বুধবার, ৩ জুলাই, ২০২৪

জীবন আমাদের নয়

 

১. ভূমিকা

পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের জন্যে গঠিত একটি স্বাধীন সংস্থা। ১৯৯০-এর নভেম্বরে কমিশন ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং ত্রিপুরার শিবিরসমূহ পরিদর্শনের অনুমতি পায়। এই শিবিরসমূহে বর্তমানে পার্বত্য এলাকা থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়া লোকজন শরণার্থী হিসাবে বসবাস করছেন।

বিশ বছরের অধিককাল যাবৎ বেসরকারী সংগঠনসমূহ বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার পাহাড়ী জনগণের ওপর সংঘটিত হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, বলপূর্বক স্থানান্তরকরণ ও সাস্কৃতিক নিপীড়নের মতো উদ্বেগজনক ঘটনার বিবরণ প্রকাশ করেছে। ১৯৮৩ সাল থেকে অন্যান্যদের সঙ্গে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, এন্টি-স্লেভারী ইন্টারন্যাশন্যাল, দ্য অরগ্যানাইজিং কমিটি চিটাগাং হিল ট্র্যাক্ট ক্যাম্পেন (নেদারল্যান্ড), Gesellschaft fur Bedrohte Volker (Germany), ইন্টারন্যাশন্যাল ওয়ার্কগ্রুপ ফর ইনডিজেনাস এ্যাফেয়ার্স (ডেনমার্ক), পার্লামেন্টারী হিউম্যান রাইটস গ্রুপ এবং সারভাইভ্যাল ইন্টারন্যাশনাল (UK) কর্তৃক রিপোর্ট প্রকাশিত হলে এসব বিবরণ অনেক বৃদ্ধি পায়।

ইউনাইটেড নেশানস ওয়ার্কিং গ্রুপ ফর ইনডিজেনাস পপুলেশান্স এবং ইন্টারন্যাশন্যাল লেবার অর্গানাইজেশান (আইএলও)-এর মত আন্তর্জাতিক ফোরামসমূহ পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে নিয়মিত বিবৃতি পেয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, ১৯৮৫ সালে আইএলও কর্তৃক একটি অসন্তোষজনক সফরই আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশ সূচিত করে। অবশ্য আইএলও-র রিপোর্টসমূহ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়, তবে ১৯৮৮ সালে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশন্যালের একটি মিশন তার তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যাদি প্রকাশ করে। এই মিশনের এক্তিয়ার সীমাবদ্ধ ছিলঃ

"পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী পাহাড়ীদের জীবন ও দৈহিক নিরাপত্তার মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য গৃহীত ব্যবস্থাদি সম্পর্কে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তথ্য সন্ধান করা।... এ ধরনের একটি সংক্ষিপ্ত সফরে (পার্বত্য চট্টগ্রামে মাত্র দু'দিন) পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার পালনের বর্তমান পরিস্থিতির সব দিক সম্পর্কে তথ্যানুসন্ধান পরিচালনা করা অ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনালের পক্ষে সম্ভব কিংবা ইচ্ছা কোনটায় ছিল না"।

সুতারাং কমিশনের ১৯৯০-৯১ সফরের মত এতো খোলামেলা কোনো তথ্যানুসন্ধান অভিযান পার্বত্য চট্টগ্রামে ইতিপূর্বে আর পরিচালিত হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে লিখিত রিপোর্টসমূহের জন্যে তথ্যাদি সংগৃহীত হয়েছে হয় ঘটনার শিকার ব্যক্তি এবং দেশ থেকে পালিয়ে আসা লোকজনের মাধ্যমে, অথবা সাংবাদিক ও অনুসন্ধানী মিশনসমূহের মাধ্যমে, যারা পাহাড়ী জনগণের সাথে কথা বলার জন্য সীমিত সুযোগ পান। পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন গঠিত হয় তথ্যের এই দুই উৎসের মধ্যে যে ফাঁক রয়েছে তা ত্রিপুরা আশ্রয় শিবিরে ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে ও খোদ পার্বত্য চট্টগ্রামে তথ্যানুসন্ধানী তদন্ত পরিচালনা করে পূরণ করার জন্য।

