলার নলপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনায় জড়িতদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সোহরাব আলী শেখ বলেন, ওই নারীর স্বামী ইটভাটায় কাজ করেন। কাজের সুবাদে তাকে বাড়ির বাইরে থাকতে হয়। দুর্বৃত্তরা বাড়ি ফাঁকা থাকার সুযোগ নিয়েছে।
কয়রা থানার পুলিশ ওই নারীকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিয়েছেন। এ ঘটনায় সোমবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে ৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
কয়রা থানার পরিদর্শক(তদন্ত) মো. ইব্রাহীম আলী সোমবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, গণধর্ষণের ঘটনায় ৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুপুরে থানায় আনা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। সার্কেল এসপি আসার পর যাছাই বাছাই করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
· ‘ভাগ করো শাসন করো’ উপনেবিশক নীতির ভিত্তিতে সেনাবাহিনী ও ইসলামী
জঙ্গীদের মদদে ২০০৮ সালে বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার নাথান বমকে সভাপতি ও ভাঙচুনলিয়ান বমকে সাধারণ সম্পাদক করে বম জনগোষ্ঠীর কতিপয় সুবিধাবাদী ও তাবেদার ব্যক্তি কর্তৃক কুকি-চিন ডেভেলাপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও) নামে বমপার্টি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে ঐ সংগঠনটির নাম কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট নামে নাম পরিবর্তন করা হয় এবং কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ)[6] নামে এর সশস্ত্র গ্রুপ গঠন করা হয়।
আবির্ভাব হওয়ার সাথে সাথে এই সংগঠনটি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী ও জনসংহতি সমিতির বিরুদ্ধে এবং চাকমা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক উস্কানীমূলক প্রচারনা শুরু করে।
কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট নামে বমপার্টির নিজস্ব ফেসবুক একাউন্টে ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে প্রচার করা হয় যে, “পার্বত্য চট্টগ্রাম জুম্মল্যান্ড নয়, এটি কুকি-চীন টেরিটোরি।”
৯ এপ্রিল ২০২২, বান্দরবান[7]: আজ আবারও বান্দরবান পার্বত্য জেলাধীন লামা উপজেলার সরই
ইউনিয়নে রাবার কোম্পানির নামে বহিরাগত মুসলিম বাঙালি ভূমিদস্যুদের কর্তৃক আদিবাসী জুম্মদের তিনটি গ্রামের প্রায় ৪০০ একর পরিমাণ ভূমি ও বাগান বেদখলের চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভূমিদস্যুরা দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় আদিবাসীদের জীবন ও জীবিকার প্রধান অবলম্বন এইসব ভূমি বেদখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছে।
আজ (৯ এপ্রিল ২০২২) আবার সকাল ৯:০০ টার দিকে শতাধিক বহিরাগত বাঙালি লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঐ এলাকায় এসে জুম্মদের লাগানো শত শত গাছ কেটে দেয় ও জঙ্গল পরিষ্কার করে। আদিবাসীরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাদেরকে হামলার চেষ্টা করে, মেরে ফেলার হুমকি দেয় এবং একজন আদিবাসী জুম্মকে মারতে পারলে তারা দশ লাখ টাকা পাবে বলেও উল্লেখ করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সরই ইউনিয়নের দুলুছড়ি মৌজার ৪নং ওয়ার্ডের লাংকম ম্রো কার্বারি পাড়া, রেংয়েন ম্রো কার্বারি পাড়া ও জয়চন্দ্র ত্রিপুরা কার্বারি পাড়ায় ৩৯ পরিবারের প্রায় ২০০ নারী-পুরুষ বসবাস করে আসছেন। তাদের গ্রামের প্রায় ৪০০ একর ভূমিতে তারা বংশপরম্পরায় জুমচাষ ও বাগান-বাগিচা করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। কিন্তু ২০১৯ সালে হঠাৎ লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজ নামের একটি কোম্পানী রাবার প্লটের নামে জুম্মদের ঐসব ভূমি দখলে নেয়ার অপচেষ্টা শুরু করে। এসময় গ্রামবাসীরা বাঁধা দিলে, কোম্পানির লোকেরা জুম্মদের মামলা, হামলা, খুন ও পুলিশের ভয় দেখায়। তখন থেকে কোম্পানির লোকেরা একাধিকবার শ্রমিক এনে জুম্মদের ঐ ভূমি বেদখলের চেষ্টা করে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ এর উপ-পরিচালক মোঃ কামাল উদ্দিন জুম্মদের ভূমি দখলের জন্য আজ নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারি ও কক্সবাজার এলাকা থেকে ১০০ জনের অধিক সশস্ত্র রোহিঙ্গা ও বাঙালি মুসলিম নিয়ে আসেন। স্থানীয় জুম্মরা বাধা দেয়া সত্তেও ওই বহিরাগত ভূমিদস্যুরা জুম্মদের গাছ কেটে দেয় ও জঙ্গল পরিষ্কার করে। জানা গেছে, এই ভূমি বেদখলের চেষ্টায় নেতৃত্ব দেয় লিডার নুরু নামের এক সন্ত্রাসী ও মস্তান।
স্থানীয় আদিবাসীদের অভিযোগ, লামা রাবার ইন্ড্রাষ্টিজ নামের একটি কোম্পানীর লোকেরা জুম্মদের ভূমি দখলের উদ্দেশ্যে গত কয়েকদিনে শত শত বনজ, ফলদ গাছ কেটে দেয় ও একটি খামার ঘর আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগও করা হয়। বর্তমানে ভূমিদস্যুদের হুমকিতে ভীত তিন পাড়ার সবাই। এসব বিষয়ে গ্রামবাসী প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে জায়গা জবরদখল বিষয়ে আবেদন করে আসলেও কোন সূরাহা হয়নি বলে পাড়াবাসীর অভিযোগ। জায়গা বেদখলকে কেন্দ্র করে যে কোন মুহূর্তে দুই পক্ষের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
গ্রামবাসীদের একটি সূত্র জানায়, ঐ ভূমি বেদখলের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সেনামদদপুষ্ট সংস্কারপন্থীরা রাবার কোম্পানির উপ-পরিচালক মোঃ কামাল উদ্দিনের কাছ থেকে একটি মোটা অংকের টাকা নিয়েছে। লাংকম ম্রো কার্বারি পাড়ার কার্বারি লাংকম ম্রো ঐ টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা ভাগ পেয়েছে।
অপরদিকে সরই মৌজা হেডম্যান দূর্যধন ত্রিপুরা ও মৌজা হেডম্যানের সাবেক মুহুরী হাজিরাম ত্রিপুরার মদদে রাবার কোম্পানি এসব জায়গা জবর দখলের সাহস পাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন গ্রামবাসী। তবে অভিযুক্ত দূর্যধন ত্রিপুরা বলেন, আমি একজন হেডম্যান হয়ে কোম্পানিকে মদদ দেওয়ার প্রশ্নই উঠে না। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।
গ্রামবাসীরা জানান, গত ২০-২৫ দিনে শতাধিক শ্রমিক লাগিয়ে প্রায় ২৫০-৩০০ একর জায়গার জঙ্গল ও বিভিন্ন প্রজাতির গাছ জোরপূর্বক কেটে ফেলেছে কোম্পানীর লোকজন।
মেনসিং ম্রো ও মেনরাও ম্রোসহ কয়েকজন গ্রামবাসী অভিযোগ করেন, ভূমি দখলকারীরা তাদের ভয়ভীতি ও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এই কাজ করছে। ঐ এলাকা থেকে কাঠ, বাঁশ, লাকড়ি সংগ্রহ করতেও জুম্মদের বাধা দিচ্ছে ভূমিদস্যুরা। গাছ ও জঙ্গল কেটে তাতে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। জঙ্গল কাটার সময় রোহিঙ্গা ও বহিরাগত বাঙালি শ্রমিকরা লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে পাহারা দিয়ে থাকে এবং পাশাপাশি মদ জুয়ার আড্ডা বসায় সেখানে।
তারা আরো জানায়, কোম্পানির জবরদখলের কারণে এখন বাকী আছে শুধু পাড়ার বাড়ির জায়গাগুলো। লোকজন গ্রামের বাইরে গরু-ছাগল চরাতে গেলে ভূমিদ্যুরা বাধা দেয়। তারা প্রশ্ন করেন, জুমচাষ করতে না পারলে, চলাচল করতে না পারলে, গরু-ছাগল পালতে না পারলে আমরা খাব কী? নিরুপায় হয়ে কি পাড়া ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যেতে হবে?
