বিভিন্ন মঞ্চে বক্তৃতার আয়োজন করতেন। দলে দলে লোক ভিড় করত সেসব
অনুষ্ঠানে। তার বক্তৃতায় সূক্ষ্মতা ও চিন্তার গভীরতা দেখে মুগ্ধ হন
শ্রোতারা।
কিছুদিনের মধ্যেই হেলেনের অসংখ্য অনুরাগী-ভক্ত তৈরি হলো। প্রচ- রাজনীতি
সচেতন ছিলেন তিনি। নারীদের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে তিনি ছিলেন সোচ্চার।
লিঙ্গগত বৈষম্য দূর করার আহ্বান জানাতেন সবাইকে। মাত্র দুই বছর বয়সে
বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিত্ব বরণ করতে বাধ্য হলেও সংগীত উপভোগ করার এক
আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল তার। আত্মজীবনীমূলক বই ‘The story of my life’ এ নিজের
জীবনের বিপর্যয়, লড়াই ও ভালোবাসার জীবনচিত্র তুলে ধরেন তার অপূর্ব লেখনীতে।
লোকের মুখে মুখে উচ্চারিত হতে থাকে তার নাম। তিনি কিংবদন্তি হেলেন কেলার।
নিরাশা থেকেও জন্ম নিতে পারেন হেলেন কেলাররা
শারীরিক প্রতিবন্ধীদের সম্পর্কে আমাদের একটি সাধারণ ধারণা হলো, তারা আর
দশজন স্বাভাবিক মানুষের মতো চলাফেরা করতে পারে না। জীবনের অর্জন বলতে
কিছুই থাকে না। শুধু পরিবারের সবার ওপর তারা কেবলই বোঝা। কিন্তু এ ধরনের
কিছু প্রচলিত ধারণাকে পাল্টে দিয়েছেন হেলেন কেলার। এক গভীর নিরাশা থেকেও
জন্ম নিতে পারে তাদের মতো কিংবদন্তি। অন্ধ-বধির হয়েও কীভাবে মানুষ তার দেখা
ও বোঝার ক্ষমতা দিয়ে আকাশ স্পর্শ করতে পারে, তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন
হেলেন কেলার। তার পুরো নাম হেলেন অ্যাডামস কেলার। হেলেন কেলার ১৮৮০ সালের
২৭ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামায় জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন ১
জুন, ১৯৬৮ সালে। বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধিত্ব নিয়েও মাত্র ২৪ বছর বয়সে
তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি পর্যন্ত
অর্জন করেন। তিনি প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিকারের জন্য আজীবন লড়াই করে গেছেন।
একই সঙ্গে তিনি ছিলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ লেখক ও রাজনৈতিক কর্মী। তার বাবার
নাম আর্থার কেলার এবং মায়ের নাম কেইট অ্যাডামস। মাত্র ১৯ মাস বয়সে তিনি
গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাবা-মা আদরের মেয়ের
জীবনের
আশা ছাড়তে পারেননি। চিকিৎসা করা শুরু করেন। বহু চিকিৎসার পর হেলেনের জীবন
হয়তো রক্ষা পায়, কিন্তু তার কথা বলা, শোনা এবং দেখার শক্তি চিরদিনের জন্য
হারিয়ে যায়। শিশুকাল থেকেই হেলেন কেলার একাধারে বাক-শ্রবণ ও
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিত্বের শিকার হয়ে বহুমুখী প্রতিবন্ধিত্ব নিয়েই বড় হতে
থাকেন। তার বয়স যখন মাত্র ছয় বছর তখন বাবা-মা তাকে ওয়াশিংটনের প্রসিদ্ধ
বিজ্ঞানী, টেলিফোন আবিষ্কারক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের কাছে পরামর্শ
গ্রহণের জন্য নিয়ে যান। হেলেন কেলারকে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে
তিনি বলেন, হেলেন আর কোনো দিন চোখে দেখতে পাবে না এবং কানেও শুনতে পাবে না।
তবে গ্রাহাম বেল হেলেন কেলারের তীক্ষè বুদ্ধিমত্তা দেখে অনুধাবন করেন
পরিকল্পনা অনুযায়ী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে স্বাভাবিক জীবনের
কাছাকাছি একটি সুন্দর জীবন ফিরে পাওয়া সম্ভব।
সমাজসেবা
নিজে বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েও সমাজের এই ধরনের মানুষের জন্য
সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করেছেন। তার জীবদ্দশায় যুক্তরাষ্ট্রের সব
প্রেসিডেন্টের এবং আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল, মার্ক টোয়েন, চার্লি
চ্যাপলিনের মতো বিখ্যাত ব্যক্তিদের সহায়তা পান। হেলেন ১৯১৫ সালে জর্জ
কেসলারকে সঙ্গে নিয়ে হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি আন্তর্জাতিক
সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। সংস্থাটি এখনো বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী
ব্যক্তিদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়
মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের অনুরোধে হেলেন কেলার বিভিন্ন হাসপাতালে
যুদ্ধাহত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নাবিক ও সৈনিকদের দেখতে যেতেন এবং শান্তি ও আশার
বাণী শোনাতেন।
রাজনৈতিক জীবন
রাজনৈতিক বিষয়েও অভিজ্ঞ ছিলেন হেলেন কেলার। এই বিষয় নিয়ে তিনি লেখালেখি
করেছেন। তিনি ছিলেন আমেরিকান সোশ্যালিস্ট পার্টির সমর্থক। হেলেন সেখানে
১৯০৯ সালে যোগদান করেন। তিনি আয়ের সুষম বণ্টন দেখতে চাইতেন। ধনতান্ত্রিক
সমাজব্যবস্থার অসমতার শেষ দেখাই ছিল তার ইচ্ছা। তার বই ‘Out of The Dark’-এ
এই বিষয়ে বিস্তারিত রচনা লিখেছেন। ১৯১২ সালে তিনি ইন্ডাস্ট্রিয়াল
ওয়ার্কার্স অব দ্য ওয়ার্ল্ডে যোগদান করেন। হেলেন ছিলেন একজন শান্তিবাদী এবং
তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার জড়িত থাকার বিরুদ্ধে ছিলেন।
সাহিত্যেও ছিল দখল
সব
প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে তিনি যেমন সমাজের জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তেমনি
সাহিত্যাঙ্গনেও রেখেছিলেন দক্ষতার ছাপ। হেলেনের রচিত বইয়ের সংখ্যা ১১টি।
প্রধান বই হচ্ছে দি স্টোরি অব মাই লাইফ (১৯০৩), লেট আস হ্যাভ ফেইথ, দি
ওয়ার্ল্ড আই লিভ ইন (১৯০৮), ওপেন ডোর ইত্যাদি। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে হেলেনের
খুবই সুসম্পর্ক ছিল। হেলেনের সুখ্যাতি সম্পর্কেও রবীন্দ্রনাথ জ্ঞাত ছিলেন।
এ ছাড়াও তিনি বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অভিশপ্ত বিড়ম্বনা
জীবনের বিষাদের ওপর একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। চলচ্চিত্রে তার নিজের
ভূমিকায় তিনি নিজেই অভিনয় করেছেন। হেলেনর লেখা একটি কবিতা-
‘আমার দৃষ্টিদ্বয় তারা সরিয়ে নিল যেখানে যা হওয়া উচিত ছিল কিন্তু আমি স্মরণ করি মিল্টনের স্বর্গখনি,
আমার শ্রবণদ্বয় তারা সরিয়ে নিল যেখানে যা হওয়া উচিত ছিল বিথোভেন এসে মুছালো আমার চোখের পানি।
আমার জিহ্বা তারা সরিয়ে নিল যেখানে যা হওয়া উচিত ছিল যখন আমি ছোট ছিলাম ঈশ্বরের সাথে কত কথা,
সম্পূর্ণ পোষণ করি তিনি তাদের অনুমতি দেবেন না সরিয়ে নিতে আমার আত্মা।’
স্পর্শের অনুভূতি ছিল সূক্ষ্ম
হেলেন কেলারের অসামান্য কিছু প্রতিভা ছিল। যেমন- তিনি বাদ্যযন্ত্রের ওপর হাত রেখেই তাতে কী সুর বাজছে তা বলতে
পারতেন।
অথচ তিনি কিছুই শুনতে পেতেন না। বাদ্যযন্ত্রের তরঙ্গের সঙ্গে স্থাপিত হয়
হেলেনের নিবিড় যোগাযোগ। ১০ বছর বয়সে নরওয়েতে উদ্ভাবিত পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে
কথা বলা শেখেন হেলেন। এমনকি দীর্ঘদিন পরও কারও সঙ্গে হাত মেলালে বলে দিতে
পারতেন লোকটি কে। তার স্পর্শের অনুভূতি ছিল অত্যন্ত সূক্ষ্ম। নোবেলজয়ী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হেলেনের হাত স্পর্শ করে তাকে কবিতা পড়ে শোনাতেন। হেলেন
