সোমবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৯

জুম্ম জাতির দুগর মাচ: মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা জাতীয় সংসদের বক্তব্য -৪


খসড়া সংবিধানের উপর আলোচনা করতে গিয়ে মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা ১৯৭২, ২৫ অক্টোবর গণপরিষদের অধিবেশনে বলেন:

 গণপরিষদে খসড়া সংবিধানকে দফাওয়ারী বিবেচনা কালে ৩১ অক্টোবর, ১৯৭২ ইং আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল রাজ্জাক ভূঁইয়া সংবিধান বিলের ৬ অনুচ্ছেদের পরিবর্তে সংশোধনী প্রস্তাব আনেন। সংশোধনী প্রস্তাবটি হলো- ৬। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনের দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হইবে, বাংলাদেশের নাগরিকগণ বাঙ্গালী বলিয়াপরিচিত হইবে।” উক্ত সংশোধনী প্রস্তাবের বিরুদ্বে প্রতিবাদ জানান এভাবে-
মাননীয় স্পীকার সাহেব, জনাব আবদুল রাজ্জাক ভূইয়া সংশোধনী প্রস্তাব এনেছেন যে, বাংলাদেশের নাগরিকগণ বাঙালী বলে পরিচিত হবেন।
মাননীয় স্পীকার সাহেব, এ ব্যাপারে আমার বক্তব্য হল, সংবিধান বিলে আছে, “বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনের দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হইবে” এর সংগে সুস্পষ্ট করে বাংলাদেশের নাগরিকগণকে ‘বাঙালী’ বলে পরিচিত করবার জন্য জনাব আবদুল রাজ্জাক ভূঁইয়ার প্রস্তাবে আমার একটু আপত্তি আছে যে, বাংলাদেশের নাগরিকত্বের যে সংজ্ঞা, তাতে করে ভালভাবে বিবেচনা করে তা যথোপযুক্তভাবে গ্রহণ করা উচিৎ বলে মনে করি।
আমি যে অঞ্চল থেকে এসেছি, সেই পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা যুক যুগ ধরে বাংলাদেশে বাস করে আসছে। বাংলাদেশে বাংলা ভাষায় বাঙালীদের সঙ্গে আমরা লেখাপড়া শেখে আসছি। বাংলাদেশের সঙ্গে আমরা ওতঃপ্রতভাবে জড়িত। বাংলাদেশের কোটি কোটি জনগণের সঙ্গে আমরা আমরা ওতঃপ্রতভাবে জড়িত। সবদিক দিয়েই আমরা একসঙ্গে এক যোগে বসবাস করে আসছি। কিন্তু আমি একজন চাঙমা। আমার বাপ দাদা, চৌদ্দ পুরুষ- কেই বলেন নাই, আমি বাঙালী।
আমার সদস্য-সদস্যা ভাই-বোনদের কাছে আমার আবেদন, আমি জানি না, আজ আমাদের এই সংবিধানে কেন বাঙালী বলে পরিচিত করতে চায়।
মাননীয় স্পীকার সাহেব, আমদিগকে বাঙালি জাতি বলে কখনো বলা হয় নাই। আমরা কোনদিনই নিজেদের বাঙালি বলে মনে করি নাই। আজ যদি এই সার্বভৌম বাংলাদেশের সংবিধানের জন্য এই সংশোধনী পাশ হয়ে যায়, তাহলে আমাদের এই চাঙমা জাতির অস্তিত্ব লোপ পেয়ে যাবে। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। আমরা আমাদেরকে বাংলাদেশী বলে মনে করি এবং বিশ^াস করি। কিন্তু বাঙালী বলে নয়। .......
মাননীয় স্পকিার, আমাদের অধিকার সম্পর্ণরূপে খর্ব করে ৬ নম্বর অনুচ্ছেদ সংশোধিত আকারে গৃহীত হল। আমি এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং প্রতিবাদ স্বরূপ আমি অনির্দ্দিষ্ট সময়ের জন্য গণপরিষদ বৈঠক বর্জন করছি।”

*জুম্ম সংবাদ বুলেটিন (১০ই নভেম্বর ৮৩ স্মরণে বিশেষ সংখ্যা) বুলেটিন নং- ২৩, ৫ম বর্ষ, ১০ই নভেম্বর ৯৫, শুক্রবার  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কেন আঞ্চলিক স্বায়ত্ব শাসন?

বাংলাদেশ খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির নিকট পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের শাসনতান্ত্রিক অধিকার দাবীর- আবেদন পত্র গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ভাবী ...