শুক্রবার, ২২ এপ্রিল, ২০২২

পার্বত্য চট্টগ্রাম ঘটনা প্রবাহ- মার্চ- ২০২২ খ্রি.

 


মার্চ ২০২২, রাঙ্গামাটি:[1]
ব্রিটিশ কর্তৃক প্রণীত পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন-১৯০০ বহাল রাখতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ করার দাবী জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের হেডম্যানরা (মৌজা প্রধান) আজ বুধবার রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান এবং বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইসাছমিন পারভীন তিবরীজির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবর পাঠানো এক স্মারকলিপিতে দাবী জানান পাহাড়ের হেডম্যানরা।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ী জনগোষ্ঠীকে বিশেষ সুযোগ সুবিধা প্রদানসহ এদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, সনাতনী রীতি-প্রথাসমূহ সংরক্ষণের জন্য বৃটিশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০ প্রনয়ন করে। আইনের আলোকে ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদন হয়। চুক্তির আলোকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, তিন পাবর্ত্য (রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি) জেলা পরিষদ সংশোধন হয়। পার্বত্য চুক্তিতে অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠে পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০।

রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে হেডম্যান এসোশিয়েশন নেতৃবৃন্দের প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মরকলিপি পেশ।

২০০৩ সালে বিএনপি সরকারের আমলে হাইকোর্ট বিভাগের এক মামলায় আইনকে মৃত আইন ঘোষণা করা হয়। বর্তমান সরকারের আমলে ২০১৭ সালে আপীল বিভাগ রায়কে খারিজ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০ বৈধ এবং কার্যকর আইন মর্মে ঘোষণা করে। আপীল বিভাগের উক্ত রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে ২৫ অক্টোবর আব্দুল আজিজ নামে একজন আপীল বিভাগে পুনরায় রিভিউ আবেদন করে। নিষ্পত্তি হওয়া বিষয়টি পুনরায় উত্থাপিত হওয়ায় পাহাড়ের হেডম্যানরা উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে।

স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, রিভিউ উদ্দেশ্য হল বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক, ধর্ম নিরপেক্ষ, বহুত্ববাদী প্রগতিশীল চরিত্রকে ব্যহত করা। পার্বত্য চট্টগ্রামের ভিন্ন ভিন্ন পাহাড়ী জাতিসত্তার স্বতন্ত্র সত্তা, পরিচয়, স্বকীয়তা, ঐতিহ্য, জীবনাচার মৌলিক অধিকারকে ভুলুন্ঠিত করা যা সংবিধানের পরিপন্থী।

রাঙ্গামাটিতে স্মারকলিপি প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য রাঙামাটি হেডম্যান এসোসিয়েশেনের সভাপতি চিংকিউ রোয়াজা, সহ সভাপতি এড. ভবতোষ দেওয়ান, সাধারণ সম্পাদক কেরোল চাকমা, যুগ্ম সম্পাদক থোয়াই অং মারমা, সাংগঠনিক সম্পাদক শান্তি বিজয় চাকমা, দপ্তর সম্পাদক দীপন দেওয়ান টিটুসহ অন্যান্য হেডম্যানরা। এদিকে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের হাতে স্মারকলিপি প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন বান্দরবানের হেডম্যান কার্বারী এসোসিয়েশনের সভাপতি হ্লাথোয়াইহ্রী, সাধারণ সম্পাদক উনিহ্লা প্রমুখ। উক্ত স্মারকলিপিতে বান্দরবানের ৬০ জন হ্যাডম্যান গণস্বাক্ষর প্রদান করে নিজেদের উদ্বেগ জানান।

 

মার্চ ২০২২[2] রাত আনুমানিক ১০:১০ টার দিকে পুলিশ, সেনাবাহিনী ফায়ার সার্ভিসের একটি দল নোয়াপতং ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের আলেচু পাড়া গ্রামের পার্শ্ববর্তী ঞংবাংম্রং নামে এক ঝিরি থেকে চুইরংমা মারমা গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেন।

নিহত চুইরংমা মারমা স্বামীর নাম থুইসাপ্রু মারমা। তারা নোয়াপতং ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের আলেচু পাড়া (মহিলা কার্বারি পাড়া) গ্রামের বাসিন্দা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল :০০ টার দিকে চুইরংমা মারমা বাড়ি থেকে বের হয়ে যান গ্রামের পার্শ্ববর্তী নিজেদের হলুদ ক্ষেত থেকে হলুদ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে। কিন্তু সারাদিন কেটে গেলেও চুইরংমা মারমা আর বাড়ি ফেরেননি। সন্ধ্যার পরও চুইরংমা মারমা বাড়ি ফিরে না আসায় তার পরিবার প্রতিবেশিরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে এবং চুইরংমা মারমাকে খুঁজতে শুরু করে। খোঁজার এক পর্যায়ে রাত আনুমানিক :৩০ টার দিকে পরিবার গ্রামের লোকজন আলেচু পাড়া গ্রামের পার্শ্ববর্তী ঞংবাংম্রং নামে এক ঝিরিতে চুইরংমা মারমা গলা কাটা অর্ধনগ্ন লাশ খুঁজে পায়।

এরপর এলাকাবাসী প্রশাসনকে অবহিত করলে রাত আনুমানিক ১০:১০ টার দিকে প্রশাসন লাশটি উদ্ধার করে রোয়াংছড়ি থানায় নিয়ে যায়।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, চুইরংমা মারমাদের হলুদ ক্ষেতের পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে একদল শ্রমিক কাঠ কাটতে গিয়েছিল। ওই কাঠ কাটা শ্রমিকরাই জঙ্গলে চুইরংমা মারমাকে একা পেয়ে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের পর হত্যা করে ঝিরিতে ফেলে রেখে চলে যায়।

নিহতের বাবা নোয়াপতং ইউনিয়নের নারাইংম্রং পাড়ার বাসিন্দা ফাথুই মারমা বলেন, ‘আমার বড় মেয়ে চুইরংমা মারমা দীর্ঘ বছর যাবৎ আলেচু পাড়াতে থুইসাপ্রু মারমার সাথে বিয়ে হয়ে সাংসার করছে। বুধবার নিজের হলুদ ক্ষেতে হলুদ সংগ্রহ করতে গিয়েছিল। সন্ধ্যায় বাড়িতে না ফিরলে এলাকাবাসীরা মিলে খুঁজতে গিয়ে আমার মেয়ের গলাকেটে হত্যা করা লাশ পাওয়া গেছে।এমন ন্যাক্কাজনক ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি করেন নিহতের বাবা।

রোয়াংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আব্দুল মান্নান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তদন্তের পর ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।

রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।

 

হিল ভয়েস[3], মার্চ ২০২২, বান্দরবান:সম্প্রতি বান্দরবান পার্বত্য জেলাধীন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন এলাকায় রোহিঙ্গা মুসলিম জঙ্গী গোষ্ঠী আরএসও/আরসার পুঁতে রাখা মাইনের বিস্ফোরণে এক নিরীহ জুম্ম গ্রামবাসী গুরুতর আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আহত ব্যক্তির পরিচয় সুজন তঞ্চঙ্গ্যা (২২), পিতা-অংশামং তঞ্চঙ্গ্যা, গ্রাম-বাঁশপাড়ি, ৩নং ঘুমধুম ইউনিয়ন, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মার্চ ২০২২ দুপুর আনুমানিক ১২:০০ টার দিকে সুজন তঞ্চঙ্গ্যা নামে ওই গ্রামবাসী নিজেদের গ্রামের মধ্যবর্তী এলাকায় গরু খুঁজতে যায়। গরু খোঁজার এক পর্যায়ে আরএসও/আরসার পুঁতে রাখা মাইনের হঠাৎ বিস্ফোরণে আঘাতপ্রাপ্ত হলে গুরুতর আহত হন সুজন তঞ্চঙ্গ্যা।

পরে গ্রামবাসী সুজন তঞ্চঙ্গ্যাকে উদ্ধার করেন এবং বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে।

গ্রামবাসীর সূত্রে জানা গেছে, বহুদিন ধরে রোহিঙ্গা মুসলিম জঙ্গী গোষ্ঠী আরএসও (রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশন)/আরসা (আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মী) এর সদস্যরা ঘুমধুম ইউনিয়নের বাঁশপাড়ি গ্রামের বাংলাদেশ মায়ানমার সীমান্তবর্তী ৩৯ পিলার এলাকায় অবস্থান করছে। এলাকায় তারা তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে চারিদিকে বিপদজনকভাবে মাইন পুঁতে রেখেছে।