বিশ্বকবির হাতের স্পর্শে অনুভব করতেন কবিতার শব্দমালা। এমনকি হেলেন কেলার
নৌকাও চালাতে পারতেন। শুধু তাই নয়, নকশিকাঁথা সেলাই করতে পারতেন হেলেন। আর
একজন স্বাভাবিক মানুষের মতোই তিনি দাবা, তাস খেলতে পারতেন। বরং তার সঙ্গে
বিপরীতে খেলাটা মোটেই খুব সহজ ছিল না। এই হেলেন অন্ধদের জন্য তহবিল সংগ্রহ
করে গড়ে তোলেন নতুন নতুন সমিতি ও স্কুল। সমাজের বাক-শ্রবণ ও
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষের জন্য সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি ও গণমানুষের সহায়তা
অর্জনে আজীবন প্রচেষ্টা চালান। ‘হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল’ নামে
আন্তর্জাতিক সংস্থাটি এখনো কাজ করে যাচ্ছে। তার অসামান্য কৃতিত্বের জন্য
১৯৭৭ সালে ‘আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দি ওভারসিজ ব্লাইন্ড’ গঠিত হয়। হেলেন
এই প্রতিষ্ঠান ছাড়াও পৃথিবীর বহু দেশের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে
প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন সভা-সমিতিতে বক্তৃতা দিয়ে যা অর্থ
পাওয়া যেত তা দিয়ে বিভিন্ন দেশে অন্ধদের কল্যাণার্থে ৫০টিরও বেশি
প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন হেলেন। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সাহায্য পেয়ে হাজার হাজার
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষ শিক্ষালাভ করেছে। নিজেকে সফলভাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত
করেছে। একজন সুস্থ সবল মানুষের জন্যও হেলেন একজন অনুপ্রেরণীয় ব্যক্তিত্ব।
কর্মযজ্ঞে অবিস্মরণীয়
প্রাথমিকভাবে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর যখন জানা গেল হেলেন আর কোনোদিন
চোখে দেখতে এবং কানে শুনতে পারবেন না। কিন্তু গ্রাহাম বেল হেলেনের তীক্ষè
বুদ্ধিমত্তা দেখে বাবা আর্থারকে বলেন বোস্টনের পার্কিনস ইনস্টিটিউশনে
হেলেনকে ভর্তি করে দেওয়ার জন্য। ডাক্তার হোর এই প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ ছিল
অন্ধদের শিক্ষাদান। ডাক্তার নিজেই হেলেনকে স্নেহ দিয়ে
লেখাপড়া
শেখাতে শুরু করেন। কিন্তু হঠাৎ ডাক্তার হো মারা গেলে অ্যানি সুলিভ্যান
ম্যানসফিল্ড নামের এক শিক্ষিকার হাতে যায় হেলেনের দায়িত্ব। অ্যানি অন্ধ এই
শিশুকে স্পর্শের মাধ্যমে জগৎ চেনাতে লাগলেন। আলোর ছোঁয়া এবং অন্ধকারের
অনুভূতির তফাৎ বোঝালেন। কল চালিয়ে হাতের ওপর বয়ে যাওয়া তরলকে চেনালেন ‘জল’
বলে। একে একে পরিচয় ঘটল তার সঙ্গে বাড়ির বিভিন্ন আসবাবপত্র, টেবিল, চেয়ার,
বিছানা ইত্যাদির সঙ্গে। আস্তে আস্তে হেলেন অবিশ্বাস্য দ্রুততায় সব শিখে
নিতে থাকেন। লুই ব্রেইল আবিষ্কৃত ব্রেইল পদ্ধতির মাধ্যমে হেলেন লেখাপড়া
শিখতে শুরু করেন। কয়েক বছরেই হেলেন ইংরেজি, ল্যাটিন, গ্রিক, ফরাসি এবং
জার্মান ভাষায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। পরবর্তীতে তিনি ব্রেইল টাইপ রাইটারে
লিখতে শেখেন। হেলেন ১১ বছর বয়সে এক বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে কথা বলার
চর্চা করতে থাকেন। ধীরে ধীরে চিকিৎসার মাধ্যমে তার বাকশক্তি অনেকটা
স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। ২০ বছর বয়সে হেলেন সাহিত্য, দর্শন, ধর্ম,
ইতিহাসে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন, ভর্তি হন র্যাডক্লিফ কলেজে। কলেজে
পড়াকালীন তিনি লেখেন তার প্রথম আত্মজীবনীমূলক রচনা ‘Optimism’। চার বছর পর
