শনিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২২

পার্বত্য চট্টগ্রামের ঘটনা প্রবাহ জানুয়ারি ২০২২ খ্রি.

 

ছবি: সংগৃহীত

জানুয়ারী ২০২২, বান্দরবান[1]: বান্দরবান জেলার অন্তর্গত ১নং রাজভিলা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের থংজমা পাড়ায় সেনাবাহিনী, স্থানীয় আওয়ামীলীগ সেনামদদপুষ্ট অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) কর্তৃক জন মহিলাসহ ১৪ নিরীহ জুম্ম গ্রামবাসীদেরকে সেনাক্যাম্পে বেঁধে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নির্যাতনের শিকার ব্যাক্তিরা হলেন- . উচিংহ্লা মারমা ( ২৬), পিতা- ক্যমং মারমা , . পুশৈথোয়াই মারমা (২৬), পিতা-সানুঅং মারমা, . অংসুইউ মারমা (৪৫), পিতা- অংক্যজাই মারমা, . উসাইমং মারমা (২৭), পিতা- মংসুইপ্রু মারমা . রেদামং মারমা (৩৮), পিতা- মংসাহ্লা মারমা, . ক্যসুইচিং মারমা (৩৫), পিতা-মৃত- সুইথোয়াই প্রু, . সাইম্রানু মারমা (২৬), স্বামী- রেথোয়াই মারমা, . মাসাইনু মারমা (৩৫), স্বামী- বাদোমং মারমা, . মেসাইউ মারমা, স্বামী- থুইসাচিং মারমা ১০.সুইসাচিং মারমা, পিতা মৃতঃ অংসাপ্রু মারমা, ১১. লুসাইমং মারমা (২৫),পিতা- মেদু মারমা, ১২. চিংহ্লাপ্রু মারমা (৪৫), পিতা- অজ্ঞাত, ১৩. থুইশেপ্রু মারমা (৪০), পিতা- উথোয়াই মারমা, ১৪. মংশৈথুই মারমা (৩৭), পিতা- থুইহ্লা মারমা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ ডিসেম্বর ২০২১ (মঙ্গলবার রাত :৪৫ টার সময় বান্দরাবান সদর সেনা জোনের জোন কমান্ডার লেঃ কর্নেল মো. মইনুল হক (পিএসসি) অধীনে চেমী ডুলু পাড়া সেনা ক্যাম্পে দায়িত্বরত জনৈক ক্যাপ্টেনের নেতৃত্বে ৪০ জন সেনাসদস্য স্থানীয় আওয়ামীলীগ এবং বান্দরবানের বালাঘাটায় অবস্থানরত সেনা মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) কালাচোখ ওরফে অটল চাকমাসহ থংজমা পাড়ায় যৌথভাবে টহল অভিযানে যায়। এই সময় তারা পুরো গ্রাম ঘেরাও করে প্রতিটি বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ঘরের আসবাবপত্র ভেঙ্গে দেয়।

এরপর পাড়ার সকল পুরুষদেরকে হাত চোখ বেঁধে একটি ঘরে এনে সন্ত্রাসী কোথায় থাকে, সন্ত্রাসীদেরকে ভাত দিচ্ছো কেন, তোমাদের কাছে অবৈধ অস্ত্র গুলো বের করে দাও বলে ব্যাপকভাবে মারধর করে। আর মহিলাদেরকেও নানা ধরনের ভয়ভীতি হয়রানিমূলক জিজ্ঞাসাবাদ করে মানসিকভাবে নির্যাতনের পর সকালের দিকে ২৯ ডিসেম্বর (বুধবার) সবাইকে ছেড়ে দিয়ে ক্যাম্পে ফিরে যায়।

পরদিন ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা ৬টার সময় সেনাদলটি পুনরায় একই পাড়ায় এসে একই ব্যাক্তিদেরকে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে ব্যাপকভাবে মারধর জিজ্ঞাসাবাদ করে রাত ১২টার সময় ১৩ জন পুরুষ মহিলাকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু তালিকার ১৪ নম্বর মংশৈথুই মারমাকে আটক করে রাখে।

মংশৈথুই মারমাকে গতকাল শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুর ১২:৪৫ ঘটিকার সময় জনৈক ইউপি সদস্যের জিম্মায় বান্দরবান সদর সেনা জোন থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আগামীকাল রবিবার ( জানুয়ারি ২০২২) ইউপি সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে চেমী ডুলু পাড়া সেনা ক্যাম্পে হাজির হতে তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

জানুয়ারী ২০২২, রাঙ্গামাটি[2]: রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নের ভালুকিয়া গ্রামে সেনাবাহিনী, স্থানীয় আওয়ামীলীগ সেনা-মদদপুষ্ট মগপার্টি কর্তৃক নিরীহ তিন গ্রামবাসীর ঘরবাড়ি তল্লাসী জিনিষপত্র তছনছ এবং আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে গ্রামে এলোপাতাড়ি ফাঁকা গুলি বর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে যে, গতকাল শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) রাত ১১:০০ ঘটিকার সময় কাপ্তাই সেনা জোন-৫৬ ইস্ট বেঙ্গল(অটল-৫৬) রেজিমেন্টের অধীন কাপ্তাই উপজেলাধীন ২নং রাইখালী ইউনিয়নের নারানগিরি মুখ পাড়ায় নতুন স্থাপিত সেনা ক্যাম্পে দায়িত্বরত ওয়ারেন্ট অফিসার মো: কুদ্দুস বাঙ্গালহালিয়া সেনা ক্যাম্পে দায়িত্বরত সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মো: ফয়েজ-এর নেতৃত্বে ২৪ জনের একটি সেনাদল দুইটি গাড়িযোগে এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ সেনা মদদপুষ্ট মগপার্টির সেকেন্ড ইন কমান্ড মংক্যচিং মারমা, থার্ড ইন কমান্ড উথোয়াইচিং মারমা (সবুজ)সহ ১৫ জনের সন্ত্রাসী দল একটি জীপ গাড়ীতে (স্থানীয় ভাষায় চাঁদের গাড়ি) করে রাইখালী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ভালুকিয়া গ্রামে এক তল্লাসী অভিযান চালায়। তল্লাসীর পর এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যেকয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। এতে জনমনে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।

ভালুকিয়া গ্রামের মৃত রায় মোহন তঞ্চঙ্গ্যার তিন ছেলে সত্যবান তঞ্চঙ্গ্যা (৫৮), মিত্যাবান তঞ্চঙ্গ্যা (৫৫), দুদুরাম তঞ্চঙ্গ্যা (৪০) প্রমুখ গ্রামবাসীর বাড়িতে অনুপ্রবেশ করে সেনা-লীগ-মগপার্টি কর্তৃক বেপরোয়া তল্লাশি করা হয়। সেনা সদস্যরা উক্ত ব্যাক্তিদের বাড়ির দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে এবং তল্লাশির নামে বাড়ির আলমিরা সৌকেসে রাখা কাপড়-চোপড় এবং বাড়ির আসবাবপত্র তছনছ করে।

সেনা সদস্যরা সত্যবান তঞ্চঙ্গ্যার ছেলে তাপস তঞ্চঙ্গ্যা (কালাধন) খোঁজাখুঁজি করে। সময় তাপস তঞ্চঙ্গ্যা বাড়িতে ছিলেন না। তাকে না পেয়ে সেনা সদস্যরা তার পিতা-মাতার দুইটি ফোন সেট নিয়ে যায়। তাপস তঞ্চঙ্গ্যা একজন ভাড়াটে মেটর সাইকেল চালক।

তল্লাসীর নামে দীর্ঘ দুই ঘন্টা তান্ডবের পরে রাত .০০টায় সেনা, আওয়ামীলীগ মগ পার্টির সদস্যরা উক্ত স্থান পরিত্যাগ করে চলে যায়।

জানুয়ারি ২০২২, বিশেষ প্রতিবেদক[3]: বিগত ২০২১ সালের বিভিন্ন সময়ে সেনা-আওয়ামীলীগ মদদপুষ্ট মগপার্টি সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অপরহণ করে কিংবা ফোনে মৃত্যুর হুমকি দিয়ে রাজস্থলী কাপ্তাই এলাকার কেবল ১৪ জন ব্যক্তি থেকে মোট .১৫ কোটি টাকা চাঁদা মুক্তিপণ হিসেবে আদায় করেছে। কাপ্তাই জোনে নিয়োজিত ২৩ বেঙ্গল রেজিমেন্টের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে মগপার্টি সন্ত্রাসীরা এসব চাঁদাবাজি মুক্তিপণ আদায় করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