এজন্য পার্শ্ববর্তী গ্রামবাসীদের অনেক ঝুঁকিপূর্ণভাবে দিনযাপন করতে হচ্ছে এবং ভয়ভীতির মধ্য দিয়ে তাদের জুমচাষ করতে হচ্ছে বলে জানান গ্রামবাসীরা।

রোহিঙ্গা জঙ্গী গোষ্ঠীর সদস্যদের কর্তৃক ঘুমধুম এলাকায় স্থানীয় মারমা তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠী নানাভাবে হয়রানি নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছেন বলেও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।

নাইক্ষ্যংছড়িতে রোহিঙ্গা মুসলিম সশস্ত্র জঙ্গী কর্তৃক স্থানীয় জুম্মদের হয়রানির অভিযোগ

সম্প্রতি কয়েক মাস ধরে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বরাবর অবস্থানরত রোহিঙ্গা মুসলিম জঙ্গী সশস্ত্র গোষ্ঠীর সাথে আরাকান সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সশস্ত্র সংঘাত হয়ে আসছে বলে বিশ্বস্থসূত্রে জানা গেছে। এতে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মী (আরসা) এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)-এর কয়েক ডজন সদস্য নিহত এবং অপরপক্ষে আরাকানী গেরিলা বাহিনীর অনেক সদস্য নিহত হয়েছে বলে সূত্রে উল্লেখ করা হয়। এতে ঘুমধুম ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় স্থানীয় অধিবাসীরা চরম আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করতে বাধ্য হচ্ছে।

 

১৩ মার্চ ২০২২, বান্দরবান[4], : সম্প্রতি বান্দরবান পার্বত্য পার্বত্য জেলায় সেনামদদপুষ্ট সন্ত্রাসী দলমগ পার্টিকে কিভাবে আরও ধ্বংসাত্মক সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহার করা যায় সে বিষয়ে সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট মহলকে নিয়ে একাধিক ষড়যন্ত্রমূলক গোপন বৈঠক করেছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পাওয়া গেছে।

সূত্রটি জানিয়েছে, অতি সম্প্রতি বান্দরবান সদরে বান্দরবান সেনা জোন, রুমা সেনা জোন রাঙ্গামাটি সেনা ব্রিগেডের মধ্যে একটি গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের নির্দিষ্ট তারিখটি জানাতে না পারলেও এই সপ্তাহের মধ্যে যে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে তা নিশ্চিত করে সূত্রটি।

অপরদিকে, গত ১১ মার্চ ২০২২, শুক্রবার থানচি উপজেলায় সেনাবাহিনীর উদ্যোগে আরও একটি গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে জানা যায়। এই বৈঠকে সেনাবাহিনীর থানচি উপজেলা সদর জোন, রুমা সদর জোন, বিজিবি থানচি জোনের কর্মকর্তা গোয়েন্দা বিভাগের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে রুমা সেনা জোনের কম্যান্ডার মেজর বদরুল নেতৃত্ব দেন বলে জানা যায়।

উক্ত বৈঠকে সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা বাহিনী বিজিবি কর্মকর্তাগণ ছাড়াও, জেলা আওয়ামীলীগ, মগ পার্টি, ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক), পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ (সেটেলার সংগঠন) এর প্রতিনিধি এবং সেনাবাহিনীর আজ্ঞাবাহী কিছু জনপ্রতিনিধি, হেডম্যান ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়। বৈঠকে মগ পার্টির পক্ষে সেনাবাহিনী মগ পার্টি মধ্যে সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্বপালনকারী মো: রনি নামে এক বাঙালি এবং বর্তমানে মগ পার্টির সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড সবুজ মারমা ওরফে উথোয়াইচিং মারমা উপস্থিত ছিলেন।

অপরদিকে, ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) এর বান্দরবান জেলা সভাপতি মংপু হেডম্যান এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ক্যশৈহ্লা প্রতিনিধি হিসেবে তিন হেডম্যান উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। এছাড়া রোয়াংছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হ্লাথোয়াইহ্রী মারমাও উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়।

বৈঠকে বান্দরবান সদর এর আশেপাশের এলাকায় যাতে পার্বত্য চুক্তির পক্ষের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতাকর্মী সমর্থকদের কোনো প্রকার আনাগোনা এবং কার্যক্রম না থাকে সেই ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা হয়। মগ পার্টির সশস্ত্র তৎপরতার পাশাপাশি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সেনা অভিযান পরিচালনা করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়।

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে উক্ত গোপন বৈঠকের বিষয়টি যাতে গোপন থাকে এবং সিদ্ধান্তগুলো যাতে বাইরে প্রকাশ না পায় এজন্য উপস্থিত সকলকে হুশিয়ার করা হয় এবং কারো দ্বারা প্রকাশ পেলে অসুবিধা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।

উক্ত আলোচনায় সেনা প্রশাসন কর্তৃক মারমা লিবারেশন পার্টি (মগ পার্টি) এর সন্ত্রাসীদেরকে দিয়ে জনসংহতি সমিতির নেতাকর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে হামলা, হত্যা, অপহরণ ইত্যাদি কার্যক্রম জোরদার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলে জানা যায়। এজন্য মগ পার্টির সন্ত্রাসীদের দুই দলে ভাগ করে দুই এলাকায় তাদের সশস্ত্র তৎপরতা জোরদার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়।

এর মধ্যে মগপার্টির একটি দল মোতায়েন করা হবে বান্দরবান সীমান্তবর্তী রাঙ্গামাটি জেলাধীন রাজস্থলী উপজেলা এর আশেপাশের এলাকায়। অপর একটি দল বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি রুমা উপজেলায় স্থায়ীভাবে অবস্থান করে বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকায় কার্যক্রম জোরদার করবে।

উল্লেখ্য, মগ পার্টি হচ্ছে সেনাবাহিনী স্থানীয় আওয়ামীলীগ এর সৃষ্ট মদদপুষ্ট একটি সন্ত্রাসী দল। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর মদদপুষ্ট আশ্রয়-প্রশ্রয়প্রাপ্ত আরও দুই সন্ত্রাসী দল হল সংস্কারপন্থী ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) দল। সেনাবাহিনী স্থানীয় আওয়ামীলীগ তাদের কায়েমী স্বার্থে এইসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে এবং চুক্তি স্বাক্ষরকারী জনসংহতি সমিতির নেতাকর্মী সমর্থক এবং অধিকার কর্মীদের দমন, পীড়ন, অপহরণ হত্যার মত সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ব্যবহার করে থাকে।

শুধুমাত্র বিগত দুই মাসে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ২০২২) এইসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক ব্যক্তি খুন, ১৫ ব্যক্তি সাময়িক অপহরণ অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়, জন হুমকি মারধরের শিকার, জনকে হত্যার চেষ্টা এবং ৪টি বাড়ি তল্লাসীর শিকার হওয়ার ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।

সর্বশেষ গত মার্চ ২০২২ সকাল আনুমানিক ১১:০০ টার দিকে মগ পার্টি সন্ত্রাসীদের গুলিতে রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা ইউনিয়নে উনুমং মারমা নামে এক নিরীহ গ্রামবাসী হত্যার শিকার হন।

তবে, দিনই দুপুর :০০ টার দিকে প্রতিপক্ষের গুলিতে রোয়াংছড়ি-রুমা সীমানার সাঙ্গু নদীর তীরবর্তী ফালংক্ষ্যং নামক জায়গায় মগ পার্টির অন্তত হতে জন সশস্ত্র সদস্য নিহত হয় বলে জানা যায়।

বস্তুত এভাবেই সেনাবাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতৃত্ব পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাস প্রতিরোধের নামে সংঘাত সন্ত্রাস উস্কে দিয়ে চলেছে।

 

১৩ মার্চ ২০২২, রাঙ্গামাটি[5] : রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার জীবতলী ইউনিয়নে সেনাবাহিনী কর্তৃক নিরীহ জুম্ম গ্রামবাসীকে অমানুষিক মারধর এবং মারধরের পর একজনকে অস্ত্র, গুলি, দা ইত্যাদি গুঁজে দিয়ে রাঙ্গামাটি কতোয়ালি থানায় সোপর্দ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে আবার সেনাবাহিনী সেনামদদপুষ্ট বিভিন্ন অনলাইন প্রচার মাধ্যম কর্তৃক গ্রেপ্তারকৃত ওই ব্যক্তি জনসংহতি সমিতির মূল দলের সন্ত্রাসী বলে অপপ্রচার করার অভিযোগ পাওয়া যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যে, আজ রবিবার (১৩ মার্চ ২০২২) সকালে রাঙ্গামাটি সেনা রিজিয়নের অধীনস্থ আর ব্যাটালিয়নের অন্তর্গত গবঘোনা সেনা ক্যাম্পের কম্যান্ডার মোঃ গিয়াস এর নেতৃত্বে গবঘোনা সেনা ক্যাম্প জীবতলী সেনা ক্যাম্প এর ৩০/৩৫ জনের একটি সেনাদল মগবান ইউনিয়নের গুরগুজ্যাছড়ি এলাকায় টহল অভিযান চালায়।

