সোমবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২১

মুই নিজরে চাঙমা ভাবঙর, মুই চাঙমা লেঘা পারং- অন্বেশন চাঙমা (দর্শন ১ম বর্ষ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ)।

মুই পত্তমে চাঙমা লেঘা শিঘিবার জু পানার পরয়্য চাঙমা লেঘা শিঘিবার এধক গরচ মনে ন’ গরং। ম’ বর ভেইদাঘি এধক কুজোলী গরিদাক ত্যুঅ ম’ মানাত
ধারচ ন’ জন্মেল’ । মনে মনে ভাবং চাঙমা লেঘা শিঘিনেই কী গরিম। সক্যে চাঙমা লেঘা ন’ শিঘি ইংরেজি শিঘিদুং।

পরেদি যক্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ত ভর্তি ওলুং সিধু ম’ সমাজ্যাদাঘি (বাঙাল) পুজোর গরন, চাঙমা লেঘা পারং নিনা? কিথ্যা তারা খবর পান চাঙমাদাঘির বেক আঘে, ভাচ, ওক্কোর, আল্যাক (সাহিত্য), রিদিসুধোম আ চাঙমাদাঘি বাংলাদেঝত জনসংখ্যাদি দ্বি’ নম্বরত। শিক্ষে-দিক্ষেদিয়্য বেগত্তুন বেচ আক্কোয়ে আঘন। সিত্যাই তারা পুজোর লদন। 

মাত্তর! মুই ন’ জানঙ আমা অঝাপাত। বানা অন্য জনত্তুন শুনিনেই আদালং-পাদালং গরি কোই দিলুং চুচ্যাঙ্যা- কা, গুজঙ্যা- খা, চান্দ্যা- গা এ তিন্নো ওক্কোর। সিয়োত নিজরে নিজে কত্তমান লাজেলুং মুই বাদে কন’ জনে বুঝি ন’ পারিবাক। লাজে ধচ্যে। সে লাজত্তুন ইমে গরিলুং চাঙমা লেঘা খামাক্কাই খামাক্কাই শিঘিম।  

সুনানু ইনজেব চাঙমা আ সুনানু অন্বেশন চাঙমা

মুই ইয়ান কোইম- “আজলে মুই দাঙর কবাল্যা। করোনাত্যাই রাজশাহীত্তুন ঘরত ফিরি এই পেলং, সরকারে ইক্কুল কলেচ বন্ধ গরানা সমারে সমারে। ঘরত এনেই পুজ্য জ্ঞান কীর্তি ভান্তেদাঘি আমা আদামত চাঙমা সাহিত্য বাহ্ তপ্পেত্তুন চাঙমা লেঘা কোর্স জুগল গচ্ছে। আর দেরি ন’ গরি চাঙমা লেঘা শিঘিলুং। কারণ, মুই খবর পাঙর এক্কো জাত অদ’ যেনেই আমাত্তুন বেক্কানি লাগিবো। ভাচ, ওক্কোর, আল্যাক (সাহিত্য), রিদিসুধোম বাজি থেলে এক্কো জাত বাজি থায়। এধক্যে চিদেত্তুন চাঙমা লেঘা শিঘি নিজরে নিজে চাঙমা ভাবঙর, এর আগেদি এলুং মুই কজ্জর।  

রবিবার, ৩ জানুয়ারী, ২০২১

চাঙমা সাহিত্য বাহ্ তপ্পেত্তুন ১৬৪ জনরে সার্টিফিকেট দিয়্যা অহ্’য়


২০৫০ ভিশন ভালেদি ওক-

"ত্রিশতিন জাদির ভাচ পারানা এক্কান দাঙর গুন মাত্তর, তার আগে নিজ 'ভাচ, নিজ লেঘা পারানা সাতকাম" 
এ মুলুক কধায়ান মুজুঙে রাঘেই চাঙমা সাহিত্য বাহ্ বাঘেইছড়ি উপজেলা আ কাচালং সরকারি কলেজ ধেলার তপ্পেত্তুন ৩২নং বাঘেইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদর উদোনত চাঙমা পর্বোয়াউনোরে সার্টিফিকেট ভাক গরি দেনা পৈদ্যানে দোল এক্কো দাঙর তেম্মাংখলা অই যেল।
এ তেম্মাং খলাবোত নকবাচ্য গরবা ইজেবে আহ্’জিল অইয়ে ৩২ নং বাঘেইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদর চেয়ারম্যান সুনানু সুনীল বিহারী চাঙমাদাঘি, মুলুক গর্বা ইজেবে আহ্জিল এলাক কাচালং সরকারি কলেজর মুল খুদো (অধ্যক্ষ) সুনানু দেব প্রসাদ দেবানদাঘি, কাচালং সরকারি কলেজর এজাল সাত্থু, কবি লেঘিয়্যা সুনানু লালন কান্তি চাঙমাদাঘি, সুনানু শান্তিময় চাঙমাদাঘি (বিদি যিয়্যা সাত্থু), সুনানু প্রীতিময় চাঙমা দাঘি(কার্বারী), সুনানু বীর কুমার চাঙমা (এজাল সাত্থু, উগলছড়ি হাই ইক্কুল), চাঙমা সাহিত্য বাহ্ গরা কমিতির জধানানু, সুনানু ইনজেব চাঙমাদাঘি, চাঙমা সাহিত্য বাহ্ বাঘাইছড়ি উপজেলা ধেলার জধানানু, সুনানু স্বর্ণা চাঙমা, চাঙমা সাহিত্য বাহ্ গরা কমিতির ভান্ডালি কাবিদ্যাং, সুনানু রিমি চাঙমাদাঘি, চাঙমা সাহিত্য বাহ্ গরা কমিতির সাবাঙাগী সুনানু চিত্তি চাঙমা, চাঙমা সাহিত্য বাহ্ বাঘাইছড়ি উপজেলা ধেলা, এজাল জধানানু পূজ্য শ্রীমৎ জ্ঞান কীর্তি ভান্তেদাঘী আ চাঙমা সাহিত্য বাহ্ দিঘীনালা উপজেলা ধেলার বা কাবিদ্যাং সুনানু সূচনা চাঙমাদাঘি।
কধগীদাঘি কলাক, “এধক্যে দাঙর দংগা পিরেহ্ সেরে সেরে চাঙমা সাহিত্য বাহ্ যে কামানি গরি যিয়্যা সিয়ানি জুম্ম জাত্তো খামাক্কাই ইধোত রাঘেব। এ কামানি গরি যানার তারাদাঘি দোল দোল সল্লা দিলাক।
ফাংশান আরকানিত “চেদনর আগাজত এক্কান নাঙ..........” গীত্তো খলাবো ফাংগরা অহ্’য়।
এ খলাবোত খলা পজ্জনীগিরি গরিলাক- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়র পর্বোয়া সুনানু সুস্মিতা চাঙমাদাঘি আ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়র পর্বোয়া সুনানু অন্বেশন চাঙমাদাঘি।
এ ফাংশানানত ১৬৪ জনরে সার্টিফিকেট দিয়্যা অহ্’য়। সমারে যারা পজিশন ১-৩ তারাদাঘিরে বই বুকশিচ দিয়্যা অয়। আ খলাবো শেজে চিত জুরনি তামাজা গরা অহ্’য়।

মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২০

পার্বত্য চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে এ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনালের আহ্বান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: এ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির মানবাধিকারের বিধানাবলী পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে।
ডিসেম্বর ২০২০ পার্বত্য চুক্তি সম্পাদনের ২৩ বছর হওয়ায়, আজ ১১ ডিসেম্বর ২০২০ এ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রকাশিত এক গণবিবৃতিতে এই আহ্বান জানানো হয়।
এ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনালের গণবিবৃতির পুরো অংশটি নিম্নে দেয়া হল:
বাংলাদেশ: পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির অধিকারের বিধানাবলী পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত করুন
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর থেকে ডিসেম্বর ২০২০-এ ২৩ বছর হলো। এ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল ইহার মানবাধিকারের বিধানাবলী পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের নিকট আহ্বান জানাই।
প্রায় দুই দশকের সশস্ত্র সংঘাত, যাতে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয় এবং আরো অনেকেই বাস্তুচ্যুত হয়, এর প্রেক্ষাপটের বিপরীতে আলাপ-আলোচনা করে, ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস)-র শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলটি ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। ইহা তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি নিয়ে গঠিত, যার মোট আয়তন ১৩,২৯৪ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা আনুমানিক ১.৬ মিলিয়ন (১৬ লক্ষ)। জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর, অপরদিকে বাকী অংশ হচ্ছে প্রধানত বাঙালি জাতিগাষ্ঠীর লোক। অঞ্চলটি ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সময় থেকে বিশেষ প্রশাসনিক এলাকার মর্যাদা ভোগ করেছিল। ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি, ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন, ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন, এবং ১৯৫৬ ও ১৯৬২ সালের পাকিস্তানের সংবিধান এই অঞ্চলকে একটি বিশেষভাবে শাসিত অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছিল। ১৯৬১ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ১৯০০ সালের শাসনবিধির ৩৪নং ধারা সংশোধন করে প্রথমবারের মত আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্যগত ভূমির অধিকার কাটছাঁট করে। ১৯৬২ সালে পাকিস্তান সরকার এই অঞ্চলের মর্যাদাকে ‘ট্রাইবাল এলাকায়’ পরিবর্তিত করে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর, নতুন সংবিধান ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সময় থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল ঐতিহাসিকভাবে যে বিশেষ মর্যাদা ভোগ করত তা সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়। এরপর ১৯৭৫ পরবর্তী সরকার বাঙালি জনগণকে বসতি প্রদান করে অঞ্চলটির জনমিতিগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করার চেষ্টা করে। ১৯৭৯ ও ১৯৮৫ সালের মধ্যে প্রায় চার লক্ষ বাঙালি জনগণকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসতি প্রদান করা হয়, যা জাতিগত সংঘাতকে উস্কে দেয়, যাতে হাজার হাজার আদিবাসী নিহত ও বাস্তুচ্যুত হয়, যাদের মধ্যে অনেকেই প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে।
১৯৯৭ সালে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে, এ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল ইহার বাস্তবায়নের অগ্রগতি পরিবীক্ষণ করে আসছে। ২০০০ সালে চুক্তি বাস্তবায়নের ধীর গতির বিষয়ে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলাম। ২০১৩ সালে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন সংক্রান্ত অবাস্তবায়িত সংস্কারসমূহ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত অবাস্তবায়িত অঙ্গীকারসমূহ ব্যাপারে আমরা বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরি।
পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়নের অবস্থা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মানবাধিকার পরিস্থিতি হতাশাজনকভাবে ২০১৩ সালের মতই রয়ে গেছে। জনসংহতি সমিতির মতে, শান্তি চুক্তিতে বর্ণিত বিধানাবলীর মাত্র ১৫ শতাংশই সরকার কর্তৃক পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে, অপরদিকে ৫০ শতাংশের অধিক বিধানাবলীই অবাস্তবায়িত রয়েছে, এবং এক চতুর্থাংশ হয় আংশিকভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে অথবা কিছু অগ্রগতি হয়েছে। এই পরিস্থিতির উপর সরকারের রয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন অভিমত, সরকার দাবি করছে যে, কোন মূলধারাই অবাস্তবায়িত রাখা হয়নি, তারা ৫৬ শতাংশ ধারাই পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করেছে, এবং অবশিষ্ট ৪৪ শতাংশ ধারা হয় আংশিকভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে, অথবা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল এই বর্ষপূর্তি উপলক্ষে প্রাসঙ্গিক ধারাগুলোর পর্যালোচনা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে কাজ করছেন এমন চার বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার কর্মীর সাথে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে মূলধারাগুলোর অবস্থা তুলে ধরছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি ১৯৯৭-এ সাধারণভাবে তিনটি দিক রয়েছে: (ক) আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণকরণ; (খ) পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় সরকার সংস্থাসমূহ ক্ষমতায়ণ; এবং (খ) পুনর্বাসন। নিম্নের অনুচ্ছেদসমূহে চুক্তির মানবাধিকারের কিছু দিক পর্যালোচনা, এবং সেগুলোর বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিরূপণ করা হল।
(ক) উপজাতীয় অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণকরণ
শান্তি চুক্তির খন্ড ১ চুক্তির ভিত্তিকে গড়ে তুলেছে। এতে রয়েছে চারটি ধারা। ১নং ধারায় উপজাতীয় অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়। ২নং ধারায় নতুন আইন, বিধি ও প্রবিধান প্রণয়ন এবং বিদ্যমান আইনসমূহ সংশোধন করে এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য পক্ষগুলোর দায়িত্বসমূহের রূপরেখা প্রদান করা হয়। ৩নং ধারায় পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটি গঠনের মাধ্যমে একটি বাস্তবায়ন সংক্রান্তকর্মব্যবস্থা প্রদান করা হয়, অপরদিকে ৪র্থ ধারায় বাস্তবায়নের জন্য সময়সীমা প্রদান করা হয়।
খন্ড ১-এ মানবাধিকারের প্রধান বিষয় হচ্ছে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অধিকার, যাতে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে, অঞ্চলটির আদিবাসী বৈশিষ্ট্যের সংরক্ষণ। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি, যাতে বাংলাদেশ একটি পক্ষ – উভয়ের ধারা ১-এ শর্ত উল্লেখ রয়েছে যে, সকল জাতিগোষ্ঠীর ‘তাদের রাজনৈতিক মর্যাদা স্বাধীনভাবে নির্ধারণ করা এবং স্বাধীনভাবে তাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ সাধন করার’ অধিকার রয়েছে।
সরকার যখন আইন প্রণয়ন ও সংশোধন করে এবং পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটি গঠন করে, তখন অঞ্চলটির বিশেষ মর্যাদা স্বীকার করে একটি সাংবিধানিক কাঠামো, সংশোধিত আইনসমূহের জন্য কার্যবিধিমালা প্রণয়ন, এবং পুলিশ আইন ১৮৬১ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিধিমালা ১৯০০ এর সংশোধন এর অনুপস্থিতির কারণে বাস্তব ক্ষেত্রে এই পরিবর্তনের প্রভাব পড়ে সামান্য।
শান্তি চুক্তি আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৈশিষ্ট্যাবলী সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকৃতি প্রদান করে। ১৯৭০ দশকের শেষ থেকে একের পর এক বাংলাদেশ সরকারসমূহ কর্তৃক ধারাবাহিক পুনবসতিপ্রদানের কার্যক্রম অঞ্চলটির জনমিতিগত বৈশিষ্ট্য মৌলিকভাবে বদলে দেয় এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে পরিণত করে সংখ্যালঘুতে। চুক্তিটি প্রয়োজনীয় আইনগত পরিবর্তন আনয়নের জন্য স্বাক্ষরকারী পক্ষগুলোর দৃঢ়সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করে, যেমন ১৯৮৯ সালের তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ও ১৯৯৮ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন সংশোধন; ভূমি বিরোধের জন্য এবং পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটি গঠনের জন্য নতুন আইনী কাঠামো সৃষ্টি।
শান্তি চুক্তি অনুযায়ী অন্তত পাঁচটি সংশ্লিষ্ট আইনগত ও সাংবিধানিক সংশোধনী বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২০১১ সালে গৃহীত সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে (ধার ২৩ক), সরকার আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও বিকাশের জন্য বিধানাবলী অন্তর্ভুক্ত করেছে। তবে পিসিজেএসএস ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলো পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর সুনির্দিষ্ট উল্লেখ করে ধারা ২৮(৪) এর সংশোধন দাবি করেছে। এই ধারা বৈষম্যহীনতার সাংবিধানিক মূলনীতিকে লংঘন ব্যতিরেকে ‘নাগরিকদের অনগ্রসর অংশ’কে লক্ষ্যভুক্ত করে বিশেষ আইন প্রণয়নের জন্য আইনগত জানালা খুলে দেয়। বাংলাদেশ সংবিধানের ধারা ২৮ ‘কেবল ধর্ম, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ অথবা জন্মস্থানের ভিত্তিতে কোন নাগরিকের বিরুদ্ধে বৈষম্য না করতে’ রাষ্ট্রকে আইনগতভাবে বাধ্য করে, কিন্তু ধারা ২৮(৪) উল্লেখ করে যে, ‘এই ধারার কোনোকিছুই নারী বা শিশুর অনুকূলে অথবা নাগরিকদের যেকোনো অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন থেকে রাষ্ট্রকে বিরত করবে না।’ আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী দীর্ঘ সময় একটি সুনির্দিষ্ট রেফারেন্স ‘অথবা পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণ’ যুক্ত করার জন্য দাবি করে আসছে। এ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনালের বিবেচনায় এই প্রস্তাবিত সংশোধনীটি হবে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের জন্য বিশেষ মর্যাদা বাস্তবায়নের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। শান্তি চুক্তির ধারাসমূহের বাস্তবায়ন যেমন পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি ১৯০০, পুলিশ আইন ১৮৬১ এর সংশোধন, সংশোধিত পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন ১৯৯৮, এবং পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮ হল সংবিধানে এরূপ ধারার সাপেক্ষে।নয়তো, অঞ্চলটির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ যেকোনো বিশেষ মর্যাদা আইনগত চ্যালেঞ্জের কাছে অরক্ষিত।
সরকার কয়েকটি আইনগত উদ্যোগও গ্রহণ করেছে, যেমন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন ১৯৯৮, পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ (সংশোধন) আইন ১৯৯৮, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১ (২০১৬ সালে সংশোধিত), এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিধিমালা (সংশোধন) আইন ২০০৩ প্রণয়ন। তবে এইসব আইনসমূহ প্রবিধান প্রণীত না হওয়ার কারণে কার্যকর হতে পারে না। কার্যবিধিমালা ব্যতিরেকে, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটি অকার্যকর হয়ে পড়ে রয়েছে।
(খ) পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় সরকার সংস্থাসমূহের ক্ষমতায়ন
তিন পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন ১৯৮৯ (১৯৮৯ সালের ১৯, ২০ ও ২১ নং আইন) এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন ১৯৯৮ এই চারটি আইন সংশোধন/প্রণয়নের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদসমূহ ক্ষমতায়িতকরণ হচ্ছে শান্তি চুক্তির সর্ববৃহৎ অংশ। ইহা স্বাক্ষরিত হওয়ার পূর্বে, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলটি ১৯৮৯ এর আইনের মাধ্যমে শাসিত হয়েছিল, এবং সমঝোতা চলাকালে আদিবাসী নেতারা এইসব আইনসমূহের পুঙ্খানুপুঙ্খ পুনর্বিবেচনার দাবি করেছিল। শান্তি চুক্তির খন্ড ৩ এর লক্ষ্য হচ্ছে তিন পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদসমূহের একটি স্বাধীন সমন্বয়কারী সংস্থা হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদকে ক্ষমতায়িত করা, অপরদিকে খন্ড ২ তিন পার্বত্য জেলায় স্বতন্ত্র স্থানীয় সরকার সংস্থার ব্যবস্থা করে।
খন্ড ২-এ ৩৫টি অনুচ্ছেদ রয়েছে যেগুলো ১৯৮৯ সালের আইনে করা পরিবর্তনসমূহের বিস্তারিত রূপরেখা প্রদান করে। সরকার যেখানে দাবি করে যে, ২৪টি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে, এবং ১১টি হয় আংশিকভাবে বাস্তবায়িত, অথবা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় রয়েছে, সেখানে পিসিজেএসএস’এর যুক্তি হচ্ছে যে, ৩৫টির মধ্যে মাত্র ১৬টি বাস্তবায়িত হয়েছে।