একটি কমিশনের চিন্তাভাবনা দেখা দেয় ১৯৮৫-এর ডিসেম্বরে যখন বাংলাদেশের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী কোপেনহেগেনের ড্যানিশ পার্লামেন্টের এক সভায় ঘোষণা করেন যে বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি কমিশনকে সানন্দে স্বাগত জানাবেন। দশ মাস পরে আমষ্টারডামে পার্বত্য চট্টগ্রামের ওপর একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বেসরকারী সংস্থাসমূহ এবং আদিবাসী জনগণের পরামর্শের ভিত্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি সম্পর্কে তদন্তের জন্য একটি আন্তর্জাতিক কমিশন গঠনের প্রস্তাব গৃহীত হয়।

তিন বছর পরে কমিশনের সদস্যরা প্রস্তুত হন, সফরসূচী প্রস্তুত হয় এবং প্রাথমিক তথ্যাদি সংগৃহীত হয়। ১৯৮৯-এর শেষ নাগাদ পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক কমিশন গঠিত হয়। কমিশনের যুগ্ম সভাপতিদ্বয় হচ্ছেন কানাডার আইন বিষয়ক অধ্যাপক ডগলাস স্যান্ডারস্ (Douglas Sanders) এবং জার্মানীর উইলফ্রিড টেলকেম্পার (Wilfried Telkaemper) (ইউরোপিয় পার্লামেন্টের সহসভাপতি)। কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া থেকে আদিবাসী সম্প্রদায়ের কর্মি রোজ মুরে (Rose Murray), নরওয়ের সামী আইনজীবী লীফ ডানফিল্ড (Leif Dunfjeld) এবং গ্রীনল্যান্ড থেকে ড্যানিশ পার্লামেন্টের প্রতিনিধি হ্যান্স প্যাভিয়া রোজিং (Hans Pavia Rosing)।

কমিশন ভারত এবং বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে ১৯৯০ সালে ত্রিপুরা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করে। উভয় সরকারই ধারণাটিকে নীতিগতভাবে গ্রহণ করে। কিন্তু চূড়ান্ত অনুমোদন আসে বাংলাদেশের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট এরশাদের কাছ থেকে যিনি ব্যক্তিগতভাবে কমিশনের যুগ্ম চেয়ারম্যান হিসেবে উইলফ্রিড টেলকেম্পারকে ১৯৯০-এর অক্টোবরে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানান। নভেম্বর মাসে সফরের জন্যে কমিশন প্রস্তুত হয়।

কমিশনের সদস্যরা তথ্যানুসন্ধানে অভিজ্ঞ চার ব্যক্তিকে ভারত ও বাংলাদেশ সফরে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানান: এরা হলেন টেরেসা আপারিকো (Teresa Aparico) (ডেনমার্ক), ইয়ানাকা আরেন্স (Jenneke Arens) (নেদারল্যান্ড), অ্যান্ড্রু গ্রে (Andrew Grey) (যুক্তরাজ্য) এবং উলফগ্যাং মে (Wolfgang Mey) (জার্মানী)। দুর্ভাগ্যজনক যে, শেষ মুহূর্তে দু'জন কমিশনার লীফ ডানফিয়েল্ড এবং হ্যান্স পাভিয়া রোজিং কমিশনের সঙ্গে যেতে অসমর্থ হন। প্রথম জন শারিরীক অসুস্থতার জন্য, এবং দ্বিতীয় জন ডেনমার্কের নির্বাচনের কারণে।

কমিশন প্রথমে ভারতের ত্রিপুরা সফর করে সেখানকার ছ'টি শিবিরের উদ্বাস্তুদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি সম্পর্কে সরাসরি বক্তব্য লাভ করা। তারপর দলটি বাংলাদেশে যাওয়ার, পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় সফর করার, বাড়তি তথ্য সংগ্রহের এবং সেখানকার পরিস্থিতির আলোকে বক্তব্যসমূহ যাচাই করার সিদ্ধান্ত নেয়। ভারত এবং বাংলাদেশ সফরের সময় কমিশনের সদস্যগণ এবং তথ্যানুসন্ধানে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা পরিচিত ছিলেন 'কমিশন' কিংবা 'কমিশন সদস্য' হিসেবে।

