সোমবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৯

জুম্ম জাতির দুগর মাচ: মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা জাতীয় সংসদের বক্তব্য -৪


খসড়া সংবিধানের উপর আলোচনা করতে গিয়ে মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা ১৯৭২, ২৫ অক্টোবর গণপরিষদের অধিবেশনে বলেন:

 গণপরিষদে খসড়া সংবিধানকে দফাওয়ারী বিবেচনা কালে ৩১ অক্টোবর, ১৯৭২ ইং আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল রাজ্জাক ভূঁইয়া সংবিধান বিলের ৬ অনুচ্ছেদের পরিবর্তে সংশোধনী প্রস্তাব আনেন। সংশোধনী প্রস্তাবটি হলো- ৬। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনের দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হইবে, বাংলাদেশের নাগরিকগণ বাঙ্গালী বলিয়াপরিচিত হইবে।” উক্ত সংশোধনী প্রস্তাবের বিরুদ্বে প্রতিবাদ জানান এভাবে-
মাননীয় স্পীকার সাহেব, জনাব আবদুল রাজ্জাক ভূইয়া সংশোধনী প্রস্তাব এনেছেন যে, বাংলাদেশের নাগরিকগণ বাঙালী বলে পরিচিত হবেন।
মাননীয় স্পীকার সাহেব, এ ব্যাপারে আমার বক্তব্য হল, সংবিধান বিলে আছে, “বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনের দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হইবে” এর সংগে সুস্পষ্ট করে বাংলাদেশের নাগরিকগণকে ‘বাঙালী’ বলে পরিচিত করবার জন্য জনাব আবদুল রাজ্জাক ভূঁইয়ার প্রস্তাবে আমার একটু আপত্তি আছে যে, বাংলাদেশের নাগরিকত্বের যে সংজ্ঞা, তাতে করে ভালভাবে বিবেচনা করে তা যথোপযুক্তভাবে গ্রহণ করা উচিৎ বলে মনে করি।
আমি যে অঞ্চল থেকে এসেছি, সেই পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা যুক যুগ ধরে বাংলাদেশে বাস করে আসছে। বাংলাদেশে বাংলা ভাষায় বাঙালীদের সঙ্গে আমরা লেখাপড়া শেখে আসছি। বাংলাদেশের সঙ্গে আমরা ওতঃপ্রতভাবে জড়িত। বাংলাদেশের কোটি কোটি জনগণের সঙ্গে আমরা আমরা ওতঃপ্রতভাবে জড়িত। সবদিক দিয়েই আমরা একসঙ্গে এক যোগে বসবাস করে আসছি। কিন্তু আমি একজন চাঙমা। আমার বাপ দাদা, চৌদ্দ পুরুষ- কেই বলেন নাই, আমি বাঙালী।
আমার সদস্য-সদস্যা ভাই-বোনদের কাছে আমার আবেদন, আমি জানি না, আজ আমাদের এই সংবিধানে কেন বাঙালী বলে পরিচিত করতে চায়।
মাননীয় স্পীকার সাহেব, আমদিগকে বাঙালি জাতি বলে কখনো বলা হয় নাই। আমরা কোনদিনই নিজেদের বাঙালি বলে মনে করি নাই। আজ যদি এই সার্বভৌম বাংলাদেশের সংবিধানের জন্য এই সংশোধনী পাশ হয়ে যায়, তাহলে আমাদের এই চাঙমা জাতির অস্তিত্ব লোপ পেয়ে যাবে। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। আমরা আমাদেরকে বাংলাদেশী বলে মনে করি এবং বিশ^াস করি। কিন্তু বাঙালী বলে নয়। .......
মাননীয় স্পকিার, আমাদের অধিকার সম্পর্ণরূপে খর্ব করে ৬ নম্বর অনুচ্ছেদ সংশোধিত আকারে গৃহীত হল। আমি এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং প্রতিবাদ স্বরূপ আমি অনির্দ্দিষ্ট সময়ের জন্য গণপরিষদ বৈঠক বর্জন করছি।”

*জুম্ম সংবাদ বুলেটিন (১০ই নভেম্বর ৮৩ স্মরণে বিশেষ সংখ্যা) বুলেটিন নং- ২৩, ৫ম বর্ষ, ১০ই নভেম্বর ৯৫, শুক্রবার  

রবিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৯

জুম্ম জাতির দুগর মাচ: মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা জাতীয় সংসদের বক্তব্য -৩

 খসড়া সংবিধানের উপর আলোচনা করতে গিয়ে মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা ১৯৭২, ২৫ অক্টোবর গণপরিষদের অধিবেশনে বলেন:
মাননী স্পীকার সাহেব, ১৯৪৭ সালে কেউ কি চিন্তা করেছিলেন যে, পাকিস্তান ধ্বংস হয়ে যাবে? জনাব মোঃ আলী জিন্নাহ বলেছিলেন, ÒPakistan has come to stay” নিয়তি অদৃষ্ট থেকে সেদিন নিশ্চয় উপহাস ভরে হেসেছিলেন। সেই পাকিস্তান অধিকার হারা বঞ্চিত মানুষের বুকের জ্বালায়, উত্তপ্ত নিঃশ্বাসে পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে। আমি আমার অভিব্যাক্তি প্রকাশ করছি। আমি একজন নির্যাতিত অধিকার হারা মানুষ। পাকিস্তানের সময় দীর্ঘ ২৪ বছর পর্যন্ত একটি কথাও বলতে পারিনি। আমাদের অধিকারকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেওয়া হয়েছিল। সেই অধিকার আমরা পেতে চাই এই চাওয়া অন্যায় নয়। সেই অধিকার এই সংবিধানের মাধ্যমে দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের মত যাতে সেই অধিকার আমরাও পেতে পারি, সেই কথাই আজকে আপনার মাদ্যমে পরিষদের নিকট নিবেদন করতে চাচ্ছি। সেই অধিকারের কথাই আমি বলতে চাচ্ছি। মানুষের মত মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার অধিকার আমাদের হয়নি- যেমন দেওয়া হয়নি বায়লাদেশের লক্ষ লক্ষ নিপীড়িত মানুষকে।
তাই আমি আমার কথা যদি আপনার মাদ্যমে মাননীয় সদস্য - সদস্যাদের ভাই-বোনদের কাছে পৌঁছিয়ে দিতে পারি, তাহলে আমি মনে করব, আমার অভিব্যাক্তি সার্থক হয়েছে। কারণ, আমার যে দাবী সেই দাবী আজকে নয়। এই দাবী করেছি স্বৈরাচারি আয়ূব ও স্বৈরাচারী ইয়াহিয়ার সময়ও। আমরা রাজনৈতিক দিক দিয়ে পেছনে পড়ে রয়েছি। অগ্রসর জাতির মত শক্তিশালী দল গঠণ করে দাবী আদায় করতে পারছি না। কারণ এতে যতটা রাজনৈতিক সচেনতার দরকার, ততটা রাজনৈতিক সচেনতার অভাব রয়েছে আদিবাসীদের মধ্যে, আমাদের মধ্যে।
মাননী স্পীকার সাহেব, আজকে তাই কথা প্রসঙ্গে এই কথা বলতে চাচ্ছি যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের বদৌলতেই আজকে বৈদ্যুতিকবাতি জ¦লছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জল বিদ্যুতের বদৌলতে কলখানা চলছে। অথচ সেই পার্বত্য চট্টগ্রামকে শোষণ করা হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষের জীবনকে বিলিয়ে দিয়ে, যারা দেশকে গড়েছে, পাকিস্তানের শাসকরা তাদের মানুষের মতো বাঁচার অধিকার দেয়নি। আমার বক্তব্য হল, আজকে আমরা এই সংবিধানে কিচুই পাইনি। আমি আমার বক্তব্য হয়তো সঠিকভাবে বলতে পারছি না, কিন্তু আমার বক্তব্যের মধ্যে কোন অপ্রাসাঙ্গিক কিছুই নাই।
আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা নিয়ে আমাদের জাতির পিতা শ্রদ্ধেয় বঙ্গবন্ধুর কাছে যুক্তি স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। এই স্মারকলিপিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের জন্য গণতান্ত্রিক শাসনের কথা বলেছিলাম, আমাদের আদিবাসীদের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক স্বায়ত্ব-শাসনের কথা বলেছিলাম।
এই সংবিধানে আমরা আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। আমরা বঞ্চিত মানব। আমাদের অধিকার হরণ করা হয়েছে। এই সংবিধানের বাইরে কথা আমি বলতে চাচ্ছি না। আমার পার্বত্য চট্টগ্রামের কথা সংবিধানে বলা হয়নি। এই জন্য এই কথা বলছি যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম একটা ইতিহাস। এই ইতিহাসকে অস্বীকার করা হয়েছে। আমি জানিনা, আমাদের কথা তারা কেমন করে ভুলে গেলেন? আমরাও যে বাংলাদেশের সংগে এক হয়ে গণবাংলার সংগে জড়িয়ে থাকতে চাই, সে কথা তারা কি ভুলে গেছেন?
আমাদের এই সংবিধানের খসড়া তৈরী করার সময় তারা অন্যান্য দেশের সংবিধান দেখেছে। তাঁরা দেখেছেন বাংলাদেশের ইতিহাস। তাঁরা দেখেছেন বাংলাদেশের এক কোণায় রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম। কিন্তু কিসের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসকে এখানে স্থান দেওয়া হয়নি?
আমরা জানি, ইতিহাসকে বিকৃত করা যায় না। কিন্তু আমরা কি দোষ করেছি? কেন আমরা অভিশপ্ত জীবন যাপন করবো? পাকিস্তানের সময়ে ছিল আমাদের অভিশপ্ত জীবন। আজকে দেশ স্বাধীন হয়েছে। এখানে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র হতে চলেছে। আমাদের অধিকার তুলে ধরতে হবে এই সংবিধানে। কিন্তু তুলে ধরা হয়নি। যদি আমাদের কথা ভুলে যেতে চান, যদি ইতিহাসের কথা ভুলে যেতে চান, তাহলে তা আপনারা পারেন। কিন্তু আমি পারি না। আদিবাসীরা কি চায়? তারা চায় স্বাধীন অধিবেশনে তাদের সত্যিকারের নিশ্চয়তা।
মাননীয় ডেপুটি স্পীকার সাহেব, তাই আজকে বঞ্চিত মানুষের মনের কথা আমি আপনার মাধ্যমে তুলে ধরতে চাই। সেই বঞ্চিত মানুষের একজন হয়ে আমি বলতে চাচ্ছি, আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের যারা নির্যাতিত সেই বৃটিশ আমল থেকে শুরু করে, সেই পাকিস্তান আমলের যে নির্যাতিন ভোগ করেছি সেই নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে চাই। আমরা চাই মানুষের মত মানুষ হয়ে বেঁেচ থাকতে।
এই খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি আমাদেরকে সমাজতন্ত্রের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই খসড়া সংবিধান প্রণয়ন করেছেন। এই খসড়া সংবিধানে আমাদের অবহেলিত অঞ্চলের কোন কথা নাই। তাই আজকে আমি বলতে চাই, পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির কাছে কি অপরাধ করেছে, তা আমি জানি না।
পার্বত্য চট্টগ্রাম হল বিভিন্ন জাতিস্বত্ত¡ার ইতিহাস। কেমন করে সেই ইতিহাস আমাদের সংবিধানের পাতায় স্থান পেলনা, তা আমি ভাবতে পারি না। সংবিধান হচ্ছে এমন একটা ব্যবস্থা, যা অনগ্রসর জাতিকে, পিছিয়ে পড়া নির্যাতিত জাতিকে, অগ্রসর জাতির সংগে সমান তালে এগিয়ে নিয়ে আসার পথ নির্দেশ  করবে। কিন্তু বস্তুতঃ পক্ষে এই পেশকৃত সংবিধানে আমরা সেই রাস্তার সন্ধান পাচ্ছি না। ...... .......
পার্বত্য চট্টগ্রামের একটা ইতিহাস আছে এবং সেই ইতিহাসকে কেন এই সংবিধানে সংযোজিত করা হল না? যদি পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের অধিকার স্বীকৃত না হয়, তাহলে এই সংবিধান তাদের কি কাজে লাগবে। আমি একজন মানুষ যেখানে জন্মগ্রহণ করেছি, যে জন্মভূমিতে আজন্ম লালিত পালিত হয়েছি, সেই জন্মভূমির জন্য আমার যে কথা বলার রয়েছে, সে কথা যদি প্রকাশ করতে না পারি, যদি এই সংবিধানে তার কোন ব্যবস্থাই দেখতে পাই না, তাহলে আমাকে বলতে হবে যে, বঞ্চিত মানুষের জন্য সংবিধানে কিছুই রাখা হয়নি। বঞ্চিত মানুষের সংবিধান এাঁ কিছুতেই হবে না এবং মানুষ এটাকে গ্রহণ করতে দ্বিধাবোধ করবে।
তাই আমার কথা শেষ করার আগে আমার কথাগুলি সংক্ষিপ্ত আকারে বলতে চাই, এই সংবিধানে মানুষের মনের কথা লেখা হয়নি। কৃষক, শ্রমিক, মেথর, কামার, কুমার, মাঝিমাল্লার জন্য কোন অধিকার রাখা হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগণের অধিকারের কথাও সংবিধানে লেখা হয়নি।