খন্ড ২ ও ৩ আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, তাদেরকে প্রভাবিত করে এমন শাসনব্যবস্থায় ও সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণের অধিকার, এবং নিজেদের ঐতিহ্যগত ভূমির উপর আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকারকে সম্মান, সুরক্ষা ও পরিপূর্ণ করার সরকারের অঙ্গীকারের সাথে সম্পর্কযুক্ত। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি উভয়ের ধারা ১(১), যাতে বাংলাদেশ একটি রাষ্ট্রপক্ষ, সকল জাতিগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের শর্ত উল্লেখ করে, এবং উল্লেখ করে যে, ‘এই অধিকার বলে তারা তাদের রাজনৈতিক মর্যাদা স্বাধীনভাবে নির্ধারণ করে এবং স্বাধীনভাবে তাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ সাধন করে।’ নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তির ধারা ২৫(ক) অনুসারে, প্রত্যেক নাগরিকের ‘প্রত্যক্ষভাবে অথবা স্বাধীনভাবে বাছাইকৃত প্রতিনিধির মাধ্যমে লোক/সরকারি বিষয় পরিচালনায় অংশগ্রহণ করা’র অধিকার রয়েছে। আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে তাদের ঐতিহ্যগত ভূমির উপর আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার স্বীকার করা হয়েছে, যাতে বলা হয়েছে যে, সরকারসমূহ ‘তাদের ভূমি বা ভূখন্ড এবং অন্যান্য সম্পদকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন যেকোনো প্রকল্প অনুমোদনের পূর্বে তাদের স্বাধীন ও অবহিত সম্মতি অর্জনের উদ্দেশ্যে’ তাদের সাথে পরামর্শ করবে।
শান্তি চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এইসব অধিকারের জন্য সুত্র এবং ক্ষমতা প্রদানকারী বিধানাবলী। খন্ড ২ এর অনুচ্ছেদ ৩ ‘অউপজাতীয় স্থায়ী বাসিন্দা’কে এমন একজনকে সংজ্ঞায়িত করে, যিনি আদিবাসী সম্প্রদায়ের নয়, যিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে বৈধভাবে ভূমির মালিক, এবং সাধারণত পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে একটি সুনির্দিষ্ট ঠিকানায় বসবাস করেন। বিধানটি অ-আদিবাসী স্থায়ী আবাসস্থলের সুযোগকে সংজ্ঞায়িত করেছে এবং এই নির্ধারণের ক্ষমতা নির্বাচিত আদিবাসী নেতাদের কাছে অর্পণ করেছে। একজন অধিকারকর্মীর মতে, বিধানটি পার্বত্য চট্টগ্রামের মধ্যে স্থানীয় ব্যাপারে এবং আরও পুনবসতিদানের কার্যক্রম সীমিত করতে আদিবাসী নেতাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাকরণ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
তবে ডেপুটি কমিশনারকে ‘স্থায়ী বাসিন্দা সনদ’ প্রদানের অনুমতি প্রদান করে ২০০০ সালের একটি সরকারি আদেশ এই বিধানকে দূর্বল করেছিল। ইহা খন্ড ২ এর অনুচ্ছেদ ৪(ঘ) অনুযায়ী – এক আদিবাসী প্রশাসক – সার্কেল চীফের উপর প্রদত্ত কর্তৃত্বকে অস্বীকার করে। তদুপরি, ডিসি কর্তৃক প্রদত্ত সনদসমূহ (খন্ড ২ এর অনুচ্ছেদ ৯ অনুযায়ী) ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অথবা আদিবাসী ও স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য প্রযোজ্য অন্যান্য সুফল ভোগ করার অধিকার প্রদান করবে, তদনুযায়ী স্থানীয় পরিষদসমূহের কর্তৃত্ব দূর্বল করে দেবে। এই কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘ দিন ধরে সার্কেল চীফের নিকট স্থায়ী বাসিন্দার সনদ প্রদানের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার দাবি করে আসছে। সরকার আইনটি সংশোধনের অঙ্গীকার করেছিল, কিন্তু কোন পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
খন্ড ২ এর ৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে, সরকার প্রত্যেক পার্বত্য জেলা পরিষদে নারীদের জন্য তিনটি আসন এবং অ-আদিবাসীদের জন্য অন্তত একটি আসনসংরক্ষণ করবে। সেই অনুসারে আইনটি সংশোধন করা হলেও, সরকার শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে কোন নির্বাচন আয়োজন করেনি, তাই কার্যক্ষেত্রে বিধানটি অপরিপূর্ণ রয়ে গেছে।
খন্ড ২ এর অনুচ্ছেদ ২৬ পার্বত্য জেলা পরিষদের পূর্ব অনুমতি ব্যতিরেকে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্যগত ভূমির সাথে সংশ্লিষ্ট লেনদেন সীমিত করে দেয়। অনুচ্ছেদ ২৬(খ) শর্ত উল্লেখ করে যে, ‘আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, পার্বত্য জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণ ও আওতাধীন কোন প্রকারের জমি, পাহাড় ও বনাঞ্চল পরিষদের সাথে আলোচনা ও ইহার সম্মতি ব্যতিরেকে সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণ ও হস্তান্তর করা যাইবে না।’ অধিকন্তু, খন্ড ২ এর অনুচ্ছেদ ৩৪(ক) পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহকে ‘ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা’ প্রদান করেছে, পক্ষান্তরে অনুচ্ছেদ ২৭ পরিষদসমূহে ভূমি উন্নয়ন কর সংগ্রহের ক্ষমতা প্রদান করে। এইসব বিধানাবলী নিজেদের ঐতিহ্যগত ভূমির উপর আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি। শান্তি চুক্তির প্রয়োজন অনুসারে, সরকার এইসব বিধানাবলী অন্তর্ভুক্ত করে পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ১৯৮৯ সংশোধন করেছে। তবে, যেহেতু সরকার আইন কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় বিধিমালা ও প্রবিধান প্রণয়ন করেনি, তাই ডিসিগণ পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহের সাথে পরামর্শ ব্যতিরেকে ভূমি হস্তান্তর প্রক্রিয়াকরণ, অধিগ্রহণ, লীজ, ও বন্দোবস্তি এবং ভূমি উন্নয়ন কর সংগ্রহকরণ সহ ভূমি ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা অব্যাহতভাবে প্রয়োগ করে চলেছে।
খন্ড ২ এর অনুচ্ছেদ ১৯ অনুযায়ী, সংশোধিত ১৯৮৯ সালের আইনসমূহ পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়ন প্রকল্প ‘প্রণয়ন, প্রবর্তন ও বাস্তবায়ন করতে’ পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহকে ক্ষমতায়িত করেছে। তবে, বাস্তবে যেকোনো উন্নয়ন কার্যক্রমের উপর চূড়ান্ত ক্ষমতা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হাতেই রয়ে গেছে, যা কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। সরকার একটি সমান্তরাল উন্নয়ন এজেন্সিও সৃষ্টি করেছে – পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড – যা পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহকে পাশ কাটাতে সক্ষম। এই পদক্ষেপসমূহ অনুচ্ছেদ ১৯ এর উদ্দেশ্যকে নিষ্ফল করে দিয়েছে।
খন্ড ২ এর অনুচ্ছেদ ৩৪ ও ১৯৮৯ সালের সংশোধিত আইনসমূহ অনুযায়ী পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহকে ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্যে, সরকারের অন্যান্যের মধ্যে ভূমি ব্যবস্থাপনা, পুলিশ, আদিবাসী আইন, যুব কল্যাণ, পরিবেশগত সংরক্ষণ ব্যবস্থা, ও স্থানীয় পর্যটনসহ ৩৩টি কর্ম/বিষয় এর উপর ক্ষমতা জেলা পরিষদসমূহে হস্তান্তর করার কথা। পুলিশ ও আইন শৃঙ্খলা, ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ সংরক্ষণ এর মত গুরুত্বপূর্ণ কর্মগুলো বাদ দিয়ে এখন পর্যন্ত মাত্র ১৭টি কর্ম হস্তান্তর করা হয়েছে।
খন্ড ৩-এ ১৪টি অনুচ্ছেদ রয়েছে যেগুলো পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন ১৯৯৮ এর আওতায় প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সংশোধনের রূপরেখা প্রদান করে। ১৯৯৮ সালে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইনের বিভিন্ন বিধানাবলী সংশোধন করেছে। অন্যান্য অনুচ্ছেদের ন্যায়, সরকার ও পিসিজেএসএস এর খন্ড ৩ এর বিধানাবলীর বাস্তবায়নের উপর ভিন্ন ব্যাখ্যা রয়েছে। সরকারের মতে, ৬টি অনুচ্ছেদ সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে, অপরদিকে বাকীগুলো হয় আংশিকভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে অথবা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। অপরদিকে পিসিজেএসএস’এর যুক্তি হচ্ছে যে, শুধু ৪টি অনুচ্ছেদ বাস্তবায়িত হয়েছে, ৬টি আংশিকভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে এবং অবশিষ্ট ৪টি বাস্তবায়িত হয়নি। খন্ড ২ এর ন্যায় খন্ড ৩ এর প্রধান মানবাধিকারের বিষয় হচ্ছে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার – অনেকাংশে স্বশাসন ও স্বায়ত্তশাসনের রূপে, যার জন্য শান্তি চুক্তি সাধারণ রূপরেখা প্রদান করে।
উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সমন্বয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিধিমালা ১৯০০ এর সংশোধন, এবং এই অঞ্চলের সাথে সংশ্লিষ্ট যেকোনো নতুন কোনো আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সাথে পরামর্শ করার বিধানবিষয়ে শান্তি চুক্তি এবং পরবর্তী সময়েআইনের সংশোধনীসমূহপার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদকে ক্ষমতা অর্পণ করে। খন্ড ৩ এর অনুচ্ছেদ ৯ শর্ত উল্লেখ করে যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ তিন পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহ কর্তৃক পরিচালিত সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড সমন্বয় সাধন করবে, এবং অন্যান্যের মধ্যে আইন ও শৃঙ্খলা। তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ‘নিয়োজিত দায়িত্ববলী’ পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদকে প্রদানের পরিবর্তে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬ সংশোধন করে, সরকার বরং নতুন আইন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আইন ২০১৪ প্রণয়ন করেছে, যা পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডকে স্থানীয় সরকার সংস্থাসমূহকে পাশ কাটিয়ে তার কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমোদন দেয়।
(গ) পুনর্বাসন
শান্তি চুক্তির খন্ড ৪ এর লক্ষ্য হচ্ছে সংঘাতের কারণে বাস্তুচ্যুত জনগণকে পুনর্বাসন করার মাধ্যমে, ভূমি নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করে, এবং সংঘাতে যারা জড়িত ছিল তাদেরকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে স্বাভাবিক পরিস্থিতি পুনস্থাপন করা। সেখানে রয়েছে ১৯টি অনুচ্ছেদ যাতে এইসব উদ্দেশ্যসমূহ অর্জনের জন্য কার্যপদ্ধতিসমূহ বিন্যস্ত রয়েছে। সরকার দাবি করে, ১২টি অনুচ্ছেদ পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে, অপরদিকে বাকী অনুচ্ছেদসমূহ হয় আংশিকভাবে বাস্তবায়িত অথবা কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। পিসিজেএসএস’এর দৃষ্টিতে ১৯টি অনুচ্ছেদের মধ্যে ৮টি অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে, ৭টি বাস্তবায়িত এবং বাকী ৪টি আংশিকভাবে বাস্তবায়িত। খন্ড ৪ এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি এবং চাকরি ও উচ্চ শিক্ষা কোটা সংরক্ষণ করে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর জন্য ইতিবাচক বৈষম্যের বিধান।
খন্ড ৪ এর অনুচ্ছেদ ৪ অ-আদিবাসী ও অস্থানীয় জনগণের নিকট প্রদত্ত ভূমির লীজ বাতিল করার ক্ষমতাসহ, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির ম্যান্ডেট দিয়ে একটি ভূমি কমিশন প্রতিষ্ঠার শর্ত উল্লেখ করে। চুক্তির খন্ড ৪ এর অনুচ্ছেদ ৫ অনুযায়ী, প্রথম ভূমি কমিশন গঠন করা হয় ১৯৯৯ সালে (এখন পর্যন্ত পাঁচ বার গঠন করা হয়েছে)। সরকার ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন পাস করে ২০০১ সালে, সংশোধন করে ২০১৬ সালে। তবে, কমিশন আইনের অনুচ্ছেদ ১৮ অনুযায়ী, সরকার কমিশনকে কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় কার্যবিধিমালা এখনও প্রণয়ন করেনি। কমিশন তিন পার্বত্য জেলায় ইহার দপ্তরসমূহও স্থাপন করেনি এবং এখনও কোন কর্মচারী নিয়োগ করেনি। এখন পর্যন্ত ভূমি বিরোধ বিষয়ক ২২,৮৬৬টি আবেদনপত্র যাচাই করা হয়নি এবং একটি মামলাও নিষ্পত্তি করা হয়নি। বিধিমালার অভাবে কমিশন এখনও পর্যন্ত কোন বিরোধের শুনানি শুরু করেনি।
চুক্তির খন্ড ৪ এর অনুচ্ছেদ ১০ চাকরি ও উচ্চ শিক্ষা বৃত্তিতে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর জন্য কোটা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে। সরকার সেই অনুসারে সরকারি চাকরির ১ম থেকে ৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত এবং উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানমূহে বিধানের ব্যবস্থা করেছে। তবে, ২০১৮ সালে, সরকার ১ম ও ২য় শ্রেণির সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দকৃত কোটা বাতিল করে দেয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনসমূহ অসুবিধাগ্রস্ত গোষ্ঠীগুলোর অনুকূলে এরূপ ইতিবাচক পদক্ষেপের ব্যবস্থা করে। জাতিগত বৈষম্য দূরীকরণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি, যাতে বাংলাদেশ একটি রাষ্ট্রপক্ষ, ‘কার্যকর সমতা’ অগ্রগতিসাধনের জন্য এবং ‘অসুবিধাগ্রস্ত গোষ্ঠীকে মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার পূর্ণাঙ্গ ও সমান উপভোগ নিশ্চিত করার জন্য’ অস্থায়ী ‘বিশেষ পদক্ষেপ’ গ্রহণে রাষ্ট্রসমূহকে অনুমোদন দেয়।
সুপারিশমালা
শান্তি চুক্তির মানবাধিকারের বিধানাবলী বাস্তবায়নের দিকে অর্থপূর্ণ অগ্রগতির উদ্দেশ্যে, এ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সরকারকে নিম্নোক্ত আহ্বান জানায়:
১. আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বাস্তবায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন পাস করতে পারার লক্ষে বাংলাদেশ সংবিধানের ধারা ২৮(৪) এর সংশোধনী প্রস্তাব করুন।
২. পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অধিকার সংরক্ষণ ও রক্ষা করুন।
৩. নিজেদের ঐতিহ্যগত ভূমির উপর আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষা করুন।
৪. জনজীবনে এবং তাদেরকে প্রভাবিত করে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের অধিকারকে সম্মান, রক্ষা ও প্রতিপালন করুন।
৫. ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য দ্রুত ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন এবং দশকের পর দশক ধরে ন্যায়বিচারকামী আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীকে প্রতিকারের ব্যবস্থা করুন।
৬. কার্যকর সমতা অর্জন এবং তাদের মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার পূর্ণ ও সমান উপভোগ নিশ্চিত করার লক্ষে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর জন্য চাকরি ও উচ্চতর শিক্ষা বৃত্তিতে কোটা পুনর্বহালসহ বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।