এসময় সেনা সদস্যরা প্রথমে এলাকার আপন চাকমা (৩৩), পিতা-শম্ভু লাল চাকমার দোকান ঘেরাও করে। এর পরপরই সেনা সদস্যরা শম্ভু লাল চাকমা (৫০), পিতা-সূর্য্যসন চাকমা, কৃপাধন চাকমা (৪৩), পিতা-চন্দ্র সেন চাকমা নয়ন চাকমা, পিতা-অজ্ঞাত এর বাড়ি ঘেরাও করে বাড়িতে ব্যাপক তল্লাশী চালায়। এরপর সেনা সদস্যরা উক্ত চার নিরীহ গ্রামবাসীকে একসঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে এবং এদের মধ্যে শম্ভু লাল চাকমাকে বেদম মারধর করে।

পরে সকাল :০০ টার দিকে সেনা সদস্যরা উক্ত গ্রামবাসীকে বাঁধা অবস্থায় জীবতলী সেনা ক্যাম্পে আটক করে নিয়ে যায়। বিকাল :০০ টার দিকে সেনা সদস্যরা আপন চাকমা, কৃপাধন চাকমা নয়ন চাকমাকে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেয় বলে জানা যায়।

অপরদিকে, এরপর সেনা সদস্যরা অপর আটককৃত নির্যাতনের শিকার গ্রামবাসী শম্ভু লাল চাকমাকে মিথ্যাভাবে সাজিয়ে একটি দেশীয় বন্দুক, রাউন্ড গুলি, ৮টি দেশীয় দাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র গুঁজে দিয়ে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রাঙ্গামাটি কোতয়ালী থানায় সোপর্দ করে বলে জানা যায়।

এদিকে ঘটনার পর বিকেলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এবং সেনামদদপুষ্ট বিভিন্ন অনলাইন প্রচারমাধ্যমে আটককৃত শম্ভু লাল চাকমা জনসংহতি সমিতির সন্ত্রাসী বলে দাবি করা হয়।

এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে জনসংহতি সমিতির স্থানীয় এক নেতা জানান, গ্রেফতারকৃত শম্ভু লাল চাকমা নিরীহ এক গ্রামবাসী। এলাকার জুম্মদের মধ্যে ভীতির রাজত্ব কায়েম করা এবং নিজেদের জুম্মবিদ্বেষী মানসিকতা চরিতার্থ করার জন্যই সেনাবাহিনী জুম্মদের গ্রামে এমন তথাকথিত অভিযান চালায় এবং নিরীহ মানুষদের অত্যাচার, হয়রানি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অস্ত্র গুঁজে দিয়ে গ্রেপ্তার করে।

স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায় যে, রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বর্তমানে পার্শ্ববর্তী বালুখালী ইউনিয়নের মরিচ্যা বিল সেনা ক্যাম্প হতে ২০/২২ জনের একটি সেনাদল গুরগুজ্যাছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থান করছে। অপরদিকে কুকিপাড়া সেনা ক্যাম্প হতে ২০/২৩ জনের একটি সেনাদল বর্তমানে দুত্তাং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থান করছে। এছাড়া জীবতলী সেনা ক্যাম্প গবঘোনা সেনা ক্যাম্প হতে জীবতলী ইউনিয়নের আঘোইয়াছড়ি, পৃজুছড়া, রেংখ্যং বাজার সহ বিভিন্ন এলাকায় সেনা অভিযান চলছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

১৫ মার্চ ২০২২, বান্দরবান:[6] বান্দরবান পার্বত্য জেলার বান্দরবান সদর উপজেলাধীন টংকাবতী ইউনিয়নে জ্বলন্ত তঞ্চঙ্গ্যা (৩৫) নামে সেনামদদপুষ্ট ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসী দলের এক সদস্য গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এলাকায় নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখা চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পারস্পরিক কোন্দলের কারণে সেনামদদপুষ্ট অপর সন্ত্রাসী দলমগ পাটি সন্ত্রাসীরা এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে গোপন একটি সূত্রে খবর পাওয়া গেছে।

আজ ১৫ মার্চ ২০২২ বিকাল আনুমানিক :০০ টার দিকে টংকাবতী ইউনিয়নের পুনর্বাসন চাকমাপাড়া বন বিভাগের রেঞ্জ কার্যালয়ের মাঝামাঝি ব্রিকফিল্ড এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর পাওয়া গেছে।

নিহত জ্বলন্ত তঞ্চঙ্গ্যার বাড়ি রাঙ্গামাটি জেলাধীন রাজস্থলী উপজেলার চিংক্ষ্যং এলাকায় বলে জানা গেছে। তিনি বর্তমানে বান্দরবানের টংকাবতী এলাকায় ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) দলের চাঁদা সংগ্রাহকের দায়িত্ব পালন করছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, টংকাবতীর স্থানীয় এক ব্রিকফিল্ড এলাকায় চাঁদা সংগ্রহের কাজে মোটর সাইকেলে যাতায়াতের সময় প্রতিপক্ষ অস্ত্রধারীরা গুলি করলে ঘটনাস্থলে জ্বলন্ত তঞ্চঙ্গ্যা নিহত হন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, বছরখানেক আগে সেনাবাহিনীই বান্দরবানে জনসংহতি সমিতির নেতাকর্মী সমর্থকদের এলাকায় দমন-পীড়ন, অপহরণ, হত্যাসহ সন্ত্রাসী ঘটনা জোরদারের লক্ষে রাঙ্গামাটির রাজস্থলী খাগড়াছড়ি থেকে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীদের নিয়ে আসে। এরপর থেকে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীদের সাথেমগ পার্টিসন্ত্রাসীদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়।

সূত্রটি আরও জানায়, সাম্প্রতিককালে সেনাবাহিনী ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অসন্তোষ প্রকাশ করে। ফলে সম্প্রতি সেনাবাহিনীমগ পার্টিকে দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড জোরদার করার উদ্যোগ নেয়। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী মগ পার্টির প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট মহলকে নিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক একাধিক গোপন বৈঠক করেছে বলে জানা গেছে।

উক্ত প্রেক্ষাপটে টংকাবতী এলাকাসহ বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বজায় রাখা চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সংস্কারপন্থী এবং মগ পার্টির মধ্যেকার দ্বন্দ্বের জের হিসেবে জ্বলন্ত তঞ্চঙ্গ্যা হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে।

এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত লাশটি উদ্ধারে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

 

১৫ মার্চ ২০২২[7] রাতে সেটলার বাঙালিরা জুম্মদের ৯টি ঘর পুড়ে ছাই করে দিয়েছে।এতে অন্তত ৯টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা হলেন- ধনঞ্জয় চাকমা, পিতা- মৃত ইন্দ্র সেন চাকমা, যুদ্ধ মোহন চাকমা, পিতা- মৃত বাত্যে চাকমা, স্মৃতিময় চাকমা, পিতা- রামণী চাকমা, প্রেম ময় ত্রিপুর, ললাল চাকমা, পিতা- মৃত পদ্ম লোচন চাকমা, শান্তি লাল চাকমা, পিতা- মৃত পদ্ম লোচন চাকমা, লাউচাঁন চাকমা, পিতা- মৃত পূর্ণ চাকমা, মিন্টু চাকমা, পিতা- কালো বরণ চাকমা সাধন ভূষণ চাকমা, পিতা- ইন্দ্র লাল চাকমা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাত আনুমানিক ১০টার সময় জয়সেন পাড়ার মো. নাজিম, মো. বেলাল মো. নজরুলের নেতৃত্বে একদল সেটলার বাঙালি ডিপ্পোছড়িতে গিয়ে পাহাড়িদের নতুন নির্মাণ করা ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। সময় সেটলারদের সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যে একদল সেনা সদস্য আশে-পাশে গিয়ে অবস্থান নেয় বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। ফলে সময় পাহাড়িরা ভয়ে সবাই পালিয়ে যায়। সেটলারদের দেয়া আগুনে অন্তত ৯টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে সেটলার বাঙালিরা উক্ত জায়গাটি বেদখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এর আগে কয়েকবার তারা জায়গাটি বেদখলে চেষ্টা চালালেও পাহাড়িদের প্রতিরোধের কারণে তারা সেটা করতে পারেনি। জায়গাটি রক্ষার্থে পরে পাহাড়িরা সেখানে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে। এই জায়গাটি বেদখল করতেই গতকাল রাতে সেটলাররা সেখানে গিয়ে পাহাড়িদের নির্মিত ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেছেন।

