শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

পার্বত্য চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ নেশন-বিল্ডিং এর সমস্যা নয় কি? - Anurug Chakma

 

রাষ্ট্র কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর ব্যাংক ডাকাতি বুঝে। কিন্ত সন্ত্রাস দমনের নামে গণগ্রেপ্তার, Illegitimate use of force, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, এসব কিছুই বুঝতে চায় না।

রাষ্ট্রযন্ত্র রাষ্ট্রদ্রোহ বুঝে কিন্ত গায়ের জোরে সংখ্যাগুরুর জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দেওয়া এবং পাহাড়িদের আইডেন্টিটি ক্রাইসিসকে বুঝতে চায় না।
রাষ্ট্র অসাম্প্রদায়িক দাবি করতে চায়। কিন্ত পাহাড় থেকে সমতল কোথাও আদিবাসী আছে বলে স্বীকার করতে চায় না।
রাষ্ট্র মিলিটারাইজেশন এবং এথনিক ক্লিনজিং (জাতিগত নিশ্চিহ্নকরণ) বুঝতে চায় না। বরং রাষ্ট্রের প্রবল আগ্রাসনের মুখে পাহাড়িদের নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়ায়কে রাষ্ট্র দেশদ্রোহ বলতে চায়।
রাষ্ট্র পাহাড়ে ইন্সারজেন্সি দেখতে পায়। কিন্ত পাহাড়িদেরকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য ডেমোগ্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং বুঝতে চায় না।
সীমান্ত সড়ক, পর্যটন ব্যবসা করাটাকে রাষ্ট্র অর্থনৈতিক উন্নয়ন মনে করে। কিন্ত উন্নয়নের নামে আগ্রাসন, পাহাড়িদেরকে উচ্ছেদ করা যে বৈধ নয় সেটা বুঝতে চায় না।
জনগণ যেমন, রাষ্ট্রও তেমন। এজন্য এদেশের সংখ্যাগুরুদের মধ্যে অনেকে নিজেদের বেলায় স্বাধীনতা চাইতে পারে, কিন্ত অন্যের পরাধীনতা টিকিয়ে রাখতে চায়। এদেশের সংখ্যাগুরুদের মধ্যে অনেকে নিজেদের জন্য গণতান্ত্রিক অধিকার চাই, কিন্ত অন্যের গণতান্ত্রিক অধিকারকে অস্বীকার করে।
এখানেই কি শেষ? ঢাকা শহরে পাহাড়িদের দেখলে সংখ্যাগুরুদের মধ্যে অনেকে লাফিয়ে উঠে বলে, “দেখ দেখ চাকমা চাকমা”। আমি নিজেও কয়েকবার এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি। রাষ্ট্র এই রেসিজমকে যেমন বুঝতে চায় না। তেমনি স্বীকারও করতে চায় না। এটাই তো বিশাল সমস্যা!
এভাবেই তো গেল বছরের পর বছর। দশকের পর দশক। এভাবেই সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘুর বৈরি সম্পর্ক দাঁড়িয়ে গেছে। এভাবেই চলছে বাংলাদেশের নেশন-বিল্ডিং! রাষ্ট্রের এই Assimilationist এবং Exclusive Nation-building পাহাড়িদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করেছে। কখনো তাদেরকে করেছে “উপ-জাতি”। কখনোবা তাদেরকে “ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী” বানিয়েছে। কিন্ত কখনো তাদেরকে জাতির কাতারে আসতে দেওয়া যাবে না। কি ভয়ংকর রাষ্ট্রের দর্শন!
যাক, আমাদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি থাকতে পারে। দৃষ্টিভঙ্গির তফাৎ থাকতে পারে। কিন্ত এখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমাদের সামনে একটা রাস্তা ছিল। সেটা হচ্ছে পার্বত্য চুক্তির শতভাগ বাস্তবায়ন করা। কিন্ত সেটাও কি হয়েছে? সেটা নিয়ে রাষ্ট্রের কত মিথ্যাচার! কত ছলচাতুরি! কত প্রতারণা! রাষ্ট্র নিজেই এই চুক্তির প্রধান Spoiler। একদিকে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাত, অন্যদিকে পাহাড়িদের মধ্যে জাতিগত দ্বন্দ্ব-সংঘাতকে রাষ্ট্র উসকে দিতে চায়। রাষ্ট্র শুধু পাহাড়িদের নিয়ে