তিনি সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে বিএ পাস করেন। কলেজে স্নাতক হওয়ার পর তিনি
লেখেন তার জীবনের নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সাংবাদিক পেশায় তার কর্মজীবন
শুরুর কথা। ১৯২২ সালে ডাক্তার বেলের মৃত্যুর পর তারই শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী
হেলেন বেলের প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। অন্ধ শিশুদের নিয়ে কাজ করতে প্রায়ই হেলেন
অন্ধদের জন্য নির্মিত বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শনে যেতেন। ১৯৩৫ সালে হেলেনের
শিক্ষয়িত্রী ও সহযোগী অ্যানি সুলিভ্যান মৃত্যুবরণ করেন। অ্যানির এই
মৃত্যুকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না হেলেন। জীবনের চলার পথের সঙ্গীকে
হারিয়ে তার প্রায় পাগল পাগল অবস্থা। এর মধ্যেই শুরু হয় বিশ্বযুদ্ধ। মার্কিন
প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের অনুরোধে হেলেন কেলার বিভিন্ন হাসপাতালে যুদ্ধাহত
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নাবিক ও সৈনিকদের দেখতে যেতেন। তাদের শান্তি ও আশার বাণী
শোনাতেন। যুদ্ধ শেষ হলে বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য
বিশ্বব্যাপী এক আন্দোলন গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন। ১৯৫০ সালে হেলেনের ৫০ বছরের
কর্মময় জীবনকে সম্মান জানাতে প্যারিসে এক বিরাট সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা
হয়। তখন তার বয়স পৌঁছে গেছে সত্তর এর কোঠায়। ১৯৫৯ সালে হেলেন জাতিসংঘ
কর্তৃক বিশেষ সম্মানে ভূষিত হন। ১৯৬৮ সালের ১ জুলাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত
১১টি বই রচনা করেছেন তিনি। হেলেন কেলার এমনই এক নাম যা অন্ধ, বিকলাঙ্গ,
প্রতিবন্ধী মানুষের কাছে আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। যুগে যুগে এই মহীয়সী নারীর
রেখে যাওয়া দৃষ্টান্তই হোক সবার পথচলার মন্ত্র। প্রচ- ইচ্ছাশক্তি মানুষকে
যে কোথায় নিয়ে যেতে পারে, তার জ্বলন্ত উদাহরণ হেলেন কেলার। শারীরিক সব
অক্ষমতাকে প্রচ- মানসিক শক্তি দিয়ে জয় করে হেলেন হয়ে উঠেছিলেন একজন
চিন্তাশীল-সৃষ্টিশীল মানুষ।
দ্য মিরাকল ওয়ার্কার
১৪
বছর বয়সে হেলেন কেলার ‘রাইট হামসন’ স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর বিশ্ববিখ্যাত
লেখক মার্ক টোয়েনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। মার্ক টোয়েন তার বর্ণনায় হেলেন
কেলারকে উল্লেখ করেছিলেন মিরাকল ওয়ার্কার হিসেবে। সারা বিশ্বের জন্য
অনুপ্রেরণীয় এই মহীয়সী নারীকে নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরি হয় ১৯৬২ সালে। যেখানে
নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন পেটি ডিউক। চলচ্চিত্রটির নামকরণ করা হয় মার্ক
টোয়েনের সেই রচনা থেকে ‘দ্য মিরাকল ওয়ার্কার’। এই চলচ্চিত্রটি বিশ্বব্যাপী
আলোড়ন তোলে। যার ফলে পরবর্তীতে দুইবার ছবি নির্মাণ করা হয় ১৯৭৯ ও ২০০০
সালে। যেগুলো ভিন্ন ভিন্ন সময়ে টেলিভিশনেও রিলিজ পায়। হেলেন কেলারের জীবনের
সবচেয়ে কঠিন দিকগুলো অবলোকন করেছেন এবং নিজের মেধা আর অধ্যবসায় দিয়ে জয়ও
করে নিয়েছিলেন। সেটাই চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয় চলচ্চিত্রে। হেলেনের
শিক্ষয়িত্রী ও সহযোগী অ্যানি সুলিভ্যান চরিত্রটি পরবর্তীতে চিত্রায়ণ করেন
পেটি ডিউক। প্রথম চলচ্চিত্রে এই চরিত্রে কাজ করেছিলেন অ্যানি বেনক্র্যাফট।
সব চলচ্চিত্রই দর্শক এবং সমালোচকদের হৃদয় জয় করে নিয়েছে।