শুক্রবার, ২২ এপ্রিল, ২০২২

আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা

 


আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা[1]

১নং সেক্টরের আওতায় সর্বপ্রথম মে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট পার্বত্য চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা দল গঠনকরা হয়।এই দলের নেতৃত্ব দেন হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরা।পরে এই দলটি কোম্পানিতে পরিণত করলে তিনি কোম্পানি কমান্ডার হন।

পাক বাহিনীরা পার্বত্য জেলা সদর রাঙ্গামাটি মহকুমা সদর রামগড় এবং বান্দরবান দখল করার পর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে ঘাঁটি স্থাপন করে এবং ঘাঁটিসমূহ সুদৃঢ় করে নেয়।তারা বিভিন্ন এলাকায় শাখাকমিটি গঠনকরে তাদের মাধ্যমে পার্বত্য এলাকায় রাজাকার বাহিনী গঠনকরে এবং বিভিন্ন এলাকায় হানা দিয়ে বর্বর অত্যাচার চালায় ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দেয়।পাকবাহিনী রামগড়, গুইমারা, মানিকছড়িসহ বিভিন্ন ক্যাম্পে পাহাড়ী রমনীদের জোর পূর্বক ধরে নিয়ে অমানুষিকভাবে ধর্ষণ করে এবং ক্যাম্পে উলঙ্গ অবস্থায় বন্দী করে রাখে।

অনেক পাহাড়ি অাদিবাসী মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় পরে অনেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকের কাজ করেন। তাদের মধ্যে তৎকালীন ছাত্রনেতা গৌতম দেওয়ান, এমএন লারমা,রাজা ত্রিদিব রায়ের অাপন কাকা কেকে রায়,সুবোধ বিকাশ ত্রিপুরা মুক্তিযুদ্ধে সংগঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন।

কথা অনস্বীকার্য যে,মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় পাহাড়ি অাদিবাসীদের সহযোগিতা ছাড়া দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের জয় সম্ভব হতো না। পাহাড়ি অাদিবাসীদদের অনেকে মুক্তিযুদ্ধে এবং মুক্তিযোদ্ধের প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেন।

পার্বত্য এলাকায় অবস্থানের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের চলাচলের সুবিধা, শত্রুপক্ষের ঘাঁটি আক্রমণএবং পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনার সুবিধার্থে বর্তমান খাগড়াছড়ি জেলার অন্তর্গত নাকাপা, কুমারীপাড়া, পাগলা পাড়া, মানিকছড়ি, ডাইনছড়ি, যোগ্যাছলাও গাড়ীটানা এলাকার গহীন অরণ্যে মুক্তিবাহিনীর গোপন ক্যাম্প বা আশ্রয়স্থল করা হয়। এই সমস্তগোপন গেরিলা ক্যাম্পে এলাকার হেডম্যান কার্বারীসহ সকল স্তরের জনগণ খাদ্যশস্য সরবরাহ করত এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন সমস্তএলাকার জনগণ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে পাকবাহিনীর গতিবিধি এবং তাদের অবস্থান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে সাহায্য করত।

রাজা ত্রিদিব রায়ের এক অাত্মীয় লংগদু হতে তিন-চারটি ইঞ্জিন চালিত নৌকায় -খানেক খাসি রাংগামাটি পাঠিয়েছিন মুক্তিযোদ্ধের জন্য।অার সে সময়ে রাংগামাটিতে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধের স্থানীয় লোকজন বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন।পার্বত্য চট্টগ্রাম হতে যেসব পাহাড়ি অাদিবাসী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তাদের তালিকা নিচে দেওয়া হলো-বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাত্র-যুবকদের মধ্যে যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তারা হলেন,