 

হিল ভয়েস, ২১ মার্চ ২০২২, বিশেষ প্রতিবেদক: আন্তর্জাতিক পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন (সিএইচটি কমিশন) সেনা হেফাজতে নবায়ন চাকমা মিলনের নির্যাতন মৃত্যুর ঘটনার বিষয়ে একটি স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।

২১ মার্চ ২০২২ সোমবার সিএইচটি কমিশনের তিন কো-চেয়ার সুলতানা কামাল, এলসা স্ট্যাম্যাটোপোলো মিরনা কানিংহাম কেইন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিবৃতিতে সিএইচটি কমিশন বলেছে যে, খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় সেনা হেফাজতে এক আদিবাসী রাজনৈতিক কর্মী নবায়ন চাকমা মিলন (ওরফে সৌরভ, ৪৭) এর মৃত্যুর ঘটনায় সিএইচটি কমিশন গভীরভাবে মর্মাহত। কমিশন একটি দ্রুত, নিরপেক্ষ কার্যকর বিচারবিভাগীয় তদন্ত, ওইসব দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি এবং মৃত ব্যক্তির পরিবারের ক্ষতিপূরণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে।

প্রেস বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় যে, ইউপিডিএফএর প্রচার প্রকাশনা বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত নিরন চাকমা অভিযোগ করেন যে, গত ১৫ মার্চ ২০২২ ভোর আনুমানিক :৩০ টায় দীঘিনালা সেনা জোনের একদল সেনা সদস্য দীঘিনালা উপজেলাধীন দীঘিনালা সদর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বাগানপাড়া মনিভদ্র কার্বারি পাড়ায় তল্লাসী অভিযান চালায়। তল্লাসীর সময় সেনা সদস্যরা গ্রামের এক অধিবাসী শান্তি রঞ্জন চাকমা (৪৮) এর বাড়ি ঘেরাও করে। সময় সেনা সদস্যরা চিকিৎসার জন্য বাড়িতে অবস্থান করা ইউপিডিএফ সংগঠক মিলন চাকমাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর সেনাবাহিনী তার উপর শারীরিক নির্যাতন চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সেনাবাহিনী তাকে দীঘিনালা উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়, যেখানে সকাল :০০ টায় দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন খুবই উদ্বিগ্ন যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী রাজনৈতিক কর্মীদের জোরপুর্বক নিখোঁজ, নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন মৃত্যু অন্যান্য গুরুতর অভিযোগের ক্ষেত্রে তদন্ত চালানো হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে কোনো সরকারী তথ্য নেই। গণমাধ্যমে প্রকাশিত কয়েকটি ঘটনার মধ্যে রয়েছে:

গত ১৬ এপ্রিল ২০১৯ নিরাপত্তা বাহিনী নারায়ণগঞ্জ হতে ইউপিডিএফএর কর্মী মাইকেল চাকমাকে (৪০) তুলে নিয়ে যায়। তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা এখনও অজ্ঞাত।

গত ২৬ আগস্ট ২০১৯ সামরিক বাহিনী কর্তৃক দীঘিনালা উপজেলার কৃপাপুর এলাকা থেকে নবীন জ্যোতি চাকমা (৩২), বুজেন্দ্র চাকমা (৫০) রুচিল চাকমা রাসেল (২৬) নামে ইউপিডিএফ তিন কর্মীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেনাবাহিনী দাবি করে যে, একটি সম্মুখযুদ্ধে তারা মারা যায়।

গত এপ্রিল ২০১৯ বান্দরবান জেলায় ্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (্যাব) সাথে এক ক্রসফায়ারে পিসিজেএসএস কর্মী জ্ঞান শংকর চাকমা (৪৫) নিহত হন। তবে জনসংহতি সমিতির দাবি, গত ১৪ মার্চ ২০১৯ চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী কর্তৃক তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

গত এপ্রিল ২০১৭ নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনের কারণে এইচএসসি পরীক্ষার্থী পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের রাঙ্গামাটি শাখার সাধারণ সম্পাদক রমেল চাকমা মৃত্যুবরণ করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

২০১৪ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনের কারণে পিসিজেএসএস (এম এন লারমা গ্রুপ) এর এক সদস্য তিমির বরণ চাকমা নিহত হন বলে অভিযোগ রয়েছে।

১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে শর্ত রয়েছে যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সকল অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের আইন শৃঙ্খলা পার্বত্য জেলা পরিষদের আওতায় আনা হবে। অথচ এসব ধারাসমূহ এখনো বাস্তবায়িত করা হয়নি।

নাগরিক রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি, এবং নির্যাতন অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক অথবা মর্যাদা হানিকর আচরণ অথবা শাস্তির বিরুদ্ধে কনভেনশন, এবং দেশের নিজস্ব সংবিধান এবং নির্যাতন হেফাজতে মৃত্যু (প্রতিরোধ) আইন ২০১৩ এর আওতায় বাংলাদেশের নির্যাতনের অভিযোগ তদন্ত করার এবং জবাবদিহি ভিক্টিমদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে হেফাজতে মৃত্যু সামরিকায়নের বিষয়ে অব্যাহতভাবে বিচারহীনতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন সরকারকে একটি দ্রুত, নিরপেক্ষ স্বাধীন বিচারবিভাগীয় তদন্তের উদ্যোগ নেয়া, অপরাধীদের ন্যায়বিচারের আওতায় আনা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানায়। কমিশন পূর্ববর্তী অভিযুক্ত হেফাজতে মৃত্যু, ইনকাউন্টার, জোরপূর্বক নিখোঁজ ঘটনাসমূহের ব্যাপারে যথাযথ তদন্তেরও দাবি জানান। কমিশন সরকারকে পার্বত্য চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহে আইন শৃঙ্খলার কাজসমূহ হস্তান্তরের আহ্বান জানায়।

 

২২ মার্চ ২০২২ [8]সকাল আনুমানিক :০০ টার দিকে জামছড়ি ইউনিয়নের অন্তর্গত ৩৩০নং হ্নারা মৌজার থাংখ্রুই পাড়া এলাকায় এই বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। ঘটনায় এএলপি জন মগ পার্টির সদস্য নিহত হওয়ার খবর জানা যায়।

নিহত মগ পার্টির সদস্যের নাম অংথোয়াই মারমা (৪৫), পীং-থুইখইঞো মারমা। তার বাড়ি হ্নারা মৌজার থাংখ্রী পাড়ায় বলে জানা গেছে। অপরদিকে, নিহত এএলপি সদস্যদের নাম জানা যায়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এএলপি মূলত মিয়ানমারের আরাকান ভিত্তিক একটি বিদ্রোহী দল। এই দলের একটি গ্রুপ কিছু সময় আগেও সেনাবাহিনী স্থানীয় আওয়ামীলীগের ছত্রছায়া পৃষ্টপোষকতায় বান্দরবান রাজস্থলীতে অবস্থান করত। প্রশাসনের নাকের ডগায় তারা চাঁদাবাজি, গ্রামবাসীদের অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়সহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাত।

পরে ২০২০ সালের শেষের দিকে এএলপির অধিকাংশ সদস্য পার্বত্য চট্টগ্রাম ছেড়ে গেলেও আরেকটি অংশ রাজস্থলী এলাকায় থেকে যায়। এএলপি অংশটিই এক পর্যায়ে মারমা লিবারেশন পার্টি বা মগ পার্টি হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠে। যে মগ পার্টি সম্প্রতি রাজস্থলী বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকায় সেনাবাহিনী স্থানীয় আওয়ামীলীগের মদদে পৃষ্টপোষকতায় জনসংহতি সমিতির নেতাকর্মীসহ স্থানীয় নিরীহ জনগণের বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।

অভিযোগ রয়েছে, এএলপি নামের সাথে যেহেতু ইহা একটি বিদেশী দল হিসেবে পরিচিতি রয়েছে, সেহেতু সেনাবাহিনীর পরামর্শেই পরে অবশিষ্ট এএলপি সদস্যদের দিয়ে এবং আরও কয়েকজন স্থানীয় যুবককে অন্তর্ভুক্ত করে মারমা লিবারেশন পার্টি বা মগ পার্টি গঠন করার ঘোষণা দেয়া হয়।

