রবিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২০

মতামত ও বিশ্লেষণ তাতিন্দ্রলাল বিহীন জেএসএস সংস্কারপন্থীদের সম্ভাব্য গতিপথ- সত্যদর্শী মুলিম্যা

আগস্ট ১৫, ২০২০

গত ১৩আগস্ট ৬৮ বছর বয়সে মারা গেলেন জনসংহতি সমিতি (এমএনলারমা) সভাপতি শ্রী তাতিন্দ্রলাল। যিনি পাহাড়ের রাজনীতিতে পেলে বাবু নামে অধিক পরিচিত ছিলেন। তিনি যে দলের সভাপতি ছিলেন সে দলটিও সংস্কারপন্থী জেএসএস নামেই পাহাড়ের সাধারণ জনগণ চিনে আসছে। যারা দেশের রাজনীতির খবরাখবর রাখেন। তারা নিশ্চয় সংস্কারপন্থী রাজনীতির হিসাব নিকাশ জানেন। ২০০৭ সালের সেই এক এগার সরকার। মঈন উদ্দিন ও ফকরুদ্দিন সাহেবদের শাসনকাল। সেনা সমর্থিত একটি বিশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। জরুরি অবস্থা, মাইনাস ফর্মুলা। রাজনীতির কথিত শুদ্ধকরণের লক্ষ্যে সংস্কার কার্যক্রম চালানো। জরুরি অবস্থাকালীন বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়ার একটি বহুল আলোচিত শব্দ ছিল রাজনীতির সংস্কার করা। প্রভাবশালী রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই রাজনীতি সংস্কার প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকার একটি অভিযোগও প্রায়ই শোনা যেতো। দেশের বহু শীর্ষ রাজনীতিবিদ রাতারাতি সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিতি ও খ্যাতি পেতে শুরু করেন। তারই অংশ হিসেবে বহু তারকা রাজনীতিবিদদের গায়ে সংস্কারপন্থী তকমা লেগে যায়। সেই সময়ের এক যুগ অতিক্রান্ত হতে চললো। কিন্তু সংস্কারপন্থী তকমা সেই রাজনৈতিক নের্তৃবৃন্দকে এখনও বহন করতে হচ্ছে। অনেক রাজনীতিবিদ সংস্কারের বেড়াজাল থেকে নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তনও করেছেন। তারপরেও নিজ নিজ দলে তাদের আস্থা ও বিশ্বাসের সংকট এখনো কাটেনি।

চলতি রচনার বিষয়বস্তু পাহাড়ের রাজনীতি। সদ্য প্রয়াত হওয়া শ্রী তাতিন্দ্রলাল যে দলটির সভাপতি ছিলেন। সেই দলটির জন্ম, উত্থান কিংবা উদ্ভব ঐ এক এগার রাজনীতির সংস্কার তত্বের সূত্রানুসারে। মঈন উদ্দিন ও ফকরুদ্দিন সময়কালীন মাইনাস ২ ফর্মুলার কথা মানুষের মুখে মুখে ফিরতো। তা সফল করতে জরুরি অবস্থার সেনা সমর্থিত সরকার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে কারান্তরীণ করেন। বহু নেতাকর্মীকে জেলে পুরা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামেও মাইনাস ফর্মুলার কথা জোরেশোরে বাতাসে ভাসতে থাকে। কি ছিলো সেই মাইনাস ফর্মুলা? পাহাড়ের রাজনীতিতে এক এগার কুশীলবদের মাইনাস ফর্মুলার মূল লক্ষ্য ছিলেন একজন। তিনি হলেন জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান শ্রী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় সন্তু লারমা। সেই সাথে দল হিসেবে জনসংহতি সমিতির মধ্যে সংস্কার কাজ চালানো। এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে এক এগারর মুল কুশীলব বলে পরিচিতি পাওয়া সেনা কর্তৃপক্ষ পাহাড়ে তাদের মিশন শুরু করে। মিশনের মূল এজেন্ডা ছিলো সন্তু লারমাকে গ্রেফতার এবং আঞ্চলিক পরিষদের নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ। আর জনসংহতি সমিতিকে এক এগার কুশীলবদের কব্জায় নেওয়া। এটাকে জুম পাহাড়ের সংগ্রামকে অধিগ্রহণ করার এক ধরণের উচ্চাভিলাষী রাজনৈতিক চক্রান্তও বলা যেতে পারে।