১৫ নভেম্বর কমিশন দিল্লীতে মিলিত হয় এবং ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে শিবিরগুলো সফর করার অনুমতির ব্যবস্থা করে। অনুমতি তখনই দেওয়া হয়, যখন ভারত সরকার নিশ্চিত হন যে, বাংলাদেশ সরকার কমিশনকে পার্বত্য চট্টগ্রামে ঢুকতে দেবে। কমিশন ইঙ্গিত দেয় যে ত্রাণ শিবিরের পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা কমিশনের এক্তিয়ারের অংশ নয়।

কমিশন আগরতলা যায় ২১ নভেম্বর। ত্রিপুরা সরকার কমিশনকে স্বাগত জানায় এবং সরকারী অতিথিশালায় থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। কমিশন যানবাহন এবং নিরাপত্তা প্রদানের প্রশ্নে ত্রিপুরা সরকারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। ত্রিপুরায় কমিশন আগরতলা থেকে স্থানীয় চাকমা দোভাষীদের নিয়ে ভাড়া করা বেসরকারী যানবাহনে ভ্রমণ করে। নির্দিষ্ট কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়। শুরুতে কমিশন ত্রিপুরায় ১০ দিন থাকার অনুমতি চায়, কিন্তু তাকে রাজ্যে মাত্র পাঁচদিন থাকার অনুমতি দেয়া হয়। রাজ্য সরকারের দু'জন জনসংযোগ কর্মকর্তা কমিশনের সঙ্গী হন। জনসংযোগ কর্মকর্তারা শিবিরে সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং কমিশন সদস্যদের তৎপরতাকালীন সময়ে শিবিরে উপস্থিত থাকেন। সাক্ষাৎকার গ্রহণকালে তারা উপস্থিত থাকেননি। কমিশনের সদস্যদেরকে শিবিরে টেপরেকর্ডার নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি। ফলে সকল সাক্ষাৎকারের পুরো ভাষ্যই হাতে লিখে গ্রহণ করা হয়। কমিশনের পরিশ্রম বাড়লেও এতে করে সাক্ষাৎকারের গুণাগুণের কোন হেরফের হয়নি। কমিশন অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করে, এবং রাজ্য সরকারের সদস্য, শিবির কর্মকর্তা ও স্থানীয় বেসরকারী সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে সক্ষম হয়।

মূল কাজ পরিচালিত হয় ছ'টি উদ্বাস্তু শিবিরের পাঁচটিতে: টাকুমবাড়ি, করবুক, পঞ্চরামপাড়া, লেবাছড়ি এবং কাঠালছড়ি। উদ্বাস্তুদের নিজেদের নির্বাচিত ৮৫ জন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার কমিশন গ্রহণ করে। বিগত বছরে গৃহীত সাক্ষাৎকারের এলোমেলো নমুনাগুলোকে তুলনা করে কমিশন সন্তুষ্ট বোধ করে যে, যে উদ্বাস্তুদের সঙ্গে কথা বলা হয়, তারা মানবাধিকার লংঘনের শিকার হয়েছেন এমন ব্যক্তিদের একটি প্রতিনিধিত্বমূলক বৈচিত্র্য প্রদান করেন।