 

শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২০

২০৫০ ভিশন ওলেবাত্তেই পাচলাক আনাচ চারা লাগানা কাম ২০২১ সালত আহ্’দ নেযার - চাঙমা সাহিত্য বাহ্

 

চাঙমাউন যুক যুক ধরি নানান তচ্যা, পেরাসানি খাদে খাদে পাজা-খাজ্যাক আ রিদিসুধোম যেধক্যে অভার কধা সেধক্যে নেই কলে চলে। কধ’ গেলে কন’ উজন্দি নেই। ভাচ, ওক্কোর পাজা-খাজ্যাক সেধক্যে ফগদাঙ ন’ অহ্’র। অন্যকিত্তেদি দেঘা যিয়ে চাঙমাউনর যুদ্ধ জয় গচ্ছে দাঙর দাঙর বিজক আঘে। আঘে, বৃটিশলোই যুদ্ধ জয় গরানা বুকপাদা ধর কধা। আমি সে খজাল(বীর) সর্দার রাধামনত্তুন ইয়ানয়্য শিক্কে পেই “ চেরেচতা গরিলে যে কন’ কাম ওলেই পারে, জয় গরি পারে।” আমি সে নমিজিল্যা চিদে চেদনত্তুন জাত্তোরে সরান  দিন্যাই চাঙমা সাহিত্যরে বিশ^ দরবারত পোতপোত্যা গরি রাঘেবার আঝা-সবন দেঘি চাঙমা সাহিত্য বাহ্ এচ্যে ২০ বঝর সং নিআলসি গরি কাম গরি যার। 
এ  কামানি যারা মনর, ধনর এজাল দেদন তারারে চাঙমা সাহিত্য বাহ্ ইধোত গাদে রাঘায়, রাঘেব। সমারে চাঙমা সাহিত্য বাহ্ ২০৫০ ভিশন ওলেইবাত্তে নানাঙ তপ্পেলোই (শ্রেণী) তেম্মাং গরি যার। যনি ১ ডিসেম্বরত্তুন ধরি নানান তপ্পেলোই তেম্মাঙত বোইবার কধা থেলেয়্য নানান অনটনে সে পুরে পুরে তেম্মাঙত বোই পারা ন’ যায়।
 গেল্লে ১১ ডিসেম্বর ২০২০ ইং শুক্করবারেত্তুন ধরি চাঙমা সাহিত্য বাহ্ এক্কো এওজি তম্বা লংগদু আর্য গিরি বন বিহার থিদ’ গচ্ছে পূজ্য অমর রত্ন ভান্তেদাঘিলোই পল্যে তেম্মাঙত বজে চাঙমা সাহিত্য বাহ্ এওজি তম্বা। এ এওজি তম্বাত মুর খাম ইজেবে আঘে চাঙমা সাহিত্য বাহ্ গরা কমিতি জধানানু, সুনানু ইনজেব চাঙমাদাঘি, ভান্ডালি কাবিদ্যাঙ, সুনানু রিমি চাঙমাদাঘি, সাবাঙ্গী চিত্তি চাঙমাদাঘি, চাঙমা সাহিত্য বাহ্ গরাকমিতি এজাল জধানানু, লংগদু ধেলা জধানানু, সুনানু শ্লোক চাঙমাদাঘিসুমুত্তুত দিঘীনালা উপজেলা বাহ্ কাবিদ্যাং, সুনানু সূচনা চাঙমাদাঘি।
দিপজ্যা মাধান ২টা গরি তেম্মাঙত বো অহ্’লে ভান্তেদাঘিরে চাঙমা সাহিত্য বাহ্ ২০৫০ ভিশনর কধা পরাক পরাক গরি ভাঙি কোই কয়। পরে ভান্তে তারা কধানি একনিমোন গরি শুনি পরামর্শ দিল- “৫০/৬০ একর জাগা আনাচ আ কধা বাগান গরি কামানি ওলেই পারা।” আ সে ৫০/৬০ একর জাগা ভান্তেদাঘি দিবার আওজ গরে।
বেল্যা রেত ৮ টা গরি গ্রুফত (ফসেবুক) তেম্মাঙত বজা অলে বেগর ভান্তেদাঘির পরামর্শয়ান গজিলোই ২০২১ সালত্তুন ধরি ৫ লাক আনাচ চারা লাগেবার সল্লা গরা অহ্’য়। আ সে সল্লামজিম পত্তিক ধেলা কমিতিলোই ডিসেম্বর মাজর ভিদিরে তেম্মাঙত বজিবারও সল্লা গরা অইয়ে। আ বেগ ধেলাত্তুন পূজ্য অমর রত্ন ভান্তেদাঘিরে ঝু ঝু আ পাত্তুরুতুরু জানেলাক।    

শনিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২০

পার্বত্য চট্টগ্রাম রাজনৈকি দল:

১। ১৯১৫ সাল: চাকমা যুবক সমিতি, প্রতিষ্ঠিতা: সুনানু রাজ মোহন দেবান।
২। ১৯১৯ সাল: চাাকমা যুব সংঘ, প্রতিষ্ঠিতা: সুনানু ঘনশ্যাম দেবান।
৩। ১৯২০ সাল: পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সমিতি, প্রতিষ্ঠিতা: সুনানু কামিনী মোহন দেবান।
৪। ১৯৫৬ সাল: হিল স্টুডেন্টস উপজাতীয় কল্যাণ সমিতি, সুনানু অনন্ত বিহারী চাঙমা ও জে.বি.লারমা।

রাঙ্গামাটি ফিরে আসলাম - লেখক; পরিমল বিকাশ চাকমা, পিএসসি লেঃ কর্নেল [অবসরপ্রাপ্ত]

 