সেনা সমর্থিত ফকরুদ্দিন সরকারের সক্রিয় নানান সংস্থা পাহাড়ী রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ্যে টোপ ফেলা শুরু করে। পাহাড়ের লড়াই সংগ্রামের ঐতিহ্যবাহী দল জনসংহতি সমিতির মধ্যে বড়শী ফেলা হয়। অন্যদিকে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করা হয়। জেএসএস নেতা-কর্মীদের হয়রানি, গ্রেফতার ও বহুবিধ উপায়ে নিপীড়ন চালিয়ে পাহাড়ে আতংকের বিবিধ উপাদান সৃজন করা হয়। আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়া, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান হওয়া। জেএসএস-এর কিছু উচ্চাভিলাষী নেতা-কর্মী এই রকম বাহারী লোভনীয় টোপ গিলতে শুরু করে। এই উচ্চাভিলাষী নেতা-কর্মীরা জেএসএস-এর মধ্যে ক্ষুদে উপদল সৃষ্টি করে। দলটির নেতৃস্থানীয় সংগঠক রূপায়ন দেওয়ান, সুধাসিন্ধু খীসা, তাতিন্দ্র লাল, মৃণাল কান্তি ত্রিপুরা, শক্তিমান চাকমা, সুদীর্ঘসহ অন্যান্যদের একটি উপদল প্রকাশ্য হয়ে উঠে। সন্তু লারমা গ্রেফতার হচ্ছেন। রূপায়ন দেওয়ান আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান হতে চলেছেন। অন্যরাও বেশ লোভনীয় পদে আসীন হচ্ছেন। রূপায়ন দেওয়ান আর শক্তিমানরা নিজেরাই উৎসাহের সাথে এই ধরণের প্রচার প্রচারণা শুরু করে দেন। অনেকে রীতিমত ক্ষমতার ট্রায়াল কসরৎ আরম্ভ করেন। এরই ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় জনসংহতি সমিতি (সংস্কার) নামে একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। জনসংহতি সমিতির মূল নের্তৃত্ব দখল,কব্জা কিংবা অধিগ্রহণে ব্যর্থ হয়ে ফকরুদ্দিন সরকারের ক্রিয়াশীল সংস্থাগুলো দলটির উচ্চাভিলাষী অংশকে হাতিয়ে নেয়। তখন থেকেই তৈরি হয় জেএসএস (সংস্কার) নামক গ্রুপটি। রাজনীতির এই সংস্কারের ঘূর্ণ চক্রে রূপায়ন দেওয়ান, সুধাসিন্ধু খীসা ও তাতিন্দ্র লালদের মতো পাহাড়ের পোড় খাওয়া সংগ্রামীরা নিজেরাই গুটি হয়ে যায়। মজার বিষয় সংস্কারপন্থী খাতায় নাম লেখালেও বিশেষ সংস্থাগুলো প্রতিশ্রুতি মোতাবেক রূপায়ন দেওয়ান ও শক্তিমানদের কোন পদেই বসাননি। তবে মুলো ঝুলিয়ে রাখা হয়। ঝুলানো মুলোটির স্বাদ নেওয়ার উদগ্র বাসনায় সংস্কারপন্থী নামধারী জেএসএস-এর লোকজন বিশেষ সংস্থাসমূহের প্রদর্শিত পথে হাঁটতে থাকে।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে মঈন উদ্দিন ও ফকরুদ্দিন সরকারের বিদায় ঘটে। কথিত মাইনাস ২ ফর্মুলা উধাও হয়ে যায়। এক এগার কুশীলবরা দৃশ্যপট থেকে বিদায় নেন। সংস্কারপন্থী রাজনীতিবিদরা নিজেদের গুটিয়ে নিতে শুরু করেন। বহুল কথিত সংস্কারপন্থী রাজনীতিবিদরা হারিয়ে যেতে থাকে। অনেকে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান। কিন্তু পাহাড়ের রাজনৈতিক সমীকরণ সব সময়ই ভিন্ন। এক এগারর কুশীলবরা পাহাড়ে সকল কিছুর নিয়ন্ত্রক। সরকার বদল হলেও পাহাড়ে এক এগাররা থেকেই যায়। তাই জনসংহতি সংস্কারপন্থীদের কাজ সচল থাকে। ২০১০ সালে দলটি একটি কংগ্রেস অধিবেশন আহ্বানও করে। সেখানে জনসংহতি সমিতি (সংস্কার) নামটি বদলে ফেলা হয়। নতুন নামকরণ করা হয় জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা)। অবশ্য পাহাড়ের জনগণ তাদের এই নামটি গ্রহণ করেনি। পাহাড়ী মানুষের কাছে তাদের পরিচয় সংস্কারপন্থী হিসেবে থেকে যায়। শুরু থেকে রূপায়ন দেওয়ান ও সুধাসিন্ধু খীসা এই সংস্কারপন্থীদের নের্তৃত্বে ছিলেন দৃশ্যমান। তাঁরা দুজন এই দলটির যৌথ কার্যকরী সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। বাহ্যিকভাবে রূপায়ন দেওয়ান ও সুধাসিন্ধু খীসা দলটির পরিচিত মুখ। কিন্তু সংস্কারপন্থী জেএসএস-এর মূল সাংগঠনিক কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন তাতিন্দ্রলাল। তিনি শুরু থেকেই দলটির সাংগঠনিক কাঠামোর প্রাণ ছিলেন।


