শনিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২০

পার্বত্য চট্টগ্রাম রাজনৈকি দল:

১। ১৯১৫ সাল: চাকমা যুবক সমিতি, প্রতিষ্ঠিতা: সুনানু রাজ মোহন দেবান।
২। ১৯১৯ সাল: চাাকমা যুব সংঘ, প্রতিষ্ঠিতা: সুনানু ঘনশ্যাম দেবান।
৩। ১৯২০ সাল: পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সমিতি, প্রতিষ্ঠিতা: সুনানু কামিনী মোহন দেবান।
৪। ১৯৫৬ সাল: হিল স্টুডেন্টস উপজাতীয় কল্যাণ সমিতি, সুনানু অনন্ত বিহারী চাঙমা ও জে.বি.লারমা।

রাঙ্গামাটি ফিরে আসলাম - লেখক; পরিমল বিকাশ চাকমা, পিএসসি লেঃ কর্নেল [অবসরপ্রাপ্ত]

 


আরাকানের চাকমা অঞ্চল ঘুরে এলাম

ভুমিকাঃ
চাকমা শিড়র খুঁজতে গিয়ে অনেক দিন থেকে বার্মার আরাকানের উপর পড়াশুনা করছিলাম । আরাকানের প্রাচীন নাম ছিল ধন্যবতী । খৃষ্টপূর্ব ৩৩২৫ বছর পূর্বে এক ভারতীয় রাজকুমার মারায়ু এই ধন্যবতী রাজ্যটি প্রতিষ্ঠা করেন । প্রথম সূর্য বংশের রাজা চান্দা সুরিয়া [ Canda Suriya ] খৃষ্টপূর্ব ৫৮০ অব্দে কালাদান ও লেমিও ন্দীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে তৃতীয় ধন্যবতী রাজ্যটি প্রতিষ্ঠা করেন । প্রচুর শষ্য উত্পাদন হতো বলে এর নাম হয়েছিল ধন্যবতী [ Dannyawadi] । ইতিহাস মতে রাজা চান্দা সুরিয়ার রাজত্ব কালে স্বয়ং ভগবান বুদ্ধ ৫০০ শত অরহত শিষ্য সহ ধন্যবতী রাজ্য পরিভ্রমন করেন । ভগবান বুদ্ধের অনুমতি নিয়ে খৃষ্টপূর্ব ৫৫৪ অব্দে জগত বিখ্যাত মহামুনি বুদ্ধ মূর্তিটি চেলাগিরি পাহাড়ে নির্মাণ করা হয় । এই মহামুনি বুদ্ধ মূর্তটি ১৭৮৪ সালে বার্মা রাজা বোদাপায়া আরাকান বিজয়ের পর আরাকান থেকে মান্দালয় নিয়ে যান । এখনো এই মহামুনি বুদ্ধ মূ্তিটি মান্দালয়ে মহামুনি বুদ্ধ মন্দিরে সংরক্ষিত আছে ।
আরাকানে চাকমাদের বসবাস অনেক শত বছর পূর্ব থেকে । কর্নেল ফেইরীর লেখা বার্মা দেশের ইতিহাস [ History of Burma ] এবং ভিক্ষু চান্দামালার লেখা ধন্যাওয়াদি আরেদ পন [ Danyawadi Aredawpon ] গ্রন্থে তা উল্লেখ আছে । ডঃ পামেলা গোটম্যান তার গবেষনা গ্রন্থ Ancient Arakan বইএ দাবী করেছেন চাকমা, খুমি, ম্রো এবং চিনরা হলো আরাকানের আদি বাসিন্দা । এরা রাখাইনদের পূর্বে আরাকানে ছিল । রাখাইনরা ১০ শতকে মূল বার্মা থেকে আরাকানে প্রবেশ করে । ১০ শতকের মাঝ পর্য্যন্ত ভারতীয় চন্দ্র বংশের রাজাগন আরাকানের রাজা ছিলেন । এখনো প্রায় ৭০/৮০ হাজার চাকমা আরাকানের মংডু, বুজিতং, কিয়ক্টঅ ও লেমিও ম্রোহং অঞ্চলে বসবাস করে । কিছু চাকমা চীন হিল প্রদেশের প্লাওয়া অঞ্চলে বাস করে । রাখাইন ও বর্মীরা তাদেরকে দৈনাক [ Daingnet ] বলে ডাকলেও তারা নিজেদের চাকমা বলে দাবী করে ।
এ যাবত্কালে চাকমা ইতিহাস লেখকগন আকাকানে চাকমাদের ইতিহাস সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য দিতে পারেনি । এভাবে নিজ জাতির শিকড় খুঁজতে আমি আরাকানের ইতিহাস পড়া শুরু করি এবং আরাকানের ইতিহাস পড়তে পড়তে আরাকান রাজটি নিজ চোখ দেখার ইচ্ছা হয় । কিন্ত এদ্দিন সুযোগের অভাবে তা সম্ভব হয়ে উঠেনি । ১৯৬২ সাল থেকে ক্রমাগত ৫২ বছরের উপর বার্মায় সামরিক শাসন থাকায় বার্মা বহির বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন ছিল । বর্তমান প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন [ Thein Sein ] সরকার কিছুটা উদারনৈতিক পথ অবলম্বন করায় বর্তমানে কিছু পরিব্রাজক বার্মা ভ্রমনের সুযোগ পায় । ২০১৪ সালের মার্চ মাসে হঠাৎ আরাকান ভ্রমনের সুযোগ হয় । Sambodhi Welfare Society এর সেক্রেটারী বাবু প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা আমাকে আরাকান ভ্রমনের আমন্ত্রন জানান । আমি সানন্দে রাজী হই । কয়েক বার পারমী বৌদ্ধ বিহারে মিটিং এর পর মোটামুটি সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম যে, আমাদের দলটি ১০/১২ জনের হবে । অবসর প্রাপ্ত জয়েন্ট সেক্রেটারী বাবু তারা চরন চাকমা শারীরিক কারনে যেতে না পারায় আমাকে দল নেতার দায়িত্ব দেয়া হয় । সিদ্ধান্ত হলো আমরা ২৫ মার্চ ২০১৪ রাঙ্গামাটি থেকে টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করবো ।