১৪ জনরে কাছ থেকে .১৫ কোটি টাকা আদায় ছাড়াও মগপার্টি সন্ত্রাসীরা নিরীহ গ্রামবাসী, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান-মেম্বার প্রার্থী অন্যান্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক লক্ষ লক্ষ টাকার চাঁদা মুক্তিপণ আদায় করেছে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায় যে, সেনা-আওয়ামীলীগ মদদপুষ্ট মগপার্টির সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ২০২১ সালের বিভিন্ন সময়ে () গাইন্দ্যা ইউনিয়নের চেয়ারম্যন উথান মারমা থেকে ১০ লক্ষ টাকা, () রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য নিউচিং মারমা থেকে লক্ষ টাকা, () পোয়াইতু মৌজার হেডম্যান উথিনসি মারমা থেকে লক্ষ টাকা, () প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সরকারী কর্মচারি চুক্যউ মারমা থেকে লক্ষ টাকা, () গাইন্দা ইউনিয়নের মহিলা মেম্বার ওয়াইম্রাচিং মারমা থেকে ৫০ হাজার টাকা, () সরকারি কর্মচারি রনি খিয়াং থেকে ৫০ হাজার টাকা, () গাইন্দ্যা ইউনিয়নের সেক্রেটারী চাথোয়াই মারমা থেকে ৫০ হাজার টাকা, () চিংথোয়াইউ মারমা, ম্রওয়া পাড়া থেকে লক্ষ টাকা, () রাজস্থলী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অংনুচিং মারমা থেকে লক্ষ টাকা, (১০) ভালুক্যা তিনছড়ি পাড়া জনৈক ব্যক্তি থেকে ৫৪ লক্ষ টাকা, (১১) বাঙালহালিয়ার কাঙারাছড়ির বাসিন্দা পুচিমং মারমা থেকে ২৫ লক্ষ টাকা, (১২) রাইখালী ইউনিয়নের নারানগিরি পাড়ার চনুমং মারমা থেকে . লক্ষ টাকা, (১৩) একই ইউনিয়নের গবছড়ার মিরাঙ্গ তঞ্চঙ্গ্যা থেকে ৬০ হাজার টাকা এবং (১৪) মিথোয়াই রাখাইন থেকে লক্ষ টাকা চাঁদা বা মুক্তিপণ আদায় করেছে।

সূত্রে জানা যায় যে, গাইন্দ্যা ইউনিয়নের চেয়ারম্যন জনসংহতি সমিতির রাজস্থলী থানা কমিটির সদস্য উথান মারমাকে মগপার্টি সন্ত্রাসীরা গাইন্দ্যা ইউনিয়নের পোয়াইতু পাড়াস্থ তাদের আস্তানায় ফোনে ডেকে নিয়ে বন্দী করে রাখে এবং মুক্তিপণ হিসেবে তার থেকে ২০ লক্ষ টাকা দাবি করে। পরে ১০ লক্ষ টাকার বোঝাপাড়া হলে উথান মারমাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

অন্যদিকে মগপার্টির সন্ত্রাসীরা হুমকি দিয়ে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য নিউচিং মারমা থেকে লক্ষ টাকা আদায় করে। নিউচিং মারমা হচ্ছেন রাজস্থলী আওয়ামীলীগের মধ্যে রাজস্থলীর সভাপতি রাজস্থলী উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান উবাচ মারমার প্রতিপক্ষ। তাই উবাচ মারমার মদদে নিউচিং মারমা থেকে মগপার্টির সন্ত্রাসীরা উক্ত চাঁদা আদায় করে নেয়।

পোয়াইতু মৌজার হেডম্যান সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান উথিনসি মারমাকেও ফোনে পোয়াইতু পাড়ায় ডেকে নিয়ে মগপার্টির সন্ত্রাসীরা বন্দী করে রাখে। তাকে এমনভাবে বেঁধে রাখা হয় যেখানে বসাও নয়, আবার দাঁড়ানোও নয় সেভাবে তাকে রাখা হয়। মগপার্টির সন্ত্রাসীরা তাকে মৃত্যুর হুমকি দেয়। পরে লক্ষ টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে তিনি মুক্তিলাভ করেন।

মৃত্যুর হুমকি দিয়ে মগপার্টির সন্ত্রাসীরা পোয়াইতু পাড়ার অধিবাসী প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সরকারি কর্মচারি চুক্যউ মারমা থেকে লক্ষ টাকা, গাইন্দা ইউনিয়নের মহিলা মেম্বার পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির সদস্য ওয়াইম্রাচিং মারমা থেকে ৫০ হাজার টাকা, উপজেলা একাউন্ট অফিসের সরকারি কর্মচারি রনি খিয়াং থেকে ৫০ হাজার টাকা, গাইন্দ্যা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব চাথোয়াই মারমা থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করে নেয়।

জনসংহতি সমিতির সাথে যোগাযোগ রয়েছে এই অভিযোগ তুলে এবং মৃত্যুর হুমকি দিয়ে মগপার্টি সন্ত্রাসীরা গাইন্দ্যা ইউনিয়নের ম্রওয়া পাড়া চিংথোয়াইউ মারমা থেকে লক্ষ টাকা এবং রাজস্থলী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অংনুচিং মারমা থেকে লক্ষ টাকা জোর করে আদায় করে নেয়।

কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নের ভালুক্যা তিনছড়ি পাড়া জনৈক গ্রামবাসী থেকে ৫৪ লক্ষ টাকা আদায় করে নেয় মগপার্টির সদস্যরা। উক্ত ব্যক্তি গ্রামের একজন ধনী ব্যক্তি সেগুন বাগানের মালিক। সেগুন বাগান বিক্রি করে তিনি সেসময় কোটি টাকা পেয়েছিলেন। সেই খবর পেয়ে মগপার্টি সন্ত্রাসীরা রাতে তার বাড়ি ঘেরাও করে। কিন্তু তিনি কোনক্রমে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। তাকে না পেয়ে সন্ত্রাসীরা তার ছেলেকে ধরে নিয়ে যায়। পরে ৫৪ লক্ষ টাকার বিনিময়ে সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে তার ছেলেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসতে হয়েছে। অন্যদিকে বাঙালহালিয়া ইউনিয়নের কাঙারাছড়ি গ্রামবাসী পুচিমং মারমা থেকে মৃত্যুর হুমকি দিয়ে সন্ত্রাসীরা ২৫ লক্ষ টাকা করে নেয় বলে জানা যায়।

রাইখালী ইউনিয়নের নারানগিরি বড় পাড়াবাসী চনুমং মারমাকে অপরহরণের পর পাড়ার কার্বারী আত্মীয়স্বজন অপহরণকারীদের সাথে দেখা করতে গেলে তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা বিনিময়ে মগপার্টির কবল থেকে তাকে ছাড়িয়ে আনা হয়। মিরাঙ্গ তঞ্চঙ্গ্যাকেও অপরহণের পর কার্বারী আত্মীয়স্বজন দেখা করতে গেলে ষাট হাজার টাকার মুক্তিপণের বিনিময়ে ছাড়িয়ে আনা হয়। বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের কাঙারাছড়ি গ্রামের মিথোয়াই রাখাইন নামে এক বাঁশ ব্যবসায়ীকে অপহরণের দুই দিন পর লক্ষ টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও সেনাবাহিনী ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের মদদে মগপার্টি সন্ত্রাসীরা লক্ষ লক্ষ টাকার চাঁদাবাজি করে।বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী করার জন্য মগপার্টির সন্ত্রাসীরা চেয়ারম্যান প্রার্থী থেকে লক্ষ টাকা করে এবং মেম্বার প্রার্থীদের কাছ থেকে ৫০ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করে এবং অন্যান্য চেয়ারম্যান-মেম্বার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী ব্যক্তিদেরকে হুমকি দিয়ে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে যেতে বাধ্য করে।

ফলে রাজস্থলী উপজেলাধীন গাইন্দ্যা ঘিলাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। মগপার্টির হুমকিতে এই দুই ইউনিয়নে কেউ চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে সাহস করেনি। গাইন্দ্যা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডেও মগপার্টির চাঁদাবাজির কারণে কেউ সদস্য পদে নির্বাচন করেনি। ফলে প্রার্থী না থাকায় ২নং ওয়ার্ডের কোন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। , ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনেও কোন প্রার্থী দাঁড়ায়নি। মগপার্টির হুমকির কারণে বাঙালহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বেশির ভাগে ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

অন্যদিকে পোয়াইতু পাড়ায় মগপার্টি সদস্যদের ঘর নির্মানের জন্য বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রতিটি পরিবারকে বিনা পারিশ্রমিকের কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছে। কোন পরিবার থেকে লোক দিতে না পারলে সেই পরিবারকে দৈনিক ৫০০ টাকা করে চাঁদা দিতে বাধ্য করা হয়েছিল।

 

জানুয়ারি ২০২২, রাঙ্গামাটি[4]: রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার জীবতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পাড়ায় সেনা-মদদপুষ্ট ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসী কর্তৃক অপহরণের উদ্দেশ্যে দুই গ্রামবাসীর বাড়ি ঘেরাও করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে যে, গত শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর ২০২১) দুপুর ১২.৩০ ঘটিকার সময়ে জীবতলী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পাড়ায় অবস্থানকারী ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসীরা জীবতলী ইউনিয়নের বাঘছড়িতে জীবতলী ইউনিয়ন কমিটির জনসংহতি সমিতির ছাত্র রাজনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক সোনারাম চাকমা (৫১), পিতা মৃত কুনেন্দু চাকমা এবং একই ইউনিয়নের ধুল্যাছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির সভাপতি হীরা লাল চাকমা (৪১) এর বাড়ি ঘেরাও করে।