*জুম্ম সংবাদ বুলেটিন (১০ই নভেম্বর ৮৩ স্মরণে বিশেষ সংখ্যা) বুলেটিন নং- ২৩, ৫ম বর্ষ, ১০ই নভেম্বর ৯৫, শুক্রবার  

জুম্ম জাতির দুগর মাচ: মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা বক্তব্য -২

খসড়া সংবিধানের উপর আলোচনা করতে গিয়ে মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা ১৯৭২, ২৫ অক্টোবর গণপরিষদের অধিবেশনে বলেন:
মাননীয় স্পীকার সাহেব, আজকে যে পবিত্র দলিল আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের হাতে তুলে দিতে যাচ্ছি, সেটা যেন ১৯৫৬ সালের এবং ১৯৬২ সালের দলিলের মত না হয় এবং সেদিনের মতো করুণ অবস্থা যেন আমাদের জীবদ্দশায় দেখে যেতে না হয়।
মাননীয় স্পীকার সাহেব, আজকে মানুষের মনে যে সন্দেহ দেখা দিচ্ছে, আমরা যদি সেই সন্দেহের অবসারন না করি, পরিষদে আমরা যদি তার নিরসন না করি, তাহলে আর কে করবে? আমাদের পর যাঁরা আসবেন , তাদের সেই একই করুণ অবস্থা হবে- যেমন হয়েছে পূর্ববর্তীদের। সেই করুণ কাহিনীর পুনরাবৃতিত্ত ঘটুক, আমরা তা চাই না। ......
সংবিধানে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের মনের কথা যদি সত্যিকারভাবে  লিপিবদ্ধ হত, তাহলে আজকে নিদর্লীয় সদস্য হিসাবে এই সংবিধানকে অভিননন্দন জ্ঞাপন করতে করতে পারতাম। আভিনন্দন জ্ঞাপন করতে না পারার অনেক কারণের মধ্যে এক কারণ হল, এখানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিগুলি পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করা হয়নি।
মাননীয় স্পীকার, এই দলিলের বিভিন্ন অনুচ্ছেদ থেকে প্রমাণ পাওয়া যাবে যে, এক হাতে অধিকার দেওয়া হয়েছে এবং অন্য হাতে সেটা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। মাননীয় স্পীকার সাহেব, সংবিধানের ১০ নং অনুচ্ছেদ এবং ২০ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে:
১০। মানুষের উপর মানুষের শোষণ হইতে মুক্ত ন্যায়নুগ ও সাম্যবাদী সমাজ লাভ নিশ্চিত করিবার উদ্দেম্যে সমাজতান্ত্রিক অর্তনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হইবে।
এবং
২০। কর্ম হইতেছে কর্মক্ষম প্রত্যেক নাগরিকের পক্ষে অধিকার, কর্তব্য ও সম্মানের বিষয় এবং প্রত্যেক নিকট হইতে যোগ্যতানুসারে ও পারিশ্রমিক লাভ করিবেন।
মাননীয় স্পীকার, আজকে এখানে বলতে বাদ্য হচ্ছি, একদিকে হিংসাদ্বেষ বিহীন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রতি¤্রুতি দেওয়া হয়েছে আর অন্যদিকে উৎপাদন যন্ত্র ও উৎপাদন ব্যবস্থাসমূহের মালিকানা, রাষ্ট্রীয় মালিকানা, সমবায়ূ মালিকানা ও ব্যক্তিগত মালিকানা অইনের দ্বারা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যের আবব্দ করে শোষণেরপথ প্রশস্ত করে দেওয়া হয়েছে। আমরা এমন একটা ক্ষমতা দেখতে পাচ্ছি, যে ক্ষমতা বলে সরকার একটা লোককে এক পয়সার অধিকারী হতে দেবেন এবং অন্য একটা লোকের জন্য এক কোটি টাকার মালিকানার অধিকার রেখে দেবেন।
মাননী স্পীকার সাহেব, তাই এই  দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের মনের কথা, প্রাণের কথা এখানে প্রতিফলন হয়নি বলে আমি মনে করি। কৃষকের কথা প্রতিফলিত হয়নি, রিক্সাওয়ালার কথা প্রতিফলিত হয়নি,  মেথরের কথা প্রতিফলিত হয়নি। আজ এদর সবার জীবন, মেথরের জীবন, খেটে খাওয়া মানুষের জীবন অভিশপ্ত। তাদের কথা, তাদের দাবী এখানে স্থান পায়নি। এই যে অভিশপ্ত জীবন তাদের কথা সংবিধানে নাই।
তারা যদি আজ জিজ্ঞেসা করে, “তোমরা দেশের ভাগ্য নির্ধারণ করতে যাচ্ছ- তোমরা তাতে আমাদের কথা কি কিচু লিখেছ?” এই প্রশ্নের আমরা কি উত্তর দেব? যে মেথররা দেশকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখে, আজ আমরা শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে তাদেরকে কি আশ্বাসের বাণী শোনাচ্ছি? তাদের অভিশপ্ত জীবনকে সুখী করে তোলার মতো কতটুকু আমরা দিয়েছি, এই সংবিধানে কি প্রতিশ্রুতি আমরা দিয়েছি? কিছুই না।
আমাকে আজ বলতে হচ্ছে, বাংলাদেশের যারা সত্যিকারের শোষিত, নিপীড়িত, তাদের কথা এই সংবিধানে নাই। হ্যাঁ, তাঁদের কথা এই সংবিধানে আছে, যারা শোষিত নয়, নির্যাতিত নয়, নিপীড়িত নয়। মাননীয় স্পীকার, তাই আজকে এখানে দাঁিড়য়ে বলতে হচ্ছে, প্রশ্ন করতে হচ্ছে যে, এটা কাদের সংবিধান? যদি জনগণের সংবিধান না হয়, তাহলে আমরা দেশকে কেমন করে গড়ে তুলব, দেশের মানুষকে কেমন করে ভবিষ্যৎ সুখী জীবনের নির্ভরতা দান করব?
এরপর, বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতিসত্ত¡ার কথা বলা যেতে পারে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতি সত্ত¡ার অস্তিত্বে কথা আমি খুলে বলছি। বিভিন্ন জাতিসত্ত¡ার কথা যে এখানে স্বীকৃত হয়নি, সে কথা আমি না বলে পারছি না। আমি পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসী। আমি  সেখানকার আদিবাসীর এলাকার লোক। সেখানকার কোন কথাই এই সংবিধানে নাই। যুগে যুগে বৃটিশ শাসন থেকে আরম্ভ করে সবসময় এই এলাকা স্বীকৃত হয়েছিল, অথচ আজকে এই সংবিধানে সেই কথা নাই। খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি কিভাবে ভুলে গেলেন আমার দেশের কথা-পার্বত্য চট্টগ্রামের কথা। এটা আমার কাছে বিস্ময়। পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি আদিবাসীর এলাকা। এই এলাকার সেই সব ইতিহাসের কথা, আইনে কথা এই সংবিধানে কোথাও কিছু নাই।
মাননীয় স্পীকার সাহেব, এই মহান পরিষদে দাঁড়িয়ে আজকে আমি আপনার মাধ্যমে একজন সরল মানুষের অভিব্যাক্তি প্রকাশ করছি। আমাদের এলাকাটা একটা আদিবাসী এলাকা। এখানে বিভিন্ন জাতি বাম করে। এখানে চাঙমা, মগ, ত্রিপুরা, লুসাই, বোম, পাংখো, খুমি, মুরুং এবং চাক এইরূপ ছোট ছোট এগারটি আদিবাসী বাস করে। এই মানুষের কথা আমি বলতে চাই।
এই আদিবাসী মানুষের কথা বৃটিশ পর্যন্ত স্বীকার করে নিয়েছিল। পাকিস্তানের মত স্বৈরাচারী গভর্ণমেন্ট আমাদের অধিকার ১৯৫৬ সালের এবং ১৯৬২ সালের সংবিধানে স্বীকার করে নিয়েছিল। জানি না আজকে যেখানে গণতন্ত্র হতে যাচ্ছে, সমাজতন্ত্র হতে যাচ্ছে, সেখানে কেন আপনারা আমাদের কথা ভুলে যাচ্ছেন?
পৃথিবীর অনেক দেশেই সমাজতন্ত্র হয়েছে। পৃথিবীর অন্যতম সমাজতান্ত্রিক দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নেও আদিবাসীদের আধিকার আছে। পৃথিবীর আর একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারত- আমাদের প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র - আমরা সেখানে দেখি, তাদের সংবিধানে বিভিন্ন জাতিকে অধিকার দেওয়া হয়েছে জানি না, আমরা কি অপরাধ করেছি?
আমি যতদূর বুঝতে পারি, আপনার মাধ্যমে আমি মাননীয় সদস্যদের জানাচ্ছি, আমি একজন মানুষ। এমন একজন মানুষ, যারা যুগ যুগ ধরে অধিকার থেকে বঞ্চিত। সেই জাতির প্রতিনিধি আমি। আমার বুকের ভিতর কি জ¦ালা, তা আমি বুঝাতে পারবো না। সেই জ্বালা আর কারোর ভিতর নাই। সেই জ¦ালার কথা কেউই চিন্তা করেননি। অস্বীকার করা উচিৎ নয়। কিন্তু সেই সব জাতির কথা গণপ্রজাতন্ত্র¿ী বাংলাদেশের এই খসড়া সংবিধানে নাই।