যাত্রাশুরু
চূড়ান্ত ভাবে আমরা দশ জনের দল নির্বাচন করলাম । আমার বন্ধু সুগত চাকমা ননাধন আমার সঙ্গে যেতে রাজী হলেন । এছাড়াও আমাদের সঙ্গে একজন প্রাক্তন ম্যাজিষ্টেট, প্রাক্তন প্রফেসর, প্রাক্তন ব্যাংকার, দুজন মহিলা, দুজন সমাজ কর্মী ও এ্যাডভোকেট দীন নাথ তঞ্চংগা ছিলেন । আমি দীননাথ বাবুকে আমাদের সমন্বয়কারী হিসাবে নিযুক্ত করলাম । টেকনাফ যাওয়ার জন্য আমরা একটা দশ জন বসার উপযোগী মাইক্রোবাস ভাড়া করলাম । বনরুপার নিউ মার্কেট হলো আমাদের মিলন স্থান । ২৫ মার্চ ২০১৪ সকাল সাড়ে ৮ টায় আমরা ৭ জন বনরুপার নিউ মার্কেট থেকে মাইক্রোবাস যোগে রওয়ানা হয়ে গেলাম । দীননাথ বাবু চট্টগ্রাম থেকে আমাদের সঙ্গে যোগ দেবেন । বাকী দুজন সাধন ও নীলধন বাবু বান্দরবান থেকে সরাসরি টেকনাফ চলে যাবেন । চকোরিয়ায় ইনানী রেষ্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেয়ে আমরা কক্মবাজার থেকে সমুদ্রপারের রাস্তা [ Marine drive] দিয়ে রওনা হয়ে সন্ধ্যায় টেকনাফ পৌছালাম । আগামী কালের প্রস্তুতি নিয়ে আমরা টেনাফের একটি হোটেলে রাত্রী যাপন করলাম । আমাদের সাহায্য করার জন্য ননাধনের ছোট ভাই সুচিত্ত রাতে আমাদের সঙ্গে দেখা করলেন । তিনি কক্মবাজার জেলার জেলা কানুংগো । এছাড়া টেকনাফ ইমিগ্রেশন অফিসের চাকমা ছেলে স্বপন আমাদর সঙ্গে দেখা করে গেলেন এবং আগামী কালের জন্য কিছু উপদেশ দিয়ে গেলেন ।
আরাকানে পদার্পন
২৬শে মার্চ সকাল ১০ টায় আমাদের নাফ নদী পার হওয়ার কথা ছিল । একদল জাতিসংঘের কর্মকর্তা ইমিগ্রেশন অফিস পরিদর্শন করায় আমাদেরকে পাস দিতে দেরী হলো । পরে আমি স্থানীয় বিজিবি অধিনায়কের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম । তিনি আমাকে যথাযথ সন্মান দেখালেন এবং আমাদের কাজ ত্বরান্বিত করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিলেন । প্রায় দুপুর ১২টায় আমাদের ইমিগ্রেশনের কাজ সমাপ্ত হয়। এই পাশের জন্য পাসপোর্টের দরকার হয় না ।সীমান্ত বানিজ্য চুক্তি অনুযায়ী শুধু জাতীয় পরিচয় পত্রের উপর ৩/৪ দিনের জন্য বর্ডার পাশ দেয়া হয় । এই পাশ দিয়ে আরাকান রাজ্যের রাজধানী সিটুয়ে [ Sittwe ] যাওয়া যায় না, শুধু মংডু ও বুজিতং যাওয়া যায় । সাধারনত বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা এই সুবিধা গ্রহন করেন । অপর দিকে মিয়ানমারের ব্যবসায়ীরা একই সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশ আসতে পারেন । সাড়ে ১২টায় আমরা ট্রলার যোগে নাফ নদী পার হওয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম । সীমান্ত নদী পার হওয়ার জন্য কোন উন্নত মানের ফেরী বা লঞ্চ নেই । জেলেদের মাছ ধরার ট্রলারে করে নাফ নদী পার হতে হয় । এতে বুঝা যায় বাংলাদেশ মিয়ানমার সম্পর্ক কেমন । এক সঙ্গে দুটি ট্রলার ইমিগ্রেশন চেক পোষ্টের বন্দর ছেড়ে দিল । বাংলাদেশী নাগরিকরা একটি ট্রলারে এবং বর্মী নাগ্ররিকরা অন্য আর একটি ট্রলারে । ট্রলারের উপরে কোন ছাদ নেই এবং বসার জন্য কোন সিট নেই । আমরা যে যেখানে পারে কোন রকমে ট্রলারে বসলাম । মাথার উপর সূর্য্যের কড়া রোদ । আমাদের কারো ছাতা ছিল ন । ভাগ্য আমার একটি ক্যাপ ছিল, সে’টি দিয়ে মুখ ঢাকার চেষ্টা করলাম । নাফ নদী পার হতে প্রায় দুঘন্টা সময় লাগে । নাফ নদীর মোহনা দিয়ে পার হতে হয় । বাতাস ছিল না তাই নদী শান্তই ছিল । আমরা সবুজ জলরাশি আর দুধারের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে মংডু চেক পোষ্ট ঘাটের দিকে আগালাম । মাঝে মধ্যে দুএকটি জেলে নৌকা ছাড়া আর কিছু দেখলাম না । প্রায় আড়াই টায় আমরা মংডু ইমিগ্রেশন ঘাটে পৌছলাম । মংডু শহর টি আরাকানের সীমান্ত শহর নাফ নদীর পূর্ব পারে অবস্থিত । ঘাটে আমরা সবাই বাংলাদেশী পাশগুলি জমা করলাম । এর পরিবর্তে তারা বর্মী পাশ দেবে । এরি মধ্যে আমাদেরকে নেয়ার জন্য বুজিতং থেকে উ সুবিতা ভান্তে পৌছেছেন । এতে আমাদের মনোবল বেড়ে গেল কারন আমাদের মধ্যে কেউ ব্মী ভাষা জানার লোক ছিল না । দায়ীত্বপূর্ণ কর্মকর্তা বাহিরে থাকায় আমাদের পাশ পেতে দেরী হলো । ইতিমধ্যে আমরা একটা রোহিঙ্গা হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম এবং কিছু বাংলাদেশী টাকা ভাঙ্গিয়ে বর্মী টাকা বদল করে নিলাম । Exchange rate ভাল ছিল । বাংলাদেশী ১০০ টাকায় বর্মী ১১০০ চেট [Kyat ] পাওয়া যায় ।
