শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০২০

চাকমাজাতির আদিনিবাস সন্ধানে-২ -- By Pulak Khisa

আদিবাসী বন্ধুদের সবাইকে আদিবাসী দিবসের শুভেচ্ছা।

এবারের পোস্ট থেকে আমরা যা জানবোঃ
১) প্রাচীন ভারত বা বর্তমান বাংলাদেশের পূর্বাংশে আরাকান সংলগ্ন বর্তমান চট্টগ্রাম অঞ্চলে হরিকেল নামে এক প্রখ্যাত ও সম্মৃদ্ধশালী রাজ্য বা জনপদ ছিল।
২) এই হরিকেলের রাজধানী ছিল চম্পানগরী বা চম্পকনগর যা সম্ভবত চাকমাদের আদিবাসস্থানের একটি।
৩) হরিকেলের রাজারা সম্ভবতঃ একসময় চাকমাদের আদিরাজা বিজয়গিরির অনুরূপ ‘গিরি’ উপাধি ধারণ করতেন এবং এই উপাধিতে রৌপ্য মুদ্রাও প্রবর্তন করেছিলেন।

আগের পর্বে আমরা জেনেছি একসময় চাকমাদের বসবাস ছিল প্রায় ২০০০ বছর প্রাচীন ঐতিহাসিকভাবে সম্মৃদ্ধ রামু জনপদে। তবে চাকমারা এই রামু জনপদে কখন থেকে বসবাস করে এসেছে সে সম্বন্ধে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়না। আমাদের সিংহভাগ ইতিহাসবিদ তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন যে চাকমারা এসেছে আরাকান-রামু হয়ে বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রামে। কিন্তু এই ইতিহাসবিদরা এটা বিশ্লেষণের চেষ্টা করেননি যে এককালে রামু-চট্টগ্রাম এসব অঞ্চল আরাকানেরই শাসনাধীন ছিল এবং চাকমারা বর্তমান আরাকানে বসবাস না করলেও তারা এককালে আরাকান অধীনস্ত রামু-চট্টগ্রাম থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে এসেছে বিধায় আরাকান থেকেই এখানে এসেছে হিসেবে অভিহিত করা যায়। যেমন চাকমাদের ইতিহাসমতে রাজা ফতে খাঁ ১৭১৫ থেকে ১৭৩৭ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন এবং বিগত প্রায় তিন শত বছর ধরে রামু জনপদে তাঁর নামে জায়গার নাম রয়েছে, কাজেই ধরা যায় যে সেই অষ্টাদশ শতকেও চাকমারা সেই অঞ্চলে শাসন ও বসবাস করতো। চাকমারা কি এর আগেও চট্টগ্রাম-পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস করতো, নাকি পরে রামু থেকে এই পাহাড়ী অঞ্চলে আসে? যেমন পর্তুগীজ ইতিহাসবিদ Joao de Barros (১৪৯৬-১৫৭০) ষোড়শ শতকে এতদ অঞ্চলের যে মানচিত্র (https://mappingbengal.com/the-de-barros-map) প্রণয়ন করেন তাতে Chacoma নামে যে স্থান প্রদর্শিত হয়েছে তা আরাকান ও ত্রিপুরার মাঝামাঝি অঞ্চলে চাকমারা বর্তমানে যে জায়গায় বসবাস করছে মোটামুটি তার সন্নিকটেই (সংযুক্তি-১)। অন্যদিকে ষোড়শ শতাব্দীতে বিরচিত রাজমালার দ্বিতীয় লহরে যে মানচিত্র সন্নিবেশিত হয়েছে তাতে চাকমাদের অবস্থান ‘চাখমা’ হিসাবে চট্টগামের সাথেই (সামান্য দক্ষিণে) প্রদর্শিত হয়েছে (সংযুক্তি-২)। কাজেই উপরে বর্ণিত দুই মানচিত্রের তথ্য যদি সত্য হয় তাহলে ষোড়শ শতাব্দীতেও চাকমারা চট্টগ্রাম ও তার আশেপাশের এলাকায় বসবাস করত। তারও আগে কি চাকমারা এতদঅঞ্চলে ছিল? পরবর্তী আলোচনাগুলো হয়তো তার কিছুটা তথ্য দেবে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্বাধিক নিকটে যে চম্পকনগর
-----------------------------------------------------------------