একের পর এক গেম খেলতে চায়। মনে আছে, চুক্তির পরে পাহাড়ে তিন বিদেশী অপহরণের গল্প। এবার কুকি-চিন নিয়ে নাটক শুরু করলেন। এই নাটক দেখে দেশের অনেক বুদ্ধিজীবী নামক “বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীরা” রাষ্ট্রদ্রোহের ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে। প্রতিবেশী দেশের উস্কানি দেখতে পাচ্ছে। হায় হায় দেশটা গেল গেল! কিন্ত কেউ জোর দিয়ে বলছে না পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। কেউ বলছে না, স্বাধীনতার পর থেকে আমরা পাহাড়ের মানুষদের উপর একটা অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছি। সেখানে লোগাং গণহত্যা, লংগদু গণহত্যা এবং নানিয়াচর গণহত্যা থেকে শুরু করে অনেক ম্যাসাকার হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে। শরণার্থী হয়েছে। প্রতি পাঁচজন পাহাড়িদের জন্য একজন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত আছে। এই মিলিটারজাইসেশন করতে গিয়ে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুক্ত কারাগারে (Open Prison) বানিয়ে ফেলা হয়েছে। সেখানে Freedom of Movement কোথায়? সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে কল্পনা চাকমারা অপহরণ হচ্ছে কেন? পাহাড়ি মেয়েরা ধর্ষণ হচ্ছে কেন? নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে রমেল চাকমারা নির্মমভাবে হত্যার শিকার হচ্ছে কেন? অথচ, রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের এই ডিসকোর্সটিকে পাশ কাটিয়ে পাহাড়ে সন্ত্রাসী ধরার, পাহাড়ে আন্তর্জাতিক গেম হচ্ছে এসব আজগুবি থিউরি দিয়ে কি প্রমাণ করতে চান? পাহাড়ে সন্ত্রাসী আছে, তাই মিলিটারাইজেশন বাড়াতে হবে, তাই না? পাহাড়ে অস্ত্রবাজি আছে, তাই পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করা যাবে না। এই তো!
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক Christian Davenport বলেছেন, “State repression creates a ‘backlash’ that intensifies mobilisation”। ২০২২ সালে Journal of Policing, Intelligence and Counter Terrorism থেকে “Does State Repression Stimulate Terrorism? A Panel Data Analysis” শিরোনামে একটি পেপার পাবলিশ করেছিলাম। Grievance Theory উপর ভিত্তি করে মূলত আমি এই পেপারের Hypothesisটি ভেভেলপ করেছিলাম। এই Hypothesisটি আমি দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশের প্যানেল ডেটাসেট দিয়ে টেস্ট করে দেখেছি। আমার প্রাপ্ত গবেষণার ফলাফলও প্রমাণ করে, রাষ্ট্রের মানবাধিকার লঙ্ঘন ‘backlash’ হতে পারে। রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন-নির্যাতন বাড়লে, জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বাড়বে, এবং ফলশ্রুতিতে এই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে উগ্রপন্থা এবং সন্ত্রাস বাড়বে।
তাই, পার্বত্য চুক্তির শতভাগ বাস্তবায়নই একমাত্র Accommodative Nation-building হতে পারে এবং পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

কেন আঞ্চলিক স্বায়ত্ব শাসন?

বাংলাদেশ খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির নিকট পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের শাসনতান্ত্রিক অধিকার দাবীর- আবেদন পত্র গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ভাবী ...