আরাকানের চাকমা অঞ্চল ঘুরে এলাম

ভুমিকাঃ
চাকমা শিড়র খুঁজতে গিয়ে অনেক দিন থেকে বার্মার আরাকানের উপর পড়াশুনা করছিলাম । আরাকানের প্রাচীন নাম ছিল ধন্যবতী । খৃষ্টপূর্ব ৩৩২৫ বছর পূর্বে এক ভারতীয় রাজকুমার মারায়ু এই ধন্যবতী রাজ্যটি প্রতিষ্ঠা করেন । প্রথম সূর্য বংশের রাজা চান্দা সুরিয়া [ Canda Suriya ] খৃষ্টপূর্ব ৫৮০ অব্দে কালাদান ও লেমিও ন্দীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে তৃতীয় ধন্যবতী রাজ্যটি প্রতিষ্ঠা করেন । প্রচুর শষ্য উত্পাদন হতো বলে এর নাম হয়েছিল ধন্যবতী [ Dannyawadi] । ইতিহাস মতে রাজা চান্দা সুরিয়ার রাজত্ব কালে স্বয়ং ভগবান বুদ্ধ ৫০০ শত অরহত শিষ্য সহ ধন্যবতী রাজ্য পরিভ্রমন করেন । ভগবান বুদ্ধের অনুমতি নিয়ে খৃষ্টপূর্ব ৫৫৪ অব্দে জগত বিখ্যাত মহামুনি বুদ্ধ মূর্তিটি চেলাগিরি পাহাড়ে নির্মাণ করা হয় । এই মহামুনি বুদ্ধ মূর্তটি ১৭৮৪ সালে বার্মা রাজা বোদাপায়া আরাকান বিজয়ের পর আরাকান থেকে মান্দালয় নিয়ে যান । এখনো এই মহামুনি বুদ্ধ মূ্তিটি মান্দালয়ে মহামুনি বুদ্ধ মন্দিরে সংরক্ষিত আছে ।
আরাকানে চাকমাদের বসবাস অনেক শত বছর পূর্ব থেকে । কর্নেল ফেইরীর লেখা বার্মা দেশের ইতিহাস [ History of Burma ] এবং ভিক্ষু চান্দামালার লেখা ধন্যাওয়াদি আরেদ পন [ Danyawadi Aredawpon ] গ্রন্থে তা উল্লেখ আছে । ডঃ পামেলা গোটম্যান তার গবেষনা গ্রন্থ Ancient Arakan বইএ দাবী করেছেন চাকমা, খুমি, ম্রো এবং চিনরা হলো আরাকানের আদি বাসিন্দা । এরা রাখাইনদের পূর্বে আরাকানে ছিল । রাখাইনরা ১০ শতকে মূল বার্মা থেকে আরাকানে প্রবেশ করে । ১০ শতকের মাঝ পর্য্যন্ত ভারতীয় চন্দ্র বংশের রাজাগন আরাকানের রাজা ছিলেন । এখনো প্রায় ৭০/৮০ হাজার চাকমা আরাকানের মংডু, বুজিতং, কিয়ক্টঅ ও লেমিও ম্রোহং অঞ্চলে বসবাস করে । কিছু চাকমা চীন হিল প্রদেশের প্লাওয়া অঞ্চলে বাস করে । রাখাইন ও বর্মীরা তাদেরকে দৈনাক [ Daingnet ] বলে ডাকলেও তারা নিজেদের চাকমা বলে দাবী করে ।
এ যাবত্কালে চাকমা ইতিহাস লেখকগন আকাকানে চাকমাদের ইতিহাস সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য দিতে পারেনি । এভাবে নিজ জাতির শিকড় খুঁজতে আমি আরাকানের ইতিহাস পড়া শুরু করি এবং আরাকানের ইতিহাস পড়তে পড়তে আরাকান রাজটি নিজ চোখ দেখার ইচ্ছা হয় । কিন্ত এদ্দিন সুযোগের অভাবে তা সম্ভব হয়ে উঠেনি । ১৯৬২ সাল থেকে ক্রমাগত ৫২ বছরের উপর বার্মায় সামরিক শাসন থাকায় বার্মা বহির বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন ছিল । বর্তমান প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন [ Thein Sein ] সরকার কিছুটা উদারনৈতিক পথ অবলম্বন করায় বর্তমানে কিছু পরিব্রাজক বার্মা ভ্রমনের সুযোগ পায় । ২০১৪ সালের মার্চ মাসে হঠাৎ আরাকান ভ্রমনের সুযোগ হয় । Sambodhi Welfare Society এর সেক্রেটারী বাবু প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা আমাকে আরাকান ভ্রমনের আমন্ত্রন জানান । আমি সানন্দে রাজী হই । কয়েক বার পারমী বৌদ্ধ বিহারে মিটিং এর পর মোটামুটি সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম যে, আমাদের দলটি ১০/১২ জনের হবে । অবসর প্রাপ্ত জয়েন্ট সেক্রেটারী বাবু তারা চরন চাকমা শারীরিক কারনে যেতে না পারায় আমাকে দল নেতার দায়িত্ব দেয়া হয় । সিদ্ধান্ত হলো আমরা ২৫ মার্চ ২০১৪ রাঙ্গামাটি থেকে টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করবো ।
যাত্রাশুরু
চূড়ান্ত ভাবে আমরা দশ জনের দল নির্বাচন করলাম । আমার বন্ধু সুগত চাকমা ননাধন আমার সঙ্গে যেতে রাজী হলেন । এছাড়াও আমাদের সঙ্গে একজন প্রাক্তন ম্যাজিষ্টেট, প্রাক্তন প্রফেসর, প্রাক্তন ব্যাংকার, দুজন মহিলা, দুজন সমাজ কর্মী ও এ্যাডভোকেট দীন নাথ তঞ্চংগা ছিলেন । আমি দীননাথ বাবুকে আমাদের সমন্বয়কারী হিসাবে নিযুক্ত করলাম । টেকনাফ যাওয়ার জন্য আমরা একটা দশ জন বসার উপযোগী মাইক্রোবাস ভাড়া করলাম । বনরুপার নিউ মার্কেট হলো আমাদের মিলন স্থান । ২৫ মার্চ ২০১৪ সকাল সাড়ে ৮ টায় আমরা ৭ জন বনরুপার নিউ মার্কেট থেকে মাইক্রোবাস যোগে রওয়ানা হয়ে গেলাম । দীননাথ বাবু চট্টগ্রাম থেকে আমাদের সঙ্গে যোগ দেবেন । বাকী দুজন সাধন ও নীলধন বাবু বান্দরবান থেকে সরাসরি টেকনাফ চলে যাবেন । চকোরিয়ায় ইনানী রেষ্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেয়ে আমরা কক্মবাজার থেকে সমুদ্রপারের রাস্তা [ Marine drive] দিয়ে রওনা হয়ে সন্ধ্যায় টেকনাফ পৌছালাম । আগামী কালের প্রস্তুতি নিয়ে আমরা টেনাফের একটি হোটেলে রাত্রী যাপন করলাম । আমাদের সাহায্য করার জন্য ননাধনের ছোট ভাই সুচিত্ত রাতে আমাদের সঙ্গে দেখা করলেন । তিনি কক্মবাজার জেলার জেলা কানুংগো । এছাড়া টেকনাফ ইমিগ্রেশন অফিসের চাকমা ছেলে স্বপন আমাদর সঙ্গে দেখা করে গেলেন এবং আগামী কালের জন্য কিছু উপদেশ দিয়ে গেলেন ।
আরাকানে পদার্পন
২৬শে মার্চ সকাল ১০ টায় আমাদের নাফ নদী পার হওয়ার কথা ছিল । একদল জাতিসংঘের কর্মকর্তা ইমিগ্রেশন অফিস পরিদর্শন করায় আমাদেরকে পাস দিতে দেরী হলো । পরে আমি স্থানীয় বিজিবি অধিনায়কের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম । তিনি আমাকে যথাযথ সন্মান দেখালেন এবং আমাদের কাজ ত্বরান্বিত করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিলেন । প্রায় দুপুর ১২টায় আমাদের ইমিগ্রেশনের কাজ সমাপ্ত হয়। এই পাশের জন্য পাসপোর্টের দরকার হয় না ।সীমান্ত বানিজ্য চুক্তি অনুযায়ী শুধু জাতীয় পরিচয় পত্রের উপর ৩/৪ দিনের জন্য বর্ডার পাশ দেয়া হয় । এই পাশ দিয়ে আরাকান রাজ্যের রাজধানী সিটুয়ে [ Sittwe ] যাওয়া যায় না, শুধু মংডু ও বুজিতং যাওয়া যায় । সাধারনত বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা এই সুবিধা গ্রহন করেন । অপর দিকে মিয়ানমারের ব্যবসায়ীরা একই সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশ আসতে পারেন । সাড়ে ১২টায় আমরা ট্রলার যোগে নাফ নদী পার হওয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম । সীমান্ত নদী পার হওয়ার জন্য কোন উন্নত মানের ফেরী বা লঞ্চ নেই । জেলেদের মাছ ধরার ট্রলারে করে নাফ নদী পার হতে হয় । এতে বুঝা যায় বাংলাদেশ মিয়ানমার সম্পর্ক কেমন । এক সঙ্গে দুটি ট্রলার ইমিগ্রেশন চেক পোষ্টের বন্দর ছেড়ে দিল । বাংলাদেশী নাগরিকরা একটি ট্রলারে এবং বর্মী নাগ্ররিকরা অন্য আর একটি ট্রলারে । ট্রলারের উপরে কোন ছাদ নেই এবং বসার জন্য কোন সিট নেই । আমরা যে যেখানে পারে কোন রকমে ট্রলারে বসলাম । মাথার উপর সূর্য্যের কড়া রোদ । আমাদের কারো ছাতা ছিল ন । ভাগ্য আমার একটি ক্যাপ ছিল, সে’টি দিয়ে মুখ ঢাকার চেষ্টা করলাম । নাফ নদী পার হতে প্রায় দুঘন্টা সময় লাগে । নাফ নদীর মোহনা দিয়ে পার হতে হয় । বাতাস ছিল না তাই নদী শান্তই ছিল । আমরা সবুজ জলরাশি আর দুধারের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে মংডু চেক পোষ্ট ঘাটের দিকে আগালাম । মাঝে মধ্যে দুএকটি জেলে নৌকা ছাড়া আর কিছু দেখলাম না । প্রায় আড়াই টায় আমরা মংডু ইমিগ্রেশন ঘাটে পৌছলাম । মংডু শহর টি আরাকানের সীমান্ত শহর নাফ নদীর পূর্ব পারে অবস্থিত । ঘাটে আমরা সবাই বাংলাদেশী পাশগুলি জমা করলাম । এর পরিবর্তে তারা বর্মী পাশ দেবে । এরি মধ্যে আমাদেরকে নেয়ার জন্য বুজিতং থেকে উ সুবিতা ভান্তে পৌছেছেন । এতে আমাদের মনোবল বেড়ে গেল কারন আমাদের মধ্যে কেউ ব্মী ভাষা জানার লোক ছিল না । দায়ীত্বপূর্ণ কর্মকর্তা বাহিরে থাকায় আমাদের পাশ পেতে দেরী হলো । ইতিমধ্যে আমরা একটা রোহিঙ্গা হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম এবং কিছু বাংলাদেশী টাকা ভাঙ্গিয়ে বর্মী টাকা বদল করে নিলাম । Exchange rate ভাল ছিল । বাংলাদেশী ১০০ টাকায় বর্মী ১১০০ চেট [Kyat ] পাওয়া যায় ।
বুজিতং থেকে আমাদের নেওয়ার জন্য যে সুবিতা ভান্তে এসেছেন তিনি একজন আরাকানী চাকমা [ দৈনাক ] । তার কথা বুঝতে আমাদের তেমন অসু্বিধা হয় না । অনেক্ষন অপেক্ষা করার পর ভান্তে খবর আনলেন দায়িত্বপূর্ণ কর্মকর্তা অফিসে না থাকায় ঐ দিন আর পাশ পাওয়া যাবে না । তাই আজ আমাদেরকে মংডুতেই রাত কাটাতে হবে । আমি সামররিক বাহিনীতে ছিলাম বলে বুঝতে পারলাম যে বেলা বেশী হওয়ায় স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনী ঝুকি নেয়নি । তখন হয়ত road protection party ক্যাম্পে চলে গেছে । আমরা হলাম বিদেশী । মংডু থেকে বুজিতং একটা বড় পাহাড় অতিক্রম করে যেতে হয় । নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বিসাবে আমিও তাই করেছিলাম । আমরা কিছুতা হতাশ হলেও করার কিছু ছিল না । সুবিতা ভান্তে আমাদেরকে একটা রাখাইন হোটেলে নিয়ে গেলেন । হোটেল ভাড়া প্রতি রুম ৫০০ টকা । এক রুমে ২জন থাকা যায় । বিকেল বেলাটা আমরা কিছুতা relax করতে পেরেছি । সন্ধ্যায় আমরা একটা রাখাইন হোটেলে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম । আরাকানে দেখলাম এখানে সেখানে মুন্ডির [ এক প্রকার নুডুলস ] দোকান । মুন্ডি বর্মীদের প্রিয় খাবার । আরাকানীরা মুন্ডি বললেও বর্মীরা বলে মহিংগা । সকাল বিকাল আরাকানী/বর্মী যুবকযুবতীরা মুন্ডির দোকানে ভির জমায় । আমি ব্যক্তিগত ভাবে মুন্ডি পছন্দ করি না । বিকালে আমি আর সুগত অনেক খোজাখুজি করে একটা চায়ের দোকান খুঁজে পেলাম । এক কাপ চায়ের দাম ২০০ বর্মী টাকা । রোহিঙ্গা হোটেলে তরকারীতে লাল মরিচ বেশী দিয়ে থাকে । তবে সবখানে একটা আলাদা [ বর্মী ] গন্ধ আছে । অনেকে তা সহ্য করতে পারে না । রোহিঙ্গাদের সঙ্গে চাটগাঁইয়া [ চট্টগ্রামী] ভাষায় কথা বলতে আমাদের কোন অসুবিধা হয় না । আমাদের হোটেলের নাম লাকি হোটেল । মালিক একজন রাখাইন । টেকনাফে বাড়ি ছিল । ৭১ সালের পর আরাকান চলে গেছেন । ব্যবসা নিয়ে ভালই আছেন । রাত্রে আমাদের সঙ্গে অনেক গল্প করলেন ।