সংস্কারপন্থী জনসংহতি সমিতির শীর্ষ নেতা সুধাসিন্ধু খীসা এক পর্যায়ে শারীরিক অসুস্থতার কারণে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। রূপায়ন দেওয়ানও নিজেকে ধীরে ধীরে দূরে সরিয়ে নেন। তরুণ সংগঠক সুদীর্ঘ চাকমা প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হন। আরেকজন প্রভাবশালী পরিচিত মুখ নানিয়াচর উপজেলা চেয়ারম্যন শক্তিমান চাকমা নিজ কর্মস্থলের পাশে আততায়ী কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এমতাবস্থায় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংস্কারপন্থী জনসংহতি সমিতির কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। কংগ্রেসে তাতিন্দ্রলাল পেলে সভাপতি ও বিমল চাকমা মূর্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। সুধাসিন্ধু খীসার অসুস্থতা ও রূপায়ন দেওয়ানের নিষ্ক্রিয়তা, সেই সাথে শক্তিমান চাকমার মৃত্যু। সব মিলিয়ে ২০২০ এর কংগ্রেস আগ পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক তাতিন্দ্রলাল সংস্কারপন্থী রাজনীতি ধারার প্রধান কর্ণধার হয়ে উঠেন। এখানে উল্লেখ থাকে যে, এক এগারর যে বিশেষ সংস্থাগুলোর পৃষ্টপোষকতায় সংস্কার জেএসএস তৈরী হয়। সেই বিশেষ গোষ্ঠীর আশীর্বাদ ও সক্রিয় সমর্থন প্রতিনিয়ত সংস্কারপন্থী জনসংহতি সমিতির সাথে ছিল। বলতে গেলে এই বিশেষ শক্তিই দলটির প্রাণ ভোমরা। ২০২০ সালের কংগ্রেসের মাধ্যমে সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে শ্রী তাতিন্দ্রলাল আনুষ্ঠানিকভাবে দলটির শীর্ষ জন হযে উঠেন। দীর্ঘদিন শারীরিক অসুস্থতার পর আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য ও দলটির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম সুধাসিন্ধু খীসার প্রয়াণ ঘটে। এটাও দলটির বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে যায়। অন্যদিকে আরেক পরিচিত মুখ মৃণাল ত্রিপুরা এনজিও কার্যক্রমে অধিক মনোযোগী হয়ে যান। ফলস্বরুপ যোগযোগ থাকলেও পার্টিজান রাজনীতি থেকে মৃণাল ত্রিপুরাও দূরে চলে যান। এমতাবস্থায় সংস্কারপন্থী জনসংহতি সমিতির সভাপতি শ্রী তাতিন্দ্রলালের ১৩ আগস্ট বৃহস্পতিবার ৬৮ বছর বয়সে আকষ্মিক মৃত্যু ঘটে। যদিও তিনি বেশ কছিুদিন যাবৎ সুস্থ ছিলেন না। তারপরেও শারীরিক সক্ষমতা অটুটই ছিলো।

চলতি সময়ে সংস্কারপন্থী জনসংহতি সমিতির সভাপতি তাতিন্দ্রলাল পেলের মৃত্যু দলটির জন্য কাঙ্খিত ছিলোনা। এই মৃত্যু দলটির সাংগঠনিক কাঠামোর জন্য বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। শুধু বিপর্যয় বললেও কম হতে পারে। প্রকৃত অর্থে সংস্কারপন্থী জেএসএস-এর জন্য এই মৃত্যু মহাবিপর্যয়ও বয়ে আনতে পারে। যদিওবা পেলে বাবুর মৃত্যুর পর মৃত্যু সংবাদ এবং ভারপ্রাপ্ত সভাপতির নাম দলটি একসাথে সংবাদ মাধ্যমে পাঠায়। সুভাষ কান্তি চাকমা (পরচিয়)-কে দলটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে আমরা জানতে পারি। তবে বিষয়টি একটু খটকা তৈরী করে। সভাপতির মৃত্যুর দিনই তড়িঘড়ি করে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির নাম ঘোষণা কেন? আর পেলে বাবুর মৃত্যু সংবাদ নিয়েও দলটি ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে। বাঘাইছড়ির এক সাংবাদিক তার ভেরিফাইড ফেসবুক একাউন্ট থেকে ১৩ আগস্ট সকালের দিকে পেলে বাবুর মৃত্যু নিশ্চিত করেন। তারপর পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পেলে বাবুর মৃত্যুর খবরটি চলে আসে। কিন্তু সংস্কারপন্থী জেএসএস অনেক দেরীতে তাদের সভাপতির মৃত্যুর খবর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করে।