স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, সম্প্রতি সেনাবাহিনীর নির্দেশনায় মগ পার্টির সদস্যরা নিজেদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড জোরদার করার লক্ষে অন্য এএলপি দলের সাথে সংযোগ স্থাপন করে। ধারণা করা হচ্ছে, সেনাবাহিনী স্থানীয় আওয়ামীলীগের সহযোগিতায় মোটা অংকের আর্থিক পুরস্কারের বিনিময়ে নতুন করে পুরনো এএলপি সদস্যদের পার্বত্য চট্টগ্রামে আনা হচ্ছে। মগ পার্টির সদস্যদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষে উক্ত এএলপি সদস্যদের রাজস্থলীতে মগ পার্টির ঘাঁটি এলাকায় আনা হচ্ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অপর একটি সূত্র জানায়, মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে মিয়ারমার-ভারত-বাংলাদেশ ত্রিসীমানা থেকে এএলপি কমান্ডার মেজর সাংথোয়াইন-এর নেতৃত্বে এএলপির জন সদস্য ১৮টি অস্ত্রসহ বান্দরবানের রুমা উপজেলার দিকে রওয়ানা দেয়। তাদেরকে অস্ত্রসহ গত ১৪ মার্চ ২০২২ রুমার বগালেকের মেনদৌই (ম্রো পাড়া) পাড়াতে দেখা গেছে। এরপর রুমা খালের পাশে অডিরাম পাড়ায়ও তাদেরকে দেখা যায়। সর্বশেষ ১৭ মার্চ ২০২২ সকালের দিকে বান্দরবানের রুমা উপজেলায় এএলপি সদস্যদের একটি সশস্ত্র দলকে দেখা গেছে।

যতটুকু জানা যায়, সাংথোয়াইন ছিলেন বর্তমান মগপার্টির প্রধান খইলাং-এর জুনিয়র। এসময় সাংথোয়াইন রুমার পানতলা এবং নাইতং এলাকায় ছিলেন। চাঁদাবাজি মুক্তিপণের টাকাসহ সেনাবাহিনী এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বান্দরবান জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ক্যাশৈহ্লার প্রদত্ত অর্থ দিয়ে উক্ত ১৮টি অস্ত্র মগপার্টির সন্ত্রাসীরা কিনে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত ১৯ মার্চ ২০২২ শনিবার রুমার মুয়ালপি পাড়ায় মগ এএলপিরা মিলিত হয়। মগপার্টির সন্ত্রাসীরা মুয়ালপি পাড়ায় অপেক্ষায় ছিলেন আর এএলপি সন্ত্রাসীরা মৌদং ম্রো পাড়া থেকে মুয়ালপি পাড়ায় এসে একত্র হয়।

অপরদিকে ১৭ মার্চ ২০২২ মগ পার্টির ২০-২৫ জনের একটি দল প্রায় দশটি মোটর সাইকেল যোগে রুমায় যায়। সূত্রটির মতে, এএলপি সদস্যদের রাজস্থলীতে আনার জন্যই মগ পার্টির সদস্যরা সেখানে যায়।

আরো উল্লেখ্য যে, আজ (২২ মার্চ) গোলাগুলির ঘটনার ঠিক কয়েক ঘন্টা আগে সকাল :৪৫ টার দিকে বান্দরবান সদরের বালাঘাটা এলাকায় উক্ত এএলপি সদস্যদের সশস্ত্র অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায় বলে একটি সূত্র জানায়।

জানা গেছে, আজ সকালের দিকে এএলপি মগ পার্টির সদস্যরা একসঙ্গে বান্দরবান সদরের বালাঘাটার মিনঝিরি পাড়া থেকে রাজস্থলীর পোয়াইতু পাড়ার দিকে যাচ্ছিল। পোয়াইতু পাড়া হচ্ছে মগ পার্টির প্রধান ঘাঁটি এলাকা। এএলপি মগ পার্টির সদস্যরা প্রথমে কিছুদূর গাড়িযোগে যায়। এরপর তারা পায়ে হেটে যাচ্ছিল। এমন সময় বান্দরবানের জামছড়ি ইউনিয়নের থাংখ্রুই পাড়া এলাকায় পৌঁছলে অজ্ঞাতপরিচয় প্রতিপক্ষ দল এএলপি মগ পার্টির সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়লে উভয়পক্ষের বন্দুকযুদ্ধ হয়। এতে ঘটনাস্থলে এএলপি মগ পার্টির তিন সন্ত্রাসী নিহত হয় বলে জানা যায়।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি বান্দরবান পার্বত্য পার্বত্য জেলায় সেনামদদপুষ্ট সন্ত্রাসী দলমগ পার্টিকে কিভাবে আরও ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবহার করা যায় সে বিষয়ে সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট মহলকে নিয়ে একাধিক ষড়যন্ত্রমূলক গোপন বৈঠক করেছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পাওয়া যায়। উক্ত বৈঠকে সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা বাহিনী বিজিবি কর্মকর্তাগণ ছাড়াও, জেলা আওয়ামীলীগ, মগ পার্টি, ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক), পার্বত্য নাগরিক পরিষদ এর প্রতিনিধি এবং সেনাবাহিনীর আজ্ঞাবাহী কিছু জনপ্রতিনিধি, হেডম্যান ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়।

বৈঠকে বান্দরবান সদর এর আশেপাশের এলাকায় যাতে পার্বত্য চুক্তির পক্ষের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতাকর্মী সমর্থকদের কোনো প্রকার আনাগোনা এবং কার্যক্রম না থাকে সেই ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা হয়। মগ পার্টির সশস্ত্র তৎপরতার পাশাপাশি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সেনা অভিযান পরিচালনা করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়।

শুধুমাত্র বিগত দুই মাসে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ২০২২) এইসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক ব্যক্তি খুন, ১৫ ব্যক্তি সাময়িক অপহরণ অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়, জন হুমকি মারধরের শিকার, জনকে হত্যার চেষ্টা এবং ৪টি বাড়ি তল্লাসীর শিকার হওয়ার ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।

সর্বশেষ গত মার্চ ২০২২ সকাল আনুমানিক ১১:০০ টার দিকে মগ পার্টি সন্ত্রাসীদের গুলিতে রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা ইউনিয়নে উনুমং মারমা (৪৭) নামে এক নিরীহ গ্রামবাসী হত্যার শিকার হন।

তবে, দিনই দুপুর :০০ টার দিকে প্রতিপক্ষের গুলিতে রোয়াংছড়ি-রুমা সীমানার সাঙ্গু নদীর তীরবর্তী ফালংক্ষ্যং নামক জায়গায় মগ পার্টির অন্তত হতে জন সশস্ত্র সদস্য নিহত হয় বলে জানা যায়।

 

২১ মার্চ ২০২২[9] রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার কাউখালীর ঘাগড়া বাজার এলাকায় ২১ মার্চ ২০২২ রাত আনুমানিক টার দিকে সেনাবাহিনীর ডিজিএফআই কর্তৃক তিন জুম্ম যুবক তল্লাশি মারধরের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলায় ঘাগড়া বাজার এলাকায় গত ২১ মার্চ ২০২২ রাত আনুমানিক টার দিকে ডিজিএফআই কর্তৃক ঘাগড়া ইউনিয়নের তিন জুম্ম যুবককে তল্লাশি মারধর করা হয়েছে।

মারধরের শিকার জুম্ম যুবকরা হলেন, জুয়েল চাকমা (১৮), পিতা- প্রতীক কুমার চাকমা, গ্রাম-হারাঙ্গী রিফিউজি পাড়া, পেশায় তিনি একজন ভাড়ায় মোটর সাইকেল চালক; নির্মল চাকমা (১৭), পিতা- পুনংচান চাকমা রনেল চাকমা (১৭), পিতা-কারন বিকাশ চাকমা, দুই জনের গ্রাম- লেভাপাড়ায়।

জানা যায়, ঘটনার দিন ২১ মার্চ ২০২২, নির্মল চাকমা রনেল চাকমা মোবাইল ফোন ঠিক করতে রাঙামাটি শহরে যায়। মোবাইল ঠিক করার পর তারা জুয়েল চাকমার মোটর সাইকেলে যাত্রী হয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। এরপর ঘাগড়া বাজারে এসে একটি দোকানে মোবাইলে টাকা রিচার্জ করছিলেন ঠিক সেসময় রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে সেনা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের সদস্য মো. তারেক সেনা স্পাই মিল্টন তঞ্চঙ্গ্যার নেতৃত্বে ১০-১২ জন গোয়েন্দা সংস্থার পরিচয়ধারী দুর্বৃত্ত তাদেরকে সেখান থেকে সোনালী ব্যাংক ভবনের নিচতলায় ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে তারা উক্ত যুবকদেরকে নানা হুমকি ধামকি দিয়ে তল্লাশি মারধর করে।

কিন্তু মারধর তল্লাশি করার পর তাদের কাছ থেকে অবৈধ কোন কিছু না পেয়ে ঐদিন রাত সাড়ে ১০টার সময় ছবি শর্তনামা নিয়ে স্ব স্ব অভিভাবকের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