শিবিরে কমিশন কথা বলে কৃষক, মহিলা, ভিক্ষু ও শিক্ষকদের সঙ্গে; এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে তারা কথা বলে কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় সরকারের সাবেক সদস্যদের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারদাতা ৮৫ জনের মধ্যে ৫২ জন পুরুষ এবং ৩৩ জন মহিলা। সবার বয়স ১৭ থেকে ৭৫ বছর। সাক্ষাতকারদাতাদের অধিকাংশ সীমান্ত অতিক্রম করেন ১৯৮৬, ১৯৮৯ এবং ১৯৯০ সালে। কমিশনের কাছে সাক্ষাৎকার প্রদানকারীদের অনেকে শিবিরের অধিবাসী হিসেবে নিবন্ধিত ছিলেন না, আবার অনেকে বহুবার বাংলাদেশে গিয়ে আবার ভারতে ফিরে এসেছেন। কমিশন শিবির সফর করার সময়েই দু'জন উদ্বাস্তু পৌঁছান, যাতে দেখা যায় যে উদ্বাস্তুরা তখনও ত্রিপুরায় পালিয়ে আসছিলেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামের ১২টি জনগোষ্ঠির মধ্যে সাক্ষাৎকার প্রদানকারী উদ্বাস্তুদের ৬০ জন ছিলেন চাকমা, ৭ জন মারমা এবং ১৭ জন ত্রিপুরা। কমিশন একজন সাওঁতালের সাক্ষাৎকারও গ্রহণ করে। ৬৫ জন উদ্বাস্তু ছিলেন বৌদ্ধ, ১৭ জন হিন্দু এবং ৩ জন খ্রীষ্টান। এই সংখ্যাগুলো শিবিরে জাতি এবং ধর্মগত পার্থক্যের অনুপাতকে মোটামুটি প্রতিফলিত করে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) দি পিপলস্ ইউনাইটেড পার্টি- এবং তার সশস্ত্র শাখা শান্তিবাহিনী বাংলাদেশ এবং ভারত উভয় দেশেই নিষিদ্ধ। কমিশন ভারত ও বাংলাদেশ সফরকালে কোন সময়ই জ্ঞাতসারে কোন জেএসএস কিংবা শান্তিবাহিনী সদস্যের সাক্ষাৎ পায়নি, যদিও তাদের প্রতিনিধির সাথে দেখা হলে কমিশন খুশী হত।

কমিশন শিবিরে প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ এই উদ্দেশ্যে প্রস্তুত করে, যেন পার্বত্য চট্টগ্রামে সেগুলোকে যথাসম্ভব যাচাই করে নেয়া যায়। ২৯ নভেম্বর কমিশন বাংলাদেশে যাত্রা করে এবং বিদেশ মন্ত্রণালয় এবং পাহাড়ী এলাকায় প্রবেশের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিশেষ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি প্রার্থনা করে।

কমিশন ঢাকায় থাকাকালীন রাষ্ট্রপতি এরশাদ পদত্যাগ করেন। অনিশ্চিত পরিস্থিতি সত্ত্বেও মন্ত্রীরা এবং কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় অনুমোদন দেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশের জন্য কমিশনকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেন চট্টগ্রাম বিভাগের উর্ধতন সামরিক কর্মকর্তা চট্টগ্রাম জেনারেল অফিসার কমাড়িং (জিওসি) ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে কমিশনের সাথে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে।

গোটা সফরকালেই বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী কমিশনের সঙ্গে যথাসম্ভব সহযোগিতা করে। নিজস্ব স্বাধীনতা বজায় রাখার জন্য কমিশন নিজের ভাড়া করা যানবাহনে যাতায়াত করে। অবশ্য কয়েকবার কমিশন সেনাবাহিনী এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের তরফ থেকে (হেলিকপ্টার, জীপ এবং স্পীড বোটের মত) যানবাহন ব্যবহারের সদয় প্রস্তাব গ্রহণ করে।

কমিশনকে পাহাড়ী এলাকায় যে কোন অংশে প্রবেশাধিকার এবং যে কারো সঙ্গে কথা বলার অনুমতি দেয়া হয়। কমিশন পার্বত্য চট্টগ্রামে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার ব্যাপক অংশের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। বাঙালী জন সমাজেরও ব্যাপক প্রতিনিধিত্ব ছিল: বাঙালী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, বসতিস্থাপনকারী ও পার্বত্য এলাকায় নিয়োগ প্রাপ্ত সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা ছিলেন বাংলাদেশে কমিশনের সাক্ষাৎকার নেয়া ব্যক্তিদের ৫০ শতাংশ।

চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা, পাংখুয়া এবং বম জনগোষ্ঠিসহ অনেক পাহাড়ীর সঙ্গে কমিশনের দেখা হয়। কমিশনের সদস্যরা তিনটি জেলা পরিষদের দু'টোর সভাপতি এবং সদস্য, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিনিধি, সাংস্কৃতিক এবং উন্নয়ন সংস্থার সদস্য, বৌদ্ধ, হিন্দু, খ্রীষ্টান, ছাত্র এবং গ্রামবাসীর সঙ্গে সাক্ষাত করে। শান্তিবাহিনীর অভিযানের শিকার ব্যক্তি এবং আত্মসমপর্নকারী গেরিলাদের কাছ থেকেও কমিশন সাক্ষ্য শোনে।