দেখলাম বর্তমানে মংডু শহরটি রাখাইন ও রোহিঙ্গা অঞ্চলে বিভক্ত । রাতের বেলায় কেউ অপরের এলাকায় যায় না । সব গুরুত্ব পূর্ণ পয়েন্ট গুলিতে পুলিশ প্রহরা থাকে । রাখাইন ও রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মধ্যে অবিশ্বাস এখন অনেক গভীরে । মাত্র ২০১২ জুন মাসে বড় ধরনের সামপ্রাদায়িক দাঙ্গা হয় । এতে প্রায় ২০০ জন মারা যায় । প্রায় দেড় লক্ষ লোক গৃহ হীন হয়ে পরে । অনেক রোহিঙ্গা মুসলিম এখনো ত্রান শিবিরে মানবেতর জীবন যাপন করছে । রাত ৯টার পর আমাদের হোটেলে বিদ্যুত্ ছিলনা । ভাগ্য ভাল গরম তেমন ছিল না । পরের দিন ২৬ শে মার্চ সকালে আমি আর ননাধন অনেক ঘোরোঘুরি করে একটা রোহিঙ্গা রষ্টুরেন্টে বসে পুরি ও চা খেখাম । মান তেমন ভাল না । মংডু হলো জেলা শহর [HQ] । সেই তুলনায় হোটেল ও রেষ্টুরেন্ট এর মান তেমন ভাল না ।সকালে কাঁচা বাজার বসছে । বিক্রেতারা অধিকাংশ মহিলা । সামুদ্রিক বড় মাছের দাম ৩০০/৪০০ টাকা । বাজারে অনেক তাজাফুল বিক্রি হয় ।তাজা নাকেশ্বর [নাকশা ] ফুল দেখলাম । শহরে প্রচুর রিক্মা আছে । লক্ষ্য করলাম বর্মী রিক্মা আমাদের রিক্মার মত নয় । সামনে পিছনে করে দুজন বসা যায় । তবে দুজন দুদিকে মুখ করে । প্রায় রিক্মা চালক রোহিঙ্গা ।
মংডু থেকে বুজিতং
এরি মধ্যে সুবিতা ভান্তে খবর দিলেন সকাল ১০ টায় ইমিগ্রেশন অফিসে যেতে হবে । প্রত্যেকে ১০ ডলার করে দিলে ৭ দিনের পাশ পাওয়া যাবে । এই পাশ দিয়ে সিটউয়ে পর্য্যন্ত যাওয়া যাবে । আমরা সানন্দে রাজী হয়ে গেলাম । আমার আর দিননাথ বাবুর কাছে কিছু ডলার ছিল । Unforseen কোন দরকারের জন্য এনেছিলাম । ঠিক সময়ে কাজে লাগলো । আমার আনদাজ, এই ডলার সরকার পাবে না । ইমিগ্রেশনের স্টাফরা ভাগ করে নেবে । যাক আমরা তাড়াতাড়ি লাঞ্চ খেয়ে নিলাম । এখানে আমরা কিছু টাকা ভাঙ্গিয়ে নিলাম । ভান্তে আমাদের জন্য একটা খোলা মিনি ট্রাক ভাড়া করলেন । আমরা প্রায় ১ টায় মংডু থেকে বুজিতং এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম । দুবার পুলিশ চেক পোষ্টে আমাদের কাগজপত্র চেক করা হলো । মংডু-বুজিতং রাস্তা এখনো পুরোপুরি দুমূখী তৈরী শেষ হয়নি । এখনো নির্মান কাজ চলছে । রাঙ্গামাটির মত পাহাড়ি রাস্তা । চালক, হেলপার সব রোহিঙ্গা । মংডু থেকে বুজিতং মাত্র ২৫ কিঃমিঃ । আমাদের প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লাগলো । প্রায় বিকাল ৩টায় অর্থাত্ বর্মী সময় সাড়ে ৩ টায় আমরা বুজিতং চাকমা বুদ্ধ মন্দিরে পৌছলাম । স্থানীয় চাকমা সম্প্রদায়ের লোকেরা আমাদের অপেক্ষায় ছিল। বুদ্ধ মন্দিরটির নাম ধাম্মা মান্দান চাকমা বুদ্ধ মন্দির । মন্দিরটি বুজিততং শহর থেকে ৪ কিঃ মিঃ পশ্চিমে । বুজিতং জেলখানার পাশে । শুনেছি জেল খানার কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাহায্যে কিয়াংটি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল । এমনকি জেলের কয়েদিরা ও এখানে শ্রম দিয়েছিল । কিয়াংটি এখনো পুরোপুরি তৈরী হয়নি । এই কিয়াং এ ৩/৪ জন ভিক্ষু ছাড়াও ৪/৫ জন শ্রমন থাকেন । বড় ভান্তের নাম উ জাকারিয়া । আমাদের পরিচিত বাংলাদেশী ভান্তে উ পান্ডিতা এই কিয়াং এ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন । তিণি অনেক বছর ধরে আরাকান ও ইয়াংগুনে ছিলেন । বর্মী ও আকাকানী উভয় ভাষায় পারদর্শী । আমাদলের দলের আরাকান ভ্রমনের যাবতীয় যোগাযোগ তিনি করেছেন । এই চাকমা কিয়াং এ আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে । কয়েকজন গ্রামের মহিলা এসে আমাদের জন্য রাতের খানা রান্না করেছে । সন্ধ্যা হতেই আমাদেরকে রাতের খাবার দেয়া হলো । কিয়াং এর পাশে মইস্যাংদের ঘরে আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে । বর্মী নিয়মে একটি টেবিলের চারিদিকে বসে খাবার দেয়া হলো । টেবিলের উচ্চতা এক ফুট । অনেকটা আগের দিনের চাকমাদের মেজাং এর মত । এক টেবিলে ৫/৬ জন বসা যায় । ভাতগুলি জুমের চাউলের মত নরম । মাছ মাংস সহ অনেক তরকারী ছিল । একটু অবাক ব্যাপার তরকারীতে কোন শুটকি বা নাপ্যি দেয়া হয়নি । তথাপি যথেষ্ট সুস্বাদু ছিল । রাতে আরাকানী চাকমাদের সঙ্গে অনেক গল্প হলো । পরে জেনেছি এরা অনেকে বুজিতং শহরতলীতে থাকে । আরাকানী চাকমাগন বর্তমানে বর্মী নাম রাখেন এবং পোশাক পরিচ্ছদ ও রাখাইনদের মত । তারা নিজেদের মধ্যে চাকমা ভাষাই বললেও সবাই রাখাইন ও বর্মী ভাষা বলতে পারেন । উচ্চ শিক্ষা নেই বললে চলে । গ্রামে প্রাইমারী স্কুল আছে । শুধু শহরে হাই স্কুল আছে । ইংরেজী ভাষা শেখানো হয় হাই স্কলে ক্লাশ নাইন থেকে । তাই তারা ইংরেজীতে দুর্বল থেকে যায় । মোটামোটি দশম শ্রেণী পাশ করলে নীচু পদে চাকুরী পাওয়া যায় । গ্রাম বাসীদের মধ্যে লংসং পাড়ার শিক্ষিকা মা থেইন ও অবসর প্রাপ্ত পুলিশ সার্জেন্ট অং শিয়ান কে পেয়ে আমাদের একটু সুবিধা হলো । তারা আমাদের পরবর্তী programme ঠিক করতে সাহায্য করলেন । পুলিশ সার্জেন্ট এর ছেলে সীয়ে স সার্বক্ষনিক ভাবে আমাদের সঙ্গে ছিল । সে সঙ্গে থাকায় আমাদের সুবিধা হয়েছে । সে দোভাসীর কাজটা করেছে । আরাকানী চাকমাদের সাথে তঞ্চঙ্গ্যাদের মিল বেশী । কিন্ত তাদের ভাষার সঙ্গে প্রচুর আরাকানী শব্দ মিশে গেছে । তাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম তঞ্চঙ্ক্যাদের ১২ গজার মধ্যে আরাকানে ৮ গজার মানুষ আছে । গজাগুলি হলো কার্বো, অংগো, ধন্যে, মংলা, লাং, লাপোস্যে, মেলং ও মুঅ গজা । আমাদের দলে তিন জন তঞ্চঙ্গ্যা গোত্রের লোক আছে । তারা কিছু মারমা ভাষা ও বলতে পারেন যা রাখাইন ভাষার সঙ্গে মিল । চাকমাদের তিন শাখার মধ্যে কিছু শব্দের তফাত্ থাকলেও আমাদের বুঝতে কোন অসুবিধা হয় না । যেমন হাতীকে চাকমারা বলি এইট্, তঞ্চঙ্গ্যারা বলে আইট এবং আরাকানী চাকমাবলে হাজ । আরাকানী চাকমারা পাড়াকে আদামের পরিবর্তে রুয়া বলে । এই রুয়া শব্দ থেকে রোয়াজা শব্দটি এসেছে যা এখনো ত্রিপুরা ও মারমাদের মধ্যে পদবী হিসাবে ব্যবঋৃত আছে । বর্তমানে আরাকানে রোয়াজা, কারবারী বা হেডম্যান পদবী ব্যাবহ্রত হয় না । সব খানে বর্মী পদবী ব্যবহ্রত হয় । দুদেশের চাকমাদের সুখদুখঃ আলাপের মধ্যে আমাদের অনেক সময় কেটে গেল । রাতে কিয়াংএ বিদ্যুত্ ছিল না। ভোর রাত্রে বেশ ঠান্ডা, কম্বল গায়ে দিতে হয় । সকালে বেশ কুয়াশা থাকে । সিদ্ধান্ত হয় আগামী কাল বুজিতং শহর ও চাকমা পাড়া দেখতে যাবো ।
বুজিতং শহর ভ্রমন
২৭ মার্চ কলা, চা কফি ও মিষ্টি দিয়ে সকালের নাস্তা করলাম । সকাল ১০ টায় আমরা পায়ে হেটে বুজিতং শহর দেখতে গেলাম । বুজিতং শহরটি একটি নদী বন্দর ও বানিজ্য কেন্দ্র । শহরের পাশ দিয়ে মায়ু নদী বয়ে গেছে । এই নদী পথ দিয়ে আরাকান রাজ্যের রাজধানী সিটউয়ে যেতে হয় । লঞ্চ যোগে সকালে রওয়ানা করলে বিকাল ৩টায় সিটউয়ে পৌছা যায় । বুজিতং শহরের প্রবেশ পথে একটি WFP গোডাউন দেখলাম । ওখানে প্রহরী হিসাবে চাকুরী করে এক চাকমা ছেলে । তার সাথে আলাপ হলো । ঐ দিন বেতন নেয়ার জন্য মংডু যেতে হবে বলে আমাদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল । শহরে প্রবেশের আগে শহরতলীতে আমরা চাকমা পাড়া দেখতে গেলাম । এখানে প্রায় ১৫/২০ পরিবার চাকমা বাস করে । গতকাল দেখা অবসর প্রাপ্ত পুলিশ সার্জেন্ট এর বাড়ীও এখানে ।এখানকার সব বাড়ী মাচাং এর উপর তৈরী । পুরানো দিনের চাকমা আলগ ঘরের মত । যারা সচ্ছল তারা কাঠের তৈরী ঘরে থাকে । হাউজিং সোসাইটির মত বাড়ী গুলি সারিবদ্ধ । আবার দু লাইনের মাঝে রাস্তা যদিও এখনো পাকা হয়নি । প্রত্যেক বাড়ীতে পাকা বা আধাপাকা স্যানিটারী ল্যাট্রিন আছে । সাধারনত পাক ঘর মাচাং এর নীচে থাকে । আমাদের আগমনে চাকমারা সবাই খুশী । তারা আমাদেরকে আনক্যে চাকমা অর্থাৎ পশ্চিমের চাকমা বলে থাকে । শহরের ছেলে মেয়েরা চাকমা ভাষা বলতে পারে না । বুজিতং শহরের দক্ষিনে আরো কয়েকটি চাকমা পাড়া আছে । পাড়া থেকে আসা কয়েকজন মেয়ের সঙ্গে দেখা হলো । তারা কিন্ত চাকমা ভাষা বলতে পারে । পাড়া দেখার পর তারা আমাদের জন্য একটা ঘরে চা নাস্তার ব্যবস্থা করলো । বাংলাদেশে অনেক চাকমা আছে তারা শুনেছে কিন্ত এই প্রথম দেখলো । তাদের থেকে বিদায় নিয়ে আমরা বুজিতং শহরে গেলাম ।
