প্রণয়
বায়ূর ন্যায় নিরাকার। ওটা স্পর্শ করা যায়না, তবে অনুভবনীয়, দেখা যায়না, কিন্তু
বোঝা যায়। প্রেমিকের প্রেম -দুনিয়ার এই অনাহূত অতিথিটি বহু রূপী। সে কখনো আসে
স-সাগরা পৃথিবীর সম্রাটের বেশে, কখনও বা আওলীয়া - পীর - ফকীরের বেশে। পৃথিবীর অতি
প্রাচীর এই অতিথিটি কিন্তু যে বেশেই আসুক না কেন, প্রেমিক - প্রেমিকার কাছে
সে চির নতুন - চির বরণ্য। বায়ূর ন্যায় সে নিরাকার হলেও এই প্রেমু অতিথির ভক্ত জন
কিন্তু পূর্ব হতে পায় তার চরণ ধ্বনি। তাই এই ঈপ্সিত জনের আগমনে পূর্বাভাসে প্রেমিক
- প্রেমিকা সাজায় তাদের বরণ ডালাঃ তারপর তারা অনুভব করে কখন তাদের অলক্ষ্যে সে যেন
স্থান নিয়েছে হৃদয় মাঝেঃ অর্থাৎ স্বপ্ন বাসত্মবের তুলির টানে রূপ পেয়েছে।
প্রেমিক একবার অবাক হয়ে দেখে, তার
নয়নের মণির মাঝে স্থান পেয়েছে একখানা মুখ যাহুরপরী ন্যায় কাল্পনিক নয়, আলোছায়ার
খেলা নয়অ সে খানা পরিচিতু অতি পরিচিত। এরপর তার অতি পরিচিত মুখখানা ঘুরতে ঘুরতে
থমকে দাঁড়ায় চোখের সম্মুখে ও প্রেমিক
অনুভব করে তার অবস্থিতি। ভেঙ্গে যায় তার স্বপ্ন। স্বপ্ন রূপ ধরে তার কল্পনা। অথাৎ
শূন্য হতে সত্যেও সন্ধান পেয়ে নতুন আবিষ্কারের আনন্দেও সে উঠে অধির।
তার এ নতুন তথ্যেও গোপনীয়তা কিন্তু বেশী দিন অপ্রকাশ
থাকেনা। হঠাৎ একদিন হয়তো ‘‘শুক্লা’’ তার মা’ কানে কানে বলেছে, শুনেছিস মা’ পিসি
বিউটি কাকার বাবুর সাথে প্রেম করেছে। আর যায় কোথায়? তড়িৎ গতিতে গোটা এলাকায় ছড়িয়ে
পড়ে। এই প্রেমে পড়লে ভাব হয় উদাসীন উদাসীন, চাহুনীবেচেরা, বেচারা গতি বিধি সন্দেহ
জনক, কাজে অকাজে সময় নষ্ট, মন আনন্দহীনু ছনপ্রবণ। নিরাশার প্রবাহে অমত্মরটা করে থৈ
থৈ। অর্থাৎ রক্তহীনতা সমস্ত প্রকার লক্ষনই
থাকে প্রাচুর্য। তাই প্রেমিকের অবস্থা দেখে তাকে সহানুভুতির চেয়ে মায়া করেতে ইচ্ছে
করে বেশী।
রাজাধি
রাজার ক্ষেত্রে প্রেমে পড়াটা খেয়াল,
আউলিয়া - পীরু ফকীরের ক্ষেত্রে বন্দেগী
বা উচ্চচাঙ্গের একটা মারফতী মার্গের দুর্বোধ কথা অবতারদের বেলায় লীলা-খেলা। আর
রাম-রহিম শ্যামদের ক্ষেত্রে? লাম্পট্য!
অথাৎ প্রথমে কানা-কানি, তারপর হৈ চৈ, পরিশেষে - প্রেমিকস্যলাঠোষীধি। যার ফল - চ
কিংবা ছ’ব ঝাড়ের সদ্য কাট। গিত ওয়ালা হাত দুয়েক এক কঞ্চির মিঠে কড়া মাত্র কয়েকটি
ঘা! আমাদেও হতভাগা দেশে এটাই হল প্রেমের পরিণতি।
সুতরাং
এপথে যাত্রা না করা ভালো। এ পথে যে যাত্রা করে সে সহজে সুখি হতে পারেনা। কারণ এ পথ
স্বগীয় হলেও সমাজের কাছে অভিশপ্ত। এ পথ প্রথমে মধুর, তারপর অপরিহার্য - শেষে
অনুতপ্ত। কিন্তু তা হলে কি হবে? এ পথে চির সত্য সংজ্ঞা জানা থাকার সত্ত্বেও শত শত
তরম্নন - তরম্ননী উনেমত্তের ন্যায় ছুটে চলে এই অনুতপ্ত পপথের অভিশপ্ত প্রেমের
দুর্বার আকর্ষণে। হায় নিয়তী! বিধি লিপি অখ-নীয়। ললাট লিখন পরিহাসের ‘অপু’ আজ এই
অভিশপ্ত পথের নয়া যাত্রী।
অপু,
তুমি কামত্ম হও; নতুবা কাঁদবে; তোমার অশ্বের বল্গাকষ, তা না হলে ধরাশায়ী হতে হবে।
এ পথে সহজে কেউ সাফল্যের জয় মুকুট পরে গমত্মব্য স্থলে পৌঁছাতে পারে না।
এ পথে
সমাজে শ্যেন দৃষ্টি সদা জাগ্রত। ভেবে দেখো লাইলী - মজনুর কথা, নুয়োরাম- চান্দবীর
কাহীনি। পেরেছে কি তাদের কেউ ঈপ্সিত - স্থানে তরী ভিড়াতে?