 চলবে-
*জুম্ম সংবাদ বুলেটিন (১০ই নভেম্বর ৮৩ স্মরণে বিশেষ সংখ্যা) বুলেটিন নং- ২৩, ৫ম বর্ষ, ১০ই নভেম্বর ৯৫, শুক্রবার 

জুম্ম জাতির দুগর মাচ: মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা বক্তব্য -১

খসড়া সংবিধানের উপর আলোচনা করতে গিয়ে মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা ১৯৭২, ২৫ অক্টোবর গণপরিষদের অধিবেশনে বলেন:
মাননীয় স্পীকার সাহেব, আমাদের দেশেরে জন্য যে সংবিধান রচনা করতে যাচ্ছি, আপনার মাধ্যমে আজকে এই মহান গণপরিষদে দাঁড়িয়ে সেই সংবিধানের উপর আমি কিছু আলোচনা করবো। কিন্তু তার আগে আমি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই  বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষকে। আমি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই  সা¤্রাজ্যবাদী বৃটিশ শাসকের বিরুদ্ধে যারা কারকাগে তিল তিল করে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিল, যারা সা¤্রাজ্যবাদী বৃটিশ শাসককে এদেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য হাসি মুখে হাতকড়া পরেছিলেন, হাঁসিমুখে ফাঁসি কাষ্ঠকে বরণ করেছিলেন, তাদেরকে।
১৯৪৭ সালের পর সা¤্রাজ্যবাদী বৃটিশ এই দেশ থেকে চলে যাওয়ার পর পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের জন্য যে কৃত্রিম স্বাধীনতা হয়েছিল, সেই কৃত্রিম স্বাধীনতার পর থেকে যে সব বীর, যে সব দেশপ্রেমিক নিজের জীবন তিলে তিলে চারদেওয়ালের অন্ধাকার প্রকোষ্ঠে উৎসর্গ করেছিলেন স্বাধীকার আদায়ের জন্য, যাঁরা নিজেদের জীবন উপেক্ষা করে স্বাধীকার আদায়ের পথে গিয়েছিলেন, তাঁদের কথা আজকে আমি স্মরণ করছি তাঁদের প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
আজকে এখানে যাঁরা সমবেত হায়েছেন, যে মাননী সংসদ সদস্য-সদস্যাবুন্দ রয়েছেন, তাঁদেরকে আমি আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। তারপর আমি আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা নিবেদন করছি গত এপ্রিল মাসে যে খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়েছিল, সেই কমিটির সদস্য বন্ধুদের। সর্বশেষ আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা নিবেদন করছি আমাদের শ্রদ্ধেয় জননেতা, জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
আজকে আমার এই গণপরিষদ ভবনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করছি। এই ইতিহাসের পেছনে রয়েচে কত করুণ কাহিনী, কত মানুষের অঝোর ধারায় কান্নার কাহিনী, বাংলাদেশের আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে রয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষের করুণ আর্তনাদ। তাই আজকে আমরা সে সব মানুষের কথা স্মরণ করে যদি বিবেকের প্রতি এতটুকু দৃষ্টি নিক্ষেপ করে এগিয়ে যাই, তাহলে এই কথাই আমরা বলবো, আজকে এখানে দাঁড়িয়ে যে পবিত্র শপথ আমরা নিয়েছি সেই পবিত্র শপথ নিয়ে  বাংলাদেশে সাড়ে সাত কোটি মানুষের জন্য যে পবিত্র দলিল আমরা দিতে যাচ্ছি, সেই পবিত্র দলিলে বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের মনের কথা ব্যক্ত হয়েছে কিনা, বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের মনের কথা অর্থাৎ তারা যে খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে চায়, সে কথা এই সংবিধানে ব্যক্ত হয়েছে কিনা।
তাই মাননীয় স্পীকার সাহেব, আমি আমার বক্তব্যের মধ্যে যে কথা তুলতে যাচ্চি, তাতে যদি কোন ভুলত্রæটি থাকে, তাহলে আমি তা শুধরে নিতে চাই কিন্তু আমি মনে করি, আমি আমার বিবেক থেকে ই এসব কথা বলছি। আমি কোন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে বা কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে কিছুই বলতে যাচ্ছি না। যেহেতু আমি এই বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষেরই একজন হয়ে আজকে গণপরিষদ ভবনে আমার মতামত প্রকাশ করতে যাচ্ছি, সাড়ে সাত কোটি মানুষের নিকট প্রকাশ করতে যাচ্ছি, তাই সংবিধানের উপর আমার কোন চুলচেরা ব্যাখ্যা নেই। আমার যে মত, আমার যে বক্তব্য, তার সবই দেশের প্রতি ভালোবাসার সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত। যেভাবে আমার দেশকে ভালবেসেছি, আমার জন্মভ’মিকে ভালোবেসেছি, যে দৃষ্টিকোণ থেকে আমি আমার দেশকে, আমার জন্মভ’মিকে, এদেশের কোটি কোটি মানুষকে দেখেছি, সেই দৃষ্টিভঙ্গী থেকেই আমি খসড়া সংবিধানকে দেখতে যাচ্ছি। .... ..... ..... ...
তাই আমি খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য বন্দুদের বলছি যে, খসড়া সংবিধান তারা গত জুন মাসে দিতে পারেননি যদিও গত জুন মাসের ১০ তারিখে দেওয়ার কথা ছিল। আজকে এই অক্টোবর মাসে আমাদের এই খসড়া সংবিদান তারা দিয়েছেন। এই খসড়া সংবিধান আমরা জুন মাসে পাইনি, সেজন্য দুঃখিত নই। অক্টোবর আর জুন মাসের মধ্যে ব্যবধান মাত্র কয়েটি মাসের। সেজন্য আমার ব্যক্তিগত অভিমত, আমার কোন আপত্তি নাই, কিন্তু এখানে আমার আপত্তি হচ্ছে এই যে, যে কমিটি আমরা এ দেশেরে কোটি কোটি মানুষের ভাগ্য নির্ধারণের ভার দিয়েছিলাম, সেই কমিটি-প্রদত্ত সংবিধান আজকে আমাদের হুবহু গ্রহণ করতে হচ্ছে।
এই পরিষদের সামনে আমার বক্তব্য হল, আজকে খসড়া সংবিধান যদি এই এই গণপরিষদ-এ এই ভাবে গৃহীত হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে আমার যে আপত্তি আছে সে আপত্তি হল, আমার বিবেক , আমার মনের অভিব্যক্তি বলছে, বাংলাদেশেরসাড়ে সাত কোটি মানুষের মনের কথা এই সংবিধানে নাই। যদি বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের মনের কথা পুরোপুরি এই খসড়া সংবিধানে থাকত, তাহলে আমার আপত্তির কোন কারণ থাকত না। কিন্তু আজ আমি দেকতে পাচ্ছি, পদ্মা, মেঘনা, ধলেশ^রী, বুড়িগঙ্গা, মাথাভাঙ্গাঁ, শঙ্খ, মাতামহুরী, কর্ণফুলী, যমুনা, কুশিয়ারা প্রভৃতি নদীতে রোদ-বৃষ্টি মাথায় করে যাঁরা দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বৎসের পর বৎসর ধরে নিজের জীবন তিলে তিলে ক্ষয় করে নৌকা বেয়ে, দাঁড় টেনে চলেছেন, রোদ-বৃষ্টি মাথায় করে, মাথায় ঘাম পায়ে ফেলে যাঁরা শক্ত মাটি চষে সোনার ফসল ফলিয়ে চলেছেন, তাঁদেরই মনের কথা এ সংবিধানে লেখা হয়নি। আমি বলছি আজকে যাঁরা রাস্তায় রাস্তায় রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নিবৃঅহ করে চলেছেন, তাদের মনের কথা এই সংবিধানে লেখা হয়নি।
আজকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে আপনারা বাংলাদেশের মেহনতী মানুষের কথা সমাজতন্ত্রের নামে, গণতন্ত্রের নামে বলেচলেছেন। আমি ক্ষুদ্র মানুষ সংসদীয় অভিজ্ঞতা আমার সেরকম নাই। তবু আমার বিবেক বলছে এই সংবিধানের কোথায় যেন গলদ রয়েছে।
মাননীয় স্পীকার সাহেব সাহেব, আজকে যারা কল-খানায় চাকা, রেলের চাকা ঘুরাচ্ছেন, যাঁদের রক্ত চুইয়ে আজকে আমাদের কাপড়, কাগজ প্রতিটি জিনিষ তৈরী হচ্ছে, সে লক্ষ লক্ষ মেহনতী মানুষের মনের কথা এখানে নাই।
তারপর আমি বলব, সবচেয়ে দুঃখজনক কথা হচ্ছে এই যে, আমাদের মা-বোনদের কথা এখানে নাই। নারীর যে অধীকার সেটা সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষিত। নারীকে যদি অধিকার দিতে হয়, তাহলে পুরুষ যে অধিকার ভোগ করে, সে অধিকার নারীকেও দিতে হবে। কারণ, তারাও সমাজের অর্ধেক অংশ।.... ... আজ পল্লীর আনাচে কানাচে আমাদের যে সমস্ত মা-বোনকে তাদের দেহ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে, তাদের কথা এই সংবিধানে লেখা হয়নি। এই সংবিধানে সেই মা-বেনদের জীবনে কোন গ্যারান্টি দেওয়া হয়নি। যদি এটা আদর্শ সংবিধান হতো, যদি এাঁ গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক সংবিধান হতো, তাহলে আজকে যারা নিষিদ্ধ পল্লীতে নিজেদের দেহ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে, তাদের কথা লেখা হত, তাদেরকে এই নরক যন্ত্রনা থেকে মুক্ত করে আনার কথা থাকত, কিন্তু তাদের মনের অভিব্যাক্তি প্রকাশের কথা, খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার কথা এই সংবিধানে নাই।
এই সংবিধানের মানুষের অধিকার যদি খর্ব হয়ে থাকে, তাহলে আজকে ৩০ লক্ষ শহীদের কথা স্মরণ করে অতীতের ইতিহাস স্মরন আমি বলব যে, ইহিাস কাউকে কোনদিন ক্ষমা করেনি, করবেও না-ইতিহাস বড় নিষ্ঠুর। আমরা দেখেছি, ১৯৫৬ সালের সংবিধান যে সংবিধানকে আয়ুব খানের মত একজন সৈনিক লাতি মেরে, গণতন্ত্রকে হত্যা করে পাকিস্তানের বুকে স্বৈরাচারী সরকার গঠণ করেছিল। তারপর ১৯৬২ সালে তার মনের মত একটি সংবিধান রচনা করে সেটাকে দেশের বুকে চাপিয়ে দিয়ে ভেবেছিল যে, তার এই সংবিধান এদেশের মানুষ গ্রহণ করবে। কিন্তু এ দেশের মানুষ সেটা গ্রহণ করেনি।
এই সংবিধানও যদি সে ধরণে হয়ে যায়, তাহলে ইতিহাস কি আমাদের ক্ষমা করবে? তাই ১৯৫৬ সালের সংবিধানের মত. ১৯৬২ সালের সংবিধানের মত এই সংবিধানকেও কি আমরা হতে দিব, আমার বিবেক বলছে, আমরা এমন সংবিধান চাই না। আমরা এমন সংবিধান চাই, যে সংবিধানে আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য একটা পবিত্র দলিল হয়ে থাকবে। সেরকম সংবিধানই আমরা চাই। আমার যা মনের কথা তা আমি ব্যক্ত করলাম।
                                                                                     