বুজিতং থেকে আমাদের নেওয়ার জন্য যে সুবিতা ভান্তে এসেছেন তিনি একজন আরাকানী চাকমা [ দৈনাক ] । তার কথা বুঝতে আমাদের তেমন অসু্বিধা হয় না । অনেক্ষন অপেক্ষা করার পর ভান্তে খবর আনলেন দায়িত্বপূর্ণ কর্মকর্তা অফিসে না থাকায় ঐ দিন আর পাশ পাওয়া যাবে না । তাই আজ আমাদেরকে মংডুতেই রাত কাটাতে হবে । আমি সামররিক বাহিনীতে ছিলাম বলে বুঝতে পারলাম যে বেলা বেশী হওয়ায় স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনী ঝুকি নেয়নি । তখন হয়ত road protection party ক্যাম্পে চলে গেছে । আমরা হলাম বিদেশী । মংডু থেকে বুজিতং একটা বড় পাহাড় অতিক্রম করে যেতে হয় । নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বিসাবে আমিও তাই করেছিলাম । আমরা কিছুতা হতাশ হলেও করার কিছু ছিল না । সুবিতা ভান্তে আমাদেরকে একটা রাখাইন হোটেলে নিয়ে গেলেন । হোটেল ভাড়া প্রতি রুম ৫০০ টকা । এক রুমে ২জন থাকা যায় । বিকেল বেলাটা আমরা কিছুতা relax করতে পেরেছি । সন্ধ্যায় আমরা একটা রাখাইন হোটেলে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম । আরাকানে দেখলাম এখানে সেখানে মুন্ডির [ এক প্রকার নুডুলস ] দোকান । মুন্ডি বর্মীদের প্রিয় খাবার । আরাকানীরা মুন্ডি বললেও বর্মীরা বলে মহিংগা । সকাল বিকাল আরাকানী/বর্মী যুবকযুবতীরা মুন্ডির দোকানে ভির জমায় । আমি ব্যক্তিগত ভাবে মুন্ডি পছন্দ করি না । বিকালে আমি আর সুগত অনেক খোজাখুজি করে একটা চায়ের দোকান খুঁজে পেলাম । এক কাপ চায়ের দাম ২০০ বর্মী টাকা । রোহিঙ্গা হোটেলে তরকারীতে লাল মরিচ বেশী দিয়ে থাকে । তবে সবখানে একটা আলাদা [ বর্মী ] গন্ধ আছে । অনেকে তা সহ্য করতে পারে না । রোহিঙ্গাদের সঙ্গে চাটগাঁইয়া [ চট্টগ্রামী] ভাষায় কথা বলতে আমাদের কোন অসুবিধা হয় না । আমাদের হোটেলের নাম লাকি হোটেল । মালিক একজন রাখাইন । টেকনাফে বাড়ি ছিল । ৭১ সালের পর আরাকান চলে গেছেন । ব্যবসা নিয়ে ভালই আছেন । রাত্রে আমাদের সঙ্গে অনেক গল্প করলেন ।
দেখলাম বর্তমানে মংডু শহরটি রাখাইন ও রোহিঙ্গা অঞ্চলে বিভক্ত । রাতের বেলায় কেউ অপরের এলাকায় যায় না । সব গুরুত্ব পূর্ণ পয়েন্ট গুলিতে পুলিশ প্রহরা থাকে । রাখাইন ও রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মধ্যে অবিশ্বাস এখন অনেক গভীরে । মাত্র ২০১২ জুন মাসে বড় ধরনের সামপ্রাদায়িক দাঙ্গা হয় । এতে প্রায় ২০০ জন মারা যায় । প্রায় দেড় লক্ষ লোক গৃহ হীন হয়ে পরে । অনেক রোহিঙ্গা মুসলিম এখনো ত্রান শিবিরে মানবেতর জীবন যাপন করছে । রাত ৯টার পর আমাদের হোটেলে বিদ্যুত্ ছিলনা । ভাগ্য ভাল গরম তেমন ছিল না । পরের দিন ২৬ শে মার্চ সকালে আমি আর ননাধন অনেক ঘোরোঘুরি করে একটা রোহিঙ্গা রষ্টুরেন্টে বসে পুরি ও চা খেখাম । মান তেমন ভাল না । মংডু হলো জেলা শহর [HQ] । সেই তুলনায় হোটেল ও রেষ্টুরেন্ট এর মান তেমন ভাল না ।সকালে কাঁচা বাজার বসছে । বিক্রেতারা অধিকাংশ মহিলা । সামুদ্রিক বড় মাছের দাম ৩০০/৪০০ টাকা । বাজারে অনেক তাজাফুল বিক্রি হয় ।তাজা নাকেশ্বর [নাকশা ] ফুল দেখলাম । শহরে প্রচুর রিক্মা আছে । লক্ষ্য করলাম বর্মী রিক্মা আমাদের রিক্মার মত নয় । সামনে পিছনে করে দুজন বসা যায় । তবে দুজন দুদিকে মুখ করে । প্রায় রিক্মা চালক রোহিঙ্গা ।
মংডু থেকে বুজিতং