প্রবেশ চাকমার নেতৃত্বে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)-এর জনের একটি সন্ত্রাসী দল উক্ত ঘটনা সংঘটিত করে বলে জানা যায়।

সময় সোনারাম চাকমা হীরা লাল চাকমা বাড়িতে ছিলেন না। তাদেরকে বাড়িতে না পেয়ে বাড়ির লোকজনকে নানা ধরণের হুমকি দিয়ে গালিগালাস করে সন্ত্রাসীরা চেয়ারম্যান পাড়াস্থ তাদের আস্তানায় চলে গেছে বলে জানা যায়।

জানুয়ারি ২০২২, রাঙ্গামাটি[5]: রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলার ৩নং বাঙালহালিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের চৌধুরী পাড়ার ভাড়া বাসা থেকে স্থানীয় আওয়ামীলীগ সেনা মদদপুষ্ট মগ পার্টি কর্তৃক এক নিরীহ গ্রামবাসীকে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অপহরণের শিকার ব্যাক্তি হলেন সিংনুমং মারমা (২৫), পীং- উথোয়াইচিং মারমা। তার বাড়ি রাজস্থলী উপজেলার ২নং গাইন্দ্যা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের হেডম্যান পাড়ায়। তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে ৩নং বাঙ্গালহালীয়া ইউনিয়নের নং ওয়ার্ডের চৌধুরী পাড়ায় ভাড়া বাড়িতে থাকতেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল রবিবার ( জানুয়ারি) বিকাল .৩০ টার সময় স্থানীয় আওয়ামীলীগ সেনাবাহিনী মদদপুষ্ট অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী মগপার্টির সেকেন্ড ইন কমান্ড মংক্যচিং মারমা, থার্ড ইন কমান্ড উথোয়াইচিং মারমা ওরফে সবুজ সদস্য অংসিনু মারমাসহ একটি সন্ত্রাসী দল ৬নং ওয়ার্ডের চৌধূরী পাড়ায় সিংনুমং মারমার ভাড়া ঘেরাও করে। সেখান থেকে তার সাথে কথা আছে বলে ডেকে নিয়ে যায় মগ পার্টির সদস্য (বাঙ্গালহালীয়া বাজারে চাঁদা আদায়কারী) অংসিনু মারমা।

পরে বাড়িতে ফিরে না আসায় আজ জানুয়ারি ২০২১ (সোমবার) সকালে অপহৃতের পরিবার আত্মীয়স্বজন মগপার্টির সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে ২০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। অন্যথায় মেরে ফেলার হুমকি দেয় আর অপহরণের ঘটনা কাউকে প্রকাশ করা হলে মুক্তিপণ দ্বিগুণ দিতে হবে বলে জানায়।

আরো জানা যায় যে, আজ দুপুর ১২টার সময় অপহৃত ব্যক্তিকে ১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে অপহৃত পিতা উথোয়াইচিং মারমা শ্বশুরসহ গাইন্দ্যা পাড়া বৌদ্ধ বিহার ফান্ড থেকে বিহার পরিচালনা কমিটি মাধ্যমে ১০ লক্ষ টাকা ধার নিয়ে মুক্তিপণের টাকা প্রদান করে।

 

জানুয়ারি ২০২২, বান্দরবান[6]: সেনা ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ মদদপুষ্ট ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্তৃক বান্দরবান সদর উপজেলার টংকাবতী ইউনিয়নের পুনর্বাসন চাকমা পাড়ার কার্বারী এবং কার্বারীর একজন সঙ্গীকে বান্দরবান শহরের বালাঘাটাস্থ সন্ত্রাসীদের আস্তানায় ডেকে নিয়ে দিন ধরে আটক রেখে মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায় করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ঘটনার শিকার কার্বারীর নাম পাড়ার বিজয় হংস চাকমা। তবে তার সঙ্গীর নাম পাওয়া যায়নি। গত ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ সন্ত্রাসীরা তাদের দুইজনকে ফোনে তাদের আস্তানায় ডেকে নিয়ে জিম্মি করে রাখে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যে, ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখ টংকাবতী ইউনিয়নের পুনর্বাসন চাকমা পাড়ার কার্বারী বিজয় হংস চাকমা এবং কার্বারীর সঙ্গীকে ফোনের মাধ্যমে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসীরা বালাঘাটাস্থ তাদের অফিসে ডেকে নিয়ে পাচঁদিন ধরে আটক করে রাখে।

সন্ত্রাসীরা তাঁদের মুক্তি পণ হিসাবে তিন লক্ষ টাকা দাবি করে। পরে গত জানুয়ারি ২০২২ দুই লক্ষ পঁচিশ হাজার টাকা বিনিময়ে সন্ত্রাসীরা বিজয় হংস চাকমা তাঁর সহযোগীকে মুক্তি প্রদান করে। আটককৃত কার্বারী বিজয় হংস চাকমা পার্বত্য চুক্তি সমর্থক হওয়ায় তাঁদের আটক মুক্তি পণ আদায় করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিজয় হংস চাকমা তার সহযোগীকে আটক মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) গোষ্ঠীর বান্দরবান জেলা পরিচালক সুলেন চাকমা, প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত অনুপম চাকমা (অনু) এবং ওয়াইমং মারমা কর্তৃক সংঘটিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

কার্বারী তাঁর সহযোগীকে আটক মুক্তিপণ আদায়ের কাজে বান্দরবান ব্রিগেড অফিসের জিটুআই মেজর মো: এরশাদ উল্লাহ সহায়তা করেন বলে জানা গেছে। মুক্তিপণের টাকা জিটুআই মেজর মো: এরশাদ উল্লাহ, সুলেন চাকমা, অনুপম চাকমা ওয়াইমং মারমার মধ্যে ভাগবাটোয়ারা হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

১০ জানুয়ারী ২০২২, রাঙ্গামাটি[7]: রাঙ্গামাটির রাজস্থলীতে সেনাবাহিনী কর্তৃক জনসংহতি সমিতির সদস্যের বাড়িতে তল্লাশি এক ৭২ বছর বয়সি বৃদ্ধা মহিলাকে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তল্লাশির শিকার গ্রামবাসী হলেন- উসাথোয়াই মারমা , পীং- মৃত অংসাহ্লা মারমা, গ্রাম- ডাক বাংলা পাড়া, নং ওয়ার্ড, নং বাঙ্গালহালীয়া ইউনিয়ন। জানা যায়, উসাথোয়াই মারমা জনসংহতি সমিতির নং বাঙ্গালহালিয় ইউনিয়ন শাখার সাধারণ সম্পাদক রাজস্থলী উপজেলা শাখার সদস্য।

হয়রানির শিকার বৃদ্ধা মহিলা- হ্লাবাইরুই মারমা (৭২),স্বামী- মৃত হ্লাথোয়াইপ্রু মারমা, গ্রাম- ঐ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল জানুয়ারী (রবিবার) রাত টার সময় কাপ্তাই সেনা জোনের ৫৬ বেঙ্গল রেজিমেন্টের জোন কমাণ্ডার লেঃ কর্নেল মোঃ আনোয়ার জাহিদ (পি এস সি) অধীনে বাঙ্গালহালীয়া সেনা ক্যাম্পে দায়িত্বরত সুবেদার মোঃ হাফিজ ফয়সালের নেতৃত্বে ১৫ জনের একটি সেনাদল ৩নং বাঙ্গালহালি ইউনিয়নের নং ওয়ার্ডের ডাক বাংলা পাড়ায় উসাথোয়াই মারমার বাড়িতে ব্যাপক তল্লাশি চালায়।

উসাথোয়াই মারমা তখন বাড়িতে ছিলেন না, সেনাবাহিনী কর্তৃক মিথ্যা মামলা জড়িত করায় তিনি পলাতক রয়েছেন বলে জানা যায়। পরে তার স্ত্রীকে স্বামী সম্পর্কে ধমক দিয়ে বিভিন্ন রকমে হয়রানিমূলক জিজ্ঞাসাবাদ হুমকি প্রদান করা হয়।

এরপর সেনাসদস্যরা তার স্ত্রী ৭২ বছর বয়সি এক বৃদ্ধা মহিলাকে মোবাইল দিয়ে ছবি তুলে নিয়ে যায়।

১১ জানুয়ারী ২০২২[8] (মঙ্গলবার ) বিকাল .২০টার দিকে সেনামদদপুষ্ট সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসী কমান্ডার এলিন চাকমা বিনয় চাকমার নেতৃত্বে জনের একটি অস্ত্রধারী দল ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার পদপ্রার্থীকে বাঘাইছড়ি উপজেলা সদরের সোনালী ব্যাংকের নিজ থেকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায়।

পরে সন্ত্রাসীরা মেম্বার পদপ্রার্থী বিকাশ চাকমাকে মারধরের পর ছেড়ে দিলেও নির্বাচনের যাবতীয় কাগজপত্রাদি ফেরত দেয়নি।