. মংচীফ মংপ্রু সাইন

. প্রকৌশলী অমলেন্দু বিকাশ চাকমা

. ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট চিত্তরঞ্জন চাকমা

. পূর্ব পাকিস্তান ফুটবল টিমের অধিনায়ক চিংহলা মং চৌধুরী

. পুলিশ কর্মকর্তা ত্রিপুরা কান্তি চাকমা

. পুলিশ কর্মকর্তা বিমলেশ্বর দেওয়ান

. পুলিশ কর্মকর্তা খগেন্দ্র চাকমা

. উক্য জেন

. মনীষ দেওয়ান

১০. রণ বিক্রম ত্রিপুরা

১১. অশোক মিত্র কারবারী

১২. রাস বিহারী চাকমা

১৩. সুশীল দেওয়ান

১৪. নীলোৎপল ত্রিপুরা

১৫. ক্যাচিং মারমা

১৬. সুবোধ বিকাশ ত্রিপুরা

১৭. গোপালকৃষ্ণ দেওয়ান

১৮. মনীন্দ্র কিশোর ত্রিপুরা

১৯. বরেন ত্রিপুরা

২০. কৃপা সুখ চাকমা

২১. অানন্দ বাশী চাকমা

২২. সুবিলাশ চাকমা

২৩. রঞ্জিত দেব বর্মন

২৪. কং জয় মারমা

২৫. অাক্য মগ

২৬. প্রীতি কুমার ত্রিপুরা

২৭. প্রভুধন চাকমা

২৮. ইউ কে চিং বিবি

২৯. মাংশৈ প্রু মারমা

৩০. মংশৈহ্লা মারমা

৩১. ধুংছাই মারমা

৩২. হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরা

৩৩. করুনা মোহন চাকমা

৩৪. গুলসেন চাকমা

৩৫. বিজয় কুমার চাকমা

৩৬. সাইপ্রু মগ

৩৭. বিজয় কুমার ত্রিপুরা

৩৮. চিত্ত রঞ্জন চাকমা

৩৯. সাথোয়াই মারমা

৪০. ম্নাসাথোয়াই মগ

৪১. মংমং মারমা

৪২. ফিলিপ বিজয় ত্রিপুরা

৪৩. রুইপ্রু মারমা

৪৪. কংচাই মারমা

৪৫. থোয়াইঅং মগ

৪৬. অাদুং মগ

৪৭. মংসাথোয়াই মগ

৪৮. থোয়াইঅংরী মগ

৪৯. মংশোয়ে অং মগ

৫০. অাথুইঅং মগ

৫১. মংমংচিং মগ

৫২. মং অাফ্রুশী মগ

৫৩. রবি রশ্মি চাকমা

৫৬. নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা

৫৭. সাথোয়াই মারমা

৫৮. করুণা মোহন চাকমা

ইপিঅার সদস্যদের মধ্যে যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তাদের তালিকা

. হাবিলদার নলিনী রঞ্জন চাকমা

. হাবিলদার অমৃত লাল চাকমা

. ল্যান্স নায়েক সঞ্জয় কেতন চাকমা

. ল্যান্স নায়েক স্নেহ কুমার চাকমা

. সিপাহি চিংমা মারমা

. ল্যান্স নায়েক মতিলাল চাকমা

. সিপাহী চাই থোয়াই প্রু মারমা

. সিপাহী থুই প্রু মারমা

. সিপাহী কংজা মারমা

১০. সিপাহী মংহলা প্রু মারমা

১১. সিপাহী অ্যামি মারমা

১২. সিপাহী কুল্লিয়ান বম

১৩. সিপাহী জিংপারে বম

১৪. সিপাহী হেম রঞ্জন চাকমা

১৫. সিপাহী মংচিনু মারমা

১৬. সিপাহী বুদ্ধিমান ছেত্রী

১৭. সিপাহী রমণীরঞ্জন চাকমা

১৮. সিপাহী উক্যজিং মারমা ( বীর বিক্রম)

১৯. সিপাহী লাল পুম বম

২০. নায়েব চিংড়ু মগ

২১. ল্যান্স নায়েক অরুন মগ

২২. ল্যান্স নায়েক অরিন্দ্রা ত্রিপুরা

উল্লেখিত ৮০ জন ছাড়াও অারও অনেক মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, যাদের নাম সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। কিছু অাদিবাসী মুক্তিযোদ্ধাকে সরকার এখনো মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়ায় এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনেক মুক্তিযোদ্ধা তৎকালীন নব গঠিত শান্তিবাহিনীতে যোগদান করে সায়ত্বশাসন অান্দোলনের সময় নিহত হয়, ফলে অনেক অাদিবাসী মুক্তিযোদ্ধার নাম সংগ্রহ করা অসম্ভব হয়।

মুক্তিযুদ্ধে পাহাড়ি অাদিবাসীদের এই চরম অাত্মত্যাগের যথাযথ স্বীকৃতি দেয়ার পরিবর্তে তাদের নিয়ে তৈরি করা হয় বিভ্রান্তি।এমনি তাদের বীরত্বপূর্ণ ইতিহাসকে অস্বীকার করে তাদের অাত্মত্যাগকে খাটো করে দেখা হয়।এখনো অনেক অাদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি।"মুক্তিযুদ্ধে অাদিবাসী" বইয়ের তথ্য মতে পার্বত্য চট্টগ্রামের অনেক অাদিবাসী যুদ্ধে শহীদ হয়। কিন্তু তাদের অনেকেই তাদের প্রাপ্য সম্মান পাওয়া তো দূরের কথা শহীদের তালিকায় তাদের নাম পর্যন্ত অাসেনি।

মু্ক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বাঙ্গালি জাতির জন্য এটা চরম লজ্জাও বটে।

 



[1] সংগৃহিত, ২০১২ সালে এক মুক্তি যুদ্ধ ার লেখা।

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কেন আঞ্চলিক স্বায়ত্ব শাসন?

বাংলাদেশ খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির নিকট পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের শাসনতান্ত্রিক অধিকার দাবীর- আবেদন পত্র গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ভাবী ...