সামরিক বাহিনীর পরিপ্রেক্ষিতের প্রতি কমিশন বিশেষ মনযোগ দেয়। কমিশন সামরিক ব্যক্তিবর্গের সাথে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকার নেয়, সব মিলিয়ে আলোচনা ৬০ ঘন্টার অধিক সময়ব্যাপী চলে। (গ্রামরক্ষীদল, আনসার এবং পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎকার এর মধ্যে পড়ে না)।

কমিশনের পাহাড়ী এলাকায় প্রবেশের পূর্বে অনেক পাহাড়ী এবং সরকারী কর্মকর্তা আশংকা প্রকাশ করেন যে কমিশনের অবস্থানকালীন সময়ে সামরিক বাহিনী এলাকার অবস্থাকে সহনীয় পর্যায়ে (sanitise) রাখবে। বাঙ্কার ভরে ফেলার, চেকপোষ্ট তুলে নেয়ার, উপজাতীয়দের চলাফেরার ওপর বিধি নিষেধ প্রত্যাহার করার, মন্দির মেরামত করে ফেলার এবং বন্দিদের মুক্তিদানের গুজব শোনা যাচ্ছিল। তবে, সফরকালে কমিশন পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষদের অবস্থার সাময়িক উন্নতিসাধনের কোন চিহ্ন দেখতে পায়নি।

কমিশন দেখতে পায় যে, জনসংহতি সমিতির নামে একটি দলিল ছড়িয়ে দেয়ার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু কিছু সরকারী ও সামরিক কর্মকর্তা কমিশনের নিরপেক্ষতা সম্পর্কে উদ্বগ্ন ছিলেন। এই দলিলে কমিশনের কাছে সত্য প্রকাশের জন্যে জনগণকে আহ্বান জানানো হয়। এ দলিলের ভিত্তিতে কিছু কিছু কর্মকর্তা উপসংহার টানেন যে কমিশন সামরিক কিংবা জেলা পরিষদের প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাৎ করতে আগ্রহী নয়। দলিলটি কমিশনের অজ্ঞাতে এবং অনুমতি ছাড়া বিতরণ করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের একজন সামরিক কর্মকর্তা কমিশনকে এক কপি দিলে তবেই কমিশন তাতে কি লেখা ছিল তা প্রথম দেখতে পায়। যখন এটা পরিষ্কার হয় যে কমিশন সামরিক এবং বেসামরিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার জন্য উন্মুখ, তখই সরকারী উদ্বেগের একটি কারণ দূর হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম সফরে কমিশন তিন সপ্তাহ ব্যয় করে। সফরের প্রথম পর্যায় (৮ থেকে ১০ ডিসেম্বর) ছিল রাঙ্গামাটি জেলায়। এখানে কমিশন রাঙ্গামাটি শহর, নানিয়াচর, লংগদু, বসন্ত পাঙ্খোয়াপাড়া, জুড়াছড়ি, কাপ্তাই এবং চিৎমরম পরিদর্শন করে। দ্বিতীয় পর্যায় (১১ থেকে ১৭ ডিসেম্বর) ছিল খাগড়াছড়ি জেলায়, যেখানে কমিশন মানিকছড়ি, গুইমারা, মাটিরাঙ্গা, খাগড়াছড়ি, দিঘীনালা, বাঘাইছড়ি, বাবুছড়া, বেতছড়ি, পানছড়ি, রামগড় এবং পথ পার্শ্বস্থ অনেক গুচ্ছগ্রাম পরিদর্শন করে। তৃতীয় পর্যায় ছিল দক্ষিণাঞ্চল বান্দরবান জেলায় (২০ থেকে ২৯ ডিসেম্বর)। এখানে কমিশন বান্দরবান, রুমা, লাপেইখ্যং, মুন্যুয়াম, বড়তলি, লামা এবং আলিকদম সফর করে। সফর শেষে কমিশন রাঙ্গামাটি ফিরে আসে এবং ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১লা জানুয়ারি পর্যন্ত অবস্থান করে। (বিস্তৃত সফরসূচীর জন্য পরিশিষ্ট-১ দেখুন)।