ও হো
অভিশপ্ত পথের নয়াু যাত্রী! তুমি বিরত হও; নতুবা ভাগ্যে তোমার ‘মহাজনো যেন গতঃ
সপন্থায়।
বিবেকের এত সর্তকবাণী সত্ত্বেও বেচারা ‘অপু’ নিজেকে সংযত করতে পারলনা। সে
বিউটি’র প্রেম - দনিয়ায় ভাসলো তার জীর্ণ তরী।
বর্তমানে
দু’জনই এস.এস.সি পরীক্ষার্থী। অপু ছোট
মেরম্নং হাই স্কুল হতে আর বিউটি বাবুছড়া হাই স্কুল হতে। অপু আজ তার চলার পথের সর্বক্ষণের বন্ধু। হয়তো কোন সুকর্ম ফলে তারা দু’জনে
দেখা - দেখি। তারা দু’জনে একই ঘরে লোজিঙে থাকে। অর্থাৎ অপু চাচাতো ভাইয়ের বাড়িতে।
ইনি কবাখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক।
আর অপর ভাবী শুক্লা মা ও সবৃদা বাহিরে যান। সুতরাং তারার অবর্তমানে বাসায় বেশ
কয়েকদিন ধরে খেলা-ধুলা, আমোদ-প্রমোদ ও নানান ভাবে মেলা মেশায় ভেতওে দিয়ে্এক জনে
আর্একজনের কাছে মনের মানুষ অর্থাৎ একজনকে না দেখলে অর একজনে থাকাটা বিষম কষ্ট কর ও
বিষাদে। যেন তাদের কে মনে হয় রাধামন - ধনপদি।
টুকরো মেঘ জমে হয় ঘনীভূত; ঘনীভূত মেঘ জমে করে বৃষ্টি
সৃষ্টি; আর বৃষ্টি জমে হয় বরফ। তেমনি বিউটি - অপু অবাধ মেলা-মেশায় দু’জনের মধ্যে
সঞ্চার হলো পরস্পরে প্রতি আকর্ষণ আর বিক্ষিপ্ত আকর্ষণ জমে একদিন আত্মপ্রকাশ করলো
প্রেমাকারে।
বিউটি ভাবে, অপু তার জীবন চলার পথে বন্ধু। অপু ভাবে
বিউটি সাথে তার সমন্ধটা ভাই-বোন; বন্ধু হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও তা কল্পনায়। সে ভাবে
নারী ছলানময়ী। আর সে...........................................?
তাই বিউটির প্রেম দরিয়ার সে তার জীর্ণ তরী ভাসালেও কখনও
সে তরী মাত্রায় বাইওে যায় না; অতিক্রম কওে না সীমা।
বিউটি, কিন্তু তা পছন্দ কওে না। সে ভাবে অপু তাকে বুঝি ভুল বুঝছে। তাই যেন
এড়িয়ে চলতে চায়।
অপু তার বড় ভাইয়ের আত্মমর্যাদা সম্বন্ধে সদা সজাগ। তাই
সে নিজেকে আদব - কায়দার কৃষ্টি পাথরে ঘষে চায় বড় ভাইয়ের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করতে।
বিউটি কিন্তু চায় নিজেকে অপু’র মাঝে বিলিয়ে দিতে।
অপু ভাবে নারী ছলনাময়ী বিউটি তাকে নিয়ে ফার্ন করছে;
বিউটি ভাবে অপু তাকে পরীক্ষা করছে।
কিন্তু তাদেও পরস্পওে এ ভুল ভাঙ্গল যে দিন তারা দু’জনই পড়াধ্যানে মগ্ন। এস.এস.সি
পরীক্ষা শুরু হয়েছে সপ্তাহ ধরে। নিরব
নিথর রাত চারিদিকে অন্ধকার; শুধু আকাশের বুকে তারার মেলা আর বৈদ্যুতিক বাতি
জ্বলছে। মাঝে মাঝে দু’ একটি জোনাকি পোকা মিট মিট করে জ্বলছে। মানুষের আনাগোনা নেই
বললে চলে। এমন সময় বিউটি কিছুতে ঘুমাতে পারছেনা। অপুকে না বলার কথাগুলো বলার জন্য
তীরবিদ্ধ পাখির মতো ছটফট করছে। শুধু বই খুলে চেয়ে আছে, কিন্তু পড়ে না; আবার ঘুমিয়ে
পড়ে কিন্তু ঘুম নেই। শুধু দু’চোখে ভাসে অপুর প্রতিচ্ছবি। বিউটি অপুকে নিয়ে ভাবতে
লাগল। ‘‘দাদা, তুমি কি জান না, আমি যাকে ভালোবাসি সে ছেলেটি হলে তুমি। আমি যে শুধু তোমাকে না দেখলে থাকতে পারিনা। আমি যে
তোমাকে ছাড়া আর কাউকে ভাববার সময় পাইনা। আমি তোমাকে না দেখলে থাকতে পারিনা।ামি সব
সময় তোমার পাশে থাকতে চাই। দাদা, তুমি আমাকে তোমার হৃদয়ে স্থান দাও।’’
আর অপু, ঘুমের বিভোর। সেই নিজেকে সামলে নিয়ে কোন মতে
ঘুমিয়ে গেছে। শয্যা সুপ্ত অবস্থাতে বিউটি তার রম্নম থেকে বেরিয়ে এসে অপু রম্নমে
ঢুুকে অপুর নাকে টিপে ধরলে অপুর ঘুম ভাঙে।
অপু: কে তুমি অমন করলে কেন?