সেনাবাহিনী তাদের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের এমন অন্যায় কর্মকাণ্ডের ফলে গ্রামবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান কয়েকজন এলাকাবাসী।

১৭ জানুয়ারি ২০২২, রাঙ্গামাটি[9]: রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সার্বোয়াতলীর পেরাছড়া গ্রামে সেনা-বিজিবির সহযোগিতায় বহিরাগত সেটেলার কর্তৃক এক আদিবাসীকে তার নিজের জমিতে চাষ করতে বাধা প্রদানের অভিযোগ পাওয়া গেছে

জমির প্রকৃত মালিক কলম্বাস চাকমা (৩৫), পিতা- সত্যবান চাকমা (৫৫), ৮নং নব পেরাছড়া, সার্বোয়াতুলী ইউনিয়ন, বাঘাইছড়ি উপজেলা। কলম্বাস চাকমা দীর্ঘ দুইযুগের অধিক অবস্থান করে জমিতে চাষাবাদ করে আসছেন।

অপহরণ মারধরের শিকার মেম্বার পদপ্রার্থীর নাম- বিকাশ চাকমা, পিতা-প্রেমা নন্দ চাকমা, গ্রাম- পশ্চিম গবছড়ি, উপজেলা- বাঘাইছড়ি।

 

গতকাল ১৬ জানুয়ারি ২০২২ হঠাৎ করে বহিরাগত সেটলার মো: বেলাল হোসেন (৩০), পিতা- মো: কাশেম, গ্রাম- আমতলী, আমতলী ইউনিয়ন বাঘাইছড়ি উক্ত জমিটি তার বলে দাবি করে জোরজবরদস্তিমূলকভাবে কলম্বাস চাকমাকে চাষাবাদ করতে বাধা প্রদান করে।

উল্লেখ্য, রাজনগর ৩৭নং বিজিপি ব্যাটালিয়ন অধিন্যস্ত চুড়াখালী বিজিপি ক্যাম্প কমান্ডার সুবেদার (নতুন পোস্টিং) আনন্দ মোহন গতকাল জমির মালিক কলম্বাস চাকমাকে হুমকি দেন যে, “জমিটি কেড়ে নিলে তুমি আমার চাকরির কি করতে পারবে?”

তাছাড়া গত বছরের শেষের দিকে শিজক আর্মি ক্যাম্প কমান্ডার ওয়ারেন্ট অফিসার মো: মুনির হোসেন দুরছড়ি আর্মি ক্যাম্প কমান্ডার সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার আলতাফ হোসেন এই জমিটি দখল করার জন্য কলম্বাস চাকমাকে বিভিন্ন হুমকি বাধা প্রদান করে আসছে।

জানা যায়, এই জমিটি সেনা-বিজিবি সহ সেটেলাররা দখল করার জন্য গত বছর থেকে প্রকাশ্যে নানা ষড়যন্ত্র তৎপরতা চালিয়ে আসছে।

ফলে প্রকৃত জমির মালিক কলম্বাস চাকমা দুইযুগ ধরে চাষাবাদ করে আসা জমি হারানোর ভয়ে দিনানিপাত করছেন। এর ফলে এই এলাকায় চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।

১৯ জানুয়ারি ২০২২, বান্দরবান[10]: বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নে সক্রিয় রোহিঙ্গা মুসলিম জঙ্গী সশস্ত্র গ্রুপ, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মী (আরসা) রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) কর্তৃক ঘুমঘুম ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় জুম্ম অধিবাসীদের উপর নানা ধরনের হয়রানি নির্যাতন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি) নিরাপত্তা বাহিনীর আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করে রোহিঙ্গা মুসলিম জঙ্গী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো এসব অপতৎপরতা চালাচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যে, ঘুমধুম ইউনিয়ন রেজু মৌজার অধীন জামিরতলী খালে অবস্থানকারী রোহিঙ্গা আরসা/আরএসও সশস্ত্র গোষ্ঠীর নানা নিপীড়ন-নির্যাতনের কারণে স্থানীয় জুম্ম নারী পুরুষরা চলাফেরা করতে ভয় পাচ্ছে।

২০২১ সালে ১৫ নভেম্বর সকালে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামিরতলী পাড়ার দুই জুম্ম নারী হিল ভয়েসকে বলেন যে, সেদিন সকালে বরইতলী বাজারে আসার সময় জামিরতলী খালে পৌঁছার মাত্রই কোন অজুহাত ছাড়াই আরসা/আরএসও সশস্ত্র জঙ্গীরা তাদের সমস্ত জিনিসপত্র তল্লাশি করেছিল।

এর পূর্ব থেকে দীর্ঘদিন ধরে আরসা/আরএসও সদস্যরা এভাবে বাজারে আসা-যাওয়া করার সময় জুম্ম নারী-পুরুষদেরকে সমস্ত জিনিসপত্র তল্লাশি করে আসছে বলে তারা অভিযোগ করে।

এভাবে তল্লাসীর নামে হয়রানির ফলে স্থানীয় জুম্ম অধিবাসীদের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। ভয়ে তারা কোন কিছু বলতেও সাহস করছে না।

অন্যদিকে স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা নিরাপত্তা বাহিনী দেখেও না দেখার ভান করে রয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন।

জামিরতলী খালে নুরু বাড়ি, কবিরা বাড়ি থোয়াইহ্লাচিং তঞ্চঙ্গ্যার খালি বাড়িতে আরসা/আরএসও জঙ্গীরা অবস্থান করেছিল।

উল্লেখ্য যে, ২০১৬ সালের ২৪ নভেম্বর নাইক্ষ্যংছড়ির দোছড়ি ইউনিয়নের কামিছড়া মাসিবা পাড়া থেকে মংহ্লা চিং মারমা (৪৫), থুইহ্লা মং মারমা (৩২) ক্যাচিং থোয়াই মারমা (২২) নামে তিনজন মারমা গ্রামবাসীকে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী কর্তৃক অপহরণের পর হত্যা করা হয় বলে জানা যায়।

জানা যায় যে, ঘটনার শিকার তিনজন সেদিন পাহাড়ি ছড়ায় মাছ ধরতে গেলে আর ফিরে আসেনি। উক্ত এলাকাটি রোহিঙ্গা সশস্ত্র গ্রুপদের অবস্থান রয়েছে। উক্ত অপহৃতদের উদ্ধারে বিজিবি পুলিশ বাহিনীসহ স্থানীয় প্রশাসন জনপ্রতিনিধিদের নিকট দাবি জানিয়ে তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ রয়েছে।

এভাবে রোহিঙ্গা জঙ্গী সশস্ত্র সংগঠনগুলো এযাবৎ /১০ স্থানীয় জুমচাষী আদিবাসী জুম্ম গ্রামবাসীদের অপহরণ করে হত্যা করেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।

বুধবার ১৯ জানুয়ারি ২০২২[11] সন্ধ্যা :০০ ঘটিকার সময় ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। আটকের সময় আটককৃত রক্সিমং মারমা থেকে লক্ষ ১৮ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে সেনাবাহিনী দাবি করেছে।

আটককৃত রুক্সিমং মারমা রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের কারিগর মেমং মারমার ছেলে। তার কারিগর পাড়ায় একটি মুদি দোকান রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে যে, বান্দরবান সদরস্থ ডুলুপাড়া চেকপোস্টে বুধবার সন্ধ্যা :০০ ঘটিকার সময় সেনাবাহিনীর ইবির আওতাধীন ডুলুপাড়া ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার ক্যাপ্টেন সাজেদুর রহমানের নেতৃত্বে ডুলুপড়া চেকপোস্টের ডিউটিরত সেনা সদস্যরা মোটরসাইকেল আরোহী রক্সিমং মারমাকে তল্লাশি চালিয়ে নগদ লক্ষ ১৮ হাজার টাকাসহ তাকে আটক করেছে।

আটকের পর সেনাবাহিনী রক্সিমং মারমাকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির চাঁদাবাজ হিসেবে অভিযুক্ত করে এবং রক্সিমং মারমা থেকে উদ্ধারকৃত লক্ষ ১৮ হাজার টাকা চাঁদাবাজির টাকা বলে প্রচার করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যে, রক্সিমং মারমা থেকে উদ্ধারকৃত উক্ত টাকা বাবুল মারমা নামে একজন ব্যাংক কর্মচারির। বাবুল মারমা নিজের চিকিৎসার জন্য বিজিবিতে চাকরিরত এক আত্মীয়ের কাছে তার জায়গা বিক্রি করেছেন এবং রক্সিমং মারমা উক্ত টাকাগুলো বহনকালে ডুলুপাড়া চেকপোষ্টে সেনাবাহিনী কর্তৃক টাকাসহ তাকে আটক করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডলুপাড়াস্থ এক জনপ্রতিনিধি বলেন, নিরাপত্তার নামে সেনাবাহিনী উক্ত ডুলুপাড়া চেকপোষ্টে নিরীহ লোকদেরকে নিয়মিত অহেতুক তল্লাসী নানাভাবে হয়রানি করে থাকে। অথচ সেই চেকপোষ্টের সামনে অস্ত্র নিয়ে মগপার্টি, সংস্কারপন্থী ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সশস্ত্র সন্ত্রাসী যাতায়াত করলেও সেনাবাহিনীর তল্লাসীতে ধরা পড়ে না বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