রামু, চট্টগ্রাম ও তার আশেপাশের অঞ্চলগুলোতে চাকমাদের অবস্থান বিষয়ে আমরা আলাপ করছিলাম। তারমধ্যে চাকমাদের আদি বাসস্থান চম্পকনগর সম্পর্কে এখনো কোন আলাপ করা হয়নি। আগে যেমন উল্লেখ করেছি আমাদের ইতিহাস লেখকগণ ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন চম্পা নগরীর উল্লেখ করেছেন যার বিস্তৃতি ভারতের হিমাচলের চাম্বা থেকে সুদূর ভিয়েতনামের চম্পা পর্যন্ত বিস্তৃত। আমার মনে হয়েছে এতদুদ্দেশ্যে উপমহাদেশে এবং সুদূর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত যে কয়টি চম্পা-নগরী বা চম্পক নগর পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে পারস্পরিক একটা সম্পর্ক থাকতে পারে। তবে আমি এখানে এমন এক চম্পা বা চম্পকনগরীর কথা বলবো যা ঐতিহাসিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিভিন্ন চম্পা বা চম্পকনগরীর মধ্যে চাকমাদের বর্তমান বাসস্থান পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে নিকটে, কিন্তু আমার জানামতে এত নিকটে থাকা সত্বেও ইতোপূর্বে কোন গবেষক বা ইতিহাসবিদ চাকমাদের সাথে সম্পর্ক টানতে এই চম্পকনগরীর কথা উল্লেখ করেননি। অবশ্য আমি নিজে অন্য আরেক গ্রুপে এ সম্বন্ধে আগেও লিখেছি। কিন্তু তবুও এখানে লিখছি ব্যাপকভাবে প্রচারের উদ্দেশ্য নিয়ে যে আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে এসেছি অনেক দূরের চম্পকনগর থেকে নয়, সম্ভবতঃ খুব কাছের সেই চম্পকনগর থেকে। হাঁ, আমি আলোচনা করতে চাচ্ছি চট্টগ্রাম বা তদসংলগ্ন এলাকায় হরিকেল (সযুক্তি-৩) নামক প্রাচীন রাজ্য বা জনপদের রাজধানী চম্পা-নগরী বা চম্পক-নগরকে নিয়ে, যেখানে সম্ভবতঃ চাকমাদের গিরি উপাধিধারী রাজারা শাসন ও বসবাস করতেন।

