বুধবার, ১২ আগস্ট, ২০২০

চাকমা হরফ নিয়ে কিছু অপ্রিয় বচন - শুভ্র জ্যোতি চাকমা



চাকমা হরফের ব্যবহার নিয়ে আমি খুবই আশাবাদী এবং হঠাশ- দু’টোই। ঘাবড়ে গেলেন ? আচমকা কথা শুনলে ঘাবড়ে যাওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। প্রত্যাশা করছি এ প্রবন্ধটি পাঠের মধ্য দিয়ে ঘাবড়ে যাওয়ার উত্তর বা জবাব যা-ই বলি না কেন পাওয়া যাবে। আমার উত্তর বা জবাব বা যুক্তি কারোর অপছন্দের পাশাপাশি খারাপও লাগতে পারে। কেউ কেউ হতে পারেন বিব্রত। দু’টো বিষয় একেবারে পরস্পর বিরোধী। এর কারণ কী সেটি খুলেই বলি। পূর্বের চেয়ে হরফগুলোর ব্যবহার-চর্চা বহুগুণে বৃদ্ধি পাওয়াসহ সরকারিভাবে পাঠ্যবই মুদ্রণ ও পঠনের ব্যবস্থাকরণ আশাবাদী হওয়ার প্রধান এবং অন্যতম কারণ। অপরদিকে হরফগুলোর নিয়ম-শৃঙ্খলাহীন ব্যবহার-প্রয়োগ, নব নব নিয়ম চালুকরণের ব্যক্তিক উদ্যোগ বা প্রচেষ্টা, নিত্য নৈমিত্তিক চিহ্নের উদ্ভাবন-প্রয়োগ হচ্ছে হঠাশার কারণ। হরফগুলোর ব্যবহারে ব্যক্তিগত অভিমতের প্রতিফলন ইতিমধ্যে নানাভাবে প্রতিভাত হয়েছে। আগামীতেও এ ধরনের প্রতিফলন হামেশাই দেখা যাবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারি। আমার অনেক লেখায় এ বিষয়ে কোনো কোনো অসঙ্গতি ও অযৌক্তিক দিক তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যার কারণে অনেকের অপছন্দের তালিকায় আমার স্থান হয়েছে সেটি অনুমান বা অনুভব করতে পারি। বছর তিনেক আগের ঘটনা। এক ফেসবুক বন্ধু যিনি নিজেকে চাকমা হরফ ও ভাষাবিশেষজ্ঞ এবং প্রখ্যাত লেখক মনে করেন আমাকে আনফ্রেণ্ড করার পাশাপাশি ব্লগও করে দিয়েছেন। কী অবাক কাণ্ড দেখুন তো ? ভুলভাল লিখবেন কিন্তু সেগুলিকে ভুল বলাও যাবে না। মুখবুঝে মেনে নিতে হবে-এটাই তো তারা চায়, পছন্দ করে। মানুষ নামক জীবেরা বড়ই অদ্ভুদ ! শুধুমাত্র প্রসংশাই খোঁজে-পেতে চায়। সমালোচনা সহ্য করতে পারে না। ব্যক্তিগত স্বার্থ এবং মতকে প্রাধান্য দিয়ে যারা নিজের মতকে প্রতিষ্ঠা করতে চায় অধিকন্তু যারা নিজেদের গোজা ও গোষ্ঠীতে প্রচলিত শব্দ ও উচ্চারণকে(আমি ঐ সকল শব্দ ও উচ্চারণকে চাকমা আঞ্চলিক শব্দ হিসেবে গণ্য করি) প্রতিষ্ঠা করতে চায় তাদের পছন্দের তালিকায় আমার অনুপস্থিতি আমি নিজেই পছন্দ করি। কারণ উভয়ের জন্য এটি বিব্রতকর। আরও উদ্বেগের কারণ হচ্ছে এ শ্রেণিদের প্রচেষ্টা প্রতিনিয়ত বাড়ছে বৈ কমছে না। সামগ্রিকভাবে আমাদেরকে গভীর চিন্তায় ফেলে দেয়। ক্ষণিকের জন্য দিশাহীন হয়ে পড়ি। আমাদের ভাষা ও হরফের অগ্রগতির পথে এগুলো নি:সন্দেহে অন্তরায়। আমরা কি একবারও ভেবে দেখেছি গোজাভিত্তিক শব্দ ও উচ্চারণ প্রয়োগ অব্যাহত থাকলে আমাদের ভাষাকে স্ট্যাণ্ডার্ড পয্যায়ে উপনীত করা দুরূহ হবে ? ভেবে না থাকলে এখনিই ভাবা শুরু করতে হবে। একটি সর্বজনগ্রাহ্য সিদ্ধান্তে উপনীত হতে না পারলে আগামী প্রজন্মের কাছে এগুলো দুর্বোধ্যতার দৃষ্টান্ত হিসেবে থেকে যাবে। এর কারণ উচ্চারণের নিরিখে বর্ণের ব্যবহার ও প্রয়োগ এবং বানান নির্ভর করে থাকে। একটু খেয়াল করে দেখবেন পূর্বে ব্যবহৃত অনেক বানান ও চিহ্নকে সমসাময়িক সময়ে এসেও অনেকে সেগুলিকে অন্ধভাবে অনুসরণ করে চলেছেন। তথাগত বুদ্ধের অমীয় বাণীর ন্যায় সত্য মনে করেন। বুচ্চি উ-কে কেউ কেউ বলছেন উচ্চি উয়া। কারণ বচ্চি উ-এর নিচে কোনো কোনো