গত ১২ ডিসেম্বর ২০২১ দিবাগত রাতে মগপার্টির সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পোয়াইতু পাড়া থেকে একটি বি৭০ গাড়ি যোগে চেমি ডুলুপাড়া গিয়ে পুশৈথোয়াই মারমাকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে আমতলীপাড়ায় নিয়ে গুলি করে হত্যা করলেও সেনাবাহিনীর ডুলুপাড়া চেকপোষ্টে সন্ত্রাসীদের চোখে পড়েনি বলে উদাহরণ হিসেবে উক্ত জনপ্রতিনিধি উল্লেখ করেন।

তিনি আরো বলেন, সেনাবাহিনীর তথাকথিত নিরাপত্তা তল্লাসীতে সাধারণ নিরীহ লোকদের নিজস্ব টাকাপয়সা নিয়ে যাতায়াত করাও এখন নিরাপদ নয় বলে তিনি জানান।

সূত্রে আরো জানা গেছে যে, রক্সিমং মারমার মাধ্যমে টাকা নেয়ার খবর মগপার্টি সন্ত্রাসীরা জানতে পেরেছে এবং তৎপ্রেক্ষিতে মগপার্টি সদস্যদের খবরের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী রক্সিমং মারমারা টাকাসহ আটক করেছে।

২০ জানুয়ারি ২০২২, বিশেষ প্রতিবেদক[12]: সম্প্রতি কয়েক মাস ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ঘুমধুম ইউনিয়নে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বরাবর অবস্থানরত রোহিঙ্গা মুসলিম জঙ্গী সশস্ত্র গোষ্ঠীর সাথে আরাকান সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সশস্ত্র সংঘাত হয়ে আসছে বলে বিশ্বস্থসূত্রে জানা গেছে। এতে রোহিঙ্গা সশস্ত্র মুসলিম জঙ্গী সংগঠন, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মী (আরসা) এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)-এর কয়েক ডজন সদস্য নিহত এবং অপরপক্ষে আরাকানী গেরিলা বাহিনীর অনেক সদস্য নিহত হয়েছে বলে সূত্রে উল্লেখ করা হয়। এতে ঘুমধুম ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় স্থানীয় অধিবাসীরা চরম আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করতে বাধ্য হচ্ছে।

সূত্র জানায় যে, মূলত সশস্ত্র আন্দোলনরত আরাকানী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মৌলবাদী গোষ্ঠী কর্তৃক রোহিঙ্গা জঙ্গীদেরকে উস্কানী প্রদান, আরাকান (বর্তমানে রাখাইন) প্রদেশে রাখাইন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের চলমান বিরোধ, রোহিঙ্গা মুসলিম জঙ্গীদেরকে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সমর্থন সহায়তা, রোহিঙ্গা জঙ্গী কর্তৃক ঘুমধুম এলাকায় স্থানীয় মারমা তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীর উপর হয়রানি নির্যাতন, সর্বোপরি সীমান্তবর্তী বিভিন্ন ব্যবসায়িক চ্যানেলের উপর আধিপত্যকে কেন্দ্র করেই রোহিঙ্গা মুসলিম জঙ্গীদের সাথে আরাকানী বিদ্রোহীদের সশস্ত্র সংঘাতের সূত্রপাত হয়ে আসছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যে, ১৩-১৪ জানুয়ারি ২০২২ দুইদিন ধরে ঘুমধুম ইউনিয়নের বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমানার ৩৭ ৩৮নং পিলার বরাবরে রোহিঙ্গা মুসলিম জঙ্গী সংগঠন আরসা/আরএসও সশস্ত্র জঙ্গীদের সাথে আরাকানী বিদ্রোহীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয় বলে জানা যায়।

সূত্র মতে, ১৩-১৪ জানুয়ারি ঘটনা সংঘটিত না হওয়ার / দিন আগে মাদক বহনকারী কয়েকজন রাখাইন লোককে বুসিডং থেকে সীমান্তে আসার সময় আরসা/আরএসও জঙ্গীদের হাতে ধরা পড়ে এবং আরএসও সদস্যরা সমস্ত জিনিস নিয়ে কেড়ে নেয়। মাদক চোরাচালানের রাস্তাটি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার উদ্দেশ্যেই আরসা/আরএসও সদস্যরা ধরনের পদক্ষেপ নেয় বলে জানা যায়। এতে আরাকানী বিদ্রোহীরা ক্ষুব্ধ হলে শেষ পর্যন্ত আরএসও/আরসাদের উপর প্রতিশোধ নিয়ে নেয়।

আরো জানা যায় যে, ১২ জানুয়ারি সকালে আরাকানী বিদ্রোহীদের এক সদস্য সামান্য দূরে জুম ক্ষেতে বেগুন তুলতে গিয়ে আরসা/আরএসও সদস্যদের কবলে পড়েন। আরএসও সদস্যরা আরাকানী সদস্যকে অমানষিকভাবে মারধর করে। পরে আরাকানী সদস্যটি কোন রকম আরসা/আরএসও জঙ্গীদের কবল থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

এরপর আরাকানী বিদ্রোহীদের শত শত সদস্য গিয়ে আরসা/আরএসওদের ক্যাম্পে সশস্ত্র হামলা করে। ১৪ জানুয়ারি সন্ধ্যা পর্যন্ত এই সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে এবং আরসা/আরএসওদের অনেক সদস্য হতাহত হয় বলে জানা যায়। এমনকি অনেক আরসা/আরএসও সদস্যরা সামরিক পোষাক পাল্টিয়ে সাদা পোষাকে ঘুমধুমের বাইশপারী হয়ে পালাতে দেখা যায় বলে খবর পাওয়া যায়।

অন্যদিকে ২০২১ সালের নভেম্বরের প্রথম দিকে আরাকানী এক সশস্ত্র গ্রুপ থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের গাছবনিয়া তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া সংলগ্ন বাংলাদেশ-মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সীমানার ৪২নং পিলারে রোহিঙ্গ্যা জঙ্গী গোষ্ঠী আরসা/আরএসও নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে জানা যায়।

গাছবনিয়া পাড়া থেকে সামান্য উত্তরে নিকুছড়ি বিজিবি ক্যাম্পের ছত্রছায়ায় আগে থেকে রোহিঙ্গা সশস্ত্র সদস্যরা সেখানে অবস্থান করছিল। ২০২১ সালের অক্টোবরের শেষের দিকে আরসা/আরএসও সদস্যদের বিপুল সংখ্যক সদস্য সেখানে সমবেত হয়। ৩০অক্টোবর ২০২১ আরসা/আরএসও সদস্যদের জন্য এক জীপ (স্থানীয় ভাষায় চাঁদের গাড়ি) চাউল বিভিন্ন বাজার গাছবনিয়া পাড়ায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং তার পরদিন ৩১ অক্টোবর আরো এক ট্রাক (ডাম্পার) চাল নিয়ে যায়।

২০২১ সালের নভেম্বর ভোর রাতে ৩৯-৪১ নং সীমান্ত পিলার বরাবরে অবস্থিত আরাকানী সশস্ত্র গ্রুপের বড় ব্রিগেডের উপর আরসা/আরএসও জঙ্গীরা হামলা করেছিল বলে জানা যায়। সেদিন ভোর রাতে :০০-:০০ টার দিকে প্রায় একঘন্টা অধিক সময় ধরে প্রচুর গোলাগুলি হয়। আরাকানীরা রাত্রে মদ খেয়ে গানবাজনা করার সময়ে হামলা করা হয় বলে জানা গেছে।

আরাকানী সশস্ত্র গ্রুপের যোগাযোগের মূল কেন্দ্র গর্জনবনিয়া পাড়া হলেও উক্ত ঘটনার পর দিন নভেম্বর তাদের কোন সদস্য সেখান থেকে কোন মালামাল নিতে দেখা যায়নি। সে সময় গর্জনবনিয়া পাড়ার মাধ্যমে আরাকানীদের যোগাযোগের রাস্তাটি আরসা/আরএসও সদস্যরা বন্ধ করে দিয়েছিল। আরসা/আরএসও কর্তৃক রাস্তা ব্লক করে রাখার কারণে আরাকানী সদস্যরা কোন আহত বা নিহত সদস্যদের চিকিৎসার জন্য কোথাও নিতে পারেনি বলে জানা যায়। এমনকি সেসময় আরসা/আরএসও সদস্যদের বাধার মুখে গর্জনবনিয়া পাড়ার স্থানীয় অধিবাসীদের কোন লোক কর্মস্থল জুম কলাবাগানে যেতে পারেনি।

আরসা/আরএসও জঙ্গীদের উক্ত হামলায় প্রায় এক ডজনের মতো আরাকানী সশস্ত্র গ্রুপের সদস্য নিহত হয়েছে বলে জানা যায়। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশ নারী সদস্য ছিল। হামলাকারী আরসা/আরএসও সদস্যদের মধ্য থেকে ১৩ জন সদস্য নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। হামলার জন্য প্রায় ১৫০ জনের মত আরএসও/আরসা সদস্য অংশ নিয়েছিল এবং নিকটবর্তী বিভিন্ন পাহাড় রাস্তার ধারে ৪০-৫০ জন করে গ্রুপ হয়ে অবস্থান নিয়েছিল বলে খবর পাওয়া যায়।