গ্রামবাসী অনারাম ত্রিপুরা বলেন, ৪৫ বছর ধরে ৩০৩নং ডলুছড়ি মৌজাস্থ নিজেদের জায়গায় জুমচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। অথচ এত বছর পরে কোম্পানির লোকজন এসে বলছে, এসব জায়গা তাদের।
তিনি বলেন, এই জুমচাষ ছাড়া আমাদের চলার কোন বিকল্প ব্যবস্থা নেই। যে কোন মুহূর্তে কোম্পানির লোকজন আমাদের উপর হামলা করতে পারে। ঐ জায়গা-জমির মধ্যে রোপিত বাঁশ-গাছ কাটা ও চাষাবাদের কাজে কোম্পানির লোকজন বাধা দিচ্ছেন।
লাংকম পাড়ার কার্বারি লাংকম ম্রো বলেন, যুগ যুগ ধরে গ্রামগুলোর আশপাশের জায়গাতে জুমচাষ করে আসছেন পরিবারগুলো। এখন লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ সেগুলো দখল করার চেষ্টা করছে। গত বছরও ১০০ একরের মত দখল করেছে। এ বছরও দখলের উদ্দেশ্যে ২৫০ থেকে ৩০০ একর জায়গার জঙ্গল ও গাছ কেটে পরিষ্কার করেছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপক আরিফ হোসেন বলেন, কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারগণের নামে ১৯৮৮-৮৯ সালে রাবার বাগানের জন্য ইজারা নেওয়া জমিতে এতদিন ম্রো ও ত্রিপুরারা অবৈধভাবে বসবাস করছেন। তাদের নামে কোন বন্দোবস্তি বা বৈধ কাগজপত্র নেই।
এ বিষয়ে ডলুছড়ি মৌজা হেডম্যান যোহন ত্রিপুরা জানান, লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজের লোকজন যে জায়গাগুলো পরিষ্কার করছে, মূলত সে জায়গাগুলো লাংকম কার্বারি পাড়া, জয়চন্দ্র ত্রিপুরা কার্বারি পাড়া ও রেংয়েন ম্রো কার্বারি পাড়াবাসীর। তারা বংশ পরম্পরায় ওই জায়গায় জুম চাষের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। মাঝখানে যখন আমার হেডম্যানশিপ ছিল না, তখন এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কোম্পানি ওইসব জায়গা জবরদখল শুরু করেন।
এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত, আগামীকাল ১০ এপ্রিল ২০২২ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এসিল্যান্ড কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি টিম তদন্তের জন্য ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাবেন বলে জানা গেছে।
নিপন ত্রিপুরা[8]
বর্তমান কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট এর প্রতিষ্ঠাতা নাথান বম বান্দরবানের বম সমাজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অন্যতম এক বম ছাত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং বিএনপি’র সাবেক উপদেষ্টা প্রয়াত এমাজউদ্দীন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকাকালীন মেয়াদের শেষ বছরে ১৯৯৬ সালে একবার বান্দরবন জেলা সফর করেন। সফরে তিনি ম্রো, চাক, খুমী, বম আদিবাসীদের সাথে মতবিনিময় করেন। মতবিনিময় সভাতে এমাজউদ্দিন চাকমা জাতির বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখেন। তিনি এও ওয়াদা করে আসেন যে, খিয়াং, লুসাই, ম্রো, বম জাতিগোষ্ঠী থেকে যে সকল শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফর্ম তুলতে পারবে তাদের সরাসরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করাবেন।
এমাজউদ্দিনের দেয়া ওয়াদাটির বিষয়ে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) নেতৃবৃন্দ অবগত ছিলেন। ঠিক সে বছরই নাথান বম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে আবেদন করতে পারলেও ভর্তি পরিক্ষায় পাশ করতে পারেননি। পিসিপি’র নেতৃবৃন্দ নাথান বমের বিষয়টি তুলে ধরে ভিসি এমাজউদ্দীনকে তাঁর দেয়া ওয়াদা পুরণ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন এবং ভিসি এমাজউদ্দীন নাথান বমকে চারুকলা অনুষদে ভর্তি করার সুপারিশ করেন। পিসিপি’র নেতৃবৃন্দদের অক্লান্ত চেষ্টার ফলে নাথান বম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে ভর্তি হওয়ার সুযোগ লাভ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে নাথান বম পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে পড়েন। ঢাকা মহানগর শাখা ও কেন্দ্রীয় কমিটি’র একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। খাগড়াছড়ির চেঙ্গী স্কোয়ারের পাশে মহান নেতা এম এন লারমার ভাস্কর্যটির অন্যতম শিল্পী/কারিগর ছিলেন তিনি নিজেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের রাজনীতির অধ্যায় শেষ করে শাসকগোষ্ঠীর খপ্পরে পরে ২০০৮ সালে বম, লুসাই, পাংখোয়া, খিয়াং, খুমী, ম্রো প্রভৃতি জনগোষ্ঠীর তথাকথিত অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে কুকি-চীন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন নামে একটি সাম্প্রদায়িক সংগঠন গঠন করেন। তিনি এই সংগঠনের সভাপতি ও ভাঙচুনলিয়ান বম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