ফলতঃ ১৯৯০-এর ৮ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯১-এর ১লা জানুয়ারি কমিশন গোটা পাহাড়ীএলাকা সফর করে বেড়ায় (যদিও সফরের গোটা সময়ব্যাপী সব সদস্য থাকতে পারেননি), সেখানকার বাংলাদেশের সমাজের সকল স্তরের সঙ্গে কথা বলে এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত শুনতে পায়। উপরন্তু কমিশন ত্রিপুরায় বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদি যাচাই করে। প্রত্যেক ব্যাপারে শিবিরে প্রদত্ত তথ্যগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামে অবস্থার সাথে মিলিয়ে বস্তুনিষ্ঠভাবে যাচাই করে নেয়া সম্ভব হয়।

খাগড়াছড়ি জেলায় কমিশন বার বার বাংলাদেশ সরকারের প্রতি 'স্বতঃস্ফূর্ত' আনুগত্য প্রকাশ করে আয়োজিত পাহাড়ী লোকজন এবং বাঙালী বসতিস্থাপনকারী উভয়ের সমাবেশ দেখতে পায়। কমিশন সদস্যরা এই বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে এবং তাদের সাথে থাকা সামরিক ও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে নির্বিঘ্নে আলাপ করতে সক্ষম হয়। বিক্ষোভকারীদের প্রবল উৎসাহের ফলে কমিশনের কাজের অগ্রগতি এতটাই ক্ষুন্ন হয় যে, কমিশনের সদস্যদের জন্য কর্তৃপক্ষের আয়োজিত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে পৌঁছানো অসম্ভব হয়ে পড়ে এবং কমিশন তার সফরসূচীও অসমাপ্ত রাখতে বাধ্য হয়।

কিছু সংখ্যক সাংবাদিক পরবর্তীকালে মত প্রকাশ করেন যে তাঁরা কমিশন সদস্যদের সাক্ষাৎকার নিতে চেয়েছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে কমিশনের জন্যে কোনো আনুষ্ঠানিক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়নি।

অনেকবার পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী লোকজন কর্তৃপক্ষের তাৎক্ষণিক উপস্থিতি এড়িয়ে কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। সেসব আলোচনার পরে তথ্য প্রদানকারীদের মধ্যে বড় আশঙ্কা দেখা দেয় যে, কথা বলার জন্যে তারা প্রতিহিংসার সম্মুখীন হবে। প্রকৃতপক্ষে খাগড়াছড়ি এবং দিঘীনালায় সংঘটিত দু'টো ঘটনা কমিশনের প্রচণ্ড উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয় যে, হয়রানি শুরু হতে পারে। সফরের সময় কমিশনের চেয়ারম্যানদ্বয় সামরিক-বেসামরিক কর্তৃপক্ষের নিকট এই উদ্বেগ খোলাখুলি প্রকাশ করেন, এবং একবার কমিশনের কাছে তথ্য প্রদানকারী এক ব্যক্তিকে ভীতি প্রদর্শনের জন্যে এক সামরিক সদস্যকে তিরস্কার করা হয়েছে বলে জানানো হয়।

সফর শেষে অবশিষ্ট কমিশন সদস্যরা রাঙ্গামাটি এবং তারপরে স্থানীয় সরকারী কর্মকর্তা, উপজাতীয় কর্তৃপক্ষ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে আরো আলোচনা করতে খাগড়াছড়ি ব্রিগেডিয়ারের আমন্ত্রণে খাগড়াছড়ি ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। অবশ্য ৩১ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার পর, রাঙ্গামাটির বাইরের একটি চেকপোষ্টে কমিশনকে থামানো হয় এবং আগে রাঙ্গামাটি ক্যান্টনমেন্টে সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করতে বলা হয়। সাক্ষাতকালে ব্রিগেড মেজর কমিশনকে জানান যে, খাগড়াছড়ি ফিরে যেতে হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নতুন করে অনুমতির প্রয়োজন হবে। তিনি বলেন যে রাঙ্গামাটিতে প্রত্যাবর্তন করাটা ছিল একটি ভুল। ১ জানুয়ারি একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্তৃক কমিশনকে নোটিশ দিয়ে বলা হয় যে সেনাবাহিনীর আদেশক্রমে কমিশনকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পার্বত্য চট্টগ্রাম ছেড়ে যেতে হবে।

জার্মানী ফিরে গিয়ে উইলফ্রিড টেলকেম্পার নির্ভরযোগ্য খবর পান যে, কমিশনের সঙ্গে যারা কথাবার্তা বলেন তাদের কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়াকে চিঠি লিখে সমস্যাটি সম্পর্কে জানান, এবং কমিশনের সাথে কথা বলার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে কাউকে যাতে কষ্ট ভোগ করতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে তাঁর সাহায্য চান। (পরিশিষ্ট ২ দেখুন)।

ভারত এবং বাংলাদেশ দু'দেশেই কমিশন সদস্যদেরকে সতর্ক করে দেয়া হয় যে নিরাপত্তা রক্ষীদের সাহায্য প্রত্যাখ্যান করার অর্থ তাদের জীবনের প্রতি ব্যক্তিগত ঝুঁকি নেওয়া। কিন্তু কমিশন পীড়াপীড়ি করে যে পাহাড়ী লোকজনের সঙ্গে একান্ত কথোপকথনের সময় কোন ধরনের কর্মকর্তা উপস্থিত থাকতে পারবেন না, যাতে করে তারা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামের সমাজের সকল অংশ থেকে কমিশন মৌখিক বক্তব্য সংগ্রহ করে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রত্যক্ষ প্রমাণ দেখতে পায়। সেই সব তথ্যাদির পরিপূরক হিসেবে ভারত এবং বাংলাদেশে সফর করা প্রায় সকল স্থানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ দলিল পত্র পাওয়া যায়।

১৯৭১-এর স্বাধীনতার পূর্ব থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত বিস্তৃত ঘটনাবলী সম্পর্কে কমিশন তথ্যাদি পায়। পার্বত্য চট্টগ্রামে সমাজের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে কমিশনের আলাপ আলোচনায় অনেক বিষয় বার বার ঘুরে ফিরে আসে: যেমন মানবাধিকার, সামরিকীকরণ, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অধিকার, ভূমি প্রশ্ন এবং উন্নয়ন।

এই সব বিষয় প্রতিফলিত করার জন্য বর্তমান রিপোর্টটির কাঠামো বিন্যস্ত করা হয়েছে। যা এই রিপোর্টেও সুস্পষ্ট বোঝা যাবে তা হচ্ছে যে, কমিশন মনে করে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি পূর্বতন রিপোর্টগুলোতে যেমনটা দেখানো হয়েছে, তার চেয়ে অধিক খারাপ না হলেও, তেমনটাই খারাপ। মানবাধিকার লংঘনের প্রশ্নটি নিজ গুরুত্বেই আলাদা একটি অধ্যায় পাবে বলে আশা করা হলেও, দ্রুত স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে এর ব্যাপকতা ও তীব্রতা বিচারে এটা অসম্ভব। মানবাধিকার লঙ্ঘনই হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে ঘটমান কাঠামোগত সহিংসতার মৌলিক উপাদান। এই রিপোর্টের প্রত্যেকটি অধ্যায়ে এই নির্যাতন প্রক্রিয়ার এক একটি দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যা কেবল পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী জনগণ নয়, অনেক বাঙালী বসতিস্থাপনকারীদেরও সবসময় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে থাকে।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার

পার্বত্য চট্টগ্রাম ও ত্রিপুরার নিষিদ্ধ এলাকায় প্রবেশে অনুিমতি প্রদানের জন্যে কমিশন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ এবং ভারতর সরকার, পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা পরিষদসমূহ এবং ত্রিপুরা রাজ্য সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানায়।