                                                                                                                                    চলবে-
*জুম্ম সংবাদ বুলেটিন (১০ই নভেম্বর ৮৩ স্মরণে বিশেষ সংখ্যা) বুলেটিন নং- ২৩, ৫ম বর্ষ, ১০ই নভেম্বর ৯৫, শুক্রবার




বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৯

শ্রী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা স্যারের সংক্ষিপ্ত জীবনী



-শ্রী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা স্যার এর শুভ জন্মদিন ও সংক্ষিপ্ত জীবনী (ফেব্রুয়ারি ১৪, ১৯৪৪)

বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের আদিবাসীদের নেতা। তাঁর পুরো নাম জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা, তবে সন্তু লারমা নামেই তিনি অধিক পরিচিত। তিনি বাংলাদেশের অন্যতম আদিবাসী গোষ্ঠী চাকমা সম্প্রদায়ের সদস্য।জন্ম সম্পাদনা সন্তু লারমার জন্ম ১৯৪৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটি জেলার মহাপুরম এলাকায়।

 তাঁর পিতার নাম চিত্তকিশোর চাকমা, মাতা সুভাষিণী দেওয়ান।শিক্ষা সম্পাদনাতিনি অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত মহাপুরম জুনিয়র হাই স্কুলে পড়েন। ১৯৫৯ সালে রাঙামাটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর চট্টগ্রামের স্যার আশুতোষ কলেজ থেকে আই এ এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বি এ পাস করেন। ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম এ পাস করেন।
রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ সম্পাদনা
১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধের পানিতে মহাপুরম এলাকা ডুবে যাওয়ায় সন্তু লারমাদের পরিবার খাগড়াছড়ির পানছড়িতে আবাস গড়ে তোলেন। এদিকে বাঁধের প্রকল্প গ্রহণের সময় প্রতিশ্রুত পুনর্বাসন ব্যবস্থা না পাওয়ায় স্থানীয় মানুষের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। ১৯৬৩ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামকে যে পূর্বে উপজাতি এলাকা ঘোষণা দেয়া হয়েছিল তা বাতিল করা হয়, স্পেশাল স্ট্যাটাস বাতিল করা হয়। এতে অসন্তোষ আরো বাড়ে। এসময় নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য নেতৃত্ব গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন সন্তু লারমা। পূর্বে গঠিত পাহাড়ী ছাত্র সমিতির কাজ জোরদার করা হয়। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সন্তু লারমা বামপন্থী রাজনীতিতে জড়িত হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে তিনি খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি থানার একটি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৬৬ সালে জনগণকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন করার জন্য 'পার্বত্য চট্টগ্রাম ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন' গঠনে তিনি ভূমিকা রাখেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও গেরিলা জীবন সম্পাদনা১৯৭২ সালে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন সন্তু লারমা। তাঁর ভাই মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ছিলেন এর সাধারণ সম্পাদক। নিয়মতান্ত্রিকভাবে দাবী আদায় সম্ভব হবে না মনে করে ১৯৭৩ সালে তাঁরা সংগঠনের সামরিক শাখা শান্তিবাহিনী গঠন করেন এবং সশস্ত্র সংগ্রাম করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৭৫ সালে সন্তু লারমা আত্মগোপনে যান। সেই বছরের ২৬ অক্টোবর তিনি গ্রেপ্তার হন। ১৯৮০ সালে ছাড়া পান। ১৯৮১-তে একবার গ্রেপ্তার হয়ে মুক্ত হওয়ার পর আবার তিনি আত্মগোপন করেন। এদিকে এসময় সংগঠনের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল সৃষ্টি হয়। প্রাথমিকভাবে সমঝোতা হলেও ১৯৮৩ সালে অপর প্রিতি,দেবেন গ্রুপের আক্রমণে নিহত হন মানবেন্দ্র লারমা ও আরো আটজন। সন্তু লারমা দল পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেন। তিনি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নির্বাচিত হন। অন্য গ্রুপটি পিছু হটতে থাকে, ১৯৮৫ সালের মে মাসে তারা আত্মসমর্পণ করে। সে বছর অনুষ্ঠিত সংগঠনের জাতীয় সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়, যার সভাপতি নির্বাচিত হন সন্তু লারমা। সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সংগ্রামের পাশাপাশি সরকারের সাথে সংলাপের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হবে।


সমঝোতা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদনা
সরকারের সাথে বিভিন্ন সময় মোট ২৬টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অবশেষে উভয় পক্ষ কিছুটা নমনীয় হলে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এখনো সমাপ্ত হয়নি। এজন্য সন্তু লারমা এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি সারা বাংলাদেশের আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই সংগ্রাম করে যাচ্ছেন এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেছেন।  বর্তমানে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম সভাপতি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন
জুম্ম জনগণের কিংবদন্তী এই নেতার  জন্মদিবসে জানাই বিপ্লবী শুভেচ্ছা।

রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৯

চাঙমা সাহিত্য বাহ্ চাঙমা রিদিসুধোম, সাহিত্য, ভাচ, অঝাপাত থিদ গরানা পোইদ্যানে জে এস এস (এম এন লারমা) পার্টি তপ্পেত্তুন এক লাক তেঙা এজাল

সুনানু সুভাষ চাঙমা চাঙমা সাহিত্য বাহ্ সাবাঙ্গীদাঘীরে আহ্’দে আহ্’দে তেঙাউন তুলি দের।
গেল্লে কেল্যা ভিদি যেল’ ১০ নভেম্বর ২০১৯ খ্রি: জুম্ম জাদর বুক আহ্’ঙানা এক্কো দিন, কালা-দুগ’ দিন। এ দিন্নোরে গোদা বাংলাদেঝর বিশ্ব বিদ্যালয়, উপজেলা, জেলা বিভাক আ যিদু যিদু আদিবাসী আঘন সিধু পালন গচ্ছোন জুম্ম জাদর কালা দুগর দিন ইজেবে। ৩৬ বঝর আগে ১০ নভেম্বর ১৯৮৩ সাল জুম্ম জাদর পাত্থলী, বেক আদিবাসি আ নেয়্যা- নাধা মানুজর মুর খাম, তচ্যা পেরাশানি খেইয়্যা মানুজর নিধুতুক্যা (একমাত্র) সুয়োল (প্রতিবাদ) গরিয়ে বন্দা (ব্যক্তি) মানবেন্দ্র নারায়ন লারমারে দেঝে-বিদেঝে কু পাকত পরি জুম্ম জাদর কুলঙ্কার সে গিরি-প্রকাশ-দেবেন-পলাশ দাঘী গুলি গরি মারে ফেল্লোন। লারমা মরি যানা জুম্ম জাত্তো অল দিক কাভুল, খিহ্’ল চাদিগাঙ অল আন্দার। সিত্তেই এ দিন্নো জাদর দুগ’ দিন ইজেবে পালা অয়।
এ দিনত চাঙমা সাহিত্য বাহ্ চাঙমা রিদিসুধোম, সাহিত্য, ভাচ, অঝাপাত থিদ গরানা পোইদ্যানে জে এস এস (এম এন লারমা) পার্টি তপ্পেত্তুন এক লাক তেঙা এজাল দিলাক। জে এস এস (এম এন লারমা)পার্টি গরা কমিতি এজাল দাঙর কাবিদ্যাঙ সুনানু সুভাষ চাঙমা চাঙমা সাহিত্য বাহ্ সাবাঙ্গীদাঘীরে আহ্’দে আহ্’দে তেঙাউন দিয়্যা। 
সুভাষ চাঙমা কোইয়ে- “১০ নভেম্বর পোইদ্যানে পত্তিক বঝর  জে এস এস (এম এন লারমা)পার্টি তপ্পেত্তুন ইক্কুল, কলেজ’ পুঅ/ঝিউনরে কবিতা, ছবি আঁকানা,  প্রবন্ধ লেঘা জিতবাত দিয়্যা অয়। এ বঝর সিআন  গরা ন অয়। আ চাঙমা সাহিত্য বাহ্ নাঙে অরাজনৈতিক, সাহিত্য সংস্কৃতি জধাবো চাঙমা ভাচ, ওক্কোর পোইদ্যানে তিন পার্বত্য বাদেয়্য যিদু যিদু চাঙমা আঘন সিদু নিআলঝি গরি কাম গরি যায়, বিভিন্ন পত্রিকাত্তুন, নানাঙ জনত্তুন আ ফেসবুগত এ খবরানি পেনেই আমার পার্টির দাঙর কাবিদ্যাঙ পেলে স্যারে এ প্রস্তাবআন আনিনেই বেগর মদন উদি যেল। তারা যেন মুজুর দিনুন আর বেচ নিআলঝি-নিসুলি গরি এ দাঙর কামান গরি পারন। সিত্তেই  জে এস এস (এম এন লারমা) পার্টি তপ্পেত্তুন এক লাক তেঙা এজাল দিয়্যা অল’। 