হরিকেল সম্পর্কে বাংলাপিডিয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে (http://bn.banglapedia.org/index.php…) –
“হরিকেল প্রাচীন পূর্ববঙ্গের একটি জনপদ। এর শনাক্তীকরণ নিয়ে পন্ডিতদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। খ্রিস্টীয় সাত শতকের প্রাচীন ভারতীয় লেখকগণ পূর্বভারতীয় একটি অঞ্চলকে হরিকেল বলে উলে¬খ করেন। এটি পূর্ববঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য। সাত শতকের চৈনিক পরিব্রাজক ই-ৎসিঙ্ হরিকেলের অবস্থানকে ‘পূর্বভারতের পূর্বসীমা’য় নির্দেশ করেন। নয় শতকের সাহিত্য কর্ম কর্পূরমঞ্জরীতে এ বক্তব্যের সমর্থন পাওয়া যায়। এতে হরিকেলের রমণীগণকে পূর্ব বঙ্গীয় নারীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
…………………. চন্দ্র বংশের লেখসমূহের উপর পর্যালোচনা ও গবেষণা এবং বঙ্গে তাদের বিজয় সম্পর্কে যথার্থ বিশ্লেষণ করলে প্রতীয়মান হয় যে, আরাকান সীমান্তবর্তী চট্টগ্রাম এলাকায় এ রাজ্য অবস্থিত ছিল। এ ধারণার আরও জোরালো সমর্থন পাওয়া যায় চট্টগ্রামে কান্তিদেবের তাম্রশাসনের আবিষ্কারে।”
বাংলাপিডিয়ার তথ্যমতে হরিকেল বর্তমান চট্টগ্রাম অঞ্চলে খুব সম্ভবত রামু, দিয়াঙ্গ অথবা চট্টগ্রামের নগরাঞ্চলে অবস্থিত ছিল।
দৈনিক প্রথম আলোর ৩১ শে আগষ্ট ২০১৩ সংখ্যায় “হরিকেল থেকে চট্টগ্রাম” শিরোনামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় (http://archive.prothom-alo.com/…/date/2012-04-06/news/238162)। ‘অদম্য চট্টগ্রাম উৎসব’ শিরোনামে ডেইলি স্টার আয়োজিত প্রদর্শনীর আলোকে এই প্রবন্ধে বিশ্বজিৎ চৌধুরী লেখেনঃ
“অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, কিন্তু ইতিহাস বলছে, চৌদ্দ শ বছরের এক প্রাচীন শহরের নাম চট্টগ্রাম। আমরা জানি, ৯০০ বছরের প্রবীণ নগর লন্ডন, আমাদের রাজধানী ঢাকার রয়েছে ৪০০ বছরের ইতিহাস; আর বছর কয়েক আগে ৩০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বর্ণময় উৎসবের আয়োজন হয়েছিল কলকাতা নগরে। চট্টগ্রামের ইতিহাস এই প্রসিদ্ধ নগরগুলোর চেয়েও দীর্ঘ।
সপ্তদশ শতাব্দীতে ইৎসিঙ নামের একজন চীনা বৌদ্ধ ভিক্ষু প্রথম উল্লেখ করেন ভারতের পূর্ব-দক্ষিণ অঞ্চলে হরিকেল নামে একটি রাজ্য আছে। এই ‘হরিকেল’ই যে চট্টগ্রাম, এই তথ্য উঠে আসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর বিএন মুখার্জির গবেষণায়। এই খ্যাতিমান মুদ্রাবিশারদ হরিকেল রাজ্যে প্রচলিত মুদ্রা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হন, সমৃদ্ধ এই রাজ্য ছিল কর্ণফুলী নদীর তীরে, যা কালক্রমে চট্টগ্রাম নামে পরিচিতি পায়। বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়ামের জার্নালে এ তথ্য প্রকাশ করেন তিনি।
আরাকান, ত্রিপুরা ও মোগল—এই তিন রাজশক্তির লড়াইয়ের ক্ষেত্র ছিল চট্টগ্রাম। বহুকাল চলেছে এই দখল প্রতিষ্ঠার লড়াই। মোগল সম্রাট আকবরের সেনাপতি মুনিম খান ১৫৭৫ সালের ৩ মার্চ আফগান শাসক দাউদ খার কররানীকে পরাজিত করলে মোগল সাম্রাজ্যের অধিকারে আসে বাংলা। কিন্তু এরপর আরও প্রায় ৮০ বছর পর্যন্ত চট্টগ্রাম থেকে যায় অধরা। অবশেষে মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ জানুয়ারি ‘কর্ণফুলীর যুদ্ধে’ মোগল নৌবাহিনী জয়লাভ করে। আসলে এই লড়াই ও জয়ের মধ্য দিয়েই বঙ্গ বা বাংলার সঙ্গে যুক্ত হয় চট্টগ্রাম” ।

ইতিহাসবিদরা হরিকেলের অবস্থান সনাক্তকরণ বিষয়ে মনোনিবেশ করলেও এর রাজধানী চম্পানগরী বা চম্পকনগর সম্পর্কে খুব বেশি আলোকপাত করেননি। সম্ভবতঃ এই বিষয়টি তাঁদের গবেষণায় কোন উৎসাহ সৃষ্টি করতে পারেনি। ফলে এত সন্নিকটে থাকা চম্পক নগরী আমাদের অগোচরে রয়ে গেছে।

ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার তাঁর History of Bengal, Vol-1 গ্রন্থে ভারতের পূর্বাংশে হরিকেল রাজ্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছেন –
Writers of the seventh century mention a country called Harikela. According to I-tsing it was the eastern limit of East India. The evidence of the Chinese writer is confirmed by that of the Karpura-Manjuri (9th Century A.D.) which includes Harikela girls among women of the east –
“Thou gallant of women of the east, though Champak-bloom ear-ornament of the town Champa, thou whose lustre transcends the loveliness of Radha, who hast conquered Kamrupa by thy prowess who providest merri mekings (Keli) for Harikeli”.

ডঃ মজুমদার উল্লেখিত নবম শতাব্দীতে বিরচিত কর্পূর-মঞ্জরী নাটকে আমরা দেখি হরিকেলের রাজাকে ‘পূর্বদিকপতি’ হিসেবে বিশেষিত করা হয়েছে, চম্পানগরের “চম্পক” কর্ণভূষণ, চম্পক-কোদণ্ড (চম্পক-ধনুর্ধর) নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে (সংযুক্তি-৪, ৫)। এও উল্লেখ করা হয়েছে যে অবলীলাক্রমে তিনি রাঢ়দেশ জয় করেছেন, ভূজবিক্রমে কামরূপ জয় করেছেন। এই বিবেচনায় দেখা যায় হরিকেল একসময় বঙ্গ বা রাঢ় এবং সিলেটসহ কামরূপ বা আসাম পর্যন্ত জয় করেছিল। তার রাজধানী ছিল চম্পানগরী বা চম্পকনগর।

Numismatic Society of India প্রকাশিত Coinage and Economy of North Eastern States of India গ্রন্থে ইতিহাস ও মুদ্রাতত্ববিদ ডঃ বি, এন মুখার্জী তাঁর ‘A survey of the Coinage of Harikela’ নামক প্রবন্ধে লিখেছেন – “Harikela or Hariketa was the name of a territory which in 7th century A.D. included inter alia the Chittagong district area (now in Bangladesh).”

হরিকেল যে অনেক সমৃদ্ধ জনপদ ছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায় এই রাজ্যের রাজাদের ধাতব মুদ্রা প্রবর্তনের মাধ্যমে। ডঃ বি, এন মুখার্জী তাঁর উপরিবর্ণিত প্রবন্ধে হরিকেলের মুদ্রা সম্বন্ধে লিখেছেন –
“The Original Structures of the series of thin silver coins mentioned above were apparently inspired by the Arakan coinage. This is not impossible, since the Chittagong district region of the Harikela was contiguous to Arakan.”
ডঃ মুখার্জীর বর্ণনা থেকে দেখা যায় হরিকেলের অনেক মুদ্রায় ‘গিরি’ নামাঙ্কিত রয়েছে –
“Thus a silver coin, bearing a bull and tripartite symbol, is inscribed with a legend (La)lagiri ……….., Among such legends we can refer ……… Sivagiri, Jayagiri etc.”
হরিকেল মুদ্রার বড় ভাণ্ডার পাওয়া গেছে ময়নামতি ও ত্রিপুরার বিলোনিয়ায়। হরিকেল মুদ্রা মূলত সপ্তম ও অষ্টম শতকের দিকে এখনকার সিলেট, নোয়াখালী, কুমিল্লার ময়নামতি ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকায় ব্যবহৃত হতো। সিলেট থেকে ৩০-৪০টি হরিকেল মুদ্রা উদ্ধার করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জোবরা গ্রামে পাওয়া গেছে ৩৫টি (https://www.kalerkantho.com/print-editi…/…/2017/04/29/491940)। এর থেকে বুঝা যায় হরিকেলের প্রভাব চট্টগ্রাম থেকে সিলেট বা আসাম পর্যন্ত ছিল। ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে সংগৃহীত দুটি পরবর্তী সময়ের পাণ্ডুলিপিতে হরিকোলকে সিলেটের সমার্থক হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, আর কর্পূরমঞ্জুরী নাটকে হরিকেলের রাজাকে কামরূপ বা আসাম বিজয়ী রূপে চিত্রিত করা হয়েছে। এর সাথে উপরে উল্লেখিত হরিকেলের মুদ্রার ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনা করলে চট্টগ্রাম থেকে সিলেট পর্যন্ত হরিকেলের প্রভাব ছিল বলে প্রতীয়মান হয়।