এরি মধ্যে সুবিতা ভান্তে খবর দিলেন সকাল ১০ টায় ইমিগ্রেশন অফিসে যেতে হবে । প্রত্যেকে ১০ ডলার করে দিলে ৭ দিনের পাশ পাওয়া যাবে । এই পাশ দিয়ে সিটউয়ে পর্য্যন্ত যাওয়া যাবে । আমরা সানন্দে রাজী হয়ে গেলাম । আমার আর দিননাথ বাবুর কাছে কিছু ডলার ছিল । Unforseen কোন দরকারের জন্য এনেছিলাম । ঠিক সময়ে কাজে লাগলো । আমার আনদাজ, এই ডলার সরকার পাবে না । ইমিগ্রেশনের স্টাফরা ভাগ করে নেবে । যাক আমরা তাড়াতাড়ি লাঞ্চ খেয়ে নিলাম । এখানে আমরা কিছু টাকা ভাঙ্গিয়ে নিলাম । ভান্তে আমাদের জন্য একটা খোলা মিনি ট্রাক ভাড়া করলেন । আমরা প্রায় ১ টায় মংডু থেকে বুজিতং এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম । দুবার পুলিশ চেক পোষ্টে আমাদের কাগজপত্র চেক করা হলো । মংডু-বুজিতং রাস্তা এখনো পুরোপুরি দুমূখী তৈরী শেষ হয়নি । এখনো নির্মান কাজ চলছে । রাঙ্গামাটির মত পাহাড়ি রাস্তা । চালক, হেলপার সব রোহিঙ্গা । মংডু থেকে বুজিতং মাত্র ২৫ কিঃমিঃ । আমাদের প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লাগলো । প্রায় বিকাল ৩টায় অর্থাত্ বর্মী সময় সাড়ে ৩ টায় আমরা বুজিতং চাকমা বুদ্ধ মন্দিরে পৌছলাম । স্থানীয় চাকমা সম্প্রদায়ের লোকেরা আমাদের অপেক্ষায় ছিল। বুদ্ধ মন্দিরটির নাম ধাম্মা মান্দান চাকমা বুদ্ধ মন্দির । মন্দিরটি বুজিততং শহর থেকে ৪ কিঃ মিঃ পশ্চিমে । বুজিতং জেলখানার পাশে । শুনেছি জেল খানার কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাহায্যে কিয়াংটি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল । এমনকি জেলের কয়েদিরা ও এখানে শ্রম দিয়েছিল । কিয়াংটি এখনো পুরোপুরি তৈরী হয়নি । এই কিয়াং এ ৩/৪ জন ভিক্ষু ছাড়াও ৪/৫ জন শ্রমন থাকেন । বড় ভান্তের নাম উ জাকারিয়া । আমাদের পরিচিত বাংলাদেশী ভান্তে উ পান্ডিতা এই কিয়াং এ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন । তিণি অনেক বছর ধরে আরাকান ও ইয়াংগুনে ছিলেন । বর্মী ও আকাকানী উভয় ভাষায় পারদর্শী । আমাদলের দলের আরাকান ভ্রমনের যাবতীয় যোগাযোগ তিনি করেছেন । এই চাকমা কিয়াং এ আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে । কয়েকজন গ্রামের মহিলা এসে আমাদের জন্য রাতের খানা রান্না করেছে । সন্ধ্যা হতেই আমাদেরকে রাতের খাবার দেয়া হলো । কিয়াং এর পাশে মইস্যাংদের ঘরে আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে । বর্মী নিয়মে একটি টেবিলের চারিদিকে বসে খাবার দেয়া হলো । টেবিলের উচ্চতা এক ফুট । অনেকটা আগের দিনের চাকমাদের মেজাং এর মত । এক টেবিলে ৫/৬ জন বসা যায় । ভাতগুলি জুমের চাউলের মত নরম । মাছ মাংস সহ অনেক তরকারী ছিল । একটু অবাক ব্যাপার তরকারীতে কোন শুটকি বা নাপ্যি দেয়া হয়নি । তথাপি যথেষ্ট সুস্বাদু ছিল । রাতে আরাকানী চাকমাদের সঙ্গে অনেক গল্প হলো । পরে জেনেছি এরা অনেকে বুজিতং শহরতলীতে থাকে । আরাকানী চাকমাগন বর্তমানে বর্মী নাম রাখেন এবং পোশাক পরিচ্ছদ ও রাখাইনদের মত । তারা নিজেদের মধ্যে চাকমা ভাষাই বললেও সবাই রাখাইন ও বর্মী ভাষা বলতে পারেন । উচ্চ শিক্ষা নেই বললে চলে । গ্রামে প্রাইমারী স্কুল আছে । শুধু শহরে হাই স্কুল আছে । ইংরেজী ভাষা শেখানো হয় হাই স্কলে ক্লাশ নাইন থেকে । তাই তারা ইংরেজীতে দুর্বল থেকে যায় । মোটামোটি দশম শ্রেণী পাশ করলে নীচু পদে চাকুরী পাওয়া যায় । গ্রাম বাসীদের মধ্যে লংসং পাড়ার শিক্ষিকা মা থেইন ও অবসর প্রাপ্ত পুলিশ সার্জেন্ট অং শিয়ান কে পেয়ে আমাদের একটু সুবিধা হলো । তারা আমাদের পরবর্তী programme ঠিক করতে সাহায্য করলেন । পুলিশ সার্জেন্ট এর ছেলে সীয়ে স সার্বক্ষনিক ভাবে আমাদের সঙ্গে ছিল । সে সঙ্গে থাকায় আমাদের সুবিধা হয়েছে । সে দোভাসীর কাজটা করেছে । আরাকানী চাকমাদের সাথে তঞ্চঙ্গ্যাদের মিল বেশী । কিন্ত তাদের ভাষার সঙ্গে প্রচুর আরাকানী শব্দ মিশে গেছে । তাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম তঞ্চঙ্ক্যাদের ১২ গজার মধ্যে আরাকানে ৮ গজার মানুষ আছে । গজাগুলি হলো কার্বো, অংগো, ধন্যে, মংলা, লাং, লাপোস্যে, মেলং ও মুঅ গজা । আমাদের দলে তিন জন তঞ্চঙ্গ্যা গোত্রের লোক আছে । তারা কিছু মারমা ভাষা ও বলতে পারেন যা রাখাইন ভাষার সঙ্গে মিল । চাকমাদের তিন শাখার মধ্যে কিছু শব্দের তফাত্ থাকলেও আমাদের বুঝতে কোন অসুবিধা হয় না । যেমন হাতীকে চাকমারা বলি