যারা ২০১৭ সালত “সাঙু- ২০১৭” নাঙে বইবোত SPONSOR দিলাক:[পত্তিক কপি দাম ১০ তোঙা খরজে]
  কপি           নাঙ আ থিগানা
 ৬৫০   কপি     শ্রীমৎ সুমনা প্রিয় ভিক্ষু, বিএঅনার্স, চট্টগ্রাম বিশ্ব বিদ্যালয়
 ২০০   কপি  রনজিত চাঙমা, পানছড়ি, খাগড়াছড়ি
 ২৫০   কপি  উদয়ন চাঙমা; বৌদ্ধ ছাত্র-ছাত্রী যুব আর্য্য ঐক্য পরিষদ, ধর্মপুর, হাগাড়াছড়ি; ।
১৮৭  কপি  শান্তি মণি চাঙমা, এডিসি, গোপালগঞ্জ  
 ১২৫   কপি এক ভান্তে, দিঘীনালা বন বিহার; ২। কধা ফগদাঙি; ৩। জেকি চাঙমা, সমাজ সেবিকা, বাঘাইছড়ি দুয়োর, দিঘীনালা; উৎপল খীসা, লেখক; ৪। সুভাষবসু চাঙমা; ৫। খেয়ালী চাঙমা, ৯ম শ্রেণী, বাবুছড়া হাই স্কুল।
০৫    ১০০
কপি    ভেন: জে জেটি ভিক্ষু, অধ্যক্ষ, হরিনাথ পাড়া আর্দশ বৌদ্ধ বিহার, খাগড়াছড়ি;
       
০৪    ৬২
কপি    সমাধর চাঙমা, চট্টগ্রাম; ২। রিকেন চাঙমা, জনিয়র গ্রন্থগারিক, পাবলিক লাইব্রেরী,খাগড়াছড়ি; ৩। মিলন চাঙমা, ব্যাংক কোলনি, ইপিজেড চট্টগ্রাম;  ৪। উদয় শংকর চাঙমা(আর্টিস্ট), রাঙামাত্যা; ৫। সুভাষ চাঙমা, সুবিন্ত চাঙমা, সহকারী শিক্ষক, মুলক্ষ্যেছড়া সরকারী প্রাঃ বিদ্যালয়; ৬। রিপন জ্যোতি চাঙমা, মণিগ্রাম, খাগড়াছড়ি; ৭। বুদ্ধশ্রী ভান্তে, মানবিক কল্যাণ সংঘ কর্মী; ৮। প্রভাত চাঙমা, সহকারী শিক্ষক, ভিতর বানছড়া সঃ প্রাঃ বিঃ দিঘীনালা; ৯। নিষ্ঠার শান্তি চাঙমা; ১০। দেব রঞ্জন চাঙমা, কার্ব্বারী, বড়াদম চংড়াছড়ি, মেরুং। ১১। আলোময় চাঙমা, সাহিত্যিক, মহালছড়ি; ১২। শ্রীমৎ তিলোকানন্দ ভিক্ষু, সাদা মনের মানুষ; ১৩। সুনীল কান্তি চাঙমা, রাজদ্বীপ, চক্রপাড়া, রাঙামাত্যা; ১৪। প্রত্যাশা চাঙম, ৯ম শ্রেণী, উদল বাগান হাই স্কুল; ১৫। প্রতিভাস চাঙমা,  মিরপুর- ১০, ঢাকা; ১৬। বিকাশ লারমা, খাড়িকাটা, লংগদু; ১৭। শ্রীমৎ প্রজ্ঞা পাল ভিক্ষু, বন বিহার, রাঙামাত্যা; 
 

  ৫০  কপি   সুমিত্র চাঙমা, সহকারী শিক্ষক, চংড়াছড়ি হাই ইচকুল, মেরুং, দিঘীনালা; ২। শ্রীমৎ অমিয়বর্দ্ধন ভিক্ষু, বানাবান্যছড়া। ৩।রতন বিজয় চাঙমা, প্রতিষ্ঠাত ও পরিচালক, জুম্ম সুরঞ্জলি শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক একাডেমি, ডি.ই.িপি জেড, সাভার- ঢাকা। ৪। নব জীবন চাঙমা, কাঠালতলি, দিঘীনালা সদর; ৫। রিয়া চাঙমা, তারাবনিয়া, কবাখালি, দিঘীনালা; ৬। নয়ন তারা চাঙমা, নন্দ কারব্বারী পাড়া, মটিরাঙ্গা।

    ৪০
কপি    ১। সিমা চাঙমা, পাড়াকর্মী(আইসিডিপি), চরপাড়া, মাটিরাঙ্গা।

   ৩৭  কপি  ১। ভ‚বন জ্যোতি চাঙমা, নারিকেল বাগান, দিঘীনালা; ২। প্রয়সী চাঙমা, মধ্যম বোয়ালখালী, মেরুং, দিঘীনালা; ৩। জয় সিংহ চাঙমা, কালাচান পাড়া, মহালছড়ি; ৪। শ্রীমৎ নব আর্য্য ভিক্ষু, অধ্যক্ষ, বাজেইছড়া, জনবল বৌদ্ধ বিহার, মেরুং; ৫। দিপায়ন চাঙমা, মহালছড়ি; ৬। জেকি চাঙমা, ৯ম শ্রেণী, উদল বাগান হাই স্কুল; ৭। অভিনেষ চাঙমা, শিক্ষক, মিলেনিয়াম উচ্চ বিদ্যালয়, খাগড়াছড়ি; সুকান্ত চাঙমা, পানছড়ি।।
 ৩১  কপি  ১। মানিক ধন চাঙমা, মেম্বার, খেদারমার; ২। অমর জীবন চাঙমা, খেদারমার; ৩। ত্রিপণ চাঙমা, নানিয়্যাচর, রাঙামাত্যা; ৪। সুবর্ণা চাঙমা, মাইসছড়ি, খা/ছড়ি ।
 

  ২৬  কপি  ১। রুপম খীসা, আপার পেরাছড়া, খাগড়াছড়ি

  ২৫ কপি   ১। উদয়ন চাঙমা, ঘাগড়া, রাঙামাত্যা; ২। দিপো চাঙমা, মহালছড়ি, খাগড়াছড়ি; ৩। প্রাণদীপ চাঙমা(৬ষ্ঠ শ্রেণী), লেকার্স পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, রাঙামাত্যা; ৪। মিত্র চাঙমা, ব্যাংমারা, মাটিরাঙ্গা; ৫। নভেল চাঙমা, শান্তিপুর, দিঘীনালা; অর্ণব চাঙমা, আর্ট শিল্পি; ৬। শ্রীমৎ মঙ্গলদর্শী ভিক্ষু, টিএনটি সার্বজননী বৌদ্ধ বিহার, মাটিরাঙ্গা; ৭। মুণি চাঙমা,রাঙামাত্যা; ৮। সুমনা চাঙমা শান্তিপুর, দিঘীনালা; ৯। জনাটন চাঙমা, আটারকছড়া, মেরুং, দিঘীনালা ।
  ২২  কপি   ১। এনিকা চাঙমা, আটারকছড়া, মেরুং, দিঘীনালা।

 ২১  কপি  ১। প্রদীপ কুমার সরকার, কুষ্টিয়া; 