বৈদ্যালি পুঁথিতে একটান চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে। সুতরাং ব্যক্তিগত ইচ্ছাকে প্রতিফলন করার সময় অযৌক্তিক বা চাকমা হরফগুলোর নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের নিয়ম বহির্ভুত কোনো চিহ্ন ব্যবহার করা হচ্ছে কি না সেদিকে সতর্ক থাকা উচিত। যদি করা হয় সেগুলো পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় এবং অনুসরণীয় হবে এটি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। চাকমা ভাষা ও হরফ নিয়ে আমরা এমন কোনো বিতর্কিত বিষয় বা সিদ্ধান্ত রেখে যেতে চায় না যাতে আমাদের ভাবী প্রজন্মরা সেটিকে নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পতিত হয় বা সমাধানহীন সমস্যায় মুখোমুখি হয়।

 পছন্দসই এবং স্বজাতীয় যে কোনো জিনিসের প্রতি ভালবাসা, ভাললাগা থাকা মানুষের স্বভাবজাত অন্যতম বৈশিষ্ট্য। স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্যের কারণে ভাললাগা কোনো জিনিসের ওপর কোনো সমালোচনা, কুটবাক্য বা যে কোনো ধরনের আঘাত মানুষ সহ্য করে না, করতে পারে না। এক্ষেত্রে চাকমারা আরও একধাপ এগিয়ে রয়েছেন বলে মনে করা হয়। তারা সমালোচনা সহজে গ্রহণ বা হজম করতে চান না, গ্রহণ করেন না। অনেক ভিনজাতীয় মানুষের নিকট থেকেও এ জাতীয় মন্তব্য প্রায়শ শোনা যায়। এটি নি:সন্দেহে নেগেটিভ দিক এবং গ্রহণ অযোগ্য অপবাদ। সুতরাং এ জাতীয় বিষয়কে হেলায় না নিয়ে সেটির বিষয়ে গভীরভাবে ভাবা উচিত যাতে অপবাদ ঘুচানো যায়। আমাদেরকে গঠনমূলক সমালোচনা গ্রহণ বা হজম করবার সহনশীলতা ও সহিষ্ণুতার মধ্য দিয়ে এগুতে হবে নচেৎ কোনো বিষয়ে উৎকৃষ্ট ফলাফল আশা করা বৃথা হবে। আমি মনে করি চাকমা হরফগুলোর উন্নয়ন ও প্রসারে যারা কাজ করে যাচ্ছেন তাদের কাজের গঠনমূলক সমালোচনা করা জরুরিভাবে প্রয়োজন। তা না হলে একপেশে ফলাফলই আসবে যা এযাবৎ আমরা পেয়েই চলেছি। যার কারণে চাকমা হরফের ব্যবহার নিয়ে সুনির্দিষ্ট পন্থা প্রণয়ন করা সম্ভব হয়নি। খেয়াল করুন-অদ্যাবধি আমরা আমাদের হরফের সঠিক সংখ্যা কয়টি হওয়া উচিত সেটিও ঠিক করতে পারিনি। যে যার মত হরফ শিক্ষার বই প্রকাশ করছি মাত্র। অনেকে যার যার ধারা মোতাবেক শিখনের কাজও সম্পাদন করছেন। শিখনের কাজটিকে আমি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে মূল্যায়ন করতে চাই। তবে ব্যক্তি বিশেষে শিখনের কাজে রয়েছে নানা পার্থক্য। হরফের আকৃতিতে মৌলিক কোনো পার্থক্য না থাকলেও চিহ্ন প্রয়োগ ও ব্যবহারে রয়েছে উল্লেখযোগ্য ভিন্নতা। ফলশ্রুতিতে বানানের প্রসঙ্গতি আরও দুর্বোধ্য হয়ে যায়। একটি ঘটনা এক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক মনে করছি।
 আমাদের ইনস্টিটিউটের কোনো একটি ব্যাচের চাকমা শিক্ষার্থীদের পঠন সুবিধার্থে আমি বন্ধুবর শুভাশীষ-এর সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘করোদি’ নামক পত্রিকার কিছু কপি শিক্ষার্থীদের কাছে দিই। পরে ফলোআপ করে জানলাম যে, শিক্ষার্থীরা কিছু কিছু শব্দ পড়তে সক্ষম হচ্ছে না। কারণ সেই সব শব্দে কিছু চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে যেগুলো তারা চিনে না। তাদের শেখানো হয়নি। চিহ্নগুলোর অন্যতম হচ্ছে ‘ডেইলদ্যা’। এ চিহ্নটি রাঙ্গামাটির কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি চাকমা হরফ শিখনের কাজে প্রয়োগ করেন না। আমরা লক্ষ করছি এভাবে অঞ্চলভেদে পার্থক্য সৃষ্টি হচ্ছে। দৃশ্যমান পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় ত্রিপুরা, মিজোরাম এবং বাংলাদেশে আমরা যারা চাকমা হরফ চর্চা করছি তাদের মধ্যে। আশা করি এতক্ষণ নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন আলোচ্য প্রবন্ধটির লিখন উদ্দেশ্য। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে যে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা সম্ভব হবে তা প্রত্যাশা করাও কল্পনাতীত। আমাদের মনে রাখা দরকার, হরফগুলোর ব্যবহারে নীতিমালা প্রণয়ন করা সম্ভব না হলে বানানরীতিও প্রণয়ন করা সম্ভব হবে না। তবে সমালোচনা হওয়া উচিত গঠনমূলক ও যৌক্তিক সহকারে এবং তা হওয়া উচিত অবশ্যই লিখিতভাবে। অনেকে শুধুমাত্র কথার মধ্য দিয়ে সমালোচনার ফুলঝুড়ি ঝেরে থাকেন। এতে কথাবার্তাগুলোর বিকৃতি ঘটে মারাত্মক ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়ে থাকে। যে কোনো বিষয়ে মতদ্বৈততা লিখিতভাবে তুলে ধরা হলে পরবর্তীতে যারা কাজ করবেন তাদেরও অনেকখানি সহজ হয়ে থাকে। চাকমা হরফগুলোর অগ্রগতি চান তো এগুলোর অযৌক্তিক ব্যবহার, প্রয়োগ নিয়ে লিখিতভাবে সমালোচনা করুন। বিগত সময়ের অভিজ্ঞতা বলে, চাকমা হরফ ব্যবহারকারীদের মধ্যে নানা মত-দ্বিমত থাকলেও তা অনেকে লিখিতভাবে প্রকাশ করেন না। শুধুমাত্র কথার বুলিতেই তাদের যৌক্তিকতা খুঁজে পান। এ যৌক্তিকথা প্রকাশের ক্ষেত্র হচ্ছে কোনো সভা। ফলে শুধুমাত্র মত-অভিমত প্রকাশ করতে করতেই সভাটির কায©ক্রম শেষ হয়ে যায়। কাজের কাজ কিছুই হয় না। আমি মনে করি চাকমা হরফগুলোর আদি বৈশিষ্ট্য অধিকন্তু আধুনিক ভাষা প্রকাশে(যে কোনো ভাষা হতে পারে) হরফগুলোর বৈশিষ্ট্য বা ব্যবহারবিধি কী হওয়া উচিত সে নিয়ে সুচিন্তিত বিশ্লেষণধর্মী মতামত লিখিতভাবে তুলে ধরা প্রয়োজন ।
 নিজস্ব হরফ নিয়ে গৌরবান্বিত ও আশাবাদী হওয়া একেবারে স্বাভাবিক ব্যাপার। অনেকের ন্যায় আমিও বেশ আশাবাদী। আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি আমাদের হরফগুলো আমাদের ঐতিহ্য ও গৌরবের প্রতীক। আমাদের বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পাশাপাশি হরফগুলো আমাদের সুদূর অতীতের গৌরবময় ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে দেয়। চাকমাদের অতীত ইতিহাস যে অত্যন্ত প্রজ্জ্বল ছিল হরফগুলো তার উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। এজন্য হরফগুলো ব্যবহারে একটি সুষ্ঠু ও সর্বজন গ্রহণীয় ধারা প্রণয়ন করা যুগের দাবি হয়ে উঠেছে। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে তাহলে হরফগুলো নিয়ে হঠাশার সুর কেন ? উত্তর খুবই স্বাভাবিক-চাকমা হরফগুলো নিয়ে উচ্চাকাঙ্খা আছে বলে নেগেটিভ ও পজেটিভ দিকসমুহ আমলে নিয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করি যাতে হরফগুলোর ব্যবহারিক গাঁথুনি মজবুত এবং যৌক্তিক হয়। হঠাশ হওয়া নিয়ে অনেকের মনে প্রতিক্রিয়াসহ নানা প্রশ্ন-উদ্বেগও অনেকের মনে সৃষ্টি হতে পারে যা খুবই স্বাভাবিক। যদি বলি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করানোর জন্যই এ লিখনি ! আসলেই তা-ই। আমি চাই