এইট্, তঞ্চঙ্গ্যারা বলে আইট এবং আরাকানী চাকমাবলে হাজ । আরাকানী চাকমারা পাড়াকে আদামের পরিবর্তে রুয়া বলে । এই রুয়া শব্দ থেকে রোয়াজা শব্দটি এসেছে যা এখনো ত্রিপুরা ও মারমাদের মধ্যে পদবী হিসাবে ব্যবঋৃত আছে । বর্তমানে আরাকানে রোয়াজা, কারবারী বা হেডম্যান পদবী ব্যাবহ্রত হয় না । সব খানে বর্মী পদবী ব্যবহ্রত হয় । দুদেশের চাকমাদের সুখদুখঃ আলাপের মধ্যে আমাদের অনেক সময় কেটে গেল । রাতে কিয়াংএ বিদ্যুত্ ছিল না। ভোর রাত্রে বেশ ঠান্ডা, কম্বল গায়ে দিতে হয় । সকালে বেশ কুয়াশা থাকে । সিদ্ধান্ত হয় আগামী কাল বুজিতং শহর ও চাকমা পাড়া দেখতে যাবো ।
বুজিতং শহর ভ্রমন
২৭ মার্চ কলা, চা কফি ও মিষ্টি দিয়ে সকালের নাস্তা করলাম । সকাল ১০ টায় আমরা পায়ে হেটে বুজিতং শহর দেখতে গেলাম । বুজিতং শহরটি একটি নদী বন্দর ও বানিজ্য কেন্দ্র । শহরের পাশ দিয়ে মায়ু নদী বয়ে গেছে । এই নদী পথ দিয়ে আরাকান রাজ্যের রাজধানী সিটউয়ে যেতে হয় । লঞ্চ যোগে সকালে রওয়ানা করলে বিকাল ৩টায় সিটউয়ে পৌছা যায় । বুজিতং শহরের প্রবেশ পথে একটি WFP গোডাউন দেখলাম । ওখানে প্রহরী হিসাবে চাকুরী করে এক চাকমা ছেলে । তার সাথে আলাপ হলো । ঐ দিন বেতন নেয়ার জন্য মংডু যেতে হবে বলে আমাদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল । শহরে প্রবেশের আগে শহরতলীতে আমরা চাকমা পাড়া দেখতে গেলাম । এখানে প্রায় ১৫/২০ পরিবার চাকমা বাস করে । গতকাল দেখা অবসর প্রাপ্ত পুলিশ সার্জেন্ট এর বাড়ীও এখানে ।এখানকার সব বাড়ী মাচাং এর উপর তৈরী । পুরানো দিনের চাকমা আলগ ঘরের মত । যারা সচ্ছল তারা কাঠের তৈরী ঘরে থাকে । হাউজিং সোসাইটির মত বাড়ী গুলি সারিবদ্ধ । আবার দু লাইনের মাঝে রাস্তা যদিও এখনো পাকা হয়নি । প্রত্যেক বাড়ীতে পাকা বা আধাপাকা স্যানিটারী ল্যাট্রিন আছে । সাধারনত পাক ঘর মাচাং এর নীচে থাকে । আমাদের আগমনে চাকমারা সবাই খুশী । তারা আমাদেরকে আনক্যে চাকমা অর্থাৎ পশ্চিমের চাকমা বলে থাকে । শহরের ছেলে মেয়েরা চাকমা ভাষা বলতে পারে না । বুজিতং শহরের দক্ষিনে আরো কয়েকটি চাকমা পাড়া আছে । পাড়া থেকে আসা কয়েকজন মেয়ের সঙ্গে দেখা হলো । তারা কিন্ত চাকমা ভাষা বলতে পারে । পাড়া দেখার পর তারা আমাদের জন্য একটা ঘরে চা নাস্তার ব্যবস্থা করলো । বাংলাদেশে অনেক চাকমা আছে তারা শুনেছে কিন্ত এই প্রথম দেখলো । তাদের থেকে বিদায় নিয়ে আমরা বুজিতং শহরে গেলাম ।
বুজিতং শহরের প্রবেশ পথে বড় একটা কিয়াং আছে । শহরের বাজারে অধিকংশ বড় দোকানের মালিক রোহিঙ্গা । দুএকটা চাকমার ছোট দোকান ও পেলাম । সবাই কিছু জিনিস পত্র কেনাকাটা করলো । আমি নিজের জন্য একটা বর্মী ছাতা কিনলাম । কয়েক জন রোহিঙ্গা আমাদের সাথে আলাপ করলো । জিজ্ঞাসা করলো আমরা কোথা থেকে এসেছি । শহরের একটি রাখাইন হোটেলে আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম ।এখানে আমরা ব্যাং ও শুকরের মাংস খেলাম । শহরে ঘুরার সময় দুবার পুলিশ এসে আমাদের চেক করলো । এতে বুঝাযায় আমাদের জন্য প্রশাসন কতটা সতর্ক ও চিন্তিত । এরি মধ্যে খবর এলো আমাদেরকে তাড়াতাড়ি কিয়াং এ ফিরতে হবে । আমরা একটা খোলা ট্রাক ভাড়া করে তাড়াতাড়ি কিয়াং এ ফিরে এলাম । সময়ের অভাবে আর মায়ু নদী দেখা হলো না ।
কিয়াং এ এসে কিছুক্ষন বিশ্রামের পর আমরা চাকমা পাড়া দেখার জন্য তৈরী হলাম । বিকাল ৪টায় আমরা একটি খোলা হাফ ট্রাকে করে চাকমা পাড়া লংসং এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম । বুজিতং মংডু মেইন রোড দিয়ে কিছু যাওয়ার পর আমরা কাঁচা রাস্তায় নেমে এগুলাম । রাস্তায় আমাদের কে কয়েকটা আর্মী চেক পোষ্ট পার হতে হলো । কোন চেক পোষ্টে আমদের থামতে হয়নি এবং প্রহরীরা আমাদের চেকও করেনি। রোহিঙ্গা সমস্যার জন্য বর্তমানে আরাকানে বিরাট সংখ্যায় আর্মী, পুলিশ ও সীমান্ত রক্ষী বাহিনী নিয়োজিত । মিয়ানমারে চাকমা সম্প্রদায় ছাড়া আর কেউ রোহিঙ্গা ভাষা বলতে পারেনা । একারনে বর্তমানে পুলিশ, আর্মী ও সীমান্ত রক্ষী বাহিনীতে চাকমা ছেলেদের চাহিদা বেড়ে গেছে । এসব বাহিনীতে এখন অনেক চাকমা ছেলের চাকুরী হয়েছে । পুলিশে চাকুরী করে এরকম কয়েকজন চাকমা ছেলের সঙ্গে আমাদের ও দেখা হয়েছে । আমরা চাকমা জানতে পেরে তারা আমাদেরকে সাহায্য করেছে ।