নাথান বম কর্তৃক কুকি-চীন ডেভেলাপমেন্ট অর্গানাইজেশন গঠনের পর তার সাথে একাধিকবার পার্টির তরফ থেকে যোগাযোগ করা হয় এবং আলোচনার চেষ্টা করা হয়। কেবল পাংখোয়া, খুমী, খিয়াং, ম্রো, লুসাই জাতিসত্তার অধিকারের জন্য আলাদা সংগঠন গঠন না করে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমগ্র জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে সামিল হওয়ার জন্য তাকে আহবান জানানো হয়। তিনি কেবল জৌ জাতিসত্তার অধিকারের কথা বলে জাতিগত বিভাজনের অভিযোগ বারে বারে অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন তিনি এসব কাজে নাই।
অবশেষে রাষ্ট্রীয় বিশেষ বাহিনী ও ইসলামী জঙ্গীগোষ্ঠীর মদদে সেই নাথান বম ২০১৬ সালে রুমা থেকে প্রায় ৩০ জনের বম যুবককে বম জাতির জন্য আলাদা রাজ্য গঠনের মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়ে মিয়ানমারের চিন স্টেটে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে ১০-১২ জনের বম যুবক বাড়িতে ফেরত আসেন। বাকিরা নাথান বমের সাথে থেকে যায়।
অতি সম্প্রতি এই সংগঠনের নাম বদল করে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট এবং উক্ত সংগঠনের সশস্ত্র শাখা কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি নামে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটেছে। পাংখোয়া, খুমী, খিয়াং, ম্রো, বম ও লুসাই জনগোষ্ঠীকে বিভ্রান্দ করার জন্য প্রচার করা হয় যে, তাদের লক্ষ্য শাসকগোষ্ঠীর তাঁবেদার হয়ে তিন পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, রুমা, আলিকদম, থানচি, রোয়াংছড়ি, লামা- এই ৯টি উপজেলা নিয়ে কুকি-চিন রাজ্য গঠন করা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের কার্যকলাপে বুঝা যাচ্ছে, তাদের আসল লক্ষ্য শাসকগোষ্ঠীর তাঁবেদারি করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’র কার্যক্রম ও চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করা, এবং শাসকগোষ্ঠীর ‘ভাগ করো শাসন করো’ নীতির এজেন্ডা বাস্তবায়নে জাতিগত বিভাজন তৈরি করা।
উল্লেখ্য যে, পাংখোয়া, খুমী, খিয়াং, ম্রো, বম ও লুসাই আদিবাসী জাতিসত্তার অধিকারের কথা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে লিপিবদ্ধ আছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে অধিকার নিশ্চিত করার পথ উন্মুক্ত হবে। সর্বোপরি, জনসংহতি সমিতি জন্মলগ্ন থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামে স্মরণাতীত কাল থেকে বসবাসকারী শোষিত-বঞ্চিত আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষাসহ আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে আন্দোলন করে আসছে। তার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বিরোধী আলাদা কোন সংগঠনের প্রয়োজন ও বাস্তবতা নেই। আমরা বিশ্বাস করি, ম্রো, পাংখোয়া, খুমী, বম, লুসাই, খিয়াং প্রভৃতি জনগোষ্ঠীর বুঝদার ও সচেতন লোকেরা কখনো শাসকগোষ্ঠীর মদদপুষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে যুক্ত হবে না।
মারমা জাতির নাম ভাঙিয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমা ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর প্ররোচনায় যেভাবে ও যে উদ্দেশ্যে দালাল গোষ্ঠী তথাকথিত মগ পার্টির সৃষ্টি, ঠিক তেমনি করে সৃষ্টি করা হয় তথাকথিত আলাদা রাজ্য গঠনের নাম করে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট। নব্য সৃষ্ট কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট এর সদস্যদের সাথে ইসলামী জঙ্গী সংগঠন ‘জামায়াতে আরাকান’ নামে একটি ইসলামী জঙ্গী সংগঠনের সশস্ত্র গোষ্ঠীর সাথে যোগসূত্র রয়েছে। জামায়াতে আরাকান ও কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট সংগঠনকে আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনগুলো ঢাকার এক বম ছেলের মাধ্যমে অর্থ প্রেরণ করা হয়ে থাকে এমন অভিযোগ রয়েছে।
শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র থেকে সৃষ্ট কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কখনোই অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে লিপ্ত হতে পারবে না। কারণ রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও কায়েমি স্বার্থবাদী মহল এই সংগঠনগুলো সৃষ্টিই করেছে আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে নস্যাৎ করার লক্ষ্য নিয়ে। এই সংগঠনও মগ পার্টির ন্যায় সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লুটপাট ও চাঁদবাজি করে নিজের পকেট ভারি করবে আর এলাকায় সন্ত্রাসেরই প্রসার ঘটাবে। তাই শাসকগোষ্ঠী ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সৃষ্ট দালাল কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট ও তথাকথিত মগ পার্টিকে বর্জন করুন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে সামিল হউন।