ত্রিপুরার ক্ষেত্রে কমিশন উদ্বাস্তু শিবিরের কর্মকর্তাদেরকে এবং পার্বত্য জাতিসমূহের প্রতিনিধিদেরকে ধন্যবাদ জানাতে চাই সেইসব সুযোগ সুবিধা ব্যবস্থা করার জন্যে যার কারণে ব্যাপক এবং বিভিন্ন শ্রেণীর লোকজনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ সম্ভব হয়। আমাদের গভীরতম ধন্যবাদ উদ্বাস্তুদেরকে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের সব পাহাড়ী জনগোষ্ঠিগুলোকে, যাঁরা তাদের সমস্যা সত্ত্বেও, নিদারুণ দুর্দশার মধ্যে থেকেও অসীম আত্মমর্যাদা প্রদর্শন করেছিলেন। তাদের অভিভূত করা অভ্যর্থনা, সহৃদয়তা এবং উদারতা কমিশন সদস্যদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণ এবং অনুমতির কারণেই কমিশনের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশ করা সম্ভব হয়েছে। কমিশন বাংলাদেশে সরকারী কর্তৃপক্ষ, বিশেষত সামরিক কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাতে চায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের অনেক এলাকায় প্রবেশাধিকার প্রদানের জন্যে। চট্টগ্রামের জিওসি কর্ণেল জহির, মেজর হান্নান, ব্রিগেডিয়ার শরিফ আজিজ, ব্রিগেডিয়ার সালজার রহমান, ব্রিগেডিয়ার আউরাল আজিম মালিক, কর্ণেল আহসান, কর্ণেল হানিফ ইকবাল এবং কর্ণেল সাখাওয়াত হোসেনকে তাদের সময় এবং সাহায্যের জন্যে ধন্যবাদ। কমিশন ধন্যবাদ জানাতে চায় মেজর এবং লেফটেন্যান্ট কর্ণেলগণকে, অফিসার ও অন্যান্য লোকদেরকে, এবং অসংখ্য সেনা ক্যাম্প, রোড প্রোটেকশন পোষ্ট ও চেকপোষ্টের জওয়ান ও স্বেচ্ছাসেবকদেরকেও, যারা কমিশনের সফর যাতে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয় তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশেরই ইতিহাসের এক সংক্ষুদ্ধ সময়ে তাদের মূল্যবান সময় এবং প্রচেষ্টা যোগান দেন।

কমিশন বাংলাদেশের বেসামরিক কর্তৃপক্ষ, বিশেষতঃ পররাষ্ট্র এবং বিশেষ মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানাতে চায় তাদের অনুমতির জন্যে। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গৌতম দেওয়ান এবং সমীরণ দেওয়ান অমূল্য তথ্য, পরামর্শ এবং আতিথেয়তা প্রদান করেন, যেমনটা তিন ডেপুটি কমিশনার জীবন আমাদের নয় করেন। সর্বশেষ ধন্যবাদ স্থানীয় সরকারী কর্মকর্তা এবং গ্রামের সাধারণ মানুষকে, যারা অত্যন্ত উঞ্চতার সঙ্গে কমিশনকে অভ্যর্থনা জানায় এবং আতিথেয়তা প্রদান করে। মানবাধিকার বিষয়টি সরকারের দায়িত্ব এবং সে হিসেবে একে একটি আভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে দেখা যেতো। কমিশন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে সে দেশের মানুষের সমালোচনা করার জন্য নয়, বরং পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে নির্মোহভাবে পর্যবেক্ষণের জন্যেই। কমিশনের সফরের পরে বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে, একটি নতুন সরকার এসেছে এবং সময় পাল্টে গেছে। কমিশন আশা করে যে এই রিপোর্টটিকে বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের ওপর একটি রায় হিসেবে দেখা হবে না, কারণ এ সরকার এতই নতুন যে পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতির জন্যে তাকে দায়ী করা যায় না, বরং দেখা হবে আলোচনার অনুঘটক হিসেবে যাতে করে একটি সত্যিকার, দীর্ঘস্থায়ী শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধন পাওয়া যায়।

কমিশনের গভীর হৃদয়ানুভূতি থাকল পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের প্রতি যারা শুধুমাত্র অতীতে নিদারুণ দুঃখকষ্ট ভোগ করেননি, এখনো ভোগ করে চলেছেন। [চলবে]

 

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কেন আঞ্চলিক স্বায়ত্ব শাসন?

বাংলাদেশ খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির নিকট পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের শাসনতান্ত্রিক অধিকার দাবীর- আবেদন পত্র গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ভাবী ...