চাকমা পাড়া লংসং দেখা
চাকমা পাড়া লং সং এর প্রায় অর্ধ কিঃমিঃ দূরে এসে আমাদের গাড়ী থামলো । পথে আমরা কয়েকটা রোহিঙ্গা পাড়া ফেলে আসলাম । লংসং পাড়ার প্রবেশ পথে এলে পাড়ার অনেক নারী পুরুষ ও ছেলে মেয়ে এসে আমাদেরকে অভ্যর্থনা জানালো । ছোট ছেলেমেয়েদের হাতে ছিল banner, ইংরেজীতে লেখা ছিল, “ We are Chakmas, Welcome to Long Chong, We love our culture, Teach us Chakma tradition, We are missed , Do not forget us.” লংসং পাড়ার মানুষের আবেগ ভালবাসা ও হ্রদয়ের অনুভুতি দেখে আমরা মুগ্ধ, অভিভুত । মনে হলো আমরা যেন যুদ্ধ ফেরত সৈনিক, দীর্ঘ দিন পর যেন একান্ত আপন জনের কাছে ফিরে এসেছি । পাড়ার উপস্থিত সব লোক প্রবেশ পথের দুধারে দাড়িয়ে ছিল । হাত জোর করে জু জু বলে সালাম দিচ্ছিল । লংসং পাড়াবাসীরা আমাদেরকে কিয়াং ঘরে নিয়ে বসালো । এখানেই আমাদেরকে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা দেয়া হলো । দল নেতা হিসাবে আমিই প্রথম সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখলাম । তারপর সকলে নিজের পরিচয় দিয়ে পান্ডিতা ভান্তে চাকমা আরাকানী উভয় ভাষায় দীর্ঘ বক্তব্য দিলেন । পাড়ার পক্ষ থেকে কিয়াং কমিটির সভাপতি এবং বড় ভান্তে কছু বললেন । তারপর হালকা নাস্তা দেয়া হলো । কিছুক্ষন বিশ্রামের পর আমরা পাড়া ঘুরতে গেলাম । লং সং একটি বেশ বড় গ্রাম । এখানে প্রায় ২০০ চাকমা পরিবার বাস করে । পাড়ার পূর্ব পাশ দিয়ে চলে গেছে প্রিংখ্যং নদী । আর নদীর পরেই ছোট ছোট পাহাড় । একটি প্রামারী স্কুল ও আছে । এই স্কুলের শিক্ষিকা মা থেইন সব সময় আমাদের সঙ্গে ছিল । পাড়ার সব গুলি ঘর মাচাং এর উপর । দুএকটা বাড়ী কাঠের । সবাই কৃষি জীবি । পাড়ার পশ্চিমে বিরাট সমতল মাঠ, ধান ক্ষেত । এক গ্রামবাসী আমাকে বলেছিল, আগে তাদের অনেক জমি ছিল । নে উইন সরকার সমাজতান্ত্রিক নীতি শুরু করলে প্রত্যেক চাষী জমি অনুযায়ী সরকারকে ধান দিতে হতো । তাই ঝামেলা এড়াতে অনেক চাকমা অতিরি্ক্ত জমি বিক্রী করে দিয়েছিল । গ্রাম বাসীদের কোন বাগানবাগিচা নেই কারন এখনো পাহাড় গুলির মালিক সরকার । এখান থেকে বুজিতং শহর প্রায় ৬/৭ কিঃমিঃ হবে । একমাত্র বুজিতং শহরে হাই স্কুল আছে । হাই স্কুলের ছেলেমেয়েদের এত দুর পথ পায়ে হেটে স্কুলে যেতে হয় । এজন্য বুজিতং চাকমা কিয়াং এ একটি ছাত্রাবাস তৈরী প্রকল্প হাতে নেয়া হেয়েছে । ২০১৪ সালের জুন মাসে ইয়াং গুন ভ্রমনের সময় আমার এক ভাই [ Cousin] সুবির দার [ বর্মী নাম Aye Mong ] কাছ থেকে জানতে পেরেছি এই বছর বুজিতং থেকে মাত্র ৩ জন ১০ ক্লাশ পাশ করেছে । ছাত্রাবাস করার জন্য বাংলাদেশের Sombodhi Welfare Society আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে । যাক আমরা পাড়া ঘুরে আবার কিয়াং এ ফেরত আসলাম । গ্রামবাসীরা আমাদেরকে আজকের রাত কাটিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলো । এখানে উল্লেখ্য যে মিয়ানমারে কোন বিদেশী নাগরিক বক্তিগত [ private ]বাড়ীতে থাকার অনুমতি নেই । তাছাড়াও আমাদের সঙ্গে কোন বক্তিগত লাগেজ [ luggage ] না থাকায় আমরা কিয়াং এ ফেরত যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম । শেষ পয্যন্ত আমাদেরকে রাতের খাবার খেয়ে যাবার অনুরোধ রাখতে হলো । গ্রামবাসীরা আমাদের জন্য খাবার রান্না করলো । এই লংসং কিয়াং এ আমাদের সঙ্গে এক বাংলাদেশী ভান্তের দেখা হলো । তার নাম পূণ্যাশ্রী ভিক্ষু, গৃহী নাম সৈকত । মধুমঙ্গল বাবুর ছাত্র ছিল । কয়েক বছর ধরে লংসং কিয়াং এ থাকেন । এই কিয়াংএ বেলা ৫টায় আমাদের খাবার দেয়া হলো । অনেক তরকারী ছিল । মনে হয় তাদের পূর্ব প্রস্তুতি ছিল । বিয়ে বাড়ীর মত আমাদের আপ্যায়ন করা হলো । সন্ধ্যার সময় গ্রামবাসীদের থেকে বিদায় নিয়ে আবার আমরা ট্রাকে করে বুজিতং কিয়াং এ ফেরত আসলাম । আসার সময় আমরা বিশ হাজার বর্মী টাকা লংসং কিয়াং জন্য দান করে আসলাম । লংসং পাড়া ছেড়ে আসতে সত্যি খুব খারাপ লাগলো । গ্রামবাসীদের উঞ্চ ভালবাসা, আপ্যায়ন ও আদর যত্ন আমাদের হ্রদয় ছুয়ে গেছে । প্রায় ৬/৭ শত বছর পর দুদেশের চাকমাদের মিলন যে এত মধুর ও হ্রদয় গ্রাহী হবে তা কখনো বুঝতে পারিনি । আসার সময় তাদেরকে বার বার প্রতিশ্রুতি দিতে হলো, বাংলার কবি জীবনান্দের ভাষায়, “আবার আসিব ফিরে মায়ূ, কালাদান, লেমিও নদী তীরে” । বুঝতে পারলাম তাদের এখন আর্থিক সাহায্যের একান্ত প্রয়োজন ।