প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির মধ্য দিয়ে এ বিষয়ে আরও অনেকে লিখবেন, গুরুত্বপূর্ণ মতামত তুলে ধরবেন। সৃষ্টি হবে অনেক লিখনির। চাকমা হরফগুলো নিয়ে অজস্র মতামত প্রতিফলিত হবে। সকল মতামতকে বিচার-বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা নতুন দিশা জাতিকে দেবেন। প্রসঙ্গ যে, হরফগুলো নিয়ে আমি ইতিপূর্বে দীর্ঘ-নাতিদীর্ঘ বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ লিখেছিলাম। সে সব প্রবন্ধে আমি হরফগুলোর আদি উৎস, বৈশিষ্ট্য, প্রাচীন ব্রাহ্মী হরফগুলোর সাথে কোনো কোনো হরফের বিদ্যমান সাদৃশ্য এবং বিভিন্ন লেখকের মত-অভিমত তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলাম। (পড়ুন-চাকমা বর্ণমালার ব্যবহার : অতীত ও বর্তমান, চাকমা হরফের সংখ্যা কত ?, চাকমা বর্ণমালা : ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে ইত্যাদি প্রবন্ধ) সাম্প্রতিক সময়ে চাকমা হরফের ব্যবহার, সংস্কার নিয়ে অনেকের নানা মত-অভিমত আমার নজর এড়ায়নি। নিরলস পরিশ্রম করে অনেকে আমাদের হরফগুলোকে উন্নয়নের দিকে ধাবিত করার শত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজস্ব চিন্তা ও মেধায় তারা কিছু কিছু সংস্কার ও নানা ধরনের চিহ্ন ব্যবহারে আগ্রহ দেখিয়েছেন। সন্দেহ নেই তারা চাকমা হরফগুলোর অগ্রগতির স্বার্থেই সংস্কার আয়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যুগের চাহিদা মেটানোর জন্য সংস্কার আনয়ন অপরিহায্য। এ বিষয়ে আবারও লিখতে বসতে হলো এ কারণে যে, অনেক মত-অভিমতের সাথে আমি পুরোপরি একমত হতে পারি না। যেমনটি গ্রহণ করতে পারিনি সরকারিভাবে প্রকাশিত পাঠ্য উপকরণাদিতে যে সকল সংস্কার সংশ্লিষ্টরা সংযুক্ত করেছেন। যেমন-বইগুলোর প্রচ্ছদে তারা ম শব্দটি লিখতে গিয়ে বুগতপদলা মা হরফটির ওপরে একটান চিহ্ন দেয়ার পরও পাশে একটি কমা ব্যবহার করা করেছেন। শুধুমাত্র একটিতে নয় পুরো ৪টি শ্রেণির জন্য মুদ্রিত বইয়ে একই চিহ্ন প্রয়োগ করা হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো যুক্তি আছে কী ?
 প্রসঙ্গত যে, বাংলা হরফে চাকমা ভাষা লিখার সময় বিগত শতকের সত্তর দশকে চাকমা সাহিত্যিকদের কেউ কেউ এ ধরনের চিহ্ন ব্যবহার শুরু করেছিলেন। আলোচ্য পাঠ্য বইগুলোতে মাজ্যাপাতের নিয়ম চুরমার করা হয়েছে। তাদের লিখন বৈশিষ্ট্য পয্যালোচনায় বুঝা যায় যে তারা সকল হরফে মাজ্যা চিহ্ন ব্যবহারে পক্ষপাতি। আমরা অনেকেই জানি, চাকমা ভাষার শুদ্ধ উচ্চারণ ও বানানরীতিকে সুনির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করে রাখে চাকমাদের মাজ্যাপাত। মাজ্যা চিহ্নটি হরফের ডানপাশের ওপরে বসে। এটি অনেকটা বাংলা রেফ্-এর ন্যায়। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এ চিহ্নটিকে মানার কোনো ধার ধারেননি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। অপরদিকে ভারত থেকে চাকমা হরফে যে সকল প্রকাশনা প্রকাশ করা হচ্ছে সেগুলোতে মাজ্যাপাত এতই কঠোরভাবে মান্য করা হচ্ছে যে স্বয়ং বুদ্ধ শব্দটিই বিকৃত করা হচ্ছে। চাকমা হরফে তাদের বানানটি ‘বুত্ধ’। ‘বুদ্ধ’ উচ্চারণ করতে করতে অভ্যস্ত হওয়া আমাদের জিহ্বায় এটিকে উচ্চারণও সম্ভব হয়ে ওঠে না। সারা পৃথিবীজুড়ে সকল ভাষায় বুদ্ধ শব্দটি অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে উচ্চারণ করা হয়। অথচ মাজ্যাপাত মেনে চলার কারণে শব্দটিকে বিকৃতি করা হচ্ছে। এটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। মাজ্যাপাত এখানে উন্মুক্ত করে দিতে হবে। শুধু তাই নয় নামবাচক ও জাতিবাচক বিশেষ্যর ক্ষেত্রেও মাজ্যাপাত উন্মুক্ত করে দিতে হবে। তা না হলে চিরাচরিত নামগুলো বিকৃত হবে। যেমন-কারোর নাম যদি শুভাশীষ হয় তাহলে মাজ্যাপাতের নিয়ম মেনে চলার জন্য কি শেষ বর্ণটির জায়গায় ‘চ’ বর্ণটি গ্রহণ করা যুক্তিসম্মত হবে ? না, কোনো অবস্থাতে সেটি গ্রহণ অযোগ্য। এজন্য ভিনজাতীয় ভাষার শব্দ, নামবাচক ও জাতিবাচক বিশেষ্যর ক্ষেত্রে মাজ্যাপাত উন্মুক্ত করতেই হবে। এছাড়া লক্ষ করা গেছে সরকারি পাঠ্যবইগুলোতে উল্লেখযোগ্য হারে বাংলাশব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ঐতিহ্যগতভাবে চলমান ‘অঝাপাত’কে বিভক্ত করে ‘আবযুগি পাত’ ও ‘অঝাপাত’ নামে দু’টি ভাগে বিভক্ত করার প্রয়াস পেয়েছেন। শুধু তাই নয় কেউ কেউ মৌলিক অঝাপাতকে ‘গাইমাত্যা পাত’ এবং ‘বলেমাত্যেপাত’ নামেও অভিহিত করছেন। এ ধরনের তথাকথিত প্রয়াস বাংলার স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ পাঠকে অনুসরণ করার ফলশ্রুতি বৈ কিছু নয়। তথাকথিত পাণ্ডিত্যের প্রতিফলন হিসেবে মাজারাগুলোকে অনেকে বলছেন ‘লেবাং’। ফলাগুলোকে বলা হচ্ছে পরশাল্য। সাম্প্র্র্রতিক সময়ে জামাহরফ(যুগ্মবর্ণ) এবং যদাহরফ(যুক্তবর্ণ) সৃষ্টিসহকারে ব্যবহার করার প্রয়াস চলছে। এ সকল বর্ণপ্রণেতাগণের যুক্তি হচ্ছে বিদেশি ভাষাকে চাকমা হরফে লিখনের জন্য জামাহরফ এবং যদাহরফ অবশ্যই দরকার। জানিনা জামাহরফ এবং যদাহরফগুলোকে কীভাবে উচ্চারণ করা হবে। কারণ চাকমা হরফগুলো আ-কারান্ত। জামা বা যদা হরফগুলোকে সরলভাবে লিখনের জন্য চাকমা হরফে মাজ্যা নামে একটি স্বতন্ত্র চিহ্ন রয়েছে। এ মাজ্যা চিহ্ন দিয়ে জামা বা যদা হরফগুলো আলাদা করা যায়। যে কোনো ধরনের যুক্তি দাঁড় করানো হোক না কেন এ ধরনের উদ্যোগের সাথে আমি কোনোভাবে একমত হতে পারি না। চাকমা হরফগুলোর যে বৈশিষ্ট্য তাতে জামা বা যদাহরফ সমর্থনযোগ্য নয়। এ ধরনের উদ্যোগ চাকমা হরফগুলোর চিরায়ত বৈশিষ্ট্যের পরিপন্থি। আর যদিই জামা বা যদাহরফ ব্যবহারকে সমর্থন করি তাহলে চিরাচরিত মাজ্যা চিহ্নটিকে তো বিলুপ্তি করে দিতে হবে। বলুন, এটি কি সম্ভব ? এজন্য বলি, চাকমা হরফগুলোর বৈশিষ্ট্যকে বাদ দিয়ে বা বিলুপ্তি ঘটিয়ে যে মত-অভিমত দাঁড় করানো হোক না কেন তা কোনোভাবে সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। গণতন্ত্রের মত এখানে বিকল। মেধা এখানে অর্থহীন। প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ্য যে, ভিনজাতীয় ভাষার কিছু শব্দকে লিখনের জন্য রাঙ্গামাটিস্থ সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট-এর চাঙমা পত্থম পাঠ(Chakma Primer) নামক বইটিতে রা-ফলা, য়্যা-ফলা ছাড়াও তিনটি ফলা গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে-না-ফলা, হা্-ফলা এবং লা-ফলা। আলোচ্য এ তিনটি ফলা ভিনজাতীয় ভাষা শুদ্ধভাবে লিখনের জন্য যথেষ্ট সহায়ক বলে মনে হয়। আরও একটি দৃষ্টান্ত দিয়ে এ প্রসঙ্গতি থেকে বিদায় নেব। চাকমা হরফে শুদ্ধ বানান লিখনের জন্য আমাদের কোনো একজন একটি নিয়ম চালু করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। আমার অতি ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয়েছে যে, তার উদঘাটিত নিয়মটি অনুসরণ করতে হলে আমাদেরকে সর্বপ্রথমে বাংলাভাষা ও বানান বিষয়ে সুদক্ষ হতে হবে। অর্থাৎ আগে বাংলাভাষা ভালভাবে আয়ত্ব করেই চাকমা ভাষার বানান শিখতে হবে।