আরএসও জঙ্গীদের উক্ত হামলার প্রতিশোধ নিতে নভেম্বর ভোর রাতে আরাকানী সশস্ত্র সদস্যরা থোয়াইঙ্গা ঝিরি বিজিবি ক্যাম্পের পূর্ব দিকে আরএসও/আরসা ক্যাম্পে হামলা চালায়। আরসা/আরএসও জঙ্গীদের উপর আরাকানীদের হামলায় কমপক্ষে কয়েক ডজন আরসা/আরএসও জঙ্গী সদস্য নিহত হন। আর আরাকানীরা অনেক আরসা/আরএসও সদস্যকে বন্দী করে বলে জানা যায়। আরাকানীদের হামলা থেকে বাঁচার জন্য প্রায় ৭০-৮০ জন আরসা/আরএসও জঙ্গী ঘুমধুম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান খাইরুল বশর-এর বাগান আংগা মরং নামক কুতুপালং বড়ুয়া পাড়ার কাছাকাছি জঙ্গলে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেয় বলে খবর পাওয়া জানা যায়।

এদিকে ঘটনার পর ৪২নং সীমান্ত পিলার সংলগ্ন নিকুছড়ি বিজিবি ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণাধীন আরসা/আরএসও ক্যাম্পে নতুন করে ৫টি অস্থায়ী ঘর তৈরি করা হয়। পালিয়ে আসা আরসা/আরএসও সদস্যরা সেখানে আশ্রয় নিয়েছিল বলে সন্দেহ করা হয়। অপরদিকে জামীরতলী পাড়া খালে পাহাড়ে অবস্থিত আরসা/আরএসও ক্যাম্পের দিকে গোলাগুলি হয় বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। নভেম্বর গভীর রাতে ৪২নং পিলার দিকেও প্রচুর গোলাগুলি হয়েছিল।

আরসা/আরএসও সদস্যদের উপর হামলা না করার জন্য বাংলাদেশের সেনা গোয়েন্দাদের পক্ষ থেকে আরাকানী বিদ্রোহীদেরকে অনুরোধ করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়।

আরএসও/আরসা ক্যাম্পে সেনাবাহিনীর দুই মেজর একজন আফগান নাগরিক

গত ১৫ ডিসেম্বর ২০২১ বিশ্বস্থ সূত্রে জানা গেছে যে, ৪২নং সীমান্তবর্তী গাছবনিয়া তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া সংলগ্ন নিকুছড়ি বিজিবি ক্যাম্পের পার্শ্বে অবস্থিত আরএসও/আরসা ক্যাম্পে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দুইজন মেজর একজন পাকিস্তানে জন্ম নেওয়া আফগানিস্তানের নাগরিক রয়েছেন বলে জানা যায়। মেজর রাসেদ মেজর জিয়া এই দুইজন ব্যক্তি আরএসও/আরসা ক্যাম্পে ইঞ্জিনিয়ার নামে পরিচিত। আফগানিস্তানের নাগরিকের নাম হামিদুল্লাহ। উক্ত দুই মেজর ২০২০ সালের দিকে সিলেট সেনানিবাস থেকে পালিয়ে যায় এবং গত / মাস আগে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ২৬৮নং রেজু মৌজার অন্তর্গত নিকুছড়ি বিজিবিদের সাথে মিলেমিশে সীমান্তে জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছে।

২০২১ সালের নভেম্বর মাসে জামিরতলী পাড়া সহ কয়েকটি তঞ্চঙ্গ্যা গ্রামে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়েছিল এবং গাছবনিয়া পাড়ায় ঘরবাড়ি তল্লাসি করেছিল। গাছবনিয়া পাড়ার ঘরবাড়ি তল্লাসি করার সময় মেজর জিয়া নেতৃত্বে - জন আরএসও সদস্যও ছিল এবংরেজু পাড়া বিজিবি ক্যাম্প থেকে টহলরত স্পেশাল গ্রুপের নামে দুইটি মোটর সাইকেলসহ আরএসও/আরসা সদস্যদের সাথে একত্রে ঘরবাড়ি তল্লাসি করা হয়েছিল।

 

২২ জানুয়ারি ২০২২, রাঙ্গামাটি[13]: রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলাধীন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সেনা-মদদপুষ্ট ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীরা জন ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ জনকে অপহরণ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ শনিবার (২২ জানুয়ারি) এই ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজ শনিবার (২২ জানুয়ারি) সকাল ১০:১৫ টার দিকে সেনা-মদদপুষ্ট সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীদের তিনজনের একটি অস্ত্রধারী দল সারোয়াতুলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জন চাকমা (রতন)-কে বাঘাইছড়ির ভিডিপি অফিসের পেছন থেকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায়।

অন্যদিকে সন্ত্রাসীরা সাজেক ইউপি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী নেলসন চাকমাসহ জনকে অপহরণ করে বাঘাইছড়ি উপজেলাস্থ বাবু পাড়ায় নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক সাবেক এক ইউপি মেম্বার বলেন, আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে সেনা-মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীরা রুপাকারি ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে নিজস্ব স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়েছে সন্ত্রাসিরা। তাদের প্রার্থীদের নির্বাচনে জেতানোর জন্য সন্ত্রাসীরা সকাল থেকে বাঘাইছড়ি উপজেলার নির্বাচনী কার্যালয়ে মহড়া দিচ্ছে।

দেশে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের এটি সপ্তম ধাপের শেষ নির্বাচন। তারই অংশ হিসেবে আজ শনিবার (২২ জানুয়ারি) বাঘাইছড়ি উপজেলাধীন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপ্রত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন।

মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে সেনা-মদদপুষ্ট সংস্কারপন্থী ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসীদের অসীম চাকমা জ্ঞানজীব চাকমার নেতৃত্বের সাজেক ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী নেলসন চাকমা সাজেক ইউনিয়নের , নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের প্রার্থী জ্যোস্নারাণী চাকমাসহ জনকে অপহরণ করে জিম্মি করে রেখেছে।

সন্ত্রাসীরা অপহরণকৃতদের কাছ থেকে মোবাইল ফোনও কেরে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 

২২ জানুয়ারি ২০২২, রাঙ্গামাটি[14]: রাঙ্গামাটি জেলার জুরাছড়ি উপজেলাধীন মৈদুং ইউনিয়নে একজন নিরীহ জুম্ম গ্রামবাসীকে সেনাবাহিনীর বনযোগীছড়া জোন নিয়ন্ত্রণাধীন শিলছড়ি ক্যাম্পের একদল সেনা কর্তৃক আটক করে সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যায় এবং বেদম মারধরের পর বিকালে ছেড়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আজ শনিবার (২২ জানুয়ারি) সকাল :১০ ঘটিকায় উক্ত ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যে, আজ শনিবার সকাল :০০ ঘটিকায় জুরাছড়ি উপজেলাধীন বনযোগীছড়া জোনের অধীনে শিলছড়ি ক্যাম্প থেকে জনৈক মেজর ওয়ারেন্ট অফিসার মুছার নেতৃত্বে আনুমানিক ২০/২৫ জনের একদল সেনা ৩নং মৈদং ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে এক অভিযান চালায়।

এসময় সেনা সদস্যরা জনসংহতি সমিতির মৈদং ইউনিয়ন শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ভাগ্যধন চাকমার বাড়ি ঘেরাও করে। সেনা সদস্যরা বাড়ির ভেতরে ঢুকে তল্লাসী চালায় এবং বাড়ির জিনিষপত্র তছনছ করে। তবে সময় ভাগ্যধন চাকমা বাড়িতে ছিলেন না।

সেনা সদস্যরা ভাগ্যধন চাকমাকে না পেয়ে তার ছেলে সুভাষ চাকমা (২২) বাড়ি থেকে আটক করে। কোন অভিযোগ ছাড়াই সেনা সদস্যরা সুভাষ চাকমাকে রশি বেঁধে গাছে ঝুলিয়ে অমানষিকভাবে মারধর করে। মারধর করার পর ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরে গ্রামের মুরুব্বীরা ক্যাম্পে গেলে তাদের জিম্মায় সুভাষ চাকমাকে শিলছড়ি ক্যাম্প থেকে ছেড়ে দেয়া হয়।

অন্যদিকে উক্ত অভিযানের সময় সেনা সদস্যরা জনসংহতি সমিতির আজাছড়ি গ্রাম শাখার সভাপতি শরৎ কুমার চাকমা, পিতা সতীশ চন্দ্র চাকমার বাড়িও তল্লাশি করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 