 ২০  কপি  ১। পরেশ চাঙমা, বিজয় নগর, রাঙামাত্যা; ১। বৈশাখী চাঙমা(৯ম শ্রেণী) বাবুছড়া উচ্চ বিদ্যালয়; ৩। কালজয়ী চাঙমা(৭ম শ্রেণী), দিঘীনাালা মডেল বালিকা উচ্চ বিঃ; ৪। অরুন জয় চাঙমা, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম; ৫। কাকলি চাঙমা, এইচ.এস.সি পরীক্ষার্থী, মাটিরাঙ্গা কলেজ;  ৬। হাসি চাঙমা, এইচ.এস.সি পরীক্ষার্থী, মাটিরাঙ্গা কলেজ; ৭। সুবল চাঙমা, এইচ.এস.সি(১ম বর্ষ), খা/ছড়ি স: কলেজ(বরঝালা, মাটিরাঙ্গা); ৮। শ্রীমৎ প্রজ্ঞাতিষ্য শ্রমণ এইচ.এস.সি পরীক্ষার্থী, খা/ছড়ি স: কলেজ খেদাছড়া, মাটিরাঙ্গা); ৯। সূচনা চাঙমা, মোনতলা, শুকনছড়ি, লক্ষীছড়ি; ১০। প্রিয়দর্শী চাঙমা, পুলিশ, চট্টগ্রাম ।
[এ তেঙাউন সাঙু- ২০১৭” বইবো 6000 ছাবে তিন পার্বত্য জেলা বাদেয়্য কক্সবাজার, ভারদত ভাক গরি দিয়্যা অইয়]
এ বাদেয়্য যারাত্তুন ধন এজাল পেলং-
২০১৫ খ্রি.১.    দাঙগু সুসময় চাঙমা (ভাইস চেয়ারম্যান, দিঘীনালা উপজেলা পরিষদ): ১৫০০ তেঙা
২০১৭ খ্রি.
২.    শতরুপা চাঙমা (সদস্য, পার্বত্য জেলা পরিষদ, খাগড়াছড়ি): ১০,০০০ তেঙা [
৩.    নবকমল চাকমা. চেয়ারম্যান, দিঘীনালা উপজেলা পরিষদ: ৫০০ তেঙা;
৪.    “সাঙু- ২০১৭” ফগদাঙিত্যাই স্পনসর দাগনিত ৩৯,০০০ তেঙা;
৫.    “সাঙু- ২০১৭” ফগদাঙিত শতরুপা চাঙমা- ৫০০০ তেঙা;
৬.    “সাঙু- ২০১৭” ফগদাঙিত আশুতোষ চাঙমা- ৫০০০ তেঙা।
২০১৮ খ্রি.
৭.    শান্তি ময় চাঙমা (মেম্বার, ভাইবোনছড়া ইউপি)- ৫০০ তেঙা
৮.    সুজন চাঙমা (সাবেক মেম্বার, ভাইবোনছড়া ইউপি )- ৫০০ তেঙা
৯.    রতœ কুসুম চাঙমা (প্রভাষক, পানছড়ি ডিগ্রি কলেজ)- ৫০০ তেঙা
১০.    টাটু মণি চাঙমা(প্রধান শিক্ষক, ভাইবোনছড়া মিলেনিয়াম হাই ইচুকুল)- ৫০০ তেঙা
১১.    জুনেল চাঙমা (শিক্ষক, নুনছড়ি প্রাইমারি ইচকুল)- ৫০০ তেঙা
১২.    সুপ্রিয় চাঙমা (সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান, দিঘীনালা উপজেলা পরিষদ)- ১০০০ তেঙা
১৩.    সুব্রত খীসা(সমাচ ভালেদি কাম্মো)- ৫০০ তেঙা
১৪.    আড়াঙ(বাঘাইছড়ি, রাঙামাত্যা)- ১০০০ তেঙা
১৫.    লালন কান্তি চাঙমা (প্রভাষক, কাচালং ডিগ্রি কলেচ)- ২০০০ তেঙা
১৬.    দেবপ্রিয় চাঙমা (চাঙমা সাহিত্য বাহ্ প্রতিষ্ঠাতা)- ১০,০০০ তেঙা।
১৭.    বিকেন চেগে- ২৫০০ তেঙা,
১৮.    এলিয়েন্স চাঙমা- ৫০০ তেঙা
১৯.    শ্রীমৎ প্রিয় জ্যোতি ভিক্ষু, মারিশ্যা, বাঘাইছড়ি- ১০০০ তেঙা
২০.    শ্রীমৎ করুনাবংশ ভিক্ষু- ১০০০ তেঙা
২১.    বিমল কান্তি চাঙমা, চেয়ারম্যান, মহালছড়ি উপজেলা পরিষদ- ২০,০০০ তেঙা
২২.    বিভূতি চাঙমা, রাঙামাত্যা- ১০০০ তেঙা
২৩.    কল্যাণ মিত্র চাঙমা, রাঙামাত্যা ১০০০ তেঙা
২৪.    বিজ্ঞাপন (৫নং বাবুছড়া চেয়ারম্যান) ৫০০০/-
২৫.    বিজ্ঞাপন (কালচার/সুসময়)- ১৭০০০/-
২০১৯ খ্রি.
২৬.    নীল রঞ্জন চাঙমা , মালছড়ি-  ১০০০ তেঙা
২৭.    বাপ্পী  খীসা, ২নং মুবাছড়ি ইউনিয়ন চেয়াম্যান- ৫০০০ তেঙা

২৮.     মোয়াজ্জেম হোসেন আলমগীর- ১০,০০০/-
২৯.    শতরূপা চাঙমা, সদস্য, খা/ছড়ি জে/পরিষদ- ৩০০০/-
৩০.    বিকেন চেগে- ৫০০/-
৩১.    বিজ্ঞাপন  (জেলা পরিষদ/খা/ছড়ি)- ৯৫০০/-
৩২.    বিজ্ঞাপন (ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ইনস্টিটিউট খাগড়াছড়ি) ৮৫০০/-
৩৩.    বৌদ্ধ যুব ঐক্য পরিষদ- ২০,০০০/-
৩৪.    দেবপ্রিয় চাঙমা - ১০০০/-

৩৫.  প্রজ্ঞা তাপস চাঙমা- ৬১০০০/- (চাঙমা সাহিত্য পত্রিকা পোইদ্যানে)
৩৬. বাসন্তি চাঙমা (এমপি)- ৫০০০/-
৩৭. বিজ্ঞাপন (ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ইনস্টিটিউট খাগড়াছড়ি) ৬১০০/-
৩৮. সুগত লঙ্কার ভান্তে- ১০০০/-
৩৯. সুজন চাঙমা- ২০০০/-
৪০. দেব প্রিয় চাঙমা- ১০০০/-
৪১. মোয়াজ্জেম হোসেন আলমগীর- ৫০০০/-
৪২. জে এস এস (এমএন লারমা)- ১০০০০০/-
 

 


রবিবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৯

গণহত্যা: ১৯৭১-১৯৯২


নং    গণগত্যা    তাং-সন    নিহত    আহত    নিখোঁজ    হত্যাকারি
০১    পানছড়ি, দিঘীনাল, বড়মেরং    ৮ই ডিসেম্বর ১৯৭১    ১০    ০১    ০০    বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনী
০২    কালানালা (পানছড়ি)    ১৯ ডিসেম্বর ১৯৭১    ৪৭    ০৪    ০০    বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনী
০৩    কলমপতি(কাউখালী)    ২৫ শে মার্চ ১৯৮০    ৩০০    অসংখ্যা    ০০    আর্মি, ভিডিপি ও অনুপ্রবেশকারী মসুলমান
০৪    বেলছড়ি(মাটিরাঙ্গা)    ২৫ শে জুন ১৯৮১    ৩০০    অসংখ্যা    ০০    আর্মি, বিডিআর, ভিডিপি ও অনুপ্রবেশকারী
০৫    ভ’ষণছড়া-হরিণা    ৩১ শে মে ১৯৮৪    পু: ২৪, নারী: ১৪, শি: ২৪    ০২    ০৫ জন ন্রী    ২৬ ইবিআর আর্মি, ১৭ ব্যাটালিয়ন বিডিআর ভিডিপি ও অনুপ্রবেশকারী
০৬    পানছড়ি, মাটিরাঙ্গা, খাগড়াছড়ি    ১লা মে ১৯৮৬    ৫০    ০৫    ৮৬    আর্মি, বিডিআর, ভিডিপি ও অনুপ্রবেশকারী
০৭    রামবাবুঢেবা(মাটিরাঙ্গা)    ১৮ মে ১৯৮৬    ৪২    ০৮    ০০    বিডিআর, ভিডিপি ও অনুপ্রবেশকারী
০৮    চংড়াছড়ি (দিঘীনালা)    ১৯ ডিসেম্বর ১৯৮৬    ১৮    ১৬    ০০    বিডিআর, ভিডিপি ও অনুপ্রবেশকারী
০৯    বাঘাইছড়ি    ৮ আগষ্ট ১৯৮৮    ৩৬    ২১    ২৬    আর্মি, ভিডিপি ও অনুপ্রবেশকারী
১০    লংগদু    ৪ঠা মে ১৯৮৯    ৩২    ১১    ০০    ভিডিপি ও অনুপ্রবেশকারী
১২    মাল্যা লংগদু    ২ ফেব্রæয়ারি ১৯৯২    ১৪    কয়েক জন    ০০    ভিডিপি ও অনুপ্রবেশকারী
১৩    লোগাঙ পানছড়ি    ১০ এপ্রিল ১৯৯২    ২০০    ১৫১    অসংখ্যা    বিডিআর, ভিডিপি ও অনুপ্রবেশকারী
১৪    রাঙ্গামাটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা    ২০ মে ১৯৯২        ১৭        বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, অনুপ্রবেশকারী ও নিরাপত্তা বাহিনী সদস্য। দেড় শতাধিক জুম্ম ঘরবাড়ি ও সম্পত্তি আগুনে পুড়ে দেয়া হয়।
-    জুম্ম সংবাদ বুলেটিন (বই নং- ৭,২য় বর্র্ষ, ৩১ মে ১৯৯২)

                                                                                         


বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৯

ওলি ওলি (চাঙমা ছড়া)

১। আয় আয় চানদুক আয়
আয় আয় চানদুক আয়
কুল ভাঙ্গা দিয়ানদোই
চিজি লগে হারা অই
বিল্যে অলে চাকিবং
বিল্যে অলে ইরিদিবং
ভাত দিবং জরা জরা
দুধ দিবং তরা তরা
আয় আয় চানদুক আয়

২। থুত্তেলেং  মাছ
ছড়াত উজাদন থুত্তুলিং মাছ
গুজুরি পড়েরলি বোজেক মাস
বোজেক মাজ ধান হুজা
উত্তর দাগদি পান হদা
হুজি হুজি চিনোং পান
উদিবো পুগেদি পুনোং চান
পুনোং চান সাঁঝ দরে
আজিদুং মাদিদুং লাজ গরে

৩। ঝুনঝুনি
জুমত্ উদেত্তে বাচ্চুরিবো
দুরিলি চুংসুঙি
আমা চিজিরে 
পিনেই দিবং
রুবোর হারু-ঝুনঝুনি

৪। হালা হক্কেং
হালা হালা হক্কেং
চিদিরে চিদিরে গুই
ভুক গরি জাম দিলেয়ু
ন-দরাং মুই

৫। ব্যাঙ ডগত্তন
এহুলে হলা উহুলে ছড়া
ন হানিজ চিজি
ভাঙিবো গলা
ব্যাঙ ডগত্তন হরক হরক
বাচ্যে দুবত্ তলে
আমা সিজিবোরে
বৌ আনি দিবং
ঢুলে দগরে

৬। হবা জাং
হবা জাং, হবা জাং
মামু ঘরত্ যাং 
মামু দিব হুর হারি
পেট ভরে হাং

৭। আম পাদা
আম পাদা লক্ষন
তরে মাত্তে হক্কন
মুই যেম আগাজট
পানি হেম গলজট
আমত তলে সমেলুং
বোরোই কাদা পুদেলুং

৮। থেদারাম বৈদ্য
থেদারাম বৈদ্য নিজেরা রাজ বৈদ্য হলাং
থেদারাম ফাঁগিবাজ
রেজ্য বেড়ায় হালিক
আজলে বৈদ্য নয়
তাত্তুং নেই কোন তালিগ
মন্ত্র নেই,তন্ত্র নেই
নিজরে রাজ বৈদ্য হোলাই
তোন হেব পিরেল্যা পেলে
আগলত্যা হুর জাক তোগেই ।