বুজিতং এলাকায় প্রায় ১০ হাজার চাকমা বসবাস করে । আমরা এ অঞ্চলে ৩০টি চাকমা পাড়া সনাক্ত করতে পেরেছি । শিক্ষার হার খুব নীচে । হয়তো ২০/২৫ % হবে । এমনিতেই আরাকান প্রদেশ মূল বার্মার তুলায় অনুন্নত । রোহিঙ্গা সমস্যার কারনে বর্তমনে সরকার কোন International NGO কে আরাকানে কাজ করতে দেয় না । শুধুমাত্র জাতিসংঘকে সীমিত ভাবে কাজ করতে দেয় । বর্মী সমাজে বৌদ্ধ ভিক্ষুদর স্থান অনেক উপরে । তাই একমাত্র ভান্তেদের মাধ্যমে হয়তো কিছু করা যাবে ।
সন্ধ্যায় আমরা বুজিতং কিয়াংএ ফেরত আসলাম । আমাদের দলের কেউ কেউ সিটউয়ে যবার ইচ্ছা ছিল । বাত্রে জানাগেল সিটউয়ের অবস্থা ভাল নয় । ২৯ এপ্রিল ২০১৪ থেকে মিয়ানমারে আদমশুমারী হওয়ার কথা । রোহিঙ্গাদের আদমশুমারীতে রোহিঙ্গা হিসাবে গননা না করার জন্য রাখাইন দল গুলি বিক্ষোভ শুরু করেছে । এক পর্য্যায়ে তারা জাতিসংঘের অফিস আক্রমন করলে পুলিশ ফায়ারিং এ একটি রাখাইন মেয়ে মারা যায় । এনিয়ে বেশ উত্তেজনা থাকায় আমরা সিটউয়ে যাওয়া বাদ দিলাম । এ ছাড়াও বিজু উত্সব খুব কাছে হওয়ায় অনেকে তাড়াতাড়ি দেশে ফেরার তাগিদ দিতে লাগলো । সবকছু বিবেচনা করে অবশেষে আমরা পরের দিন ২৯ মার্চ ২০১৪ তারিখে দেশে ফেরত আসার সিদ্র্ধান্ত নিই । ইতিহাস থেকে জানতে পেরেছি চাকমারা পূর্বে মংডু এবং বুজিতং অঞ্চলে বাস করতো । ১৯৪২ সালের বৌদ্ধ মুসলিম দাঙ্গায় রাখাইদের সাথে অনেক চাকমাও মারা যায় । পরবর্তীতে রোহিঙ্গারা মুজাহিদীন যুদ্ধ শুরু করলে অনেক চাকমা ঘর বাড়ী ছেড়ে রাখাইন সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল কিয়ক্টঅ ও ম্রাকউতে চলে যায় । কিন্ত ২০১৪ সালের জুন মাসের দাঙ্গায় চাকমারা তেমন ক্ষতি গ্রস্থ হয়নি । তখন হয়তো রোহিঙ্গারা জানে চাকমারা রাখাইন নয় ।
২৮ মার্চ রাত ১০ টায় হতাত্দুজন পুলিশ কিয়াং এ উপস্থিত । তেমন কিছু নয় । তারা এসে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করলো । দুজন পুলিশের মধ্যে একজন ছিল চাকমা । তাকে জিজ্ঞেস করাতে বললো উপরের নিদ্দেশে তারা এসেছে । এতে বুঝা যায় আরাকানের নিরাপত্তা নিয়ে কতৃপক্ষ বেশ সতর্ক ।
দেশে ফেরার পালা
২৯ মার্চ সকালের নাস্তা খেয়ে আমরা ফেরার জন্য প্রস্তুত হলাম । সম্বোধি ওয়েলফেয়ার সমিতির পক্ষ থেকে ছাত্রাবাসের জমি ক্রয়ের জন্য আমরা বাংলাদেশী টাকা ৬০ হাজার দান করলাম । আমরা আসার সময় কিছু চাকমা এবং তঞ্চঙ্ক্যা পোশাক এনে ছিলাম সেগুলি উপহার হিসাবে তাদেরকে হস্থান্তর করা হলো । অবশেষে বড় ভান্তে জাকরিয়া ও উপস্থিত গ্রামবাসীদের থেকে বিদায় নিয়ে আমরা সকাল ১০টায় একটি বড় মাইক্রো রিজার্ভ করে মংডু শহরের দিকে যাত্রা করলাম । ইচ্ছা ছিল আরো চাকমা অঞ্চল ঘুরে আসবো । কিন্ত সময়ের অভাবে তা আর হয়ে ওঠেনি । আমরা বেলা ১২ টায় মংডু শহরে এসে পৌছলাম । আমাদের বিদায় দেয়ার জন্য সুবিতা ও পান্ডিতা ভান্তে মংডু পয্যণ্ত এসেছিলেন । মংডুতে শেষ কেনাকাটা করে আমরা এক চাকমা হোটেলে দুপুরের খানা খেয়ে নিলাম । বর্মী ইমিগ্রেশন অফিসের ক্লিয়ারেন্স নিয়ে বেলা ২টায় একটি ট্রলার রিজার্ভ করে টেকনাফে ফিরে আসলাম । আরাকান ভ্রমন আমাদের মনে পুরা তৃপ্তি দেয়নি । ভবিষ্যতে আবার আরাকান ভ্রমনের বাসনা নিয়ে ঐ রাত্রেই

শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২০

এচ্যে নয় কেল্যা খামাক্কাই পুগ মোন মাধাত রাঙা বেল আহ্’জিবো- সুনানু ইনজেব চাঙমা

