শুক্রবার, ২৬ জুন, ২০২০

বৈচিত্র্যময় কিছু জনগোষ্ঠীর কথাঃ মাওরি মে ২৬, ২০১৬

আদিবাসী, গোত্র বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলতে এমন এক ধরণের জাতিকে বোঝায় যারা কোন রাষ্ট্র গঠন করতে পারেনি কিন্তু রয়েছে তাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, আচার, রীতি ইত্যাদি। সমগ্র পৃথিবী জুড়েই বিভিন্ন দেশে-মহাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে এরকম অসংখ্য গোত্র বা জনগোষ্ঠী। নিজেদের সংস্কৃতি আর রীতিনীতি দিয়ে এরা একটা দেশের সমাজব্যবস্থাকে করে তোলে আরও বৈচিত্রময়। এরকম কিছু জনগোষ্ঠী নিয়েই এই আয়োজন। আজ জানবো নিউজিল্যান্ডের জাতিগোষ্ঠী ‘মাওরি’ সম্পর্কে।
নিউজিল্যান্ডের আদি অধিবাসীদের বলা হয় মাওরি। মাওরি জাতির উৎপত্তি হয় মূলত পূর্ব পলিনেশিয়ায়। ১২৫০ থেকে ১৩০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মাওরি জাতি কয়েকটা বাঁকানো নৌকা নিয়ে সমুদ্রপথে নিউজিল্যান্ডে প্রবেশ করে এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে।
মাওরি ভাষায় ‘মাওরি’ শব্দের অর্থ প্রাকৃতিক অথবা সাধারণ। মাওরি জাতির স্বকীয় একধরণের সংস্কৃতি রয়েছে যা এখন ‘মাওরি’ নামে পরিচিত। এদের পোষাক অন্যান্যদের থেকে বেশ আলাদা। বাগান তৈরিতে এরা অদ্ভুত সব কৌশল অবলম্বন করে। হর্টিকালচারের উন্নয়নে এদের অবদান অসামান্য। অবশ্য পরে মাওরিদের মধ্যে ব্যতিক্রমধর্মী এক যুদ্ধ সংস্কৃতি গড়ে উঠে।
১৭ শতকের প্রথম ভাগে ইউরোপীয়রা নিউজিল্যান্ডে আসা শুরু করে। নিউজিল্যান্ড ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হলে মাওরিদের সাথে ইউরোপীয়দের সংঘাত বাধে। ১৮৪০ সালে ওয়েটাংগি চুক্তির মাধ্যমে এই সংঘাত শান্তিপূর্ণ ভাবে বন্ধ হয়। দুটি সংস্কৃতি পাশাপাশি বিদ্যমান থাকার সিদ্ধান্ত ছিল এ চুক্তির ফলাফল।
ইউরোপীয়দের বদৌলতে মাওরি জনগোষ্ঠী প্রথম আধুনিকতার ছোঁয়া পায়। এদের জীবনধারা এবং সংস্কৃতিতে ইউরোপীয় প্রভাব বাড়তে থাকে।
১৮৬০ সালে বাসস্থান এবং চাষাবাদের জমির বণ্টন নিয়ে মাওরিরা আবার ইউরোপীয়দের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। মাওরিদের উপর অতিরিক্ত টোল আরোপ করা হয়। ফলশ্রুতিতে মাওরিরা রাজনৈতিক এবং আর্থসামাজিক দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে পড়ে।
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে মাওরি জাতি তাদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হয়। অর্থনৈতিক এবং সামাজিক দিক দিয়ে নিজেদেরকে পূর্বের চেয়ে ভাল অবস্থানে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়।
মাওরিদের নিজস্ব ভাষার নাম ‘তে রেও মাওরি’ যা একটি পলিনেশিয়ান ভাষা। তবে এই ভাষার চর্চা এখন প্রায় নেই বললেই চলে। বেশীরভাগ মাওরিই এখন ইংরেজি ব্যবহার করে।
যেহেতু মাওরিরা পলিনেশিয়া থেকে এসেছে তাই এদের সংস্কৃতিতে পলিনেশিয়ার প্রভাবই বেশি। এদের ধর্মীয় বিশ্বাস ছিল সমুদ্রকে ঘিরে। তবে ইউরোপীয়রা আসার পর তাদের উপর খ্রিস্টান ধর্মের প্রভাব পড়তে শুরু করে। মাওরিদের নাচ খুবই আকর্ষণীয় এবং অনন্য। কাপা হাকা, পই, ওয়াইতা-আ-রিঙ্গা, ওয়াইতা করুয়া তাদের কিছু বিখ্যাত নাচের নাম। গায়ে রঙ মেখে বিকট সব অঙ্গভঙ্গি করে তারা এসব নাচ প্রদর্শন করে। গুরুত্বপূর্ণ কোন অতিথিকে তারা অভ্যর্থনা জানায় অদ্ভুত উপায়ে। তাইয়াহা নামক একধরণের অস্ত্র তাদের হাতে দিয়ে যুদ্ধে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এর পরপরই তার হাতে একটি ফার্ন পাতা দিয়ে সন্ধি স্থাপন করা হয়।
২০১৩ সালের বিশ্ব জনসংখ্যা রিপোর্ট অনুযায়ী, নিউজিল্যান্ডে মাওরি জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ৬ লক্ষ। সে অনুযায়ী মাওরিরা নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম জাতি যা মোট জনসংখ্যার ১৫%। রিপোর্ট অনুসারে অস্ট্রেলিয়াতে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার মাওরি বসবাস করে।
নিউজিল্যান্ডের অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর চেয়ে মাওরিদের জীবনমান অনেক নিম্নমানে। এরা রাজনীতি, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া। এর প্রভাবে মাওরিদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতার আধিক্য দেখা যায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সবাই বাঙালি : বিদ্রোহের সূচনা

আমরা বাঙালি না বাংলাদেশি ? জিয়াউর রহমান যখন রাষ্ট্রক্ষমতায় , তখনই এই বিতর্কের সঙ্গে মানুষ পরিচিত হলেন। বাম এবং আওয়ামী বুদ্ধ...