৮ এপ্রিল ২০২২, রাঙ্গামাটি[9]: রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার সাপছড়ি ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের গুইছড়ি গ্রাম থেকে সেনাবাহিনী ও তাদের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীরা ২ নারীসহ ৬ নিরীহ গ্রামবাসীকে তুলে নিয়ে ক্যাম্পে আটকে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজ শুক্রবার (৮ এপ্রিল ২০২২) ভোর ৩টার সময় বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নস্থ খারিক্ষ্যং সেনা ক্যাম্পে থেকে একদল সেনা সদস্য ও ৫/৬ জন তাদের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী গুইছড়ি গ্রামে এসে হানা দেয়। এ সময় সেনাবাহিনী ও তাদের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীরা ঐ গ্রামের বাসিন্দা প্রশান্ত তঞ্চঙ্গ্যার বাড়ি ঘেরাও করে এবং তাকে হয়রানিমূলক নানা জিজ্ঞাসাবাদ করে।
পরে সকাল ৬টার দিকে ফিরে যাওয়ার সময় সেনাবাহিনী ও তাদের সৃষ্ট সন্ত্রাসীরা প্রশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা (৪৫) পিতা- চিরঞ্জীব তঞ্চঙ্গ্যা, কৃষ্ণ গোপাল চাকমা (৪৭) পিতা- শুক্ররাজ চাকমা, শান্তিবিকাশ চাকমা (৪০) পিতা- শুক্ররাজ চাকমা, চিত্তমোহন চাকমা (৪৫) পিতা-কানায়্যা চাকমা, ইশা চাকমা (৩৫), স্বামী- কৃষ্ণ গোপাল চাকমা ও কান্দরি চাকমা (৩৬), স্বামী- রুপকুমার চাকমা-কে খারিক্ষ্যং ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায়।
তাদেরকে এখনো খারিক্ষ্যং ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছে এবং মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
৭ এপ্রিল ২০২২খ্রি[10]. ১ম ও ২য় শ্রেণির চাকুরীতে আদিবাসীদের জন্য বরাদ্ধ ৫% কোটা পুনর্বহালের দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্বিবদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে
আজ সকাল ১১.০০ ঘটিকায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ পরিষদ, চট্টগ্রাম অঞ্চল এর উদ্যোগে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে আদিবাসীদের জন্য ৫% কোটা পুনর্বহালের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক রুমেন চাকমার সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব স্নেহময় ত্রিপুরার সঞ্চালনায় মানববন্ধনে সংহতি বক্তব্য রাখেন ধর্মরাজ তঞ্চঙ্গ্যা, মংমংশি মারমা, ধীমান ত্রিপুরা, নির্টন মারাক, মেনপং ম্রো, হ্লামিউ মারমা, পহেলা চাকমা, ডচেংনু চৌধুরী, সুখী কুমার তঞ্চঙ্গ্যা প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন “২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ফলে এক সরকারি ঘোষণায় সরকারি চাকরিতে আদিবাসী কোটাসহ সকল ধরনের কোটা বাতিল করা হয়। এর প্রতিবাদে তখনকার সময়ে আদিবাসী শিক্ষার্থীরা আদিবাসী কোটা পুনর্বহালের দাবি জানালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আদিবাসী প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। কিন্তু ৪০ তম বিসিএস এর চূড়ান্ত পরীক্ষায় কয়েকজন আদিবাসী প্রার্থী ভাইভা দেওয়ার পরও কাউকে কোন ক্যাডারে সুপারিশ দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি কথার বাস্তবায়ন করা হয়নি।”
মানববন্ধনে দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন ” আদিবাসীদের জন্য ৫% কোটা পুনর্বহাল এর সুমষ বন্টন এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর (চাক, ম্রো, বম, খেয়াং, খুমি, কোচ, মাহাতো, রাজবংশী, পাংখোয়া প্রভৃতি জাতিগোষ্ঠী) জন্য সরকারি চাকরি এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চ শিক্ষা ভর্তির ক্ষেত্রে বিশেষ নীতিমালা প্রণয়ন করা এখন সময়ের দাবি। আমাদের এই অধিকার আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে নয় সংবিধানের বিরুদ্ধেও নয়, এটি আমাদের ন্যায্য অধিকার পাওয়ার আন্দোলন। সভ্য প্রত্যেক দেশে যেখানে অপ্রতিনিধিত্বশীল জাতিগোষ্ঠী থেকে প্রতিনিধিত্বশীলতা তুলে আনার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় সেখানে বাংলাদেশে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা সুবিধা বাতিল করেছে সভ্য বিশ্বে কখনোই কাম্য নয়।”
মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, ” সরকারের আদিবাসী কোটা বাতিলের ঘোষণাটি ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। আদিবাসীদের জন্য ৫% কোটা পুনর্বহাল না রাখা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে মানববন্ধন থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়। মানববন্ধনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বিভিন্ন বিভাগের প্রায় ২০০ শতাধিক আদিবাসী শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
অপরদিকে একই দাবিতে আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ পরিষদের উদ্যোগে সকাল ১১টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