ব্রিটিশরা ১৮৬০ সালত পার্বত্য চট্টগ্রামরে দগল গরানা পর চন্দ্র ঘোণারে জেলা ইজেবে ফগদাঙ গচ্ছে। সক্যে সিধু এক্কান প্রাইমারি ইক্কুল থিদ’ গরে ১৮৬৩ সালত। সে প্রাইমারি ইক্কুলত ইংরেজি বাংলা সমারে চাঙমা আ বার্মিজ লেঘা চালু গরা অহ্’য়।
আ ১৯৩৭-৩৮ সালত হারবার্ট ফ্রেডারিক মিলারে রাঙ্গামাটি হাই ইক্কুলত প্রধান শিক্ষক আ পার্বত্য চট্টগ্রামত শিক্ষা বিভাগত ডাইরেক্টর বানেয়্যা(নিয়োগ দেয়া হয়)। তে অমহদ’ ক্ষমতাবান সেনে পার্বত্য চট্টগ্রামত ডেপুটি কমিশনারার তা আঞ্জামে লয়। সক্যে তেয়্য বঙ্গপ্রদেঝর শিক্ষা বিভাগর সচিবরে তা আঞ্জামে আনি ফ্রেডারিক মিলার পার্বত্য চট্টগ্রামত চাঙমা ভাচ চালু গচ্ছে। (সূত্র: পার্বত্য চট্টগ্রামের মেলা উৎসব- শরদিন্দু শেখর চাঙমা)
১৯০০ সালাত লুসাই হিল’রে জেলা (ইরুক মিজোরাম) গরানা পর ইংরেজউনে ইংরেজি সমারে মিজো ভাচ চালু গরি ইক্যে তারা বানা ইক্কুল কলেজত নয়, বিশ্ববিদ্যালয়তয়্য তারা ভাচ্ছোই লেঘা শিঘদন।
মাত্তর আমি! বানা ১৯৬০ সাল আ১৯৩৭-৩৮ সালত নয়, পাকিস্তান আমলত ১৯৫৯ সালতয়্য পাকিস্তান সরকারে চাঙমা লেঘা শিঘিবার ইক্কুলত জু গরি দিয়্যা। দুগর কধা আমা ন’ মিজিল্যা চেলাউনে সিয়ান গজি ন’ লন। তারা বাংলালোই লেঘা শিঘিবার কোই রাজবাড়িত ঝোল গরিলাক। আর ন’ অহ্’ল মা-ভাচ্ছোই লেঘা শিঘানা।
সক্যে দেঘা যিয়্যা গৈরিকা পত্রিকাত যে চাঙমা কবিদ্যা লেঘা অহ্’য় সিউন আর বাংলাদি ভাঙি দিয়্যা অহ্’য় মাত্তর, বাংলা লেঘানি কন’ দিন চাঙমাদি ভাচ বদল অদে দেঘা ন’ যায়।
এ পর এল’ বাংলা সরকার আমল। ১৯৯৭ সালত পার্বত্য চুক্তি নিজ’ মা-ভাচ্চোই লেঘা শিঘিবার লেঘা থেলেয়্য ২০১৭ সালত এনেই প্রাক-প্রাথমিকত বই পেলাক চাঙমা, মারমা, ককবরক, গারো আ সাদ্রি চিজিদাঘি। মাত্তর আমা মানেউনর এজ’ চেদন ন’ এযে।
গেল্লে ১৩ নভেম্বর ২০২০ ইং দিঘীনালা সাধনা টিলাত শুভ দানোত্তম কঠিন চীবন দান। চাঙমা ভাচ ফগদাঙিত্যাই চাঙমা সাহিত্য বাহ্’ত্তুন ভান্তেদাঘিরে চাঙমা লেঘা চার্ট আ চাঙমা সাহিত্য বাহ্ পাবলিশার্সর তপ্পেত্তুন পত্তম ফগদাঙি “ঘিলে ফুল” আ সাঙু (চাঙমা লেঘা শিঘিবার বই) আ সমারে যার এজালে চাঙমা সাহিত্য বাহ্ ২০ বঝরত কুচ দিল সে স্বগীয় পাহাড়ীকা চাঙমা উদিজে চীবর দান গরিবার সে শুভ দানোত্তম কঠিন চীবর দানত সরিত অহ্’লাক।
রাঙা খাদিয়্য ধোনা আ বর গাঙয়্য সানা সান গরি তারা ঘিলে ফুল বইবো সিধু কন’ বেজি পারন সে আঝায় নিলাক। সিয়োত যিবে কধা পজ্জনি/সঞ্চালন এল’ সুনানু নাটোরাম চাঙমা দাঘি। তারে এক্কান কাগোজ লেঘি (বাংলা ওক্কোর চাঙমা ভাচ) দিয়্যা তারে গজে দিয়্যা অইয়ে। মাত্তর ঘন্টা পার অই যার তার কন খবর নেই। ইয়োত লেঘা অইয়ে- চাঙমা সাহিত্য বাহ্ পাবলিশার্সত্তুন পত্তম ফগদাঙি “ঘিলে ফুল” ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ইং ফগদাঙ গরা অইয়ে। চাঙমা সাহিত্য বাহ্ এ বইউন বিজি বিজি নানান জাগাত (বান্দরবান, ঢাকা, রাঙামাত্যা আ খাগাড়াছড়ি আদামে আদামে )চাঙমা লেঘা শেঘায়। ............ এ ধক্যে গরি লেঘা অইয়ে।
পরে তারলোই আর ফুরমারা অলে তে কল মুই পড়ি ন’ যানঙ। পরে তারে আর’ মুয়েদি কোই দিলং, এ এ কারণ................। পরেদি আদলং পাদলং গরি কোই দিল- এ ঘিলে ফুল বইবো কন্না কন্না কিনিবো কিনি পারিবা।
এ চ’ বাপ ভেই - মা বোন লক! দুচ কারে দিবং? আমি কত্তমান নিজরে কোচ পেই? মুরত পরি, আমল গরি ভাবি চ’। ভাবিবার সময় এস্যে। কয় বার ভুল গরিবং? আমি বেগে খবর পেই- “স্বীয় ঐতিহ্য, ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে একটি জাতির অস্তিত্ব রক্ষা হয়।”
এচ্যে মর পরম পূজ্য, ঝু ঝু পিয়্যা লাক শ্রীমৎ বুদ্ধ বংশ ভান্তেদাঘিরে এধক্যে মা ভাঝে লেঘা দেঘি আমি বুক অজল গরি কোই পারির- এচ্যে নয় কেল্যা খামাক্কাই পুগ মোন মাধাত রাঙা বেল আহ্’জিবো।

কেন আঞ্চলিক স্বায়ত্ব শাসন?

বাংলাদেশ খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির নিকট পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের শাসনতান্ত্রিক অধিকার দাবীর- আবেদন পত্র গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ভাবী ...