৯। আয় আয় চাঁনান
আয় আয় ও চানান
সোনার চিঝি ঘুম ন যায়
রূবনত চড়ি আয়
সোনা দাঁড় বে আয়
কিজু হাজু ঘুম পাগানা আয়


১০। মিদিঙে বাজ চালনান
মিদিঙে বাজ চালনান
তুজ পজিলে পড়ে
আমা চিজি তদাত থলে পরানান
দুগুত দুগুত গরে

১১। মিঞং মিঞং
মিঞং মিঞং
মুই ওলোংগে বিলেই
মাঝা উগুরে বই আগংগে
ন মাজ্জে মরে
তুমি হদে এরা মাজে 
মরে দোদে হাদা
চুর গরিনেই হেলে মালে
পিদিত মার কাদা ।

১২। নাদকতুগ নাদকতুক
নাদকতুগ নাদকতুক
আত্তে হলার বুক
ঘর উদন বিগুন মরিচ
তুমি হাদে দুগ ।

১৩। আম পাদা
আম পাদা ঝুপ ঝুপ
হরজি পাদা লেজ
তমামু ঘরত বেড়েদ যেজ
উত্তর কুলে দেশ

১৪। টেক টেক টেক
টেক টেক টেক
তমামু ঘরত বেড়েদ যেজ
তমামি দিব হুর হাবি
ছিদ গিলে আনি মাঝাত তই দিলং
বিলেয়ে হেলেগোই
ও চিঝিরে ডাক্কোই
বিলেইবো মারক্কোই
বিলেই গেল অদে
আজার হেল গোই ।
১৫। তাই তাই তাই
তাই তাই তাই
মামু ঘরত যেই
ম-মামি দিব দুধ ভাত
পেট ভরন হেই
মামির আদ দুধ ভাত
হাদে যদবদে সুয়দ
ঘরত আগে দুগি পিদে
আর আগে সান্ন্যে পিদে

১৬। য়েরে তি তি ব ব
য়েরে তি তি ব ব
মাত্যে পেগ ছ
দেনে বাঙে ন যেইজ
উজি গুরি য

শনিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৯

চাঙমাউনর সুক কুধু আজি যেল

পুরনি আমলত আদামে আদামে গেংখুলি শুনিদাক রেত থিয়্যা, জুম ধান যক্যে গোলাত তুলনা সেচ অয়। সে গীদ’ সুরত রাজা, চাঙমাউনর জীংকানি কধা ফুদ উদিদ’। ফুদি উদে চাঙমা রেয্য সে জয় গচ্চে দিনুন। কন’ গাবুজ্যা - গাবুরি লাঙগ্যা - লাঙুনি কোচপানা কধা সে গীদ’ সুরত পোতপোত্যা গরি ফুদি উদে। ইক্যে সে গীত, সে গীদ’ সুর বাপ-ভেইয়্য তাজা লোত, মা-বোনর চোগর পানি গঙারে কুধু ভাজি যেল’?

কি এল’ সে গেংখুলি গীদত? কি এল’ সে বিজক (ইতিহাস) আ উপখ্যান? চাঙমা রাজার কধা, চাঙমা কন’ মিলে কধা, চাঙমা কন’ ভালেদি জীংকানি কধা। সক্যে চাঙমাউনর রাজা এল’, রেয্য এল’, সুক এল’ চাঙমাউনর জীংকানিত। মিলেউনর মুয়োত অনসুর আজি এল’, বুগত এল’ আঝা আ কোচপানা, চোগত এল’ পোতপোত্যা সবন। সক্যে কাজালং, চেঙে, মিঙিনি, শঙখ, বরগাঙ আ ফেনী এল’। সে গেংখুলি গীদ’ সুরত ফুদি উদি সে কধা, গাঙর কদা, মোন মুরহ্ কধা, মোন-মুরহ্ হ্’েইল তারুম ঝারর ফুল, পেইগ’ কধা আওজি মনে রিবেঙত্তুন কারি শুনেদাক। সক্যে বিঝু এল’, ফুল বিঝু, মুর বিঝু আ গয্যাপয্যা দিন। ফুল বিঝু দিনত বেগে চিদ’ সুগে, মন’ সুগে রেত সংভাগত ঘুমত্তুন উদি ফুল তুলি গঙামারে ভূজিদাক, বর মাগিদাক। মুর বিঝু দিনত রাঙা বেলাল মু ভেদা দেদে কুর’ আদার দিদাক, ঝাক ভুদি ভুদি বিঝু খেদাক, গীদে রেঙে। গয্যাপয্যা দিন বুরো-বুরিহ্’রে ঘাদেদাক। গাবুয্যা গাভুরি, গুর’-বুরহ্’ বেগে ঝাগে ঝাগে কিয়োঙত যেদাক। ফুল বাত্তিলোই বুদ্ধরে পূজিদাক। সাত বেইল সং ঘরত, ধিঙিসালত, গাঙত, কুর’- গরু ঘরত বাত্তি আঙে সয়সম্পত্তি বারিবাত্তে বর মাগিদাক। বেগ’ মঙ্গলত্যাই, গিরিত্তি ভালেদিত্যাই, আদাম ভালেদিত্যাই, সমাজ উজন্দিত্যাই বর মাগিদাক। নিজ’ মনর মানুচ্ছোরে তোগেদাক জুম’ থুপ থুপ সুধোগলাত, ঘোচ্ছে তাগাত, রিঝেং, ঝোরঝরিত সে ভাদ’ মাজ্যা পাগানা ধান সিজেত।

জুম’ ধান গোলাত তুলানা থুম অলে মিলেউনে বেইন বাজান, বেইন বুনন, খাদি, বেজোন বুনন। বেজোনত দোল দোল বট গাচ, কিয়োঙ আ চাঙমা ওক্কোরুন আঁগান। সে বেজোনানি তারা কোচপানা মানুচ্ছোরে বুকশিচ দ্যুন। যারে নিনেই তার সবন দেঘন- দোল এক্কা সংসার গরিবার তারে।

মোন-মুরহ্’ত চাগালা থিয়্যা জুম কাবন। কাদিমাচ জুম ফাঙ গরন। আওন-পুচ মাচ জুম কাবা ধরন। চোত মাচ জুম পুরন। আরা কারি, আনুনি সুলি বোজেক-জেতমাচ ঝর পরল্লে ধান কুজোন। গাবুজ্যা - গাবুরি জুম’ কাম গরন, সাজন্যা লামি এত্তে ঘরত ফিরন, গীত গেই গেই। যে গীদত কন’ দুক নেই, নেই কেলচ-আভিল্যাচ। ইআনি তারার সবন। ইত্তুন বেচ তারার দাঙর সবন ন’ এল’।  কাম গত্তে গত্তে এধক দুক পান ত্যুঅ তারার মুয়োত গান এল’, নাচ এল’, সুক এল’ জুম্মউনর জিংকানিত।  কিত্তেই, সক্যে হ্’েইল ঝার এল’, এল’ চিগোন - দাঙর ছরাহ্-ছুরিহ্ আ বানা জুম্মউন এলাক। তারা বাদে অন্য কন’ জাত ন’ এলাক এ রেজ্যত। সে পরে উত্তুন যেন এলাক অন্য মানুচ চাঙমাউনর জিংকানিত, মুরুল্যা জিংকানিত। এ সের ন’ পিয়ে দুগতয়্য তারার “মজুর” ন’ এল’ কন’ দিন। নিজ কাম নিজে গরিদাক। পোত্যা রাদা দাগত ঘুমত্তুন উদি ভাত রানি দিদাক মিলেউনে। পহ্’র ফাদি এত্তে ন’ এত্তে ভাত মোজা পুনত বানি বাগত লামিদাক মরত্তুন।  কন’ বান্দা (ব্যক্তি) কাম বোরে ন’ এলে তারা তারে বল দিদাক, এক লগে গীদে - রেঙে। কন’ গিরি বঝর ভাদে খেই ন’ পারল্লে তারে মন’ এজাল, ধন’ এজাল দিদাক। মাত্তর এচ্যে তারা “মজুর” অই যিয়োন। ঝার তারুম বেক ভচ যিয়ে, ছরাহ্-ছুরিহ্ শুগেই যিয়ে। ঝুরি মাধাত্তুন পানি ন’ থেপাই, থেপাই বানা মা-বোনর চোগ’ পানি, বাপ- ভেইয়োর লো। কাপ্তে গধা দিনেই চাঙমাউনর ঘর, বাগান, ভূইবেক ধুবি যিয়ে। ছিত্রিং-পাত্রাং অলাক চাঙমাউন। মা-বাপ, ভেই-বোন আ নেগে মোগে, পুয়ে-ঝি ফারক অই কন’ জনে ছিদি পরলাক অরুনাচল, মিজোরাম তিবিরে রেজ্যত আ বার্মাত। কাপ্তে গধা সুফল তারার কবালত ন’ মিলের। তারা এয’ পার্বত্য চুক্তি পরয়্য আন্দারত আঘন। জাগা জমি এয’ ফেরত ন’ পান। আলু কুরি খেবার ঝার নেই। চাদা দেদে তারার জিংকানি ভচ যার। কুধু লেঘা পরাহ্! ভান্তেউন নির্বান সবন দেঘেই দেঘেই দান নাঙে চাঁদা লদন। বৌদ্ধ নাঙ ভচ নেঘাদন। বৌদ্ধ জাগাত বন বিহার লেঘদন। রাজনীতি চেলাউনয়্য অধিগার পেবার নাঙে চাঁদা লদন। পত্থমে (বাস্তবে) কিচ্ছু নেই। মোন-মুরহ্ বেক সেটেলার বাঙাল, বিজিপি আ আর্মিউন আহ্’ঞ্জামে। মা-বোন জিংকানি ইক্যে বানা দুক আ দুক। জুমত যেবার, কাম গরিবার তারা আওচ নেই, খুজি নেই। অনসুর দরদর থরথর- কায় কুরে কন’ দি থেঙ্যা সেটেলার বাঘে ঝাবান নিনা।

ইক্যে মুরল্যা জিংকানিত কন’ সুক নেই। সিঙে, খেংগরঙর র’ নেই। নেই ধুদুগ’ র’। যে জাগানি, যে মোন মুরত জুম কাবি দোলে দোলে জিংকানি তোরেদাক ইক্যে সে মোন মুরহ্’ত পর্যটন অয়ে, আর্মি - বিজিপি ক্যাম্প অয়ে। যে আদাম নাঙান এল’ ফুলচান কাব্বারি পাড়া সিয়েন ইক্যে রসুলপুর নাঙ অই যেল’। নুয়ো নুয়ো পাকা পথ সে রসুলপুর আ ইসলামপুরত অই যেল’। কাপ্তাত জলবিদ্যুৎ অইনেই চাঙমাউনর কি লাভ অয়ে? কিচ্ছু নেই। যিয়োত আর্মি, বিজিপি ক্যাম্প, যিয়োত বাঙাল পাড়া, ইসলামপুর, রসুলপুর সিয়োত কারেন, সিয়োত পাক্কা পথ।