মানববন্ধনে আদিবাসী ছাত্র পরিষদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সভাপতি সুশান্ত মাহাতোর সভাপতিত্বে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হেমব্রম, কেন্দ্রীয় সদস্য বিভুতি ভুষণ মাহাতো, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নকুল পাহান, সাধারণ সম্পাদক তরুন মুন্ডা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সহ-সভাপতি কলাবতি মাহাতো, পাহাড়ি আদিবাসী ছাত্র পরিষদ রাজশাহী মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক জীনিস চাকমা, শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক বিজয় চাকমা, সদস্য শুভ্রদেব চাকমা ও লিংকন মারমা প্রমুখ।
বক্তারা ৪০তম বিসিএস পরীক্ষার চুড়ান্ত তালিকায় কোন আদিবাসী প্রার্থীকে সুপারিশ না করার তীব্র প্রতিবাদ এবং নিন্দা জানান। ১ম ও ২য় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে আদিবাসীদের ৫% কোটা তুলে দেওয়ার কারনে আজকে কোন আদিবাসী প্রার্থীকে সুপারিশ করা হয়নি। আদিবাসীদের জন্য বরাদ্দকৃত ৫% কোটা পুনর্বহালের দাবি জানান।
বক্তারা আরও বলেন, আদিবাসীদের কোটা বাতিল করার এখনো সময় হয়নি। কারন আদিবাসীরা এখনো উন্নয়নের প্রান্তিক পর্যায়ে রয়েছেন। তাদের শিক্ষা এবং চাকরির যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে। আদিবাসীদের উপর সরকারের বিমাতা সুলভ আচরণের প্রতিবাদ জানান। ৪০ তম বিসিএস পরীক্ষার চুড়ান্ত তালিকায় আদিবাসীদের পুর্নবিবেচনা করে ফলাফল প্রকাশ করার জোর দাবি জানানো হয়।
একই দাবিতে আগামী ১১ এপ্রিল রাজশাহীর সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টের সামনে মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে আদিবাসী ছাত্র পরিষদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি।
৬ এপ্রিল ২০২২, ঢাকা[11]: প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে আদিবাসীদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের দাবিতে আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ পরিষদের পদযাত্রা কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে পুলিশ। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় অভিমুখে তাদের পদযাত্রার কথা ছিল।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বুধবার সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকা থেকে আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ পরিষদের মিছিল বের হয়। মিছিলটি শাহবাগে জাতীয় গণগ্রন্থাগারের সামনে পৌঁছালে শাহবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) শেখ কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাদের বাধা দেন। পরে মিছিলটি আর এগোতে পারেনি।
পরে পুলিশের অনুরোধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিতে পাঁচজন প্রতিনিধি ঠিক করেন আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পরিষদের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল স্মারকলিপি নিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে যায়। সংগঠনের অন্য নেতা-কর্মীরা শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেন।
২ এপ্রিল ২০২২, বান্দরবান[12]: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক আজ বান্দরবান সদর উপজেলাধীন রাজভিলা ইউনিয়নের রাজভিলা উপর পাড়া থেকে এক জুম্ম গ্রামপ্রধানকে আটক করে মিথ্যাভাবে অস্ত্র মামলায় অভিযুক্ত করেছে বলে জানা গেছে। অপরদিকে গতকাল সেনামদদপুষ্ট মগ পার্টির সন্ত্রাসীরা ওই গ্রাম প্রধানের ভাগিনা এক জুম্ম নিরীহ যুবককে অপহরণ করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ ২ এপ্রিল ২০২২, সকাল আনুমানিক ৯:৩০ টার দিকে ২৬ ই বেঙ্গল ডলুপাড়া সেনা ক্যাম্পের অধীন ১০নং রাবার বাগান অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প কমান্ডার মোঃ হানান এর নেতৃত্বে ১০/১২ জনের একদল সেনা সদস্য রাজবিলা ইউনিয়নের রাইবারি উপর পাড়া থেকে পাড়ার প্রধান (কার্বারি) মংতো মার্মা (৩২), পীং-মৃত মংপ্রু মারমা’কে আটক করে নিয়ে যায়। পরে সেনাবাহিনী কার্বারি মংতো মারমাকে গাদা বন্দুক গুঁজিয়ে দিয়ে অস্ত্র মামলায় অভিযুক্ত করে স্থানীয় থানায় সোপর্দ করেছে বলে জানা যায়। আটককৃত কার্বারি মংতো মারমা জনসংহতি সমিতির রাজভিলা ইউনিয়ন কমিটির সদস্য বলে জানা গেছে।
১ এপ্রিল ২০২২ খ্রি.[13] চট্টগ্রামে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের এক সম্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) বলেছেন, যে দল আমার অধিকার আদায়ের আন্দোলনের মূল্যায়ন করে না, শোষণ, নিপীড়ন, নির্যাতন করে, তাকে আমার ভোট দেয়ার প্রয়োজন নেই। আমার অধিকার দেওয়ার ক্ষেত্রে যার দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকবে তাকে আমি ভোট দিতে যাবো কেন?