বিউটি: দাদা, তুমি এত ঘুমাও? কেন জানিনা আমার দু’নয়নে
ঘুমম আসেনা। তুমি কেন বোঝনি
আমার কষ্টতা। দাদা, আমার বুকটা ধরে
দেখো।
অপু:
ধরলাম।
বিউটি অপুর দু’হাতে ধরে বিছানা হতে তুলে দু’জনে হাতে হাত
ধরে ঘরের বাহিরে আম গাছে নিচে বসে পড়ল।
বিউটি:
যে হাত ধরেছি সে হাত ধওে মরতে চাই দাদা। বায়ূ ছাড়া মানুষ যেমন বাচঁতে
পারেনা,
তেমনি তোমাকে ছেড়ে আমিও বাঁচবোনা।
অপু: চিজী, আমি যদি তামাকে আমার জীবনে না পায় এই
পৃথিবীতে আমার বেঁচে থাকা কোন
লাভ নেই। আমার জীবনে সমসত্ম
ভাবনা শুধু তুমি। আমি তোমাকে পেয়ে আমার জীবনে
আলোর প্রদ্বীপ খুঁজে পেয়েছি।
বিউটি: দাদা, তুমি আমা জীবসেুখের প্রদ্বীপ খঁজতে
গিয়ে আমাদের ভালোবাসাটুকু ভুলে গিয়ে
আমার কাছ থেকে দূওে যাবেনাতা?
অপু: না ছিজী। আমি যে তুমি
ছাড়া কিছুতেই ভাবতে পারিনা। আমার সম্সত্ম কল্পনা জুড়ে শুধু তুমি।
বিউটি: দাদা, আমি তোমাকে ছাড়া
বাঁচবোনা। জানিস দাদা, আমি তোমাকে ছাড়া এক মুহুর্তেও জন্য
ভুলে থাকতে পারিনা। সবসময় তোমাকে কাছে পেতে স্বাদ জাগে।
কিন্তু আজ!!! অপু জীবনে বয়ে এলো এক অমানিশা ঘোর অন্ধকার।
সুখ-দুঃখ মানুষের চির সাথী। তাই মানুষ হারনো ধন ফিরে পেলে যেমন আনন্দ পায় তেমনি
অপু প্রত্যাশিত বস্ত্ত না পাওয়ার বেদনা মুষড়ে পড়ে। অপু এত ভালোবাসা সত্ত্বেও অপু
জীবনকে অনেক দূও টেলে দিয়েছিল। যে ফুল দিয়ে মালা গাথিয়ে সারা জীবনকে সুখের থাকার
স্বপ্নের জাল বিসত্মার করেছে সে ফুল তাহাকে বেদনা ভরে রেখেছে। অপু সকল স্বপ্ন,
আশাু আকাঙ্খাটুকু ভেঙ্গে দিয়ে অবুঝ নরম হৃদয়ে এক শোকের ছায়া বয়ে এনে দিয়েছে।
জানিনা অপু জীবনে কোথায় কি হবে। হয়তো এমন শূন্য হৃদয় নিয়ে মরতে হবে। আজ অপুর পানে কেউ নেইঅ সেই ছেড়া ফুলের দুগন্ধ
অপুকে আতঙ্গ করে ফেলেছে। জীবনে কোন শামিত্ম আভাস নেই। আমিও ভেবে ছিলাম এই ফুল
অপুকে সুখী করবে কিন্তু সে আশা নিষ্ফল। সে আশা আজ নিরাশায় পরিণত হলো। সত্যি অপু আজ
হতভাগা- আভাগাঅ Once
unlucky. Always unlucky. দুঃখের
ভরাক্রামত্ম হৃদয়ে লেখা অপু বিরহের লিপিটি হুবহু তলে ধরলাম।
[চলবে]