 অনেক মতের সাথে একমত হতে না পারা আমার জ্ঞানের স্বল্পতা যে হবে না তা হলফ করে বলতে পারি না। অধিকন্তু সে সকল মতকে তাত্ত্বিকতার তত্ত্ব দিয়ে মোকাবেলা করার মত জ্ঞান আমার নেই। ব্যবহারিক প্রয়োগতত্ত্বই হচ্ছে আমার যৌক্তিকতা। বাস্তবতার নিরিখে তথ্য-তত্ত্ব উপস্থাপন করাই হচ্ছে আমার লিখনির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। প্রবন্ধের পরবর্তী অনুচ্ছেদে এ বিষয়ে আরও কিছু যোগ করবো। যা হোক আমি মনে করি মত-অভিমত থাকতেই পারে এবং তা দোষণীয় কিছু নয়। মত-অভিমত প্রকাশ করার নামই হচ্ছে গণতন্ত্র। মত-অভিমত প্রকাশের স্বাধীনতা সবার রয়েছে। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সবার মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংবিধান স্বীকৃত। এজন্য কারোর মত-অভিমতকে গলা টিপে ধ্বংস করা বা বাঁধাগ্রস্ত করা যায় না। আবার মত প্রকাশের স্বাধীনতাও যেন কারোর মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব না করে, বাঁধাগ্রস্ত না করে, সত্যকে আড়াল না করে, সরল বিষয়কে জটিল না করে তোলে, চলমান একটি সচলে ঐতিহ্যবাহী ধারাকে বাঁধাগ্রস্ত ও অসম্মান না করে সেদিকে সুক্ষ্মদৃষ্টি রাখা দরকার। আমার মনে হয় চাকমা হরফগুলোর ব্যবহার নিয়ে আরও গভীরভাবে চিন্তা করার প্রয়োজন আছে। প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ এক্ষেত্রে কায্যকর ভূমিকা রাখতে বেশি সহায়ক হবে তাতে সন্দেহ নেই। কারণ চাকমা হরফগুলো নিয়ে এযাবৎকালে যে ধরনের ব্যবহারবিধি, নিয়মনীতি, মত-অভিমত ব্যক্তি বিশেষে সৃষ্টি করা হয়েছে বা প্রকাশ করা হয়েছে অন্যান্য হরফগুলোর ক্ষেত্রে তার সিঁকিভাগও নজরে আসেনি। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, কোনোকিছুতে একমত হতে হলে আমাদের প্রচুর সময়ের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। অনেকক্ষেত্রে একমত হতে পারি না। অযৌক্তিক হলেও নিজের অবস্থান থেকে কেউ সরে আসতে চায় না। এ ধরনের দৃষ্টান্ত বা পরিস্থিতি কি প্রমাণ করে না যে চাকমা হরফ বিশেষজ্ঞের সংখ্যা খুবই বেশি ? এজন্য বলি যৌক্তিকতার মধ্য দিয়ে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। যৌক্তিকতা না মানলে প্রত্যাশিত ফলাফল পাওয়া যাবে না।
এবার নিজের অক্ষমতার কিছু কথা কই। স্বীকার করে নিই, ইতিহাস সে যে বিষয়েরই হোক না কেন তা আমার অতটা জানা নেই। আমার অনেকগুলো বিষয়ের মধ্যে প্রচণ্ড রকমের দুর্বলতার বিষয় এটি। শিক্ষাজীবনে আধাআধি বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগে আ্যাকাডেমিক পড়াশুনার অভ্যন্তরে ইতিহাস বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করা দুষ্কর ছিল। অতি আগ্রহ ও যৎসামান্য লিখনকাজ সম্পাদনের নিমিত্তে যৎকিঞ্চিত যা পড়ি তাও ক’দিনের মধ্যে ভুলে যায়। পঠিত বিষয়গুলোকে পুনরায় খুঁটেখুঁটে দেখতে হয়। এবার বলুন-আলোচ্য বিষয়ে আমার দ্বারা উল্লেখযোগ্য কিছু সম্পাদন করা