চট্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘অস্তিত্বের লড়াইয়ে আসুন, সবাই ঐক্যবদ্ধ হই’ শ্লোগানের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার ১০ম ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিতে গিয়ে শ্রী লারমা উক্ত কথাগুলো বলেন।
সম্মেলন উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত।
উদ্বোধনী সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নির্মল রোজারিও এবং সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সহ-সভাপতি প্রদীপ কুমার চৌধুরী। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রকৌশলী পরিমল কান্তি চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য এড. সুব্রত চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রফেসর ড. জিনবোধি ভিক্ষু, ঐক্য পরিষদের চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সভাপতি প্রফেসর রনজিত কুমার দে, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাংবাদিক বাসুদেব ধর, প্রেসিডিয়াম সদস্য মঞ্জু ধর, ঐক্য পরিষদের চট্টগ্রাম জেলার নেতা মনিন্দ্র কুমার নাথ, ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এড. তাপস পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামল কুমার পালিত, বাংলাদেশ মহিলা ঐক্য পরিষদের সভাপতি সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য্য, ঐক্য পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগরের নেতা এড. নিতাই প্রসাদ ঘোষ ও উত্তম কুমার শর্মা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক তাপস হোড়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সন্তু লারমা আরও বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রাম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদে তারাই নির্বাচিত হয়ে আসেন যারা অস্তিত্বের জন্য লড়াই করে যেতে পারেন। আমি সারা বাংলাদেশের হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাথে সংহতি জানাতে আজ এখানে উপস্থিত হয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা অনেকেই অনেক কিছু বলতে চাইলেও বলতে পারি না, আবার না বললেও নয়। তাই আমি আজ এই মঞ্চ থেকে বলতে চাই, আমাদের অস্তিত্বের যে বিপন্ন অবস্থা হয়েছে তা থেকে আমরা কাটিয়ে উঠতে হলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। সংগঠিত হয়ে আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময় থেকে চট্টগ্রামের মানুষের এদেশের আন্দোলন-সংগ্রামে অনেক অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কার্যক্রমের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আজকে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যে ভূমিকা আমরা দেখি তা সকল ক্ষেত্রে না হলেও প্রধান প্রধান ক্ষেত্রে কিন্তু স্ববিরোধিতার ভূমিকা প্রত্যক্ষ করি। কিছুক্ষণ আগে একজন বক্তা বলেছেন, ‘যাকে আমি ভোট দিই, যাকে আমি মূল্যবান ভোট প্রদান করে নির্বাচিত করি, তিনি আমার উপর দমন-পীড়ন, শোষণ করে যান।’ আমি মনেকরি, এটা একটা স্ববিরোধীতা।
তিনি বলেন, যে দল আমার অধিকার আদায়ের আন্দোলনের মূল্যায়ন করে না, শোষণ, নিপীড়ন, নির্যাতন করে, তাকে আমার ভোট দেয়ার প্রয়োজন নেই। নীতি-আদর্শ না থাকায় আমাদের জনগণ সবকিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমার অধিকার দেওয়ার ক্ষেত্রে যার দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকবে তাকে আমি ভোট দিতে যাবো কেন?
তিনি বলেন, এই স্ববিরোধী কার্যকলাপ ও মনোভাব বজায় রেখে অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হওয়া যায় না। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার একটা প্রক্রিয়া আছে, সেটি হচ্ছে সঠিক নীতি-আদর্শ ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য’র প্রতি একনিষ্ঠ থাকা। যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্ববিরোধীতার অবসান ঘটবে। আমি মনেকরি, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশের আদিবাসীসহ মেনহতি মানুষের পক্ষেও যুগপৎ আন্দোলন করে যাবে ।
জগাখিচুড়ির সংবিধান নিয়ে বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছেঃ রানা দাশগুপ্ত
অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এড. রানা দাশগুপ্ত বলেন, আজকের বাংলাদেশ শুধু বাংলাদেশ নয়, এই দেশে অস্তিত্বের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। জগাখিচুড়ির সংবিধান নিয়ে বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছে। এর থেকে মুক্তি পেতে হলে নীতি আদর্শকে সামনে রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
এসময় তিনি আরও বলেন, প্রয়োজন হলে আমাদের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের দাবিতে আগামী ২৫ জুন দেশের জেলা-উপজেলায় বিকাল ৩:০০ টায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করা হবে। অক্টোবরের ২২ তারিখ সকাল ৮:০০টা থেকে বিকাল ৫:০০টা পর্যন্ত সারাদেশে গণঅনশন পালন করা হবে। ৯ ডিসেম্বর পথযাত্রার মাধ্যমে ‘চল চল ঢাকায় চল’ এর কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে আমরা ঢাকার রাজপথে গিয়ে মিলিত হবো। ১০ ডিসেম্বর পথযাত্রার মধ্য দিয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকে রওয়ানা হবো। ২০২৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৫ লক্ষ জনগণ নিয়ে আমরা মহাসমাবেশ করবো। এরপরও যদি না হয় তা হলে আমরা আমরণ অনশনের কর্মসূচি পালন করবো। এ সময় তিনি দাবি আদায়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানান।
আলোচনা সভার পরবর্তী অনুষ্ঠানে তাপস হোড়কে সভাপতি ও এড. প্রদীপ চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট ৩ বছর মেয়াদে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, চট্টগ্রাম জেলার দক্ষিণ অঞ্চলের কমিটি ঘোষণা করা হয়।
১ এপ্রিল ২০২২, বান্দরবান[14]: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক বান্দরবান পার্বত্য জেলাধীন রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নে ৫ নিরীহ জুম্ম গ্রামবাসীর বাড়িতে ব্যাপক তল্লাসি ও জিনিসপত্র তছনছ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আজ ১ এপ্রিল ২০২২ সকাল ৮:০০ টার দিকে পাইন্দু ইউনিয়নের মুলফি পাড়া গ্রামে হয়রানিমূলকভাবে এই তল্লাসির ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। সেনা সদস্যরা এসময় সন্ত্রাসী খোঁজার নামে জুম্মদের বাড়িতে তল্লাসি চালায় এবং ইচ্ছে করে বাড়ির জিনিসপত্র তছনছ করে দেয়।
ভুক্তভোগী বাড়ির মালিকরা হলেন- ১. মংউয়ে মারমা (৬০), পিতা-অজ্ঞাত, ২. মোবাসিং মারমা (৪২), পিতা- সিখৈউ, ৩. উহ্লাসিং মারমা (৫০), পিতা-ক্যওমং মারমা, ৪. সাসিনু মারমা (৩৯), পিতা-ক্যওমং মারমা, ৫. আর ক্যও প্রু মারমা (৫০), পিতা- অজ্ঞাত।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ মার্চ ২০২২, দুপুর ১১:০০ টার দিকে রুমার মোনম সেনা ক্যাম্প থেকে ৩০ জনের একটি সেনা টহল দল ১নং পাইন্দু ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের মুলপি পাড়া এসে অবস্থান নেয়। পরে আনুমানিক রাত ৮:০০ টার দিকে সেনাদলটি মুলপি পাড়া থেকে কয়েক জন জুম্ম যুবককে নিয়ে পার্শ্ববর্তী উজানী পাড়ার দিকে দব্রোখ্যং ঝিরি এলাকায় যায়। এরপর সেখানে থাকা জুম্ম গ্রামবাসীদের পুরনো জুমঘরগুলোতেও তল্লাসি চালায় সেনারা।
এসময় সেনা সদস্যরা ‘এই জুমঘরে সন্ত্রাসীরা অবস্থান করে, ঘরগুলো পুড়িয়ে দিতে হবে’ বলে গ্রামবাসীদের হুমকি দেয়। সেনা সদস্যরা আরও অভিযোগের সুরে গ্রামবাসীদের বলেন, ‘আপনারা সন্ত্রাসীদের ভাত দেন, সহযোগিতা করেন।’
পরদিন সকাল ৮:০০ টার দিকে ঐ সেনাদলটি আবার মুলফি পাড়ায় এসে গ্রামবাসীদের উক্ত পাঁচটি ঘরে তল্লাসি চালায়।
সেনা সদস্যরা মংউয়ে মারমা এবং তার স্ত্রী আর জামাতাকে বলে গিয়েছে যে, যখনই সেনাবাহিনী ডাকবে তখন মন্নুয়াম পাড়া ক্যাম্পে যেতে হবে।
[1] By Hill Voice -এপ্রিল 30, 202201
[2] By Hill Voice -এপ্রিল 30, 202201
[4] By Hill Voice -এপ্রিল 23, 2022
[5] By Hill Voice -এপ্রিল 9, 2022
[6] ১৭ এপ্রিল২০২২ খ্রি. ভোর প্রায় ৪:০০ টার দিকে বমপার্টির সশস্ত্র সদস্যরা কোনরূপ উস্কানী ছাড়াই চুক্তি সমর্থক কর্মীদের উপর অতর্কিত সশস্ত্র হামলা চালায়। এই হামলায় এ্যাকশন চাকমা নামে একজন কর্মী প্রস্রাব করার জন্য বাড়ি থেকে বের হলে গুলিবিদ্ধ হন। এতে তিনি ঘটনাস্থলে নিহত হন। এছাড়া স্থানীয় একজন নিরীহ তঞ্চঙ্গ্যা গ্রামবাসীও আহত হন বলে জানা গেছে। সূত্র: হিল ভয়েস, ১৯ এপ্রিল ২০২২, বিশেষ প্রতিবেদক
[7] By Hill Voice -এপ্রিল 9, 2022
[8] By Hill Voice -এপ্রিল 1, 2022
[9] সিএইচটি নিউজ
[10] By Hill Voice -এপ্রিল 7, 2022
[11] By Hill Voice -এপ্রিল 6, 2022
[12] By Hill Voice -এপ্রিল 2, 2022
[13] By Hill Voice -এপ্রিল 1, 2022
[14] By Hill Voice -এপ্রিল 1, 2022