উপরের আলোচনা থেকে দেখা যায় –
১) প্রাচীন ভারত বা বর্তমান বাংলাদেশের পূর্বাংশে আরাকান সংলগ্ন বর্তমান চট্টগ্রাম অঞ্চলে হরিকেল নামে এক সম্মৃদ্ধশালী রাজ্য বা জনপদ ছিল।
২) এই হরিকেলের রাজধানী ছিল চম্পানগরী বা চম্পকনগর
৩) হরিকেলের রাজারা সম্ভবতঃ একসময় গিরি উপাধি ধারণ করতেন এবং এই উপাধিতে রৌপ্য মুদ্রাও প্রবর্তন করেছিলেন।
চাকমারা নিজেদের চম্পকনগর থেকে আগত এবং সেই নগরের রাজা বিজয়গিরির বংশধর বলে দাবী করে। এই বিবেচনায় আমরা কি বলতে পারি চম্পকনগরের গিরি উপাধিধারী চাকমা রাজারা আরাকান রাজাদের থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে রৌপ্য মুদ্রা প্রবর্তন করেছিলেন?
বাংলাপিডিয়ার ইতোপূর্বের বর্ণনা অনুসারে আমরা দেখেছি হরিকেলের জনগণ মহাযানী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিল। উল্লেখ্য বিগত শতকেও চাকমারা মহাযানী আচার-আচরণ অনুসরণ করত এবং বেশি দেরী হয়নি তারা থেরবাদীতে রূপান্তরিত হয়েছে। এটাও চাকমাদের হরিকেলের চম্পক নগরীর মহাযানী বৌদ্ধ জনগন হওয়ার দিকে ইঙ্গিত দেয়।
পরিশেষে বলতে হয়, উপরে যেমন বর্ণিত হয়েছে, চট্টগ্রাম বাংলার সাথে যুক্ত হয় ১৬৬৬ খ্রীস্টাব্দে। কিন্তু তারও প্রায় হাজার বছর আগে সপ্তম শতাব্দীতে এই জনপদ হরিকেল নামে পরিচিত ছিল, যার রাজধানী চম্পক নগর বা চম্পা নগরীতে সম্ভবতঃ গিরি উপাধিধারী চাকমা রাজারা রাজত্ব করতেন এবং তাঁরা নিজেদের নামে রৌপ্যমুদ্রা প্রবর্তন করেছিলেন।
তুলনামূলকভাবে হরিকেল একটি ভিন্ন ধরণের নাম। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে হরিকেলকে কোন কোন ক্ষত্রে হরিকোলও বলা হয়েছে। চাকমারা নারিকেলকে বলে নারিকুল। সেক্ষেত্রে হরিকেলকে হরিকোল বা হরিকূল বলা অস্বভাবিক নয়। কারণ চাকমাদের জায়গার নামে রাজারকূল, চাকমারকূল, ফতেখাঁরকূল ইত্যাদি কূলযুক্ত স্থানের নাম আমরা আগেও দেখেছি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কেন আঞ্চলিক স্বায়ত্ব শাসন?

বাংলাদেশ খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির নিকট পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের শাসনতান্ত্রিক অধিকার দাবীর- আবেদন পত্র গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ভাবী ...