উক্ত ঘটনায় জড়িত মো. তারেক ঘাগড়া এলাকায় ডিজিএফআইয়ের স্টাফ হিসেবে দায়িত্বরত বলে জানা গেছে। তিনি এলাকায় বেশ পরিচিত। তার বিরুদ্ধে এলাকার বিভিন্ন জনকে অহেতুক হয়রানিসহ নানা অপকর্মের অভিযোগও রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে, ঘটনাটি জানাজানি হওয়ায় উক্ত এলাকার জুম্মদের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

 

হিল ভয়েস[10], ২৪ মার্চ ২০২২, ঢাকা: আজ ২৪ মার্চ ২০২২ দেশের ২৪ বিশিষ্ট নাগরিক ভূমিদস্যুদের কর্তৃক বান্দরবান পার্বত্য জেলায় আদিবাসী জুম্মদের জুমের বাগান, পাহাড় এবং ভূমি দখলের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত পূর্বক নিজেদের ভূমির উপর আদিবাসীদের দখলসত্ত্ব নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে, ২০ মার্চ ২০২২ রোববার সকালে বান্দরবান জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন বিক্ষোভ সমাবেশে দখল হয়ে যাওয়া জুমের বাগান, পাহাড় এবং ভূমি ফেরত পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের লাংকম ম্রো কার্বারী পাড়া, জয়চন্দ্র ত্রিপুরা কার্বারী পাড়া এবং রেংয়েন ম্রো কার্বারী পাড়ার বাসিন্দারা।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালক কামাল উদ্দিন কয়েকজন স্থানীয় ভূমিদস্যূদের সহায়তায় আদিবাসীদের প্রায় ৩০০ একর জুম ভূমি দখল করেছে। এর প্রতিবাদ করেেল বিভিন্ন সময় আদিবাসীদের বিরুদ্ধে এই কোম্পানি মিথ্যা মামলা করেছে।

সমতলের আদিবাসীদের ভূমির মালিকানা দেশের প্রচলিত আইনে নির্ধারণ করা হলেও তিন পার্বত্য জেলায় আদিবাসীদের ভূমি মালিকানা সামাজিক।সার্বজনীন সম্পদ-সম্পত্তি মালিকানা অধিকারনীতিই হলো তাদের ভূমি মালিকানার ভিত্তি। ফলে এই মালিকানা বংশ পরম্পরায় মৌখিক। তিনটি সার্কেলের আওতায় পার্বত্য পাড়ার হেডম্যান এবং কারবারিরা এর ব্যবস্থাপনা করে থাকেন। কিন্তু গত ৩০ বছরে এই পার্বত্য পাড়ার নিয়ন্ত্রণাধীন ভূমির পরিমাণ শতকরা ৫১ ভাগ কমে গেছে। আরেক কথায় বলা যায়, পাহাড়িদের সামাজিক মালিকানার অর্ধেকেরও বেশি ভূমি ভূসম্পদ হাতছাড়া হয়ে গেছে।

বিশিষ্ট নাগরিকগণ বলেন, ‘বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের লাংকম ম্রো কার্বারী পাড়া, জয়চন্দ্র ত্রিপুরা কার্বারী পাড়া এবং রেংয়েন ম্রো কার্বারী পাড়ার আদিবাসীদের জুমের বাগান এবং ভূমি দখল হয়ে যাওয়ার ঘটনায় প্রশাসনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ না থাকার বিষয়টি আমাদের গভীরভাবে হতাশ করেছে; আমরা উদ্বিগ্ন। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ন্যায়বিচারের লক্ষ্যে কোনো প্রকার ব্যবস্থা কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে থেকে তাদের সহায়তার বিষয়ে কোন প্রকার আশ^স্তও করা হয়নি, যা আমাদের বিক্ষুব্ধ করেছে।

তাঁরা আরও বলেন, ‘এমতাবস্থায় আমরা অনতিবিলম্বে বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের আদিবাসীদের দখল হয়ে যাওয়া জুমের বাগান, পাহাড় এবং ভূমি দখলের ঘটনায় আইনানুগ প্রতিকারের লক্ষ্যে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত সম্পন্ন করা, ভূমিদস্যূদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া এবং পাড়াগুলোতে ম্রো জনগোষ্ঠীর মানুষের দখলসত্ত্ব নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরদানকারী নাগরিকগণ হলেন- পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সভাপতি, ঐক্য ন্যাপ, রাশেদা কে. চৌধুরী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, রামেন্দু মজুমদার, সভাপতি মন্ডলীর সদস্য, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, ডা. সারওয়ার আলী, ট্রাস্টি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ডা. ফওজিয়া মোসলেম, সভাপতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, . নুর মোহাম্মদ তালুকদার, সদস্য সচিব, সাম্প্রদায়িকতা জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চ, এস.এম.এসবুর, সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষক সমিতি, খুশী কবির, মানবাধিকার কর্মী, এম.এম. আকাশ, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সালেহ আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, ডা. লেনিন চৌধুরী, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, রঞ্জিত কুমার সাহা, সিনেট সদস্য, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, পারভেজ হাসেম, অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, আবদুল ওয়াহেদ, কার্যকরী সভাপতি, জাতীয় শ্রমিক জোট, অ্যাডভোকেট জীবনানন্দ জয়ন্ত, সংগঠক, গণজাগরণমঞ্চ, . সেলু বাসিত, সংস্কৃতিকর্মি, রাজিয়া সামাদ ডালিয়া, সমাজকর্মী, কে আজাদ, সংস্কৃতিকর্মী অলক দাস গুপ্ত, সভাপতি, উঠোন সাংস্কৃতিক সংগঠন, দীপায়ন খীসা, তথ্য প্রচার সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, বিভূতী ভূষণ মাহাতো, সদস্য, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটি, কাজী আব্দুল মোতালেব জুয়েল, সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, গৌতম শীল, সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল)

 

২৪ মার্চ ২০২২[11], বিকেলে ঢাকায় শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চার আয়োজনে নির্বাচনী প্রতিশ্রতি বাস্তবায়নের দাবী জানিয়ে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশ শেষে দুলক্ষাধিক জনগণের স্বাক্ষর সম্বলিত এক স্মারকলিপি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকে পদযাত্রা সহকারে একটি মিছিলের মাধ্যমে যাওয়ার পথে বাংলামটরের আগে পুলিশ বাহিনী বাধা প্রদানে মিছিলটি আর এগুতে পারে নি। পরে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে উক্ত স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রীর বরাবর পেশ করা হয়। এছাড়া স্মারকলিপিটি স্থানীয় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমেও প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে পেশ করা হয়েছে বলে জানা যায়।

. নিমচন্দ্র ভৌমিক এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে স্মারকলিপি পাঠ করে শোনান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চার প্রধান সমন্বয়ক এ্যাড. রাণা দাশগুপ্ত। মোর্চাভুক্ত সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের অন্যতম সভাপতি সাবেক সাংসদ ঊষাতন তালুকদার নির্মল রোজারিও, অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য- এ্যাড.সুব্রত চৌধুরী, জে এল ভৌমিক (সভাপতি, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ) লায়ন চিত্ত রঞ্জন দাশ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক- মনীন্দ্র কুমার নাথ, জয়ন্ত কুমার দেব, এ্যাড.তাপস কুমার পাল, নির্মল কুমার চ্যাটার্জী, এ্যাড. শ্যামল কুমার রায়, কিশোর রঞ্জন মন্ডল, সাংগঠনিক সম্পাদক-পদ্মবতী দেবী, মধুমিতা বড়ূয়া (সভাপতি, বাংলাদেশ মহিলা ঐক্য পরিষদ), হেমন্ত আই কোড়াইয়া (সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ খ্রিস্টান এ্যাসোসিয়েশন) বাপ্পাদিত্য বসু প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

 

২৫ মার্চ ২০২২[12] রাত ১১:০০ টার দিকে মংএনু মারমা কালাচোখা চাকমা অটল এর নেতৃত্বে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসীদের কয়েকজন সদস্য নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বান্দরবান শহরস্থ মগ বাজারের আহমেদ গুলিতে আসে।

এসময় সন্ত্রাসী মংএনু মারমা কালাচোখা চাকমা অটল ক্যসাপ্রু মারমা, পীং-পাইসাথুই মারমা হ্লাসিংঅং মারমা, পীং- এর ঘর-কাম-দোকানে দরজা ভেঙে প্রবেশ করে এবং হাতে থাকা পিস্তল দেখিয়ে লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে।