২৩ জানুয়ারী ২০২২,বিশেষ প্রতিবেদক[15]: গত ২১ জানুয়ারি ২০২২ সকাল ১০ ঘটিকায় বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক জগৎ জ্যোতি চাকমা অমর কৃষ্ণ চাকমার সভাপতিত্বে এশিয়ান হোটেলে পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের সম্মেলন কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত অনুষ্ঠানে উদ্ভোধক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক তাপস হোড়। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঐক্য ন্যাপ চট্টগ্রাম জেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পাহাড়ি ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ ওয়াকার্স পার্টি চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক শরিফ চৌহান, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, চট্টগ্রাম জেলার সহ-সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট প্রদীপ কুমার চৌধুরী পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নিপন ত্রিপুরা প্রমুখ। সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের সহ সভাপতি অনিল চাকমা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তাপস হৌড় বলেন, আজকের বাংলাদেশে এরকম পরিস্থিতির মধ্যেও যে আন্দোলন করতে হচ্ছে, সেখানা আমরা দেখতে পাই দেশে সুষ্ঠু শান্তিভাবে রাজনীতির চর্চা করার সুযোগ দিচ্ছে না। সরকারকে বার বার চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আবেদন করা হচ্ছে, কিন্তু ক্ষমতাসীন সরকার তা কোনোভাবে বাস্তবায়ন করছে না বরং চুক্তির ধারাগুলি প্রতিনিয়ত লঙ্ঘন করে চলেছে। পাহাড়ের সমস্যা পুরো বাংলাদেশের সমস্যা আজকে পাহাড়ের চুক্তিকে প্রতিহত করার জন্য শাসকগোষ্ঠী নানাভাবে সন্ত্রাসীর হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে পাহাড়ী জনগণের শোষণ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য বিভিন্ন উপদল সৃষ্টি করছে। যদি এভাবে সরকার প্রতিনিয়ত লঙ্গন করতে থাকে তাহলে জুম্ম জনগণ মানবেন্দ্র লারমার আদর্শকে ধারণ করে অধিকতর আন্দোলন করতে বাধ্য হবে।

বিশেষ আলোচকের বক্তব্যে নিপন ত্রিপুরা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর চলছে কিন্তু দেশের শ্রমিক, মেহনতি আদিবাসীদের অধিকারের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। অথচ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মূলমন্ত্র ছিল জাতি বর্ণ নির্বিশেষে সবার অধিকার নিশ্চিত করা।

পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমান অবস্থা খুবই নাজুক। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হাওয়ায় পরিস্থিতি আরও বেশি জটিল রুপ ধারণ করেছে। সরকার কর্তৃক চুক্তি বাস্তবায়নের কোন সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছেনা। উল্টো তাবেদার গোষ্ঠীকে মদদ দিয়ে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে চলেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা একটি জাতীয় রাজনৈতিক সমস্যা। পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল সমস্যাকে সমাধানের জন্য চুক্তি বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।

সম্প্রতি ঢাকায় একটি আলোচনা সভায় জে এস এসকে দায়ী দেয়া চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে খুন করতে হবে এমন কোন ধারা লেখা আছে মন্ত্রী বীর বাহাদুরের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, পার্বত্য চুক্তি নিয়ে ঢাকায় আলোচনা সভা হয় কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরকারী জে এস এসের প্রতিনিধিকে আলোচনা সভায় রাখা হয় না। পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে কেবল চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে পাহাড়ে আরও রক্ত ঝরবে। তার জন্য পিসিজেএসএস দায়ী থাকবেনা, তার দায় সরকারকে নিতে হবে। জেএসএস চুক্তি বাস্তবায়নের আন্তরিক শুরু থেকে এখনো অবধি বজায় রেখে চলেছে।

তিনি দেশের অধিকার হারা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে দেশের সকল গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল ব্যক্তি সংগঠনকে অধিকতর সক্রিয় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রদীপ কুমার বলেন বিপ্লবীদের রক্ত বৃথা যায় না। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের অতীত ইতিহাস সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন। ৯৭ সালে চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসবে মনে করেছিলেন কিন্তু সরকার চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন না করায় পাহাড়ে আজ ভিন্ন শাসন চলছে। সংবিধানে সংখ্যালঘুদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টি চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান বলেন, ঐতিহ্য জাতি অধিকার রক্ষায় অনিয়মতান্ত্রিক পথ শুরু হয় যখন নিয়মতান্ত্রিক পথ বন্ধ হয়। ১৯৭১ সাল হতে আজ পর্যন্ত পাহাড়ে যে পরিমাণ হত্যাকান্ড এবং মৃত্যু হয়েছে তা শুনলে শিউরে উঠি। আজকে ছাত্র যুব সমাজের দায়িত্ব হচ্ছে পাহাড়ী জনগণকে মুক্তি দেওয়া। বর্তমানে পাহাড়ে চলাফেরার যে নিয়ম তা দেখে মনে হয় আমরা ভিন্ন জগতে আছি। আজকে পাহাড়ের মানুষ বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর কাছে অবরুদ্ধ। বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের মধ্যেও আমরা লক্ষ্য করছি পাহাড়ী জনগণ আজ বঞ্চিত নির্যাতিত। রাষ্ট্র চরিত্র আজ পরিবর্তন হয়ে গেছে, যা দেখেছি সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের মধ্য দিয়ে। আজকের পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে মিছিল দিয়ে হবে না।পাহাড়ের মানুষ আজ ভূমি হারাচ্ছে , সেটেলার প্রশাসনের মানুষ দ্বারা নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে এবং বড় বড় কোম্পানীর দ্বারা উচ্ছেদ হচ্ছে। তিনি আরো বলেনপাহাড়ে জুম্ম জাতির অস্থিত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে এবং রক্ত দিতে হবে রক্ত না দিলে কোথাও শান্তি আসবে না

ঐক্য ন্যাপ চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক পাহাড়ী ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেই বরং তাদেরকে নানাভাবে শোষণ করা হচ্ছে। পাহাড়ের মানুষ শ্রমজীবী মানুষ তারা আদিকাল থেকেই কৃষি কাজ করে আসছে আজ তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে উচ্ছেদ হয়ে নানা গার্মেন্টস কোম্পানীতে শ্রম বিক্রি করে জীবন অতিবাহিত করছে আজকে শ্রমজীবী মানুষ চার সপ্তাহে বেতন ঠিকমত পায় না, শ্রমজীবী মানুষের আজকের যে অধিকার পাওয়ার কথা সে অধিকার থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করে নারী শ্রমিকদের নানাভাবে হয়রানির স্বীকার হতে হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের যে চারনীতি ছিল তা সরকার প্রতিনিয়ত লঙ্ঘন করে চলেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রয়াত নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার যে সংগ্রাম প্রথমে কিন্তু সশস্ত্র ছিল না। পরবর্তীতে শাসকগোষ্ঠীর যে অনিয়ম অত্যাচার অধিকতর বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সশস্ত্র সংগ্রাম করতে বাধ্য হন। দীর্ঘ ২৪ বছর সশস্ত্র সংগ্রামের পরে পার্বত্য চুক্তি হয়। চুক্তির ৭২ ধারার মধ্যে এক তৃতীয়াংশ চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি। চুক্তির সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন না হলে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সরকার দায়ী থাকবে।

দ্বিতীয় অধিবেষনে দিসন তঞ্চঙ্গ্যাকে সভাপতি এবং এলিন চাকমার সঞ্চালনার মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় অধিবেষন শুরু হয়। উক্ত অধিবেষনে আলোচক হিসেবে ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জগদীশ চাকমা,পিসিপি, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুপ্রীয় তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি, চবি শাখার অর্থ সম্পাদক নরেশ চাকমা, পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের সদস্য সন্তোষ চাকমা।

আলোচনা সভা শেষে অমর কৃষ্ণ চাকমা (বাবু) কে সভাপতি, জগৎ জ্যোতি চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক এবং জিশন চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়।

 

২৫ জানুয়ারি ২০২২, রাঙ্গামাটি[16]: রাঙ্গামাটির নান্যাচর সদর উপজেলাধীন চার ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চার চেয়ারম্যানকে শপথ গ্রহণের পর ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের প্রাঙ্গণ পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে যে, আজ মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) রাঙ্গামাটিতে বেলা :০০টার সময় ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয় থেকে নব নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যানকে গ্রেফতারের করেছে পুলিশ।

আটককৃত ইউপি চেয়ারম্যান হচ্ছেন- নান্যাচর উপজেলাধীন ৩নং বুড়িঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রমোদ খীসা, ১নং সাবেক্ষং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুপন চাকমা ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অমল কান্তি চাকমা এবং রাঙ্গামাটি সদর উপজেলাধীন কুতুকছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কানন চাকমা।

গত ২৬ ডিসেম্বর ২০২১ চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে তারা সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দ্বিতীয় বারের মতো নির্বাচিত হয়েছিলেন।

জানা যায়, আজ মঙ্গলবার রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নব নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান ছিল। তারা সেখান উপস্থিত হয়ে শপথ গ্রহণ করেন। শপথ গ্রহণ শেষ হওয়ার পরপরই বেলা ২টার সময় সেখান থেকে পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করে।