কি সম্ভব ? আদৌ নয়। নিজেকে যাচাই করে আমার যেটুকু আশাবাদ জন্মে তা দিয়ে নিজেই আশাবাদি হতে পারি না অধিকন্তু অন্যকে আশান্বিত করার মতো যোগ্যতা অর্জন করা এ জন্মে হবে না, প্রত্যাশা করাও অর্থহীন-বৃথাও বটে। যারা আমার লেখা পড়েন তারা বিষয়টিকে অনুধাবন করে থাকবেন নিশ্চয়। মূল কথা হচ্ছে আত্মবিশ্বাসের অভাববোধ থেকে মুক্ত হওয়া যায় না। এজন্য আমার কোনো কোনো লিখনিতে শুধুমাত্র বিষয়কে তুলে ধরার চেষ্টা করি। তুলে ধরার সক্ষমতাই হলো আমার যোগ্যতা। সেটির গভীরে গিয়ে আলোচনা করা সম্ভব হয় না। একটি উদারহণ দিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করি। একবার ‘চাকমা হরফের সংখ্যা কত ?‘ শিরোনামে একটি নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ লিখেছিলাম। প্রবন্ধটি চট্টগ্রামের প্রচারবহুল একটি দৈনিকে দু’কিস্তিতে ছাপা হয়েছিল। পরে স্থানীয় সংকলনে ছাপানোর জন্যও দিয়েছিলাম। অনুজপ্রতীম একজন আমাকে প্রশ্ন করেছিল- ‘দাদা, এ বিষয়ে আপনার মত কী ? উত্তরে বলেছিলাম-আমার কাজটিই হলো তুলে ধরা। যারা বিবেচক বা নীতিনির্ধারক তারাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। মাঝে মাঝে লিখতে লিখতে আটকে যায়। শুরু করতে হয় ঘাটাঘাটি। তখন অনুভব করি, আসলে ইতিহাস নিয়ে পড়াশুনা করা বড্ড প্রয়োজন ছিল। ইতিহাস পাঠে যে আনন্দ সর্বোপরি ইতিহাস জানা অত্যাবশ্যক এটি এখন হারে হারে অনুভব করি। আমাদের ন্যায় অতিশয় সংখ্যালগিষ্টদের নিজেদের ইতিহাস জানা খুবই জরুরি। তাই বলে অ্যাকাডেমিক্যালি শুধুমাত্র ইতিহাস অধ্যয়ন করতে হবে সেটি বলছি না। অন্যান্য বিষয়ের সাথে ইতিহাস পাঠ বা অধ্যয়ন করা প্রয়োজন। পাশাপাশি নিজেদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ধর্ম নানা দিক অবশ্যই জানা দরকার। মূল বিষয়ে দৃষ্টি ফেরা যাক।
অবস্থা দৃষ্টিতে মনে হয় যা অনেকে স্বীকারও করবেন যে, চাকমাদের হরফগুলোর ব্যবহার আগের চেয়ে অনেকগুণ বেড়ে গেছে। তার অর্থ এই-চাকমা হরফ জানা মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিহাস বলে, চাকমাদের একশত বিশ বৎসর পূর্বেও নিজস্ব হরফ জানা লোকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে ছিল। কালে কালে তা তলানিতে এসে থামে। যাক বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আশার কথা হচ্ছে-আধুনিক প্রযুক্তিতে চাকমা হরফ ব্যবহার করা যায়। নিজস্ব হরফে অনেকে গল্প, কবিতা, ছড়া এবং ছোট-খাটো পত্রিকাও প্রকাশ করছেন। উন্নয়ন সংস্থাগুলোর পরবর্তী ধারে ২০১৭ খ্রি. থেকে সরকারিভাবে চাকমা হরফে পাঠ্যবই প্রকাশ করা হচ্ছে। ফলাফল যা-ই আসুক না কেন আমরা নি:সন্দেহে বলতে পারি, চাকমা হরফগুলোর বিস্তৃতি ঘটছে। আমার বিশ্বাস, আলোচ্য কর্মকাণ্ডগুলোকে সুষ্ঠু সমন্বয় ঘটানো সম্ভব হলে ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে। কিন্তু হঠাশার বিষয় হচ্ছে-হরফগুলোর যত্রতত্র নিয়মবিহীন অযৌক্তিক ব্যবহার, নানাবিধ নিয়ম চালু করার প্রবণতা, হরফগুলোর আকৃতিগত বৈসাদৃশ্য, প্রচলিত নিয়মের পরিপন্থি মাজ্যাপাঠ-এর অপপ্রয়োগ, বানানে ভিন্নতা ইত্যাদি অপ্রত্যাশিত বিষয় চাকমা হরফগুলোর সহজ ব্যবহারকে জটিল করে তুলেছে। ফলশ্রুতিতে আশারবাণীর পাশাপাশি হঠাশারবাণীও আমাদের আঁকড়ে ধরে। বিকাশমান একটি বিষয়ে পজেটিভ বা নেগেটিভ থাকা অযৌক্তিক কিছু নয়। তবে চাকমাদের হরফগুলো নিয়ে যে ধরনের খাদ্য-অখাদ্য প্রায়শ নজরে আসে সেগুলিতে নেহায়েৎ নিজেকে তুলে ধরার বিষয়টি বেশি প্রাধান্য পায়। অর্থাৎ মত-অভিমতের আড়ালে থাকে ব্যক্তির পাণ্ডিত্যকে উপস্থাপন করার সুপ্ত মনোবাসনা। মত এবং অভিমতের ভীড়ে আমাদের চাকমা হরফগুলোর প্রকৃত বৈশিষ্ট্যগুলো চাপা পড়ছে। খেয়াল করবেন, চাকমা ইতিহাসের কথা বলবো না অন্ততপক্ষে হরফগুলো নিয়ে যাচ্ছেটাই ঘটছে।
পৃথিবীতে হরফ বা বর্ণের সংখ্যা খুবই কম। সকল জাতির মধ্যে নিজস্ব হরফ নেই। এজন্য যাদের নিজস্ব হরফ আছে যেগুলো স্মরণাতীত সময় থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে তারা নি:সন্দেহে ভাগ্যবান। আবার এটিও পরীক্ষিত যে, বিদ্যমান হরফগুলোর মাধ্যমে একটি ভাষার সব ধ্বনি বা শব্দকে উচ্চারণ করা যায় না। বাকযন্ত্রের সাহায্যে যে অজস্র ধ্বনি সৃষ্টি করা যায় সেগুলিকে প্রকাশ করার জন্য অক্ষরের সংখ্যা একবারে অপ্রতুল। যার কারণে অনেক গবেষণা করে আইপিএ(IPA) সৃষ্টি করতে হয়েছে। নিজস্ব হরফ থাকায় চাকমারা নি:সন্দেহে ভাগ্যবান। ইতিপূর্বের প্রবন্ধে আমি হরফগুলোর প্রাচীনত্ব, ব্যবহারিক নানা দিক তুলে ধরেছি। আমরা জানি, অন্যান্য হরফের ন্যায় চাকমা হরফগুলোরও নিজস্ব কিছু স্বাতন্ত্রিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেগুলো স্মরণাতীত সময় থেকে অনুসরণ করা হচ্ছে। অনেক স্বাতন্ত্রিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেগুলো অন্য কোনো হরফে দেখা যায় না। যেমন-উবরতুল্যা, মাজ্যা, ডেইলভাঙ্যা ইত্যাদি। বলা হয় চাকমা হরফে বারমাত্রা ব্যবহার জানলে পুরোপুরি শিখন সম্পন্ন হয়ে যায়। অর্থাৎ যিনি জানেন তিনি বিশেষজ্ঞ লেভেলে উন্নিত হতে পারেন। কিন্তু বারমাত্রার প্রয়োগ আদৌ যুক্তিসম্পন্ন কি না তা বিচায্য বিষয়। কারণ পূর্বে যারা চাকমা হরফে লিখনকাজ করতেন তাদের মধ্যে ধ্বনি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা ছিল না। যে যার সুবিধামত হরফগুলো ব্যবহার করতেন। ব্যক্তি বিশেষে বানানের ভিন্নতা ছিল। এমন দেখা গেছে যে, কোনো একজন রচয়িতার লিখনি অন্য একজনের কাছে পাঠ করতে কষ্টকর হয়ে থাকে। এ অবস্থায় পূর্বের কোনো বানান বা চিহ্নকে অন্ধভাবে অনুসরণ করা কতটুকু যুক্তিসংগত হবে তা ভেবে দেখা উচিত। অধিকন্তু অতিরিক্ত চিহ্ন ব্যবহার থেকেও বিরত থাকা প্রয়োজন। শব্দের অর্থভেদে যদি বানানের ভিন্নতা খোঁজা হয় তাহলে অজস্র চিহ্ন ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে। যতসম্ভব সরল নিয়ম প্রচলন করা দরকার। পাশাপাশি চাকমা ধ্বনিগুলোকে সুনির্দিষ্ট নিয়মের আওতায় আনতে না পারলে সমস্যা থেকেই যাবে। বিজ্ঞ অনেকের মতামত প্রত্যাশায় এখানে শেষ করছি।
-০-
লেখক-শুভ্র জ্যোতি চাকমা, রিসার্চ অফিসার, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, রাঙ্গামাটি।
shuvrachakma71@gmail.com


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কেন আঞ্চলিক স্বায়ত্ব শাসন?

বাংলাদেশ খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির নিকট পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের শাসনতান্ত্রিক অধিকার দাবীর- আবেদন পত্র গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ভাবী ...