এসময় ঘরে শুয়ে থাকা ক্যসাপ্রু মারমা হ্লাসিংঅং মারমার স্ত্রী-কন্যারা ভয়ে চিৎকার করে উঠলে আশেপাশের জনগণ ঘটনাস্থলে এগিয়ে আসে। এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা পিস্তল দিয়ে পরপর ছয় রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়লে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।

কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলের দিকে সেনাবাহিনীর একটি টহল গাড়ি আসতে দেখে সন্ত্রাসীরা স্থানীয় জনগণকে বিভিন্ন হুমকি দিতে দিতে সেখান থেকে দ্রুত সরে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শী এক বাঙালি অভিযোগ করে বলেন, সন্ত্রাসী মংএনু মারমা কালাচোখা চাকমা অটল, এদের চাঁদাবাজি হয়রানিতে এলাকার জনগণ অতিষ্ঠ। প্রতিবার বাজারের দিনে তারা ডাকাতের মত জোরপূর্বক জনগণের কাছ থেকে টাকা কেড়ে নেয় বা আদায় করে।

তিনি বলেন, প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন চাঁদাবাজি হয়রানির ঘটনা সত্যি দুঃখজনক।

স্থানীয় জনগণ আরো জানান, প্রায় সময়ই ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীদের মগ বাজারের হেবান নামে এক মদের দোকানে জড়ো হতে এবং গভীর রাত পর্যন্ত আশেপাশের এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। প্রায় সময় এই সন্ত্রাসীরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মগ বাজার উজানী পাড়া এলাকার বিভিন্ন অলিগলিতে জেএসএসএর বিভিন্ন নেতাকর্মীদের নাম ধরে খোঁজ করতে থাকে।

ইতোমধ্যে একাধিকবার শহর এলাকায় বসবাসকারী সম্ভু কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, জলিমং মারমা, উছোমং মারমা, উচসিং মারমা, অংশৈমং মারমা, মস্তু মারমা প্রমুখ জেএসএস নেতাকর্মীদের সন্ত্রাসীদের কর্তৃক খোঁজ করা হয়েছে বলে জানা যায়।

অভিযোগ রয়েছে, পার্বত্য চুক্তির পক্ষের জেএসএস কর্মী জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য সেনাবাহিনী স্থানীয় আওয়ামীলীগ এইসব সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় মদদ দিয়ে থাকে।

এই অবস্থায় সন্ত্রাসীদের নিয়ে জনগণের মধ্যে গভীর উদ্বেগ আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।

 

২৫ মার্চ ২০২২খ্রি.[13] কালাধন চাকমা প্রতিদিনের মতো নিজ গ্রামে ঝাড়ু ফুল ক্রয় করে দিঘীনালার বোয়ালখালী বাজারে বিত্রুয় করতে যান। ঝাড়ু ফুলগুলো বিক্রয়ের শেষে দুপুর আনুমানিক ১২ টার দিকে বাজার থেকে চাঁদের গাড়ি যোগে বাড়ি ফিরছিলেন। ফেরার পথে বটতলা নামক স্থানে পৌঁছলে সেনা মদদপুষ্ট সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসী অসীম চাকমা এবং রিকেন চাকমার নেতৃত্বে - জনের একটি দল তাদের গাড়িটি আটকায়। এরপর সন্ত্রাসীরা তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে বেধড়ক মারধর করে এবং ঝাড়ু ফুল বিত্রুয়ের নগট বিশ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে বলে জানা গেছে।

ভুক্তভোগী কালাধন চাকমা(২৭), পিতা- শান্তি কুমার চাকমা, গ্রাম- বাঘাইছড়ি চার কিলো। পেশায় তিনি একজন ঝাড়ু ফুল ব্যবসায়ী।

নাম প্রকাশের অনিশ্চুক স্থানীয় বটতলা বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, কালাধন চাকমাকে মারধর টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় অসীম রিকেন চাকমার নেতৃত্বে সেনামদদপুষ্ট সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীদের একাধিক সদস্য জড়িত রয়েছে বলে জানান তিনি।

পরিবারের পক্ষ থেকে কালাধন চাকমাকে কেন মারধর করা হয়েছে জানতে চাইলে সেনা মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী অসিম চাকমা বলেন কালাধন চাকমা ইউপিডিএফের গুপ্তচর।

ওয়াশিংটনে ইউএনপিও সাধারণ পরিষদের সম্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রতিনিধিদলের অংশগ্রহণ[14

 

২৮ মার্চ ২০২২, আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি প্রতিনিধিদল আনরিপ্রেজেন্টেড নেশন্স এন্ড পিপল্স অরগানাইজেশন (ইউএনপিও) এর সাধারণ পরিষদের সভায় অংশগ্রহণ করেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রীতিবিন্দু চাকমা এই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিনিধিদলের পক্ষে মিজ অগাস্টিনা চাকমা ইউএনপিও সাধারণ পরিষদের সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বাস্তবায়নের বর্তমান অবস্থা, পার্বত্য চট্টগ্রামের সামরিকায়ন, আন্দোলনকারীদেরকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিতকরণ, ভূমি বেদখল মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন।

গত ২৬ মার্চ ২৭ মার্চ ২০২২ ওয়াশিংটন ডিসিতে ইউএনপিও সাধারণ পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। ইউএনপিও ৪৫ সদস্যদের প্রায় ৭০ জন প্রতিনিধি এই সাধারণ সভায় অংশগ্রহণ করেন। এই সাধারণ পরিষদের সভার আয়োজক ওয়াশিংটনের ডিষ্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার সিনেটর পল স্ট্রস-এর নেতৃত্বে ইউএনপিও সদস্যডিষ্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়া

সাধারণ পরিষদের সভার শুরুতে ইউএনপিও মহাসচিব রাল্ফ বুনচে ইউএনপিও কর্মসূচির উপর একটি সাধারণ রূপরেখা উপস্থাপন করেন। এছাড়া তিনি গত বছর পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির আন্তর্জাতিক মুখপাত্র . রামেন্দু শেখর দেওয়ানের মৃত্যু এবং জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের জন্য আন্তর্জাতিক প্রচারাভিযানের ক্ষেত্রে তাঁর ত্যাগ, সংগ্রাম অবদান বিষয়ে বক্তব্য রাখেন।

রাল্ফ বুনচে বলেন, ‘আমরা এমন একজনকে হারিয়েছি, যিনি কেবল জুম্ম জনগণের একজন প্রতিনিধি ছিলেন না, সমগ্র প্রতিনিধিত্বহীন প্রান্তিক জাতি জাতিগোষ্ঠীর মুখপাত্র ছিলেন। তাঁর সংগ্রাম অবদান অব্যাহতভাবে অধিকারকামী মানুষের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

সাধারণ পরিষদের সভায় গোপন ভোটের মাধ্যমে ইউএনপিও একটি ১১ সদস্য বিশিষ্ট প্রেসিডেন্সী গঠন করা হয়। প্রেসিডেন্সীর সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন সোমালিল্যান্ডের এডনা এ্যাডান ইসমাইল। এছাড়া প্রেসিডেন্সীর সহসভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন কাটালোনিয়া থেকে এলিসেন্ডা পলুজি এবং সিন্ধ থেকে রুবিনা গ্রিনউড। প্রেসিডেন্সীর সদস্যের মধ্যে এশিয়া থেকে তিব্বতের রিগজিন জেনখাঙ এবং খেমার ক্রম-এর এলেক্স থাচ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রস্তাবনায়, অগাস্টিনা চাকমা ইউএনপিও সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে চাপ প্রয়োগের অনুরোধ জানান, যে চুক্তি আদিবাসী জুম্ম জাতিগোষ্ঠীর শান্তি সুরক্ষার জন্য ১৯৯৭ সালে সরকার জনসংহতি সমিতির মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়।

বিগত ২৪ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির আলোকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ তিন পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহ নিয়ে গঠিত বিশেষ শাসনব্যবস্থা চালু না হওয়ায় গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রতিনিধিদল, যা আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীকে তাদের স্বশাসনের অধিকার তাদের নিজেদের উন্নয়ন নির্ধারণের অধিকার অর্জন থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। বিশেষ শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য পার্বত্য চুক্তির ধারাসমূহ বাস্তবায়নের ব্যর্থতা পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি স্থায়ীত্বশীল উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে বাধা সৃষ্টি করছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিনিধিগণ পূনর্ব্যক্ত করে বলেন যে, একপ্রকার সামরিক শাসনঅপারেশন উত্তোরণএর বদৌলতে সেনাবাহিনী প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা, বিচারব্যবস্থা উন্নয়নসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। সেনাবাহিনী এমনকি সেটেলার, সন্ত্রাসী দলসমূহকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দান জোরপূর্বক ভূমি দখল এর মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টিসহ চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চলেছে।