রাঙামাটি পুলিশ সুপার মীর মোদদাছছের হোসেন জানিয়েছেন, তাদেরকে নান্যাচর উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ওয়ারেন্টভূক্ত আসামি হিসেবে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ।

গ্রেফতারের পর তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাঙামাটি পুলিশ সুপার।

 

২৬ জানুয়ারী ২০২২, পার্বত্য চট্টগ্রাম[17]: গত সপ্তাহে দেশের পার্বত্য অঞ্চলের তিন জেলায় নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন দেশের ২৪ বিশিষ্ট নাগরিক। আজ বুধবার একবিবৃতির মাধ্যমে তারা এই উদ্বেগ জানান।

বিবৃতিদাতারা জানান, সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানাগেছে, পার্বত্য চট্রগ্রামের খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি বান্দরবান জেলায় নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে অন্তত ১৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। যাদের বয়স ১মাস থেকে ২বছরের মধ্যে। ধরনের শিশু মৃত্যুর ঘটনা মোটেই স্বাভাবিক নয়। এমন ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দৃশ্যমান পদক্ষেপ না থাকার বিষয়টি আমাদের গভীরভাবে হতাশ করেছে; আমরা উদ্বিগ্ন।

কত সংখ্যক শিশুর মৃত্যু হলে রাষ্ট্র উদ্বিগ্ন হবে এবং নড়ে চড়ে বসবে? প্রশ্ন করে বিবৃতি দাতারা আরো বলেন, শিশু মৃত্যুর ঘটনা থেকে প্রমাণ হয় পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষ মানুষের আকৃতিতে -খোলসে বেড়ে ওঠে মাত্র, তা না হলে কি করে ১৫ শিশুর মৃত্যুর পরও রাষ্ট্রযন্ত্র নিরুত্তাপ পড়ে থাকে বলেও উদ্বেগ জানান তারা। এছাড়া পাহাড়ে উন্নয়নের নামে অনেক প্রকল্প হয়েছে কিন্তু সকল প্রকল্প কিছু মানুষের অবসর যাপনের কেন্দ্র বলেও মনে করেন তারা।

এতগুলোর মৃত্যুতে আমরা একটি ফাঁপা রাষ্ট্র কাঠামোকে দেখতে পাই। ফলে পাহাড় আর সমতলের মধ্যকার বৈষম্যের সম্প্রসারণ বুঝতে পারি। অথচ কথা ছিলো ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশের কোথাও কোনো থাও বৈষম্য থাকবে না; মুক্তিযুদ্ধে সুবর্ণজয়ন্তীরকালে এই বৈষম্যের মাত্রা শুধুই প্রকট হয়েছেÑ চাইলেই বৈষম্য মুক্তির স্বাদ মিলবে না। রাজনীতি, অর্থনীতির সবটাই এই বৈষম্য তৈরির কারিগর।

আমরা জেনেছি, শুধুমাত্র সেবা উপকরণের অপ্রতুলতাই নয়, সেবাদানকারীদের অবহেলাও এতগুলো প্রাণ ঝরেপরার জন্য দায়ী। গত দুই সপ্তাহে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কিংবা মন্ত্রণালয় বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। কোভিড-১৯ এর সংক্রমণকালে আমরা স্বাস্থ্যখাতের যে নগ্নতা দেখেছি, তাতে এখানে আর এমন কোনো রাখঢাকের বিষয় নেই বলেও মনে করেন বিবৃতিদাতারা।

নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তানুসন্ধান প্রয়োজন দাবী করে তারা আরো বলেন, এতগুলো মৃত্যুর পেছনের কারণ জানা দরকার। শুধুমাত্র আর্থিক অসঙ্গতির কারণে উন্নত সেবা নিতে না পারায় শিশুদের মৃত্যু ঘটেছে, এটি বিশ্বাস করার মতো নয়। তাছাড়া নিউমোনিয়ার প্রকোপ যখন এই বয়সের শিশুদের মাঝে খুবই বেশি এবং প্রচলিত স্বাস্থ্যসেবায় এই রোগমুক্তির ব্যবস্থাও বিদ্যমান তখন এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।

বিবৃতি দাতারা নিম্নোক্ত তিনটি দাবী করেন- ) অবিলম্বে শিশুর মৃত্যুর পেছনে কি কি সামাজিক, অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক প্রভাব আছে, তা খুঁজে বের করতে হবে; ) হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত উপকণ ছিলো কিনা এবং না থাকলে কেন ছিলো না; এবং ) সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে ঘটনার তদন্ত করতে হবে।

বিবৃতি প্রদানকারীরা ব্যক্তিরা হলেন ঐক্য ন্যাপ সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য রামেন্দু মজুমদার, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম,সাম্প্রদায়িকতা জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চের সদস্য সচিব . নুর মোহাম্মদ তালুকদার, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সভাপতি এস.এম. সবুর, বি এম সাবেক সভাপতি ডা রশীদ --মাহবুব, মানবাধিকার কর্মীখুশী কবির, উন্নয়ন কর্মী রোকেয়া কবির, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম. এম. আকাশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক . রোবায়েত ফেরদৌস, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের অ্যাডভোকেট পারভেজ হাসেম, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ (ইনসাব) এর সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, জাতীয় শ্রমিক জোট এর কার্যকরী সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ, গণজাগরণ মঞ্চ এর সংগঠক অ্যাডভোকেট জীবনানন্দ জয়ন্ত, সংস্কৃতি কর্মি . সেলু বাসিত, সংস্কৃতি কর্মি কে আজাদ, উঠোন সাংস্কৃতিক সংগঠন সভাপতি অলক দাস গুপ্ত, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম এর তথ্য প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি কাজী আব্দুল মোতালেব জুয়েল এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল) এর সাধারণ সম্পাদক গৌতম শীল প্রমুখ।

 

৩১ জানুয়ারী ২০২২, খাগড়াছড়ি[18]: খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার সদর উপজেলার গুগড়াছড়িতে বিশুদ্ধা মহাথের (৫২) নামের এক বৌদ্ধ ভিক্ষুকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত বিশুদ্ধা মহাথের গুগড়াছড়ি ধর্মসুখ বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ। বিহারে তিনি একাই থাকতেন বলে জানা যায়।

গতকাল রবিবার (৩০ জানুয়ারি ২০২২) দিবাগত মধ্য রাতে ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এদিকে আজ সোমবার (৩১ জানুয়ারি) সকালে গ্রামের একজন মহিলা ছোয়াইং (খাবার) দিতে এসে বৌদ্ধ ভিক্ষুকে বিহারের মধ্যে পড়ে থাকতে দেখেন। পরে বিষয়টি গ্রামবাসীরা জানতে পেরে পুলিশকে খবর দেন। পরে খাগড়াছড়ি সদর থানা পুলিশ গুগড়াছড়ি ধর্মসুখ বৌদ্ধ বিহার থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষুর মরদেহ উদ্ধার করে।

স্থানীয়রা জানান, শ্রীমৎ বিশুদ্ধা মহাথের রাতে বিহারে একাই থাকতেন। কাল (রবিবার) রাতেও তিনি একাই ছিলেন। সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করে। এসময় দুর্বৃত্তরা তার টাকা মোবাইল নিয়ে যায়।

এদিকে এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। বৌদ্ধ ভিক্ষুকে হত্যার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অনেকেই। ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে খুনিদের গ্রেফতার শাস্তি দাবি করেছেন স্থানীয়রাসহ বিভিন্ন স্তরের নাগরিকগণ।

খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রশীদ জানান, রবিবার মধ্যরাতে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরুকে কুপিয়ে মাথায় আঘাত করে খুন করেছে। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তদন্ত করে দোষীদের খুঁজে বের করা হবে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ।

 

 

 



[1] By Hill Voice -জানুয়ারী 1, 2022

[2] By Hill Voice -জানুয়ারী 1, 2022

[3] By Hill Voice -জানুয়ারী 2, 2022

[4] By Hill Voice -জানুয়ারী 3, 2022

[5] By Hill Voice -জানুয়ারী 3, 2022

[6] By Hill Voice -জানুয়ারী 9, 2022

[7] By Hill Voice -জানুয়ারী 10, 2022

[8] By Hill Voice -জানুয়ারী 11, 2022

[9] By Hill Voice -জানুয়ারী 17, 2022

[10] By Hill Voice –জানুয়ারী 19, 2022

[11] By Hill Voice –জানুয়ারী 19, 2022

[12] By Hill Voice –জানুয়ারী 20, 2022

[13] [13] By Hill Voice –জানুয়ারী 22, 2022

[14] By Hill Voice -জানুয়ারী 22, 2022

[15] By Hill Voice –জানুয়ারী 23, 2022

[16] By Hill Voice -জানুয়ারী 25, 2022

[17] By Hill Voice -জানুয়ারী 26, 2022

[18] By Hill Voice -জানুয়ারী 31, 2022

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কেন আঞ্চলিক স্বায়ত্ব শাসন?

বাংলাদেশ খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির নিকট পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের শাসনতান্ত্রিক অধিকার দাবীর- আবেদন পত্র গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ভাবী ...