এচ্যে চাঙমাউনর জিংকানিত্তুন বেক আহ্’জি যেল’। দেচ আহ্’জি যেল’।  এধক্যে দুগত্তুন তারা মুয়োত আজি নেই, দাগ’ কধা, বানা, ভাচ,ওক্কোর, রিদিসুদোম বেক ভচ যার। সাচ লামি এলে আজু - বেবেহ্ পজ্জন শুনেদাক, ইক্যে তারার মুয়োত চিদে কধা বাদে কিচ্ছু নেই।

এচ্যে হিল চাদি গাঙত জুম্মউন থেবার কন’ ভ’ (পরিবেশ) নেই। হিলর ধক বেক বদলি যেয়ে। ঝার-তারুম ন’ থানার ছরাহ্-ছুরিহ্ শোগেই যেল’। সেটেলার বাঙাল, আর্মি, রবার বাগান, সাকগোন বাগান, ইটভাটাউনে হিল বুক জেলাঙ জেলাঙ গরি দিলাক। জুম্ম মিলেউন ইক্যে মোন-মুরহ্ ভাঙি ভাঙি পানি তুলদন,  চিগোন ছরাহ্- ছুরিহ্ শুগেই যানার। হিল আদি মানেউন অলাক পিত্তোমরা, দিককাভুল। রেত তোরেলে দিন্নোলই চিদে, দিন তোরেলে রেত্তোলোই চিদে। ওলোনসাল’ আহ্লালা দারবোসান আঙে বানা আঙে তারা বুক। এ হিল চাদিগাঙরে আধুনিক সভ্যতা কোচপানা দুর’ কধা। বেক ভচ গরি দের। ঝার-তারুম আ জুম্মউন এক্কান্নোই এক্কান ধরাধচ্যা সিআন আদুনিক বাংলাদেচ ইধোত ন’ রাঘায়। ইক্যে আর’ দেরি অই যার। ইক্যে জুম্মউনর জিংকানিত্তুন শিক্কে নেযা পরিব। ঝার-তারুম, ছরাহ্-ছুরিহ্, মোন-মরহ্, গাচ-বাচ, মেদেনিরে অতালিয়ে কোচপানা দিনেই যত্তন’ গরন বেগ’ মঙ্গলত্তেই, বেগর ভালেদিত্তেই। 

সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৯

ফেসবুকে ধর্ম বা নবীর অবমাননার গুজব তুলে বারবার সাম্প্রদায়িক হামলা, কৌশল একই



রাকিব হাসনাত বিবিসি বাংলা, ঢাকা
  • ২১ অক্টোবর ২০১৯
বাংলাদেশে গত আট বছরে কয়েকটি সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় প্রায় একই ধরণের কৌশল ব্যবহার করে এসব হামলার পটভূমি তৈরি করা হয়েছে।
এর মধ্যে এবারই প্রথম পুলিশ শুরুতেই জানিয়েছে, তারা এটি উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে যে ভোলার বোরহানউদ্দিনে একজন হিন্দু ব্যক্তির বিরুদ্ধে মুসলমানদের নবী মোহাম্মদকে অবমাননার অভিযোগ তোলা হলেও এটি করেছেন দুজন মুসলিম।
ওই হিন্দু ব্যক্তি আগেই তার আইডি হ্যাকের কথা পুলিশকে জানিয়েছিলেন।
পুলিশ বলছে যে দুই মুসলিম ব্যক্তি একজন হিন্দু ব্যক্তির ফেসবুক হ্যাক করে নবী অবমাননাকর বার্তা দিয়েছিলেন তাদের আটক করা হয়েছে।
তবে হিন্দু বা বৌদ্ধদের ওপর এ ধরণের ভুয়া খবর প্রচার করে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা এবারই প্রথম নয়।
২০১২ সালে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধদের বাড়িঘর ও বৌদ্ধবিহারে হামলার ঘটনা পুরো দেশকেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছিলো।
তখনও ফেসবুকে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একজনের নামকে যুক্ত করে দেয়া হয়েছিলো।
এবার সর্বশেষ ভোলাতেও সেই একই কৌশল দেখা গেছে। তবে এবার পুলিশ শুরুতেই জড়িত দুজনকে আটক করেছে।
বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্য নামে একজনের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ঐ বার্তাটি বিভিন্নজনকে পাঠানো হয় বলে জানাচ্ছে পুলিশ।
কিন্তু এরই মধ্যে এর জের ধরে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে চার জন এবং ইসলামপন্থীরা ফাঁসি দাবি করছে মি. বৈদ্যের।
পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে ভোলার বোরহানউদ্দিনের ঘটনার জন্য যে দুজন দায়ী তাদের আটক করা হয়েছে তারাই বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্যের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ম্যাসেঞ্জারে নবী অবমাননাকর বার্তা দিয়েছে যেগুলো পরে স্ক্রিনশট নিয়ে বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্যের বলে প্রচার করে।
মিস্টার বৈদ্য এর আগে থানায় উপস্থিত হয়ে তার আইডি হ্যাক করার কথা জানান ও তিনি এখনো পুলিশ হেফাজতেই আছেন।
এরপর তৌহিদী জনতার ব্যানার নিয়ে মাঠে নামে একদল ব্যক্তি ও যা পরে রূপ নেয় সংঘর্ষে।
ফেসবুক ব্যবহার করে ধর্ম বা নবী অবমাননার অভিযোগ তুলে একই কৌশলে হিন্দু বা বৌদ্ধদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটেছে আগেও।
কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ পল্লির হামলা
সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজার জেলার রামুতে ২০১২ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর ফেসবুকে একটি ছবি ট্যাগ করার ঘটনা নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে যায়।
উত্তম বড়ুয়া নামে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এক যুবকের ফেসবুকে কোরান অবমাননার ছবি কেউ ট্যাগ করে দেয়। এর জের ধরে রামুতে বৌদ্ধ স্থাপনা ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়িঘরে হামলা করা হয়। দশটিরও বেশি বৌদ্ধ বিহার ও প্রায় ২৫টি বাড়িতে হামলা হয়েছিলো।
এর আগে প্রচার করা হয়েছিলো যে একটি কম্পিউটারের দোকান থেকে উত্তম বড়ুয়া নামে এক বৌদ্ধ তরুণের ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট থেকে ইসলাম ধর্ম, কোরান বা নবীকে অবমাননা করা হয়েছে।
কিন্তু যেই তরুণের নাম প্রচার করা হয়েছে তার খোঁজ পাওয়া যায়নি আর এবং এসব ঘটনায় কারও তেমন কোনো শাস্তির খবরও পাওয়া যায়নি।
ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়ার নাসিরনগরে আক্রান্ত হিন্দুরা
২০১৬ সালের ৩০শে অক্টোবর।
রামুর কায়দাতেই হামলাটি হয়, তবে এখানে আক্রান্ত হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। অভিযোগও সেই পুরনোফেসবুকে ইসলাম বিদ্বেষী ছবি।
এজন্য প্রচার করা হয় রসরাজ নামে এক হিন্দু ব্যক্তির নাম।
অভিযোগ তোলা হয়েছিলো যে মুসলমানদের কাবা ঘরের সঙ্গে হিন্দুদের দেবতা শিবের একটি ছবি জুড়ে দিয়েছিলেন রসরাজ।
এ ঘটনার জের ধরে তাকে পিটিয়ে পুলিশে দেয় স্থানীয়রা।
তবে ঘটনা তাতে থেমে যায়নি।
পরে ইসলামপন্থী কয়েকটি সংগঠন বিক্ষোভ সমাবেশ ডাকে ও সেখান থেকেই হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা শুরু হয়।
প্রায় তিনশো বাড়ি ভাংচুর করা হয়।
অথচ আড়াই মাস পর জেল থেকে বের হয়ে রসরাজ জানান তিনি ফেসবুক চালাতে পারেননা। এমনকি এর যে পাসওয়ার্ড বলে একটি বিষয় আছে তা নিয়ে তার কোনা ধারণাই নেই।
Image caption নাসিরনগরে হামলার ঠিক এক বছরের মাথায় রংপুরের গঙ্গাচড়ায় হামলা
রংপুরেও নাসিরনগর মডেল
নাসিরনগরে হামলার এক বছর পর ২০১৭ সালের ১০ই নভেম্বর রংপুরের গঙ্গাচড়াতে ফেসবুক থেকে ছড়ানো গুজবের জের ধরে এক জনের মৃত্যু হয়।
অভিযোগ সেই একইহিন্দু তরুণের ফেসবুকে থেকে নবীকে অবমাননার অভিযোগ।
পুলিশ তখন বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছিলেন, টিটু রায় নামে যে ব্যক্তির ফেসবুক পোষ্ট ঘিরে এই ঘটনা সেই টিটু রায়ের বাড়ি গঙ্গাচড়ায় হলেও তিনি নারায়ণগঞ্জে বসবাস করেন।
গঙ্গাচড়ায় কয়েকদিন মাইকিং করে হামলা হয়েছিলো হিন্দুদের বাড়িঘরে।
পর টিটু রায়কে গ্রেফতারও করা হয়েছিলো।
সিলেটের ওসমানীনগরেও সেই ফেসবুক স্ট্যাটাস
চলতি বছরের জুনে ইদের নামাজের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটে সিলেটের ওসমানীনগরে।
সনাতন ধর্মের এক নারীর মৃত্যুর পর সৎকার নিয়ে হিন্দু ও মুসলিমদের কয়েক ব্যক্তির মধ্যে মত বিরোধ হয়।
পরে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তির নামে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলে এমন কিছু পোস্ট দেয়া হয় যা নিয়ে মুসলিমদের একটি অংশ ক্ষোভ প্রকাশ শুরু করে। এর জের ধরে কয়েকটি বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে।
ভাঙা মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে নীলিমা দত্ত

কেন আঞ্চলিক স্বায়ত্ব শাসন?

বাংলাদেশ খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির নিকট পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের শাসনতান্ত্রিক অধিকার দাবীর- আবেদন পত্র গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ভাবী ...