এরূপ কর্মকান্ড পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক জনপ্রতিনিধিত্বশীল বিশেষ শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন শান্তি স্থাপনের ক্ষেত্রে একটি প্রতিবন্ধকতা গঠন করে। তাই পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক অনতিবিলম্বে সামরিক শাসনঅপারেশন উত্তোরণসহ সকল অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার করা উচিত।

পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিনিধিবৃন্দ বলেন, বর্তমান সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের পরিবর্তে পূর্বেকার স্বৈরাচারী শাসকদের ন্যায় সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের নীতি অনুসরণ করে চলেছে। এই কারণে সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে অান্দোলনরত অধিকারকর্মীদের সংগঠনসমূহকেসন্ত্রাসী’, ‘চাঁদাবাজসশস্ত্র দুর্বৃত্তহিসেবে পরিচিতি দিয়ে তাদেরকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিতকরণ জোরদার করেছে।

অগাস্টিনা চাকমা বাংলাদেশ সরকারকে জনসংহতি সমিতির সদস্য সমর্থকসহ অধিকারকর্মীদের নিপীড়ন বন্ধ করার এবং চুক্তির যথাযথ পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের মাধ্যমে পার্বত্য সমস্যার রাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ সমাধান নিশ্চিত করার জোরালো আহ্বান জানান।

প্রতিনিধিগণ আরও উল্লেখ করেন যে, ভূমি কমিশনের অকার্যকারিতারর ফলে এখনও পর্যন্ত পার্বত্যাঞ্চলের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি হতে পারেনি। পক্ষান্তরে বাঙালি সেটেলারদের কর্তৃক স্থানীয় জুম্মদের মালিকানাধীন ভূমি বেদখল চলছে। তাই ভূমি কমিশনকে যথাযথ কার্যকারিতার মাধ্যমে আদিবাসীদের সুরক্ষার ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায় হতে পারে বলে অগাষ্টিনা চাকমা উল্লেখ করেন।

উল্লেখ্য যে, ইউএনপিও হচ্ছে বিশ্বব্যাপী প্রতিনিধিত্বহীন প্রান্তিক জাতিগোষ্ঠীর দাবিনামা জোরদারকরণ এবং তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার সুরক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক আন্দোলন এবং সংগঠন।

ইউএনপিও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শান্তির ভূমি খ্যাত হেগ শহরে। বিশ্বজুড়ে ইউএনপিও ৪৫ সদস্য রয়েছে। ৪৫ সদস্যের মধ্যে একটি হল পার্বত্য চট্টগ্রাম। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন।

 



[1] By Hill Voice -মার্চ 2, 2022

[2] By Hill Voice -মার্চ 3, 2022

[3] By Hill Voice -মার্চ 7, 2022

 

[4] By Hill Voice -মার্চ 13, 2022

[5] By Hill Voice -মার্চ 13, 2022

[6] By Hill Voice -মার্চ 15, 2022

[7] By Hill Voice -মার্চ 15, 2022

[8] By Hill Voice -মার্চ 22, 2022

[9] By Hill Voice -মার্চ 21, 2022

[10] By Hill Voice -মার্চ 24, 2022

[11] তথ্যসূত্র: আইপিনিউজ

[12] By Hill Voice -মার্চ 25, 2022

[13] By Hill Voice -মার্চ 2, 2022

[14] By Hill Voice -মার্চ 28, 2022

 

মঙ্গলবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

গান: রিত ঘুরি

“রিত ঘুরি বারিজে এযের ফাগোন আভা ফিরিল
চিদে চচযা কি গরিব আর এ পিত্তিমিত বাজাদ’ পরিব।
কুজোলি মর তোমা ইধু-
দেন-বাঙ ন’ আহ্’লেই
জাত্তোরে ভাবি থাগ’।

কলা দেঘেই মলা দেঘেই ভেরেবার চেবাক কদক
কলা-মলা লোভত ন’ পরি জাত্তোরে ভাবি থাগ’ ।
ঝর এব, বোইয়ের এব’, এব’ আন্দার লামি
ত্যুঅ থেবং হাজার দুগত জাত্তোরে ভাবি।
কুজোলি মর তোমা ইধু-
দেন-বাঙ ন’ আহ্’লেই
জাত্তোরে ভাবি থাগ’।

ভেইয়োরেো লোয়ে বিজোল অভ মুজুঙে পত্থান চোগ’ পানিয়্যা বান
ত্যুঅ দ’ আমার আহ্’দা পরিব এর বাদে নেই দ’ কন উবয়।
ন’ অব’ মুক্তি পার্বত্য চুক্তিত, কি পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনত
বেক দুগরত্তুন সরান পেবং লারমা চেদনত।
কুজোলি মর তোমা ইধু-
দেন-বাঙ ন’ আহ্’লেই
জাত্তোরে ভাবি থাগ’।

সোমবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২২

নাদংছারা - কৃতি চাঙমা

 



তুই এক্কো নাদংছাড়া জাত

জিত-গিন কিচ্ছু নেই,

পদে ঘাদে ঘুরর রেতদিন

কি গরর কন’ থিক নেই।

পর’ সাংছারা পেদে লর

গম বজং ন’ বাজর,

নিজ’ কিয়ে পেরগাআনি

এব’ ধোয় ন’ ফেলর।

কুজ্যা কেরেঙাল নিত্তো সমার

            দিন এক্কো গমে ন’ যায়,

ঘর’ মানজোর বিচ্ছেচ নেই

            ইঙিরি কেনে আক্যই যায়!

ভেচ্চাদন তরে পদে ঘাদে

লাচ-চরম আহ্’রি লদন,

জিত দুরি আঘচ পুরি

            কবা ঝাগে হুরি যাদন।

মাধা আঘে বুদ্ধি নেই

            কিয়ে আঘে সং নেই।

বাপ এল ন’ মানচ;

            জু পেয়চ ন’ ধরচ,

দুক পেলে বুদ্ধ গরচ।

সুগত থেলে পুরি পেলর,

গম জিনিচ যা আঘে

বেক উভত গরর।

শিঘিবার অক্তত ন’ শিঘচ

            পুরোন কধা পুরি ফেল্লোচ।

ঘুরর ইক্কে এ মাধা উ মাধা

লরা খেলে দোর ধাবা।

ফাদা রোক সারিবার উ কধা

উচ দিলে শুনচ বেঙা কধা।

কেনে বাজিবে গসানি ছাড়া

কধে চাং তুই – নাদংছাড়?

 

 

শনিবার, ২২ জানুয়ারী, ২০২২

চাঙমা বর্ণমালা প্রবর্তক নোয়ারাম চাঙমা শতবর্ষ জন্মদিন পালন


“এয নুয়োপিড়ি, নুয়োরাম চাঙমা শদ’ বঝর জনমদিনত সমক খেই,
নিজ সাহিত্য-সংস্কৃতি কোচপানা বাদে অন্য কিঝু ন’চেই”


এই শ্লো-গান মুখরিত করে আজ ২২ জানুয়ারি ২০২২ ইং, ৮ মাঘ ১৪২৮ বাংলা, ২৫৬৫ বুদ্ধাব্দ, শনিবার সন্ধ্যা ৬ টায় চাঙমা সাহিত্য বাহ্ উদ্যোগে প্রথম বারের মতো অনলাইনে নোয়ারাম চাকমার জন্ম শতবষর্ উৎযাপন করা হয়।

উক্ত অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হয়ে উপস্থিত ছিলেন আনন্দ মোহন চাকমা, চাকমা লেখক সদস্য, জাতীয় শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক বোর্ড- বাংলাদেশ; উপদেষ্টা, চাঙমা সাহিত্য বাহ্; প্রতিষ্ঠাতা, চাঙমা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী; কণ্ঠ শিল্পী স্নেহ রঞ্জন চাঙমা, কবি ও সংগীত বিশারদ, আগরতলা; শ্লোক চাঙমা, সহ সভাপতি, চাঙমা সাহিত্য বাহ্ কেন্দ্রীয় কমিটি; প্রজ্ঞা আলো তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক, চাঙমা সাহিত্য বাহ্ 
কেন্দ্রীয় কমিটি প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে প্রজ্ঞা আলো তালুকদার চাঙম াবর্ণমালা প্রবর্তক নোয়ারাম চাকমার জীবনী পাঠ করেন।
কবিতা আবৃতি ও আলোচনা মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।


কেন আঞ্চলিক স্বায়ত্ব শাসন?

বাংলাদেশ খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির নিকট পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের শাসনতান্ত্রিক অধিকার দাবীর- আবেদন পত্র গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ভাবী ...