এখন প্রশ্ন উদয় হতেই পারে। তাতিন্দ্রলাল পরবর্তী সংস্কারপন্থী জনসংহতি সমিতির গন্তব্য কি হতে পারে? দলটি কি এই ক্ষতি কিংবা বিপর্যয় অথবা মহাবিপর্যয় সামলে উঠতে পারবে? যে কোনো রাজনৈতিক দলে নেতা-নের্তৃত্ব অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। এখন সংস্কারপন্থী জেএসএস-এর ক্ষেত্রে যদি পর্যালোচনা করা হয। তাহলে পরিলক্ষিত হবে সুধাসিন্ধু খীসা ও শক্তিমান চাকমা দুজনেই বেঁচে নেই। অন্যতম শীর্ষ নেতা আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য রূপায়ন দেওয়ান রাজনীতি থেকে অবসর জীবন যাপন করছেন। রাজনীতিতে আবার ফিরবেন সেই সম্ভাবনাও শূন্য। পরিচিত মুখ মৃণাল কান্তি ত্রিপুরা এনজিও নিয়ে ব্যস্ত। তিনিও আর সক্রিয় রাজনীতিতে জড়াবেন বলে মনে হয় না। বাঘাইছড়ির উপজেলা চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা। তিনি এলাকা ভিত্তিক রাজনীতি করেন। মহালছড়ির প্রজ্ঞান খীসা। সংস্কারপন্থী রাজনীতির বেশ পরচিতি মুখ। হাল নাগাদ দলটির প্রক্রিয়ায় তাঁর সক্রিয় উপস্থিতি নগণ্য। দলের সাধারণ সম্পাদক বিমল কান্তি চাকমা (মূর্ত)। তিনিও বলতে গেলে স্থানীয় রাজনীতির মধ্যেই থাকেন। দলের আরেকজন সিনিয়র কর্মী অংশুমান। তিনি সংস্কারপন্থী জেএসএস-এর একনিষ্ঠ রাজনৈতিক কর্মী। কিন্তু তাতিন্দ্রলাল হয়ে উঠার মতো গুণাবলী অর্জন করা অংশুমানের জন্য দুরূহ কাজ। যিনি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হয়েছেন। সেই সুভাষ কান্তি চাকমার পক্ষে এই ভার বহন করা আসলেই দুঃসাধ্য। সুধাকর ত্রিপুরা নামের আরেকজন নেতার নাম মাঝে মাঝে সংস্কারপন্থীদের পাঠানো প্রেস রিলিজে দেখা মিলে। কিন্তু সুধাকর বাবুর কর্ম পরিধিও সেখানেই সীমিত।

অতএব চুড়ান্ত বিশ্লেষণে সংস্কারপন্থী জনসংহতি সমিতির সামনে তাতিন্দ্রলালের মতো চৌকষ নের্তৃত্ব আর একজনও নেই। শুধু তাই নয়। দল কিংবা সংগঠন চালানোর মতো কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে উঠার ব্যক্তিও দুর্লভ বলে প্রতীয়মান। তাই চলমান সময়ে তাতিন্দ্রলালের মৃুত্যু সংস্কারপন্থী জনসংহতি সমিতির জন্য শুধু ক্ষতির কারণ নয়। তাতিন্দ্রলালের মৃত্যু দলটির জন্য মহাবিপর্যয় অপেক্ষা করছে। সংস্কারপন্থী জনসংহতি সমিতির সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে জনমনে শংকা থেকেই যাবে। পর্যালোচনায় উঠে আসে, দলটি মোটাদাগে অঞ্চল ভেদে বিভক্ত হয়ে যেতে পারে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপদল সৃষ্টি হতে পারে। প্রতিটি উপদলের ছোট ছোট পকেট তৈরী হতে পারে। এই উপদল আর পকেটগুলো বিশেষ বাহিনীর খুবই আস্থাভাজন হয়ে উঠতে পারে। অনেক নেতা কর্মী হতাশ হয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারেন। আবার নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশ লড়াই সংগ্রামের মূল স্রোতধারায় মিশে যেতেও পরেন। সদ্য প্রয়াত সংস্কারপন্থী জনসংহতি সভাপতি শ্রী তাতিন্দ্রলাল পেলের অবর্তমানে দলটির ছিন্নভিন্ন ভগ্ন ভবিষ্যতই দৃশ্যমান।

সত্যদর্শী মুলিম্যা, পাহাড়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কেন আঞ্চলিক স্বায়ত্ব শাসন?

বাংলাদেশ খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির নিকট পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের শাসনতান্ত্রিক অধিকার দাবীর- আবেদন পত্র গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ভাবী ...