বুজিতং শহরের প্রবেশ পথে বড় একটা কিয়াং আছে । শহরের বাজারে অধিকংশ বড় দোকানের মালিক রোহিঙ্গা । দুএকটা চাকমার ছোট দোকান ও পেলাম । সবাই কিছু জিনিস পত্র কেনাকাটা করলো । আমি নিজের জন্য একটা বর্মী ছাতা কিনলাম । কয়েক জন রোহিঙ্গা আমাদের সাথে আলাপ করলো । জিজ্ঞাসা করলো আমরা কোথা থেকে এসেছি । শহরের একটি রাখাইন হোটেলে আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম ।এখানে আমরা ব্যাং ও শুকরের মাংস খেলাম । শহরে ঘুরার সময় দুবার পুলিশ এসে আমাদের চেক করলো । এতে বুঝাযায় আমাদের জন্য প্রশাসন কতটা সতর্ক ও চিন্তিত । এরি মধ্যে খবর এলো আমাদেরকে তাড়াতাড়ি কিয়াং এ ফিরতে হবে । আমরা একটা খোলা ট্রাক ভাড়া করে তাড়াতাড়ি কিয়াং এ ফিরে এলাম । সময়ের অভাবে আর মায়ু নদী দেখা হলো না ।
কিয়াং এ এসে কিছুক্ষন বিশ্রামের পর আমরা চাকমা পাড়া দেখার জন্য তৈরী হলাম । বিকাল ৪টায় আমরা একটি খোলা হাফ ট্রাকে করে চাকমা পাড়া লংসং এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম । বুজিতং মংডু মেইন রোড দিয়ে কিছু যাওয়ার পর আমরা কাঁচা রাস্তায় নেমে এগুলাম । রাস্তায় আমাদের কে কয়েকটা আর্মী চেক পোষ্ট পার হতে হলো । কোন চেক পোষ্টে আমদের থামতে হয়নি এবং প্রহরীরা আমাদের চেকও করেনি। রোহিঙ্গা সমস্যার জন্য বর্তমানে আরাকানে বিরাট সংখ্যায় আর্মী, পুলিশ ও সীমান্ত রক্ষী বাহিনী নিয়োজিত । মিয়ানমারে চাকমা সম্প্রদায় ছাড়া আর কেউ রোহিঙ্গা ভাষা বলতে পারেনা । একারনে বর্তমানে পুলিশ, আর্মী ও সীমান্ত রক্ষী বাহিনীতে চাকমা ছেলেদের চাহিদা বেড়ে গেছে । এসব বাহিনীতে এখন অনেক চাকমা ছেলের চাকুরী হয়েছে । পুলিশে চাকুরী করে এরকম কয়েকজন চাকমা ছেলের সঙ্গে আমাদের ও দেখা হয়েছে । আমরা চাকমা জানতে পেরে তারা আমাদেরকে সাহায্য করেছে ।
চাকমা পাড়া লংসং দেখা
চাকমা পাড়া লং সং এর প্রায় অর্ধ কিঃমিঃ দূরে এসে আমাদের গাড়ী থামলো । পথে আমরা কয়েকটা রোহিঙ্গা পাড়া ফেলে আসলাম । লংসং পাড়ার প্রবেশ পথে এলে পাড়ার অনেক নারী পুরুষ ও ছেলে মেয়ে এসে আমাদেরকে অভ্যর্থনা জানালো । ছোট ছেলেমেয়েদের হাতে ছিল banner, ইংরেজীতে লেখা ছিল, “ We are Chakmas, Welcome to Long Chong, We love our culture, Teach us Chakma tradition, We are missed , Do not forget us.” লংসং পাড়ার মানুষের আবেগ ভালবাসা ও হ্রদয়ের অনুভুতি দেখে আমরা মুগ্ধ, অভিভুত । মনে হলো আমরা যেন যুদ্ধ ফেরত সৈনিক, দীর্ঘ দিন পর যেন একান্ত আপন জনের কাছে ফিরে এসেছি । পাড়ার উপস্থিত সব লোক প্রবেশ পথের দুধারে দাড়িয়ে ছিল । হাত জোর করে জু জু বলে সালাম দিচ্ছিল । লংসং পাড়াবাসীরা আমাদেরকে কিয়াং ঘরে নিয়ে বসালো । এখানেই আমাদেরকে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা দেয়া হলো । দল নেতা হিসাবে আমিই প্রথম সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখলাম । তারপর সকলে নিজের পরিচয় দিয়ে পান্ডিতা ভান্তে চাকমা আরাকানী উভয় ভাষায় দীর্ঘ বক্তব্য দিলেন । পাড়ার পক্ষ থেকে কিয়াং কমিটির সভাপতি এবং বড় ভান্তে কছু বললেন । তারপর হালকা নাস্তা দেয়া হলো । কিছুক্ষন বিশ্রামের পর আমরা পাড়া ঘুরতে গেলাম । লং সং একটি বেশ বড় গ্রাম । এখানে প্রায় ২০০ চাকমা পরিবার বাস করে । পাড়ার পূর্ব পাশ দিয়ে চলে গেছে প্রিংখ্যং নদী । আর নদীর পরেই ছোট ছোট পাহাড় । একটি প্রামারী স্কুল ও আছে । এই স্কুলের শিক্ষিকা মা থেইন সব সময় আমাদের সঙ্গে ছিল । পাড়ার সব গুলি ঘর মাচাং এর উপর । দুএকটা বাড়ী কাঠের । সবাই কৃষি জীবি । পাড়ার পশ্চিমে বিরাট সমতল মাঠ, ধান ক্ষেত । এক গ্রামবাসী আমাকে বলেছিল, আগে তাদের অনেক জমি ছিল । নে উইন সরকার সমাজতান্ত্রিক নীতি শুরু করলে প্রত্যেক চাষী জমি অনুযায়ী সরকারকে ধান দিতে হতো । তাই ঝামেলা এড়াতে অনেক চাকমা অতিরি্ক্ত জমি বিক্রী করে দিয়েছিল । গ্রাম বাসীদের কোন বাগানবাগিচা নেই কারন এখনো পাহাড় গুলির মালিক সরকার । এখান থেকে বুজিতং শহর প্রায় ৬/৭ কিঃমিঃ হবে । একমাত্র বুজিতং শহরে হাই স্কুল আছে । হাই স্কুলের ছেলেমেয়েদের এত দুর পথ পায়ে হেটে স্কুলে যেতে হয় । এজন্য বুজিতং চাকমা কিয়াং এ একটি ছাত্রাবাস তৈরী প্রকল্প হাতে নেয়া হেয়েছে । ২০১৪ সালের জুন মাসে ইয়াং গুন ভ্রমনের সময় আমার এক ভাই [ Cousin] সুবির দার [ বর্মী নাম Aye Mong ] কাছ থেকে জানতে পেরেছি এই বছর বুজিতং থেকে মাত্র ৩ জন ১০ ক্লাশ পাশ করেছে । ছাত্রাবাস করার জন্য বাংলাদেশের Sombodhi Welfare Society আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে । যাক আমরা পাড়া ঘুরে আবার কিয়াং এ ফেরত আসলাম । গ্রামবাসীরা আমাদেরকে আজকের রাত কাটিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলো । এখানে উল্লেখ্য যে মিয়ানমারে কোন বিদেশী নাগরিক বক্তিগত [ private ]বাড়ীতে থাকার অনুমতি নেই । তাছাড়াও আমাদের সঙ্গে কোন বক্তিগত লাগেজ [ luggage ] না থাকায় আমরা কিয়াং এ ফেরত যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম । শেষ পয্যন্ত আমাদেরকে রাতের খাবার খেয়ে যাবার অনুরোধ রাখতে হলো । গ্রামবাসীরা আমাদের জন্য খাবার রান্না করলো । এই লংসং কিয়াং এ আমাদের সঙ্গে এক বাংলাদেশী ভান্তের দেখা হলো । তার নাম পূণ্যাশ্রী ভিক্ষু, গৃহী নাম সৈকত । মধুমঙ্গল বাবুর ছাত্র ছিল । কয়েক বছর ধরে লংসং কিয়াং এ থাকেন । এই কিয়াংএ বেলা ৫টায় আমাদের খাবার দেয়া হলো । অনেক তরকারী ছিল । মনে হয় তাদের পূর্ব প্রস্তুতি ছিল । বিয়ে বাড়ীর মত আমাদের আপ্যায়ন করা হলো । সন্ধ্যার সময় গ্রামবাসীদের থেকে বিদায় নিয়ে আবার আমরা ট্রাকে করে বুজিতং কিয়াং এ ফেরত আসলাম । আসার সময় আমরা বিশ হাজার বর্মী টাকা লংসং কিয়াং জন্য দান করে আসলাম । লংসং পাড়া ছেড়ে আসতে সত্যি খুব খারাপ লাগলো । গ্রামবাসীদের উঞ্চ ভালবাসা, আপ্যায়ন ও আদর যত্ন আমাদের হ্রদয় ছুয়ে গেছে । প্রায় ৬/৭ শত বছর পর দুদেশের চাকমাদের মিলন যে এত মধুর ও হ্রদয় গ্রাহী হবে তা কখনো বুঝতে পারিনি । আসার সময় তাদেরকে বার বার প্রতিশ্রুতি দিতে হলো, বাংলার কবি জীবনান্দের ভাষায়, “আবার আসিব ফিরে মায়ূ, কালাদান, লেমিও নদী তীরে” । বুঝতে পারলাম তাদের এখন আর্থিক সাহায্যের একান্ত প্রয়োজন ।বুজিতং এলাকায় প্রায় ১০ হাজার চাকমা বসবাস করে । আমরা এ অঞ্চলে ৩০টি চাকমা পাড়া সনাক্ত করতে পেরেছি । শিক্ষার হার খুব নীচে । হয়তো ২০/২৫ % হবে । এমনিতেই আরাকান প্রদেশ মূল বার্মার তুলায় অনুন্নত । রোহিঙ্গা সমস্যার কারনে বর্তমনে সরকার কোন International NGO কে আরাকানে কাজ করতে দেয় না । শুধুমাত্র জাতিসংঘকে সীমিত ভাবে কাজ করতে দেয় । বর্মী সমাজে বৌদ্ধ ভিক্ষুদর স্থান অনেক উপরে । তাই একমাত্র ভান্তেদের মাধ্যমে হয়তো কিছু করা যাবে ।
সন্ধ্যায় আমরা বুজিতং কিয়াংএ ফেরত আসলাম । আমাদের দলের কেউ কেউ সিটউয়ে যবার ইচ্ছা ছিল । বাত্রে জানাগেল সিটউয়ের অবস্থা ভাল নয় । ২৯ এপ্রিল ২০১৪ থেকে মিয়ানমারে আদমশুমারী হওয়ার কথা । রোহিঙ্গাদের আদমশুমারীতে রোহিঙ্গা হিসাবে গননা না করার জন্য রাখাইন দল গুলি বিক্ষোভ শুরু করেছে । এক পর্য্যায়ে তারা জাতিসংঘের অফিস আক্রমন করলে পুলিশ ফায়ারিং এ একটি রাখাইন মেয়ে মারা যায় । এনিয়ে বেশ উত্তেজনা থাকায় আমরা সিটউয়ে যাওয়া বাদ দিলাম । এ ছাড়াও বিজু উত্সব খুব কাছে হওয়ায় অনেকে তাড়াতাড়ি দেশে ফেরার তাগিদ দিতে লাগলো । সবকছু বিবেচনা করে অবশেষে আমরা পরের দিন ২৯ মার্চ ২০১৪ তারিখে দেশে ফেরত আসার সিদ্র্ধান্ত নিই । ইতিহাস থেকে জানতে পেরেছি চাকমারা পূর্বে মংডু এবং বুজিতং অঞ্চলে বাস করতো । ১৯৪২ সালের বৌদ্ধ মুসলিম দাঙ্গায় রাখাইদের সাথে অনেক চাকমাও মারা যায় । পরবর্তীতে রোহিঙ্গারা মুজাহিদীন যুদ্ধ শুরু করলে অনেক চাকমা ঘর বাড়ী ছেড়ে রাখাইন সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল কিয়ক্টঅ ও ম্রাকউতে চলে যায় । কিন্ত ২০১৪ সালের জুন মাসের দাঙ্গায় চাকমারা তেমন ক্ষতি গ্রস্থ হয়নি । তখন হয়তো রোহিঙ্গারা জানে চাকমারা রাখাইন নয় ।
২৮ মার্চ রাত ১০ টায় হতাত্দুজন পুলিশ কিয়াং এ উপস্থিত । তেমন কিছু নয় । তারা এসে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করলো । দুজন পুলিশের মধ্যে একজন ছিল চাকমা । তাকে জিজ্ঞেস করাতে বললো উপরের নিদ্দেশে তারা এসেছে । এতে বুঝা যায় আরাকানের নিরাপত্তা নিয়ে কতৃপক্ষ বেশ সতর্ক ।
দেশে ফেরার পালা
২৯ মার্চ সকালের নাস্তা খেয়ে আমরা ফেরার জন্য প্রস্তুত হলাম । সম্বোধি ওয়েলফেয়ার সমিতির পক্ষ থেকে ছাত্রাবাসের জমি ক্রয়ের জন্য আমরা বাংলাদেশী টাকা ৬০ হাজার দান করলাম । আমরা আসার সময় কিছু চাকমা এবং তঞ্চঙ্ক্যা পোশাক এনে ছিলাম সেগুলি উপহার হিসাবে তাদেরকে হস্থান্তর করা হলো । অবশেষে বড় ভান্তে জাকরিয়া ও উপস্থিত গ্রামবাসীদের থেকে বিদায় নিয়ে আমরা সকাল ১০টায় একটি বড় মাইক্রো রিজার্ভ করে মংডু শহরের দিকে যাত্রা করলাম । ইচ্ছা ছিল আরো চাকমা অঞ্চল ঘুরে আসবো । কিন্ত সময়ের অভাবে তা আর হয়ে ওঠেনি । আমরা বেলা ১২ টায় মংডু শহরে এসে পৌছলাম । আমাদের বিদায় দেয়ার জন্য সুবিতা ও পান্ডিতা ভান্তে মংডু পয্যণ্ত এসেছিলেন । মংডুতে শেষ কেনাকাটা করে আমরা এক চাকমা হোটেলে দুপুরের খানা খেয়ে নিলাম । বর্মী ইমিগ্রেশন অফিসের ক্লিয়ারেন্স নিয়ে বেলা ২টায় একটি ট্রলার রিজার্ভ করে টেকনাফে ফিরে আসলাম । আরাকান ভ্রমন আমাদের মনে পুরা তৃপ্তি দেয়নি । ভবিষ্যতে আবার আরাকান ভ্রমনের বাসনা নিয়ে ঐ রাত্রেই

শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২০

এচ্যে নয় কেল্যা খামাক্কাই পুগ মোন মাধাত রাঙা বেল আহ্’জিবো- সুনানু ইনজেব চাঙমা

ব্রিটিশরা ১৮৬০ সালত পার্বত্য চট্টগ্রামরে দগল গরানা পর চন্দ্র ঘোণারে জেলা ইজেবে ফগদাঙ গচ্ছে। সক্যে সিধু এক্কান প্রাইমারি ইক্কুল থিদ’ গরে ১৮৬৩ সালত। সে প্রাইমারি ইক্কুলত ইংরেজি বাংলা সমারে চাঙমা আ বার্মিজ লেঘা চালু গরা অহ্’য়।
আ ১৯৩৭-৩৮ সালত হারবার্ট ফ্রেডারিক মিলারে রাঙ্গামাটি হাই ইক্কুলত প্রধান শিক্ষক আ পার্বত্য চট্টগ্রামত শিক্ষা বিভাগত ডাইরেক্টর বানেয়্যা(নিয়োগ দেয়া হয়)। তে অমহদ’ ক্ষমতাবান সেনে পার্বত্য চট্টগ্রামত ডেপুটি কমিশনারার তা আঞ্জামে লয়। সক্যে তেয়্য বঙ্গপ্রদেঝর শিক্ষা বিভাগর সচিবরে তা আঞ্জামে আনি ফ্রেডারিক মিলার পার্বত্য চট্টগ্রামত চাঙমা ভাচ চালু গচ্ছে। (সূত্র: পার্বত্য চট্টগ্রামের মেলা উৎসব- শরদিন্দু শেখর চাঙমা)
১৯০০ সালাত লুসাই হিল’রে জেলা (ইরুক মিজোরাম) গরানা পর ইংরেজউনে ইংরেজি সমারে মিজো ভাচ চালু গরি ইক্যে তারা বানা ইক্কুল কলেজত নয়, বিশ্ববিদ্যালয়তয়্য তারা ভাচ্ছোই লেঘা শিঘদন।
মাত্তর আমি! বানা ১৯৬০ সাল আ১৯৩৭-৩৮ সালত নয়, পাকিস্তান আমলত ১৯৫৯ সালতয়্য পাকিস্তান সরকারে চাঙমা লেঘা শিঘিবার ইক্কুলত জু গরি দিয়্যা। দুগর কধা আমা ন’ মিজিল্যা চেলাউনে সিয়ান গজি ন’ লন। তারা বাংলালোই লেঘা শিঘিবার কোই রাজবাড়িত ঝোল গরিলাক। আর ন’ অহ্’ল মা-ভাচ্ছোই লেঘা শিঘানা।
সক্যে দেঘা যিয়্যা গৈরিকা পত্রিকাত যে চাঙমা কবিদ্যা লেঘা অহ্’য় সিউন আর বাংলাদি ভাঙি দিয়্যা অহ্’য় মাত্তর, বাংলা লেঘানি কন’ দিন চাঙমাদি ভাচ বদল অদে দেঘা ন’ যায়।
এ পর এল’ বাংলা সরকার আমল। ১৯৯৭ সালত পার্বত্য চুক্তি নিজ’ মা-ভাচ্চোই লেঘা শিঘিবার লেঘা থেলেয়্য ২০১৭ সালত এনেই প্রাক-প্রাথমিকত বই পেলাক চাঙমা, মারমা, ককবরক, গারো আ সাদ্রি চিজিদাঘি। মাত্তর আমা মানেউনর এজ’ চেদন ন’ এযে।
গেল্লে ১৩ নভেম্বর ২০২০ ইং দিঘীনালা সাধনা টিলাত শুভ দানোত্তম কঠিন চীবন দান। চাঙমা ভাচ ফগদাঙিত্যাই চাঙমা সাহিত্য বাহ্’ত্তুন ভান্তেদাঘিরে চাঙমা লেঘা চার্ট আ চাঙমা সাহিত্য বাহ্ পাবলিশার্সর তপ্পেত্তুন পত্তম ফগদাঙি “ঘিলে ফুল” আ সাঙু (চাঙমা লেঘা শিঘিবার বই) আ সমারে যার এজালে চাঙমা সাহিত্য বাহ্ ২০ বঝরত কুচ দিল সে স্বগীয় পাহাড়ীকা চাঙমা উদিজে চীবর দান গরিবার সে শুভ দানোত্তম কঠিন চীবর দানত সরিত অহ্’লাক।
রাঙা খাদিয়্য ধোনা আ বর গাঙয়্য সানা সান গরি তারা ঘিলে ফুল বইবো সিধু কন’ বেজি পারন সে আঝায় নিলাক। সিয়োত যিবে কধা পজ্জনি/সঞ্চালন এল’ সুনানু নাটোরাম চাঙমা দাঘি। তারে এক্কান কাগোজ লেঘি (বাংলা ওক্কোর চাঙমা ভাচ) দিয়্যা তারে গজে দিয়্যা অইয়ে। মাত্তর ঘন্টা পার অই যার তার কন খবর নেই। ইয়োত লেঘা অইয়ে- চাঙমা সাহিত্য বাহ্ পাবলিশার্সত্তুন পত্তম ফগদাঙি “ঘিলে ফুল” ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ইং ফগদাঙ গরা অইয়ে। চাঙমা সাহিত্য বাহ্ এ বইউন বিজি বিজি নানান জাগাত (বান্দরবান, ঢাকা, রাঙামাত্যা আ খাগাড়াছড়ি আদামে আদামে )চাঙমা লেঘা শেঘায়। ............ এ ধক্যে গরি লেঘা অইয়ে।
পরে তারলোই আর ফুরমারা অলে তে কল মুই পড়ি ন’ যানঙ। পরে তারে আর’ মুয়েদি কোই দিলং, এ এ কারণ................। পরেদি আদলং পাদলং গরি কোই দিল- এ ঘিলে ফুল বইবো কন্না কন্না কিনিবো কিনি পারিবা।
এ চ’ বাপ ভেই - মা বোন লক! দুচ কারে দিবং? আমি কত্তমান নিজরে কোচ পেই? মুরত পরি, আমল গরি ভাবি চ’। ভাবিবার সময় এস্যে। কয় বার ভুল গরিবং? আমি বেগে খবর পেই- “স্বীয় ঐতিহ্য, ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে একটি জাতির অস্তিত্ব রক্ষা হয়।”
এচ্যে মর পরম পূজ্য, ঝু ঝু পিয়্যা লাক শ্রীমৎ বুদ্ধ বংশ ভান্তেদাঘিরে এধক্যে মা ভাঝে লেঘা দেঘি আমি বুক অজল গরি কোই পারির- এচ্যে নয় কেল্যা খামাক্কাই পুগ মোন মাধাত রাঙা বেল আহ্’জিবো।

কেন আঞ্চলিক স্বায়ত্ব শাসন?

বাংলাদেশ খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির নিকট পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের শাসনতান্ত্রিক অধিকার দাবীর- আবেদন পত্র গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ভাবী ...